সাত দিনের ডিটক্সিফিকেশন প্রোগ্রাম

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
343
Comments
474
Reactions
5,457
ভূমিকা

যারা জ্বীন, যাদু এবং বদনজরের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ করেন তাদের সকলের জন্য শাইখ 'আদিল ইবনে তাহির আল-মুকবিল এই প্রোগ্রামটির পরামর্শ দিয়েছেন। শায়খ বলেছেন যে তিনি বহু বছর ধরে এটি দুর্দান্ত সাফল্যের সাথে ব্যবহার করছেন এবং এটি এখনও তাদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ যারা এখনও রক্বী খুঁজে পাননি। শায়খ এটিকে "নিরাময়ের সংগ্রহ" বলেছেন কারণ এটি কুরআন ও সুন্নাহের বর্ণিত নিরাময়ের (শিফা) উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় নিয়ে গঠিত।

যেহেতু প্রোগ্রামটি সরাসরিভাবে কুরআন-সুন্নাহতে উদ্ধৃত হয়নি, তাই এর প্রতিটি অংশ অপরিবর্তিত ভাবে করার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং,উদাহারণস্বরূপ একজন ডায়াবেটিস রোগী মধু খেতে পারেন না, চাইলে তিনি এটিকে বাদ দিতে পারেন। তবুও প্রোগ্রামটি যেভাবে আছে সেভাবেই করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

শুরু করার পূর্বে

১.
সর্বপ্রথম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা-র কাছে নিজেকে বিনীত করা। নিজেকে পুরোপুরিভাবে তাঁর কাছে আত্মসমর্পন করে দেয়া।

২. দু'আ ক্ববুলের সময় দু'আ করা। আযান ও ইক্বামাহর মাঝে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে, আসরের সলাত এবং মাগরিবের সলাতের মধ্যবর্তী সময়ে, জুমু'আর দিন দুই খুতবার মাঝে, বৃষ্টির সময়ে ইত্যাদি।

নিম্নলিখিত জিনিসগুলি প্রস্তুত রাখতে হবে

পানি


প্রতি ব্যক্তির জন্য প্রায় ৩-৫ লিটার পানির প্রয়োজন। জমজমের পানি এই ক্ষেত্রে উত্তম। এর দলিল রয়েছে কিছু বিশুদ্ধ হাদীসের মধ্যে:

১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হল যমযমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য এবং ব্যাধির আরোগ্য।” (সহিহ,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১২০২)

২. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,"যমযমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে , তা অর্জিত হবে।" (সহিহ,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩০৬২)"

যদি জমজমের পানি পাওয়া না যায় তবে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা উচিত, কারণ,

৩. আল্লাহ বলেছেন, "আর আসমান থেকে আমরা বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি অতঃপর তা দ্বারা আমরা উৎপন্ন করি উদ্যান, কর্তনযোগ্য শস্য দানা" (সুরা ক্বফঃ ৯)

৪. নবী (ﷺ) যখন বৃষ্টি হল তখন তাঁর পোশাকের কিছু অংশ উন্মুক্ত করলেন(বৃষ্টির পানি লাগানোর জন্য) এবং বললেন, "এটা মাত্র তার পালনকর্তার কাছ থেকে এসেছে।" [আবু দাউদ]

যদি বৃষ্টির পানি না পাওয়া যায় তবে নরমাল পানি ভাল হয়, তবে বৃষ্টির পানি পেতে চেষ্টা করা উচিত যেখানে জমজমের পানি সহজলভ্য নয় (দয়া করে জমজমের পানি বা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করার জন্য প্রোগ্রামটি খুব বেশি বিলম্ব করবেন না - আপনি যেকোন সময় এটি রুকিয়ার পানিতে যুক্ত করতে পারেন ইনশাআল্লাহ)

যাইতূন তেল

জনপ্রতি এক বোতল জলপাই তেল যথেষ্ট। অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল হওয়া উচিত - এটি মূলত সবুজাভ বর্ণের, উদ্ভিজ্জ তেলের মতো হলুদ নয়। ফিলিস্তিন থেকে প্রাপ্ত অর্গানিক এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল উত্তম যদি আপনি তা সংগ্রহ করতে পারেন, কারণ এটি বরকতময় স্থান থেকে আসে।

আল্লাহ এটিকে বর্ণনা করেছেন এভাবে, "বরকতময় যাইতূন গাছের তেল" [আন-নূরঃ ৩৫]

এবং নবী (ﷺ) বলেছেন, "এর সাথে জলপাইয়ের তেল খাও এবং এ তেল শরীরে লাগাও, কারণ এটি বরকতময় গাছ থেকে এসেছে। [তিরমিজি]

মধু

অর্গানিক এবং ভাল মানের মধু হওয়া উচিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন,

"তার (মৌমাছির) পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়" (আন-নাহলঃ ৬৯)

এবং নবী (ﷺ) বলেছেন, "তিনটি জিনিসে রোগ নিরাময় রয়েছে, মধু মিশ্রিত পানি (এর মধ্যে একটি) ..." [বুখারী]

শাইখ জোর দিয়ে বলেছেন, মধু অনেকে খেয়ে থাকেন কিন্তু এটি পান করার ক্ষেত্রে অনেকে ভুল করে থাকেন। হাদীসটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে পানিতে মধু মিশ্রিত করে পান করা উচিত। শুধু খালি মধু খাওয়ার কথা বলা হয়নি।

কালো জিরা

এটিও অর্গানিক হওয়া উচিত। নবী (ﷺ) বলেছেন,

"এটিতে (কালোজিরাতে) সর্ব রোগের নিরাময় রয়েছে।" [বুখারী ও মুসলিম]

বড়ই পাতা

শায়খ মুকবিল এটিকে এই প্রোগ্রামের তালিকায় রাখেননি। তবে, আমরা এটিকে দৃঢ়ভাবে recommend করছি। যেহেতু আমরা বাস্তবে এর প্রভাবগুলো প্রত্যক্ষ করেছি। সাতটি পাতা গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে দিয়ে এর মধ্যে তেলাওয়াত করতে হবে।

কোন সূরাগুলো তেলাওয়াত করতে হবে

সপ্তাহের শুরুতে বসে পানি এবং জলপাইয়ের তেল সামনে রাখতে হবে। তারপরে নীচের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করুন:

প্রথম পদক্ষেপ

(ক) সূরা আল-ফাতিহা

সাত বার পড়া উত্তম, অথবা কেউ যদি চান তিন বার পড়তে পারেন, কারণ নবী (ﷺ) এটি অনুমোদন দিয়েছেন।

(খ) সূরা আল বাক্বারা
একবার পুরোটা পড়া (যদি কেউ পুরোটা পড়তে না সক্ষম হয় তবে তার পক্ষে যতটুকু সহজ ততটুকুই পড়লেই হবে, যদি আপনি কুরআন সহিহ শুদ্ধভাবে পড়তে না পারেন তবে কাউকে আপনার জন্য তেলাওয়াত করে দিতে বলুন)

(গ) কুরআনের শেষ তিনটি সূরা
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস - প্রতিটি তিনবার করে।

(ঘ) আয়াতুল কুরসি (আল বাকারাঃ ২৫৫)
সাত বার পড়া উত্তম। তবে কেউ ইচ্ছা করলে তিনবার পড়তে পারেন।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ

পানি এবং জলপাইয়ের তেলের উপর ফুঁ দিতে হবে (এমনভাবে ফুঁ দিতে হবে যেন এর মধ্যে হালকা থুথুর ছিটা থাকে) প্রতিটি আয়াত বা সুরার পড়ে ফুঁ দিতে হবে (আপনার পক্ষে যেভাবে সহজ হয়) পুরো পড়া শেষ হয়ে গেলে আপনি ডিটক্স প্রোগ্রামটি শুরু করতে পারেন।

(একইভাবে পানির স্প্রে করার জন্য প্রস্তুত করা যায় যেন ঘরে রুকিয়ার পানি স্প্রে করা যায়)

প্রথম তিন দিন

১.
আপনার পড়া রুকিয়ার এক কাপ পানিতে দুই টেবিল চামচ মধু মিশাতে হবে। কালোজিরার মধ্য থেকে সাতটি কালোজিরা যোগ করুন এবং পান করুন। এটি দিনে তিনবার করুন।

২. ঘুমানোর আগে পুরো শরীরে মাথা থেকে পা পর্যন্ত (রুকিয়ার) জলপাইয়ের তেল দিয়ে মালিশ করুন।

৩. সকালে আপনার পড়া রুকিয়ার পানি থেকে আধা কাপ পানি নিন এবং এটি বালতিতে বা অন্য কোন পাত্রে রাখুন। তারপর পানির ট্যাপ ছেড়ে বালতিটি পানি দিয়ে পূর্ণ করুন এবং পুরো শরীরটি সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চতুর্থ থেকে সপ্তম দিন

১.
শরীরের কোথাও ব্যাথা থাকলে রুকিয়ার জলপাইয়ের তেল দিয়ে সেখানে মালিশ করুন।

২. দুই টেবিল চামচ মধু রুকিয়ার এক কাপ পানিতে মিশাতে হবে। কালোজিরার মধ্য থেকে সাতটি কালোজিরা যোগ করুন এবং পান করুন। এটি দিনে তিনবার করুন।

➤ ফলাফল যা হতে পারে

১.
প্রথম দিন খুব সম্ভবত কিছু অনুভূত হবে না।

২. দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে খুব অসুস্থ বোধ করতে পারেন। কেউ অতিরিক্ত ক্লান্তি, সারা শরীর জুড়ে ব্যথা বা নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যথা অনুভব করতে পারেন, কখনও কখনও মনে হতে পারে খুব কঠোর পরিশ্রমের ফলে শরীর ব্যথা করছে (যদিও আপনি তেমন কিছুই করেননি)

৩. চতুর্থ দিনে নিজেকে সম্পূর্ণ সতেজ মনে হবে, মনে হবে নিজের মধ্যে প্রচুর শক্তি এসে গিয়েছে - আল্লাহর অনুমতিক্রমে।

৪. সাত দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে ব্যথা অদৃশ্য হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

৫. যদি রোগী ভাল না বোধ করে বা ৭ দিনের প্রোগ্রামের ফলে লক্ষণগুলি আরও খারাপ হয়, তবে তাকে সম্পূর্ণ রুকিয়াহ প্রোগ্রামে করার পরামর্শ দেওয়া হবে, যেখানে ৭ দিনের প্রোগ্রামটিই মাসে ১-২ বার পুনরাবৃত্তি করা হয়।

দ্রষ্টব্য: রমজানে এই প্রোগ্রামটি বাস্তবায়ন করতে না পারার কোনও কারণ নেই। মাগরিবের পরে, তারাবীহর পরে এবং ফজরের সালাতের আগে রুকিয়ার মিশ্রণ পান করুন। এছাড়াও ঋতুবতী মহিলাদের জন্য এ প্রোগ্রামটি পালন করা সম্ভব।
 
Back
Top