জীবনী শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম আল বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ) এর জীবনি

  • Thread Author
ফাদ্বিলাতুশ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম আল বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ) এর জীবনি:

শাইখের জীবনবৃত্তান্ত জানতে চেয়ে তার এক ছাত্র তাকে প্রশ্ন করেছিল। শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) এর উত্তর অনুবাদ করে দেয়া হলো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.), তাঁর পরিবার ও সমস্ত সাহাবীর উপর। আম্মা বাদ:

এটি আমাদের প্রিয় শাইখ, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম আল-বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী। কিছু ভাইয়ের অনুরোধে, যাঁরা শাইখের জীবনবৃত্তান্ত জানতে আগ্রহী ছিলেন, আমি তাঁর অনুমতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করি। তিনি সদয় হয়ে উত্তর দিয়েছেন। নিম্নে প্রশ্নোত্তরসমূহ পেশ করা হলো:

প্রথম প্রশ্ন:
"হে আমাদের শাইখ! অনুগ্রহ করে আপনার পূর্ণ নাম, বংশপরিচয় ও নিসবত (উপাধি) জানাবেন কি?"

উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.), তাঁর পবিত্র পরিবার ও সাহাবায়ে কেরামের উপর, এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের উপর।

প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলছি:
নাম: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দির রহীম ইবনে হুসাইন ইবনে মাহমুদ আস-সা‘দী, অতঃপর আল-বুখারী আল-মাদানী।
নিসবত: বনু সা‘দ গোত্রের সাথে সম্পৃক্ত, যা তায়েফে অবস্থিত। আমার পিতা শাইখ আব্দুর রহীম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা শাইখ হুসাইন ও পূর্বপুরুষদের সূত্রে আমাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় প্রশ্ন:
"আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! জন্মস্থান সম্পর্কে জানতে চাই।"

উত্তর:
জন্মগ্রহণ করেছি পবিত্র মদিনা নববীতে, "বাবুত তাম্মার" মহল্লায়।

তৃতীয় প্রশ্ন:
"হে শাইখ! আপনার পিতা শাইখ আব্দুর রহীম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর জীবনী সম্পর্কে কিছু বলুন।"

উত্তর:
পিতার মর্যাদা বর্ণনা করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। তিনি ছিলেন শাইখ আব্দুর রহীম ইবনে হুসাইন ইবনে মাহমুদ (রাহিমাহুল্লাহ)। পূর্বে তাঁর নাম ছিল "মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম" (যুক্তনাম), কিন্তু সৌদি বেসামরিক রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী তিনি নাম পরিবর্তন করে "আব্দুর রহীম" রাখেন।

তিনি উসমানীয় শাসনামলে মায়ের কোলে এতিম অবস্থায় বেড়ে ওঠেন। শৈশবেই কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং "মাদ্রাসাতুল উলূমিশ শার‘ইয়্যাহ"-তে অধ্যয়ন করেন। আর্থিক দায়িত্বের কারণে ডিগ্রি শেষের এক বছর বাকি থাকতে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন। তবে কর্মজীবনের পাশাপাশি মসজিদে নববীতে আলেমদের মজলিসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। পরবর্তীতে রিয়াদে চাকরি গ্রহণ করেন এবং হায়াতুল হিসবাহ-তে যোগদান করেন। এ সময় শাইখ উমার বিন হাসান আল শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর সততা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে প্রশংসাপত্র প্রদান করেন (দলিল নং: ২৩৯৬/ম/খ, তারিখ: ২৫/৯/১৩৭৭ হি.)।

১৩৮০ হিজরীতে মদিনার শারঈ আদালতে كاتب ضبط (নথি সংরক্ষক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শাইখ মুহাম্মাদ আল-হাফিজ, শাইখ আব্দুল কাদির আল-জাযায়েরী ও শাইখ আব্দুল মুঈন আবু যারআ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর সহকারী হিসেবে কাজকালে শাইখ আব্দুল আযীয বিন সালিহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর কর্মনিষ্ঠার প্রশংসা করেন (দলিল তারিখ: ২১/৯/১৩৯২ হি.)।

১৩৮৮ হিজরীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অধীনে কাজ করে "حسن السيرة والسلوك" (সুচরিত্র ও নিষ্ঠা) এর স্বীকৃতিপত্র লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি মসজিদে ইমাম বুখারী-র খাদিম হিসেবে ৩৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং কুরআন শিক্ষাদানে নিবেদিত ছিলেন। ২৩/১২/১৪২২ হিজরীতে রোজা রাখা অবস্থায় মসজিদে নববীর সিঁড়িতে ইন্তিকাল করেন।

তিনি ১৩ সন্তান রেখে যান। নিষ্ঠাবান, সুন্নতের অনুসারী, বিদ‘আতবিরোধী এবং আলেমদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। শাইখ মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকীতী, শাইখ বিন বায, শাইখ আব্দুর রহমান আস-সা‘দী, শাইখ হাম্মাদ আল-আনসারী প্রমুখ আলেমদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।

বিশেষ ঘটনা:
তিনি প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন এবং মসজিদে নববীতে সেসব দিনে "মায়েদা" (ভোজের আয়োজন) করতেন। ইন্তিকালের দিনও তিনি রোজাদার ছিলেন। মসজিদে যাওয়ার পথে দরজা নং ২৯-এর কাছে হঠাৎ পড়ে যান এবং রোজা অবস্থায়ই ইহলোক ত্যাগ করেন। আল্লাহ তাঁর মর্যাদা উচ্চ করুন, আমীন!

চতুর্থ প্রশ্ন:
"আল্লাহ আপনার উপর বারাকাত দিন! হে শাইখ, আপনার ইলম অর্জনের পথ ও শিক্ষকগণের পরিচয় জানতে চাই।"

উত্তর:
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি পিতা-মাতার স্নেহছায়ায় বেড়ে উঠেছি। তাঁরা সুন্নাতভিত্তিক তরবিয়তের প্রতি সর্বদা সচেতন ছিলেন। আমার পিতা (রাহিমাহুল্লাহ) আমাদের নামাজের জামাত, বিদ‘আত ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক করতেন। মাহফিলে নববীর মতো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ আলেমদের ফাতাওয়া শোনাতেন। এ সবই আমাকে ইলমের পথে আকর্ষিত করে।

কুরআন ও তাজবীদ শিক্ষা:
শৈশবে মসজিদে ইমাম বুখারী-তে পিতার তত্ত্বাবধানে কুরআন হিফজ শুরু করি। পরে কিছু বিরতি থাকলেও আল্লাহর ফজলে হিফজ সম্পন্ন করি। তাজবীদ ও কিরাআতের শিক্ষা লাভ করি নিম্নোক্ত উস্তাযগণের নিকট:
১. শাইখ মুহাম্মাদ রমাদান আদ-দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ)
২. শাইখ সাইয়্যিদ লাশিন আবুল ফারাজ (হাফিযাহুল্লাহ): তাঁর কাছে কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ও তাজবীদে দক্ষতা অর্জন করি।
৩. শাইখ আহমাদ আব্দুল কারীম (রাহিমাহুল্লাহ)
৪. শাইখ মুহাম্মাদ আল-মুরসী (রাহিমাহুল্লাহ): তাঁর নিকট আল-বুরহান ফী তাজবীদিল কুরআন (সাদিক কুমহাওয়ী) অধ্যয়ন করি। আরবি ক্যালিগ্রাফি ও আজুরুমিয়্যাহ (নাহু)ও শিখি।
৫. শাইখ বাকরী আত-তরাবিশী (রাহিমাহুল্লাহ): তাঁর কাছ থেকে কুরআনের ইজাযা লাভ করি।
৬. শাইখ আহমাদ আল-কাযী (হাফিযাহুল্লাহ): হক্কুত তিলাওয়াহ (হুসনী শাইখ উসমান) গ্রন্থ অধ্যয়ন করি।

অন্যান্য শাস্ত্রের শিক্ষকবৃন্দ:
১. শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ): প্রায় ১০ বছর তাঁর সোহবতে আকীদা, হাদীস ও ফিকহ্ অধ্যয়ন করি। উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহ:

উসূলুস সুলাসাহ, কিতাবুত তাওহীদ (ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব)

ফাতহুল মাজীদ, কুররাতু উয়ুনিল মুওয়াহহিদীন (তাওহীদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ)

ইবনে তাইমিয়্যার আল-ওয়াসিতিয়্যাহ, আল-হামাওয়িয়্যাহ

শারহু ত্বাহাবিয়্যাহ (ইবনে আবিল ইযয হানাফী)

আল-আজুরূমিয়্যাহ (নাহু), নাইলুল আওতার (শাওকানী) থেকে নির্বাচিত অধ্যায়।

২. শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ): ১৬ বছর তাঁর দরসে শরিক হই। অধ্যয়নকৃত গ্রন্থ:

সহীহ মুসলিম (শেষ খণ্ড), সহীহ বুখারী, সুনানে নাসাঈ, সুনানে আবু দাউদ, জামে তিরমিযী।

রমজানে লু'লু ওয়া মারজান (ফিকহুল হাদীস) ও অন্যান্য গ্রন্থের দরস।

৩. শাইখ উমার বিন মুহাম্মাদ ফালাতাহ (রাহিমাহুল্লাহ): তাঁর নিকট সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও সীরাত বিষয়ক দরসে অংশগ্রহণ।

৪. শাইখ আতিয়্যাহ সালিম (রাহিমাহুল্লাহ): মুযাক্কারাতুশ শানকীতী (উসূলুল ফিকহ), আর-রাহবিয়্যাহ (ফারায়েয) ও আল-ওয়ারাকাত (উসূল)।

৫. শাইখ আলী বিন মুহাম্মাদ সিনান (রাহিমাহুল্লাহ): আলফিয়্যাতু ইবনে মালিক (নাহু), ইরশাদুল ফুহূল (উসূলুল ফিকহ) ও আর-রাউদুল মুরবি‘ (হাম্বলী ফিকহ)।

৬. শাইখ রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ): মুকাদ্দিমাতু সহীহ মুসলিম, আত-তাকয়ীদ ওয়াল ইযাহ (ইরাকী) ও ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ীন (ইবনুল কাইয়িম) অধ্যয়ন।

৭. শাইখ সফিউর রহমান আল-মুবারকফূরী (রাহিমাহুল্লাহ): দুই বছর তাঁর বিশেষ মজলিসে সিহাহ সিত্তাহ-এর অংশবিশেষ, উসূলুস সুন্নাহ (ইমাম আহমাদ) ও ভারতীয় নাহু-সরফের কিতাবসমূহ পড়া।

৮. শাইখ আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন-নাজমী (হাফিযাহুল্লাহ): সুনানে আবু দাউদ-এর দরসে অংশগ্রহণ ও ইজাযা লাভ।

৯. শাইখ আলী বিন নাসের আল-ফাকিহী (হাফিযাহুল্লাহ): হজের সময় সারীহুস সুন্নাহ (ইবনে জারীর তাবারী) ও সিলালাতুর রিসালাহ (মোল্লা আলী কারী) অধ্যয়ন।

১০. শাইখ উবাইদ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ): মুযাক্কারাতুশ শানকীতী ও আস-সাইলুল জারার (শাওকানী)-এর প্রথম খণ্ড পড়া।

১১. শাইখ আব্দুর রহমান আল-কুনী: মুলাহাতুল ই‘রাব (হারীরী) ও নাহু বিষয়ক বিশেষ মজলিস।

বিশেষ নোট:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুল্লিয়াতুল হাদীস-এ অধ্যয়নকালে সকল শিক্ষকই আমার শাইখের মর্যাদায় অভিষিক্ত। তবে এখানে শুধু আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার বাইরের শিক্ষকদের তালিকা উপস্থাপন করা হলো। আল্লাহ সকলকে উত্তম প্রতিদান দিন
.

পঞ্চম-প্রশ্ন: হে আমাদের শাইখ! আপনার কি মহান আলেম আব্দুল আযীয ইবনে বায, মুহাম্মাদ বিন সলেহ আল-উছাইমীন ও আলবানী (রহিমাহুমুল্লাহ) দের সাথে সাক্ষাত বা সম্পর্ক ছিল?

উত্তর: আপনি যাদের নাম উল্লেখ করেছেন, তারা আহলে সুন্নাতের গর্ব। তারা সুন্নাতের ইমাম ও প্রখ্যাত আলেম। তাদের সাথে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলে যে কেউ গর্ববোধ করেন। তাই আমি বলছি:

যেসব আলেমকে আমি আমার শাইখদের মধ্যে গণ্য করি, তাদের মধ্যে রয়েছেন:
১. ইমাম, শাইখুল ইসলাম আব্দুল আযীয ইবনে বায রহিমাহুল্লাহ।
১৪০৮ হিজরীর গ্রীষ্মে তায়েফের তাঁর মসজিদে তাঁর কিছু দরসে অংশগ্রহণ করি। তিনি তখন ইবনে হাজার রহ.-এর বুলুগুল মারাম গ্রন্থের ব্যাখ্যা করছিলেন। তাঁর সাথে একাধিক সাক্ষাৎ হয়েছে এবং আমি তাঁকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি। তায়েফে তাঁর বাসভবনে তুহফাতুল আহওয়াযী (তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ) পাঠের মজলিসেও উপস্থিত ছিলাম। আল্লাহর শুকরিয়া, সেখানে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে আমি তৃতীয় ব্যক্তি ছিলাম—শাইখ, পাঠক এবং আমি। একবার আমি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন। হাদিস অনুষদ সম্পর্কে জানতে চাইলে আরও বেশি উৎসাহ দেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন।

২. মহান ফকীহ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমীন রহিমাহুল্লাহ।
১৪০৭ হিজরীর রমজানের শেষ দশকে মসজিদুল হারামে তাঁর দরসে অংশ নিয়েছি। তিনি তখন সহীহ মুসলিমে বর্ণিত জিবরীল আলাইহিস সালামের দীর্ঘ হাদিস ব্যাখ্যা করছিলেন। আমি তাঁর থেকে প্রাপ্ত সকল ফায়দা লিপিবদ্ধ করেছি। ১৪০৮ ও ১৪০৯ হিজরীতে গ্রীষ্মকালে উনাইযায় তাঁর দরসে যোগ দিতে সফর করেছি। মসজিদে নববীতেও তাঁর সকল দরসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছি এবং তাঁর সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করেছি।

৩. মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ।
১৪০৮ হিজরী সনে মদিনা নববীতে তাঁর সফরকালে আল্লাহ তাআলা আমাকে তাঁর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। পরবর্তীতেও তিনি মদিনায় এসেছিলেন, তাই তাঁর সকল সাধারণ মজলিসে অংশ নিয়েছি এমনকি কিছু ব্যক্তিগত মজলিসেও শরিক হয়েছি। একদিন যোহরের নামাজ শেষে তিনি মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজ বাসায় যাচ্ছিলেন। আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু প্রশ্ন করি। তিনি আমার হাত ধরে তাঁর ডান হাতের আঙুল আমার বাম হাতের আঙুলের সাথে জড়িয়ে ধরলেন এবং আমার নাম ও পড়ালেখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে থাকলেন। এভাবে তাঁর দ্রুত চলার গতির সাথে তাল মিলিয়ে আমি তাঁর সাথে তাঁর বাসায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে তিনি অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন, আর আমি ফিরে আসি। আল্লাহ তাঁকে ও আমাদের সমস্ত আলেমদের প্রতি প্রশস্ত রহমত বর্ষণ করুন।
.

প্রশ্ন-৬: আপনি কোন কোন আলেম থেকে ইজাযাহ (সনদ) লাভ করেছেন?

উত্তর: আমি যথাসম্ভব পাঠ সম্পন্ন করে ইজাযাহ গ্রহণের চেষ্টা করেছি। পূর্বে উল্লিখিতদের পাশাপাশি আরও যাদের নাম বলি:
১. শাইখ বাকরি ত্বরাবিশি রহিমাহুল্লাহ।
২. শাইখ সফিউর রহমান মবারাকপুরী রহিমাহুল্লাহ।
৩. শাইখ আহমাদ নাজমী রহিমাহুল্লাহ।
এদের সাথে আরও যোগ করি:
৪. মুহাদ্দিস আবু মুহাম্মাদ বদীউদ্দীন শাহ রাশেদি সিন্দি রহিমাহুল্লাহ। তিনি ১৫ রজব ১৪১৬ হিজরীতে আমার চিঠির জবাবে একটি লিখিত ইজাযাহ প্রেরণ করেন। মাত্র এক মাস তিন দিন পর ১৮ শাওয়াল ১৪১৬ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি তার মুনজিদুল মুসতাজীয লি রিওয়ায়াতিস সুন্নাহ ওয়াল কিতাবিল আজীয নামক সনদগ্রন্থটি আমাকে পাঠিয়েছিলেন।
এছাড়াও অন্যান্য আলেমগণ আমার অনুরোধ ছাড়াই ইজাযাহ প্রেরণ করেছেন। আল্লাহই একমাত্র সাহায্যকারী।

প্রশ্ন-৭: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?

উত্তর:
১. স্নাতক: ১৪১০-১৪১১ হিজরীতে কুলিয়াতুল হাদীস ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ (হাদীস ও ইসলামিক স্টাডিজ কলেজ) থেকে জায়্যিদ জিদ্দান (অত্যন্ত ভালো) গ্রেডে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন।
২. শিক্ষকতা: সাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয় (বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়)-এর অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে ৬ বছর শিক্ষকতা।
৩. মাস্টার্স: ১৪১৭ হিজরীতে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাওয়াহ ও উসুলুদ্দীন অনুষদের কিতাব ওয়া সুন্নাহ বিভাগ থেকে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে মুমতায (অতি উত্তীর্ণ) গ্রেডসহ ডিপার্টমেন্টে প্রথম স্থান অধিকার।
৪. মাস্টার্স থিসিস: আবু উবাইদা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রহ.-এর পিতা থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহের সংকলন ও গবেষণা শীর্ষক থিসিস ২১ আগস্ট ১৪২০ হিজরীতে জমা দিয়ে মুমতায গ্রেডসহ অনুমোদন লাভ। থিসিসটি প্রকাশের সুপারিশ সহ গৃহীত হয়।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান: ১৪১৮ হিজরীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুলিয়াতুল হাদীস (হাদীস কলেজ)-এর ফিকহুস সুন্নাহ ওয়া মাসাদিরুহা (সুন্নাহর ফিকহ ও এর উৎস) বিভাগে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ।
৬. ডক্টরেট: ১৪২৬ হিজরীতে তাকমিলাতু শরহি তিরমিযী (হাফেয ইরাকী রহ.-এর তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যার সম্প্রসারণ) শীর্ষক গবেষণার মাধ্যমে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন। গবেষণার পরিধি ছিল কিতাবুর রাদাআ (স্তন্যপান সংক্রান্ত অধ্যায়) থেকে শুরু করে কিতাবুল বিয়ু (ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়)-এর ইযা আফলাসা লির রিজালি গারীম... (যখন কারো ঋণগ্রস্ত হওয়ার পর...) পর্যন্ত। ডিগ্রিটি মুমতায মা‘আ মারতিবাতিশ শারাফিল উলা (প্রথম শ্রেণীতে অতি উত্তীর্ণ) গ্রেডে অনুমোদিত।

৭. বর্তমান পদ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুল্লিয়াতুল হাদীস ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ-এ ফিকহুস সুন্নাহ ওয়া মাসাদিরুহা বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত। প্রফেসর (সহযোগী) পদোন্নতির জন্য গবেষণাপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা সহজ করুন।

প্রশ্ন-৮: হে আমাদের শাইখ! আপনার রচিত গ্রন্থসমূহের নাম কী কী?

উত্তর: জ্ঞানচর্চা ও তা প্রচারে অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা আমাকে এ ক্ষেত্রে অনুগ্রহ করেছেন। তাঁর সাহায্যে আমি বহু গ্রন্থ রচনা করেছি। আল্লাহ যেন তা কবুল করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. মারওয়িয়াতু আবি উবাইদা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (আবু উবাইদার পিতা থেকে বর্ণিত হাদীসের সংকলন ও গবেষণা)। রচনা। দার আওয়াউস সলফ, মিসর থেকে প্রকাশিত।

২. তাকমিলাতু শরহি তিরমিযী (হাফেয ইরাকী রহ.-এর তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যার সম্প্রসারণ)। তাখরীজ ও সম্পাদনা। অপ্রকাশিত।

৩. মিনারুস সাবীল (ইবনে দীযীলের রচনার তাখরীজ)। তাখরীজ। প্রথম প্রকাশ: ১৪১৩ হিজরীতে মদিনার দারুল গুরাবা থেকে। বর্তমানে দারুল ইমাম আহমদ, মিসর থেকে পুনর্মুদ্রিত (১৪২৮৯ হিজরী)।

৪. ইতহাফুন নুবালা (নারীদের অবৈধ অঙ্গ ব্যবহারের হারাম প্রমাণ)। রচনা। ১৪১৪ হিজরীতে মদিনার দারুল গুরাবা থেকে প্রকাশিত। পরবর্তীতে মিসরের দারুল মিনহাজ থেকে পুনর্মুদ্রিত (১৪২৮ হিজরী)।

৫. রিয়াজুল জান্নাহ (ইবনে আবি যামানীনের উসুলুস সুন্নাহ'র তাখরীজ)। তাখরীজ ও সম্পাদনা। ১৪১৪ হিজরীতে দারুল গুরাবা থেকে প্রকাশিত। বর্তমানে মিসরের দার আওয়াউস সলফ থেকে পুনর্মুদ্রণাধীন।

৬. তাহফাতুল ইখওয়ান (ইবনে বিশরানের আমালী'র একটি মজলিসের তাখরীজ)। তাখরীজ ও সম্পাদনা। পাণ্ডুলিপি অবস্থায়, অপ্রকাশিত।

৭. আত-তানবীহ ওয়াল ইরশাদ (মাহমুদ হাদ্দাদের ভুলত্রুটির সমালোচনা)। রচনা। ১৪১৪ হিজরীতে টাইপরাইটেড ও ফটোকপি আকারে প্রচারিত।

৮. আল-ফাতহুর রব্বানী (আবুল হাসান সুলাইমানীর জবাব)। রচনা। ১৪২৪ হিজরীতে ইয়েমেনের দারুল আছার থেকে প্রকাশিত। ১৪২৫ হিজরীতে জেদ্দার দার মাজিদ আসিরী থেকে পুনর্মুদ্রিত।

৯. আত-তাউদীহুল আবহার (সাখাবী রহ.-এর তাযকিরাতু ইবনুল মুলাক্কিন ব্যাখ্যা)। তাখরীজ। ১৪১৮ হিজরীতে রিয়াদের দার আওয়াউস সলফ থেকে প্রকাশিত। বর্তমানে মিসরের দারুল ইমাম আহমদ থেকে পুনর্মুদ্রিত।

১০. মাকালাত শারইয়্যাহ (১ম খণ্ড)। রচনা। আলেম আহমাদ নাজমী ও যায়েদ মাদখালী হাফিযাহুমাল্লাহর ভূমিকাসহ। ১৪২৮ হিজরীতে UAE-র দারুল মাদীনাহ আল-ইলমিয়্যাহ ও মিসরের দার আওয়াউস সলফ থেকে প্রকাশিত।

১১. মাকালাত শারইয়্যাহ (২য় খণ্ড)। রচনা। ১৪২৯ হিজরীতে দার আওয়াউস সলফ, মিসর থেকে প্রকাশিত।

১২. আল-আজুব্বাতুল মাদানিয়্যাহ (হাদীস বিষয়ক প্রশ্নোত্তর)। রচনা। ১৪২৯ হিজরীতে মিসরের দারুল ইস্তিকামাহ থেকে প্রকাশিত।

১৩. মুসতালাহাতুল মুহাদ্দিসীন (হাদীস লিখন, বিশুদ্ধকরণ ও সম্পাদনার পরিভাষা)। গবেষণা পত্র। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত।

১৪. সুয়ালাতু আবি যুরআ আদ-দিমাশকী (ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.-এর নিকট আবু যুরআর প্রশ্নাবলী)। গবেষণা পত্র। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগ দ্বারা অনুমোদিত। দারুল ইস্তিকামাহ, মিসর থেকে প্রকাশিতব্য।

১৫. তামামুল মিন্নাহ (ইমাম হুমাইদীর উসুলুস সুন্নাহ'র ব্যাখ্যা)। রচনা। ১৪২৯ হিজরীতে দারুল ইস্তিকামাহ, মিসর থেকে প্রকাশিত।

১৬. শারহুল বাইকুনিয়্যাহ (বাইকুনী রচিত হাদীস পরিভাষার কাব্য)। রচনা। দারুল ইস্তিকামাহ থেকে প্রকাশিতব্য।

১৭. শারহুল মাওকিযাহ (যাহাবী রহ.-এর আল-মাওকিযাহ'র অডিও বক্তৃতার লিখিত রূপ)। দারুল ইস্তিকামাহ দ্বারা প্রকাশনার অপেক্ষায়।

এছাড়াও আরো কিছু রচনা রয়েছে। আল্লাহ প্রকাশের তাওফীক দিন।

প্রশ্ন-৯: আপনি কোন কোন কিতাব পড়িয়েছেন?

উত্তর: আমার পাঠদানকৃত কিতাবসমূহ দুই ভাগে বিভক্ত:
ক) সম্পূর্ণ পড়ানো হয়েছে:
১. তাজবীদ: হাক্কুত তিলাওয়াহ (হুসনী শাইখ উসমান), আল-বুরহান ফী তাজবীদিল কুরআন (সাদিক কামহাবী)।
২. আকীদা: আল-উসুলুস সুলাসাহ, আল-কাওয়াইদুল আরবাআহ, কিতাবুত তাওহীদ (ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব), ফাতহুল মাজীদ (শাইখ সুলাইমান ইবনে আব্দুল্লাহ), সুলামুল উসুল (হাফেয হাকামী)।
৩. হাদীস: সহীহ বুখারীর "কিতাবুত তাওহীদ", "কিতাবুল ঈমান", "কিতাবুর রিকাক"; উমদাতুল আহকামুল কুবরা ওয়াস সুগরা (মাকদিসী), বুলুগুল মারাম (ইবনে হাজার), আল-আরবাঈন আন-নববিয়্যাহ (নববী)।
৪. উসুলুল হাদীস: আল-বাইকুনিয়্যাহ, ইখতিসার উলুমিল হাদীস (ইবনে কাসীর), নুখবাতুল ফিকর (ইবনে হাজার), আল-মাওকিযাহ (যাহাবী), আল-মুকনিআ (ইবনে মুলাক্কিন)।
৫. ফিকহ: আল-ওয়ারাকাত (মারদীনী), মানহাজুস সালিকীন (সা‘দী)।
৬. আদব ও তাসাওউফ: আল-আদাবুল মুফরাদ (বুখারী), আর-রিসালাতুত তাবুকিয়্যাহ (ইবনে কাইয়্যিম), আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব।

খ) চলমান রয়েছে:
৭. তাফসীর ও অন্যান্য: আল-ইমান (আবু উবাইদ কাসেম ইবনে সালাম), আস-সুনান (মুযানী), সারীহুস সুন্নাহ (ইবনে জারীর), আল-ওয়াসিতিয়্যাহ (ইবনে তাইমিয়্যাহ), মুখতাসার সহীহ বুখারী (যুবাইদী)।

ইলমে রিজাল: যাওয়াবিতুল জারহি ওয়াত তা‘দীল (আব্দুল আযীয আব্দুল লাতীফ), আর-রাফিউ‘ ওয়াত তাকমীল।

অন্যান্য: তারীখে তাখরিজে হাদীস (আমার নিজস্ব পাণ্ডুলিপি), আল-জামি‘ লি আখলাকির রাবি (খতীব বাগদাদী), মতন আল-আজুরুমিয়্যাহ।

আল আজ্জুরি সাইট থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।

জয়েন টেলিগ্রাম: ideology of salaf
 

Attachments

  • hq720 (2).jpg
    hq720 (2).jpg
    56.8 KB · Views: 10
Last edited:
Back
Top