সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

শিরক সমাজে বহুল প্রচলিত শিরকে আকবার

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
9,922
Credits
6,125
কয়েকটি ইবাদাতের ক্ষেত্রে শিরকে আকবার বেশি হয়ে থাকে। এগুলো হলো-

(১) দু'আর শিরক: মহান আল্লাহ বলেন,

فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجْهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ )​

“তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে, তখন তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্থলে পৌঁছে দেন, তখনই তারা শিরকে লিপ্ত হয়।” [সূরা ২৯; আল-আনকাবূত ৬৫]

এ আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, বর্তমান যুগের মুশরিক পূর্বেকার যুগের মুশরিকদের চাইতে জঘন্য। কারণ, পূর্বেকার যুগের মুশরিক স্বাভাবিক অবস্থায় শিরক করতো এবং বিপদগ্রস্ত অবস্থায় খালিসভাবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকটই দু'আ করত অর্থাৎ বিপদে শিরকমুক্ত হয়ে যেত, কিন্তু বর্তমান যুগে যারা শিরকে আকবার করে তারা সুখেও করে, দুঃখেও করে। সর্বাবস্থায় শিরক করে।

ইবাদাতে শিরক করলে ইবাদাতগুলো অর্থাৎ শুধু ঐ ইবাদাতটি নয়, সকল ইবাদাতই নষ্ট হয়ে যাবে।

(২) নিয়্যাত, ইরাদা ও ইচ্ছার শিরক: মহান আল্লাহর বাণী-

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَوةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَتِ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيْهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ ) أُولَبِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَ حَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيْهَا وَ بَطِل مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ )​

“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল।” [সূরা ১১; হৃদ ১৫-১৬]

(৩) আনুগত্যের শিরক: মহান আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখের নির্দেশের আনুগত্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهَا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحْنَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ​

“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোনো (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।” [সূরা ৯; আত-তাওবাহ ৩১]

(৪) ভালোবাসার শিরক: মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُتِ الله​

“আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে।” [সূরা ২; আল-বাক্বারাহ ১৬৫]

ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মহান আল্লাহর ভালোবাসা চার রকমের হতে পারে। যথা-

(ক) মহান আল্লাহকে ভালোবাসা: ইয়াহুদী, মুশরিক এবং অন্যান্যরাও আল্লাহ তাআলাকে ভালোবাসে অর্থাৎ মহান আল্লাহকে সবাই ভালোবাসার দাবি করে।

(খ) মহান আল্লাহ যা ভালোবাসেন তা পছন্দ করা: এ প্রকার ভালোবাসা ঈমানের পরিচায়ক। যার মধ্যে এ ভালোবাসা বেশি সে আল্লাহ তাআলার নিকটও অধিক প্রিয়

(গ) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা: এটিও ঈমানের পরিচায়ক।

(ঘ) মহান আল্লাহর সঙ্গে ভালোবাসা : এ প্রকারের ভালোবাসা শিরকী ভালোবাসা। মুশরিকগণ মহান আল্লাহর মতোই অন্যান্য মাবুদদের ভালোবাসে। [আত-তিবইয়ান শারহু নাওয়াক্বিদিল ইসলাম, শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আল-আলওয়ান, পৃ. ১২-১৩]

(৫) মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করা। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট নিয়মে পশুর রক্ত প্রবাহিত করাকে 'যবেহ' বলে। যার উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়, তার মহত্বকে সামনে রেখে, তার সামনে নিজের দীনতা প্রকাশ করে, তার নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা একটি ইবাদাত। মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো উদ্দেশ্যে যবেহ করা হলে তা শিরকে আকবার বা বড় শিরক হবে। এতে ঈমান ভেঙে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ إِنَّ صَلَاقٍ وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ ) لَا شَرِيكَ لَهُ​
“বল, ‘নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব'। তাঁর কোনো শরীক নেই।” [সূরা ৬; আল-আন'আম ১৬২-১৬৩]

আলী ইবনু আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ»​

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ করে, আল্লাহ তাকে লা'নত করেন।” [সহীহ মুসলিম: ১৯৭৮ ]

(৬) মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে মান্নত করা। মানুষ কোনো কিছু নিজের জন্য আবশ্যক করে নেওয়া অথবা মহান আল্লাহ যা ওয়াজিব করেননি, তা নিজের উপর ওয়াজিব করে নেওয়া, এটিকে শরীআতের পরিভাষায় মান্নত বলা হয়। যখন কোনো মানুষ মহান আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করে, তখন এটি পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ, তখন একটি ইবাদাতে পরিণত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, এটি

يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَدُّهُ مُسْتَطِيرًا​

“তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত।” [সূরা ৭৬; আল-ইনসান ৭]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ​

“যে ব্যক্তি এরূপ মান্নত করে যে, সে আল্লাহ্র আনুগত্য করবে, সে যেন আল্লাহ্র আনুগত্য করে। আর যে মান্নত করে, সে আল্লাহ্ নাফরমানি করবে, সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।” [সহীহ বুখারী: ৬৬৯৬]

(৭) সাহায্য চাওয়া, আশ্রয় চাওয়ার শিরক প্রভৃতি। সাধারণভাবে কোনো মৃত ব্যক্তির নিকট অথবা কোনো জীবিত ব্যক্তির নিকট কোনো গায়েবি বিষয়ের সাহায্য চাওয়া, যে সাহায্য সে করতে সক্ষম নয়। এ ধরনের সাহায্য চাওয়া শিরক। কেননা, এ প্রকারের সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরে এ আকীদা জন্মে যে, বিশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে এ ব্যক্তির গোপন ক্ষমতা রয়েছে। কোনো মৃত অথবা জীবিত মানুষ বা জিনের নিকট আশ্রয় চাওয়া, যারা কোনো দিন আশ্রয় দিতে সক্ষম নয়। এ ধরনের আশ্রয় চাওয়া শিরক।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنْسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا​

“আর নিশ্চয়ই কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত। ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল।” [সূরা ৭২; আল-জিন ৬]
 
Top