সালাম দিয়ে প্রশ্ন শুরু করা উত্তম।
সালাত আদায়ের পদ্ধতি
“ রাসুল ﷺ বলেছেন তোমরা সালাত আদায় করো সেভাবে যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছো। ”
✹ রাসুল ﷺ বলেছেন প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত।
- সহীহ বুখারী/১ ( নিয়তের অর্থঃ মান মনে সংকল্প বা অন্তরের খেয়াল করা কিন্তু মুখে আস্তে আস্তে বা জোরে উচ্চারণ করা নয় সালাত আদায় করার সময় রাসুল ﷺ মুখে নিয়ত নাওয়াইতুয়ান উচ্চারণ করেছেন বলে সহীহ হাদীসে কোন প্রমাণ নেই।
✹ সালাত আরম্ভ সময় প্রথম তাকবীর ( আল্লাহু আকবর ) বলতে হবে।
- সহীহ বুখারী ৬৯৬, নাসাঈ ৮৮৭
✹ সালাত তাকবীরে তাহরীমা (সালাত শুরুর প্রথমে আল্লাহ হু আকবর বলা কে তাকবীরে তাহরীমা বলে) দ্বারা শুরু হয় এবং সালাম ফিরানোর দ্বারা শেষ হয়।
✹ রাসুল ﷺ সালাতে তাকবীরে তাহরীমা এবং রুকু থেকে উঠার সময় উভয় হাত কাঁধ / কান বরাবর উঠাতেন।
- সহীহ বুখারী ৬৯৭, সহীহ মুসলিম ৭৪৯, নাসাঈ ৮১১, ইবনে মাজাহ ৮৫৮
✹ সালাতে প্রত্যেককে ডান হাত বাম হাতের যেরার উপর রাখতে হবে।
- সহীহ বুখারী ৭০২ (যেরা শব্দের অর্থ হাতের কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত)
✹ রাসুল ﷺ সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে তার নিজের বুকের উপর রাখতেন।
- সহীহ মুসলিম ৭৮০, তিরমিজি ২৫২, আবু দাউদ ৭৫৯
✹ অতঃপর এই সানাটি পাঠ করতে হবে ,
اللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللّٰهُمَّ اغْسِلْنْي مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْمْاءِ وَالْبَرَدِ
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমন পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।
- সহীহ বুখারী ৭০৬ , সহীহ মুসলিম ১২৩০ , নাসাঈ ৮৯৮ , ইবন মাজাহ ৮০৫ , আবু দাউদ ৭৮১
✹ তাছাড়া কেহ কেহ এই সানাও পাঠ করেনঃ
سُبْحانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
বাংলা উচ্চারনঃ সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা- ইলা-হা গাইরুকা
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার প্রতিপত্তি অতি উচ্চ। আর আপনি ব্যতীত অন্য কোনো হক্ব ইলাহ্ নেই।
- তিরমিযী ২৪২ ( অনেক মুহাদ্দিস হাদীসটি দুর্বল বলেছেন । এ সম্বন্ধে আল্লাহই ভাল জানেন )
✹ সালাতে সানা পাঠের পর নীরবে এই আউযুবিল্লাহ পাঠ করতে হয়।
أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
“ আউযুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম , মিন হামি যিহী ওয়া নাফখিহী ওয়া নাফছিহী । ”
✹ তাছাড়াও এই আউযুবিল্লাহ পাঠ করা যায় –
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم
“ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম । ”
- সূরা আন নাহল – ৯৮ এর আলােকে
✹ তারপর সালাতে নীরবে
بسم الله الرحمن الرحيم
“ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ” বলে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করতে হবে ।
- সহীহ মুসলিম ৭৭৪ , তিরমিযী ২৪৪
✹ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা ‘ আলা বলেন ঃ আমি তাে তােমাকে দিয়েছি সাত আয়াত ( এর অর্থ সূরা ফাতিহার সাত আয়াত ) যা বার বার আবৃত্তি করা হয় এবং দিয়েছি মহান আল কুরআন ।
✹ উচ্চস্বরে বা নীরবে সালাতের কিরাআতে প্রত্যেক রাক ‘ আতে ইমাম , মুক্তাদী এবং একাকী সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা জরুরী । কেননা রাসূল ( সাঃ ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করেনা তার নামায হয়না ।
- সহীহ বুখারী ৭১৮ , মুসলিম ৭৫৮ , তিরমিযী ২৪৭
✹ যে ব্যক্তি নামায আদায় করল অথচ নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করলনা । সেই নামায অসম্পূর্ণ । এ কথা রাসূল ( সাঃ ) তিনবার বলেছেন ।
- সহীহ মুসলিম ৭৬২ , নাসাঈ ৯১২ , আবু দাউদ ৮২১
✹ সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে উচ্চস্বরে কিরাআত বিশিষ্ট নামাযে উচ্চ স্বরে এবং নীরব কিরাআত বিশিষ্ট নামাযে নীরবে আমীন বলতে হবে।
- সহীহ বুখারী ৭৪৩ , আবু দাউদ ৯৩৩ , ইবন মাজাহ ৮৫৩
✹ সূরা ফাতিহার পর কুরআন থেকে যা সহজ সাধ্য এরূপ সূরা অংশ বিশেষ পাঠ করতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭৩৩ , সহীহ মুসালম ৭৬৭ , আবু দাউদ ৮১৯
✹ তারপর “ আল্লাহু আকবার ” বলে উভয় হাত কাঁধ বা কান পর্যন্ত ভাইয়ে । রুকুতে যেতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭০০ , সহীহ মুসলিম ৭৪৫ , আবু দাউদ ৭৭২
✹ রুকুর সময় হাতের তালু দ্বারা হাঁটু মযবূতভাবে ধরতে হবে ও হাতের আঙ্গুলগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে এবং এ সময় স্বীয় মাথা পিঠের । সমান্তরালে রাখতে হবে ।
✹ রাসূল ( সাঃ ) রুকু ও সাজদার মধ্যে “ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ” তিনবার পাঠ করার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করতেন ।
✹ রুকূতে “ সুবহানা রাব্বীইয়াল ‘ আযীম ” বলতে হয় ।
( অর্থ ও আমি আমার মহান রবের পবিত্রতা ঘােষণা করছি )।
- সহীহ মুসলিম ১৬৮৪ , আবু দাউদ ৮৭১
( এ ছাড়া রুকূতে সহীহ বর্ণিত অন্যান্য দু ‘ আও পাঠ করা যায় ) ।
✹ রুকু থেকে মাথা উঠানাের সময় অনুরূপভাবে দুই হাত কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠাতে হবে এবং “ সামি ‘ আল্লাহু লিমান হামিদা ” বলতে হবে ।
অতঃপর পুরাপুরি সােজা হয়ে দাড়িয়ে “ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ ” অথবা “ আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ ” অথবা “ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাছারান তাইয়িবান মুবারাকান ফীহি ” বলতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭৫৭ , মুসলিম ৭৯৭ , তিরমিযী ৬৭
✹ সাজদায় যেতে মাটিতে হাটু রাখার পূর্বে দুই হাত রাখতে হবে ।
- সহীহ বুখারী / অনুচ্ছেদ ১৬৬ , আবু দাউদ ৮৪০ , নাসাঈ ১০৯৪
✹ সাতটি অঙ্গ দ্বারা সাজদা করতে হবে । যথা ঃ কপাল ( নাক অবশ্যই মাটিতে স্পর্শ করা থাকবে ) , দুই হাত , দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা ।
- সহীহ বুখারী ৭৭২ , সহীহ মুসলিম ৯৭৮
✹ সাজদায় অঙ্গসমূহ সঠিকভাবে ও । যথাযথ স্থানে রাখতে হবে । যেমন দুই হাতের তালু মাটিতে রাখা , দুই বাহু প্রসারিত করে কনুই থেকে পাজর , পেট থেকে উরু পৃথক রাখতে হবে এবং দুই হাতের মাঝখানে চেহারা রাখতে হবে । ( তবে পার্শ্বের মুসল্লির যেন কোন কষ্ট না হয় )
- সহীহ বুখারী ৭৬৭ , সহীহ মুসলিম / অনুচ্ছেদ – ৪৪ , তিরমিযী ২৭১
✹ সাজদা অবস্থায় হাটুদ্বয় পৃথক থাকবে , পদদ্বয়ের পাতা ও পায়ের আঙ্গুলগুলির মাথা কিবলামুখী হবে এবং পায়ের গােড়ালীদ্বয়কে মিলিয়ে রাখতে হবে ।
✹ কুকুরের ন্যায় দুই হাত মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সাজদা করা নিষেধ ।
- সহীহ বুখারী ৫০৫ , তিরমিযী ২৭৫
✹ সাজদা করার সময় দুই হাত এমনভাবে রাখতে হবে যেন কোন বকরীর বাচ্চা বুকের নীচ দিয়ে চলে যেতে পারে ।
- সহীহ মুসলিম ৯৮৮ , ইবন মাজাহ ৮৮০ , তিরমিযী ২৭১
✹ সাজদায় “ সুবহানা রাব্বীইয়াল ‘ আলা ” বলতে হয় ।
( অর্থ : আমি আমার সর্বোচ্চ সম্মানিত রবের পবিত্রতা ঘােষণা করছি ) ।
- সহীহ মুসলিম ১৬৮৪ , আবু দাউদ ৮৭১
✹ সাজদা অথবা রুকূতে এই দু ‘ আও পাঠ করা যায় ঃ “ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা । আল্লাহুম্মাগফিরলী । ”
( অর্থ : হে আল্লাহ ! তুমি পবিত্র , তােমার প্রশংসায় আমি রত , আমাকে ক্ষমা কর )
- সহীহ বুখারী ৭৫৫ , সহীহ মুসলিম ৯৬৭ , নাসাঈ ১০৫০ , ইবন মাজাহ ৮৮৯
- ( এ ছাড়া সাজদায় সহীহ হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য দু ‘ আও পাঠ করা যায় )
✹ অতঃপর “ আল্লাহু আকবার ” বলে মাথা উঠাতে হবে এবং দুই সাজদার মাঝে ডান পায়ের পাতা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে উহার উপর বসতে হবে এবং এই দুআ পড়তে হয় ও “ আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ার হামনী ওয়াজ বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া আফিনী ওয়ার যুকনী । ”
- সহীহ বুখারী ৭৭৯ , তিরমিযী ২৮৪
✹ তাছাড়া দুই সাজদার মাঝে বসা অবস্থায় এই দু ‘ আও পাঠ কার যায় ও “ রাব্বিগ ফিরলী , রাব্বিগ ফিরলী । ”
✹ এই বৈঠকে বাম হাত বাম উরুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতে হবে এবং হাতের আঙ্গুল হাঁটুর নিকট থাকবে ।
- সহীহ মুসলিম ১১৮৬ , নাসাঈ ১২৬৬
- অতঃপর । ২য় সাজদা করতে হবে । এই সাজদা ১ম । সাজদার অনুরূপ করতে হবে।
✹ ২য় সাজদা থেকে ( নামাযের বেজোড় রাক ‘ আতে ) উঠে সােজা হয়ে সামান্য সময়ের জন্য বসতে হবে ( যেভাবে দুই সাজদার মাঝখানে বসতে হয় )
- সহীহ বুখারী ৭৮২ , আবু দাউদ ৮৪৩ , নাসাঈ ১১৫৫
অতঃপর ২য় রাক ‘ আতের উদ্দেশে জমিনে ( মাটিতে ) দুই হাতে ভর দিয়ে “ আল্লাহু আকবার ” বলে উঠে দাঁড়াতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭৮৩ ,নাসাঈ ১১৫৬
- ( ১ম রাকআতের অনুরূপ ২য় রাকআত আদায় করতে হবে , তবে এখানে সানা । পড়তে হয়না ) ।
✹ তিন অথবা চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে ২য় রাক ‘ আতের পর ১ম বৈঠকে বসে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয় । এ সময় বাম পায়ের পাতার । উপর বসে ডান পায়ের পাতা খাড়া করে রাখতে হয় ।
- সহীহ বুখারী ৭৮৭ , আবু দাউদ ৯৬৩
✹ তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠের সময় বাম হাত বাম উরুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতে হবে । আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলকে মধ্যমার উপর রেখে তিপ্পান্ন ( আরাবী অক্ষরের ন্যায় ) বানিয়ে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতে হবে এবং এ অবস্থায় শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে ।
- সহীহ মুসলিম ১১৮৪ , ১১৮৬ , তিরমিযী ২৯৪ , ইবন মাজাহ ৯১১ , নাসাঈ ১২৬৩ , ১২৬৬
- ( আত্তাহিয়্যাতু পাঠে “ আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ” বলার সময় কেহ কেহ শুধু শাহাদাত আঙ্গুল একবার উঁচু করে ইশারা করেন , যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় ) ।
✹ তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) হল ঃ
التَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ، وَالصَّلَوْاتُ، وَالطَّيِّباتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللّٰهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
বাংলা উচ্চারনঃ আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্সালাওয়া-তু ওয়াত্তায়্যিবা-তু আস্সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্সালা-মু ‘আলাইনা ظظظ ‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লেহীন। আশহাদু ظظআল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু
অর্থঃ যাবতীয় অভিবাদন আল্লাহ্র জন্য, অনুরূপভাবে সকল সালাত ও পবিত্র কাজও। হে নবী! আপনার উপর বর্ষিত হোক সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকতসমূহ। আমাদের উপর এবং আল্লাহ্র সৎ বান্দাদের উপরও বর্ষিত হোক সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল।
- সহীহ বুখারী ৬৫৬ , সহীহ মুসলিম ৮৪৭ , তিরমিযী ৫৮২ , নাসাঈ ৮৩১
✹ অতঃপর ৩য় রাক ‘ আতের উদ্দেশে “ আল্লাহু আকবার ” বলে উভয় হাত জমিনে ( মাটিতে ) ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং এই তাকবীরের সময় উভয় হাত কঁাধ বা কান বরাবর উঠাতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭০১ , নাসাঈ ১১৮৫
✹ এরপর পূর্বে বর্ণিত নিয়মে বুকের উপর হাত রাখতে হবে , বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমসহ সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে , রুকু ও সাজদা করতে হবে । যদি মাগরিবের নামায হয় তাহলে তৃতীয় রাক ‘ আত এ নিয়মে শেষ । করে “ তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠের জন্য শেষ বৈঠকে বসতে হবে । কিন্তু চার । রাকআত বিশিষ্ট নামায হলে “ আল্লাহু আকবার বলে সােজা হয়ে বাম পা বিছিয়ে সামান্য সময়ের জন্য বসতে হবে । অতঃপর উভয় হাত দ্বারা জমিনে ভর দিয়ে সােজা হয়ে দাঁড়াতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭৮৩ , নাসাঈ ১১৫৬
✹ ৩য় কিংবা ৪র্থ রাক ‘ আত শেষ করে শেষ বৈঠকের জন্য বসার নিয়ম হল ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে এবং আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী রেখে , বামرظسص. পায়ের পাতা ডান পায়ের গােছার ( পায়ের নিম্নাংশের মাংসল অংশ ) নীচ দিয়ে বের করে মাটির সাথে বাম নিতম্ব মিশিয়ে বসতে হবে ।
- সহীহ বুখারী ৭৮৭ , আবু দাউদ ৯৬৩
✹ যে কোন রাক ‘ আত বিশিষ্ট নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠের পর নিম্নের দুরূদে ইবরাহীম পড়তে হবে ঃ
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমকে ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত।
- সহীহ বুখারী ৫৯০৪ , নাসাঈ ১২৯২
✹ অতঃপর নিমােক্ত ‘ আ পাঠ করতে হয় ঃ
اللّٰهُــمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে।
✹ এই দু ‘ আও পাঠ করা যায় ঃ
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউই ক্ষমা করতে পারে না। অতএব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমা দ্বারা
মাফ করে দিন, আর আমার প্রতি দয়া করুন; আপনিই তো ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু।
- সহীহ বুখারী ৭৯২ , নাসাঈ ১৩০৫
- ( তাছাড়া সহীহ হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য দু ‘ আও পাঠ করা যায় )
✹ এরপর ডান ও বাম দিকে “ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ” বলে সালাম ফিরাতে হবে ।
✹ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস ( রাঃ ) বলেছেন ঃ রাসূলের ( সাঃ ) নামাযের সমাপ্তি তাকবীর ( আল্লাহু আকবার ) দ্বারা বুঝতে পারতাম ।
- সহীহ বুখারী ৭৯৯ , সহীহ মুসলিম ১১৯২
✹ ফরয নামাযে সালাম ফিরানাের পর নিম্নোক্ত দু ‘ আ পাঠ করতে হয় ঃ
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ ( তিনবার )
বাংলা উচ্চারনঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ
অর্থঃ আমি আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
এরপর একবার বলতে হয়
اللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস্ সালা-মু তাবা-রক্তা ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার নিকট থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী!
- সহীহ মুসলিম ১২১০ , ইবন মাজাহ ৯২৮ , তিরমিযী ৩০০ , নাসাঈ ১৩৪০
✹ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তেত্রিশবার করে “ সুবহানাল্লাহ ” , “ আলহামদুলিল্লাহ ” ও চৌত্রিশবার “ আল্লাহু আকবার ” বলতে হয় ।
- সহীহ মুসলিম ১২২৫ , নাসাঈ ১৩৫২
( ক) অথবা তেত্রিশবার করে “ সুবহানাল্লাহ ” , “ আলহামদুলিল্লাহ ” ও “ আল্লাহু আকবার ” এবং এরপর একবার “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর ” বলতে হয় ।
( খ ) অথবা দশবার করে “ সুবহানাল্লাহ ” , “ আলহামদুলিল্লাহ ” ও “ আল্লাহু আকবার ” বলতে হয় ।
( এ ছাড়া সহীহ হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য দু ‘ আ ও যিকির করা যায় )
✹ রাসুল ( সাঃ ) ডান হাতের আঙ্গুলের গিরা দ্বারা তসবীহ গণনার জন্য । বলেছেন । কিয়ামতের দিন আঙ্গুলসমূহ সাক্ষ্য প্রদান করবে । কংকর , তসবীর দানা কিংবা গুটি সূতায় গেথে অথবা কাউন্টিং মেশিন দ্বারা তসবীহ পাঠের হিসাব রাখতে নিরুৎসাহীত করেছেন।
বিদ্রঃ সকল হাদিস মিলিয়ে দেখার জন্যে অনুরোধ জানাচ্ছি।
হাদিস গুলো নাম্বার অনুসারে মিলিয়ে দেখার জন্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদকৃত গন্থ গুলো অনুসরন করুন।
ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য মহান রব্বুল আল-আমিনের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।