প্রবন্ধ শারঈ বিষয়ে মতভেদ থাকা সত্ত্বেও সালাফে স্বলেহীন যেমন ছিলেন।

Touhidur Rahman Salafi

Salafi
Salafi User
Joined
Apr 20, 2023
Threads
6
Comments
10
Reactions
86
মুসলিম বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও উলামায়ে কেরামের মধ্যে শরীআতের বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েলে মতানৈক্য দেখা যায়। আর এই মতভেদের কারণে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দল ও ফেরকা তৈরি হয়েছে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
‘আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)। মহান আল্লাহ আরও বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
‘নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই’ (আল-আনআম,৬/১৫৯)।

এ জাতীয় বহু প্রমাণ আছে যা দ্বারা বুঝা যায় যে, ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করা এবং দলাদলি হতে বিরত থাকা প্রত্যেকের একান্ত কর্তব্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও জ্ঞানীদের মধ্যে বিশেষ কারণবশত মতভেদ থাকতে পারে।

জ্ঞানীদের মধ্যে যে মতানৈক্য দেখা যায়, তার অধিকাংশই ছোটখাটো বা শাখাগত বিষয়। এইসব মতভেদ সম্পূর্ণরূপে মিটানো সম্ভব নয়, তবে কমানো অবশ্যই সম্ভব। এই মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও পরস্পরকে সম্মান করা, সৌজন্যমূলক আচরণ করা, গালমন্দ ও খারাপ সমালোচনা থেকে বিরত থাকা প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়। তাছাড়া মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে মিলেমিশে থাকা যায় এবং এক্ষেত্রে ইসলামের যে শিক্ষা রয়েছে তার আলোকে কীভাবে নিজেদের জীবন গড়া যায়, তা নিয়ে সর্বদা ভাবতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষ করে আলেম সমাজকে বেশি ভাবতে হবে এবং উদারতার পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

মহান আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,
أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلْكَٰفِرِينَ
‘তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে’ (আল-মায়েদা, ৫/৫৪)। মুমিনের প্রতি নরম আর কাফেরের প্রতি কঠোর আচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের নৈতিক আদর্শ হওয়া যেমনটি ছিল ছাহাবায়ে কেরামের আচরণ। পরস্পরের মধ্যে মুমিনের আচরণ কেমন হবে এবং কাফেরের সাথে সে কেমন ব্যবহার করবে তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَشِدَّاءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
‘তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল’ (আল-ফাতহ, ৪৮/২৯)।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, নিজেদের মধ্যে সামান্য মতভেদকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, কেউ কাউকে একদমই সহ্য করতে পারে না। আর মাযহাবী ক্ষেত্র হলে তো কথাই নেই। সেটা তিক্ততার এমন কঠিন পর্যায়ে চলে যায় যে, তা কোনো অমুসলিমের ক্ষেত্রেও ঘটে না। নিজের মত বা বিশ্বাসকে অভ্রান্ত সত্যের উত্স মনে করে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় যে, তাকেই একমাত্র দ্বীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়; যা মোটেও কাম্য নয়। তারা মনে করছে যে, নিজ পথ বা মাযহাবের প্রচার করছে মানে প্রকৃত দ্বীন প্রচার করছে।

নিজের বিশ্বাস বা মাযহাব রক্ষার চেষ্টা করা মানে দ্বীন রক্ষার চেষ্টা করা। এটাই আমাদের দুর্বলতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীআতের মাসআলা-মাসায়েল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে মতভেদপূর্ণ মাসআলা কম, কিন্তু এই মতভেদপূর্ণ মাসআলাগুলোই বেশির ভাগ সময় বিজয়ী হয়ে থাকে। সর্বদাই আমরা এসব মাসআলার পেছনে লেগে রয়েছি অথচ শরীআতের আরও অনেক মাসআলা আছে, যাতে কোনো রকম মতপার্থক্য নেই। সেগুলো নিয়ে আমাদের সেরকম আলোচনা হয় না বললেই চলে। কেন এই অবস্থা? যখন এতগুলো বিষয়ে ঐক্য রয়েছে। তখন আংশিক বিষয়গুলোতে কেন ঐক্য হয় না? ইখতিলাফী বিষয়গুলো কেন সর্বদা প্রাধান্য পাচ্ছে? এসব বিষয় সব সময় কেন আমাদের মস্তিষ্কে ও সমাজে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে?

‘আদাবুল খেলাফ’ অর্থাৎ মতভেদের আদব সম্পর্কে অনেক লেখনি, প্রবন্ধ, বই ইত্যাদি লেখা হয়েছে। এই বিষয়ের মূলকথা এই যে, একে অপরের সাথে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও পরস্পরকে সম্মান করতে হবে, ভালোবাসা বজায় রাখতে হবে, মিলেমিশে থাকতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে, পরামর্শ দিতে ও নিতে হবে ইত্যাদি। এসব বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

এর অনেক দৃষ্টান্ত স্বর্ণ যুগ থেকে আজ পর্যন্ত হাদীছের পাতায়, ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়।[1]

কতিপয় উদাহরণসমূহ :
(১) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মতভেদ : উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দুজনেই বিখ্যাত ছাহাবী ছিলেন। ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন যে, দুজনের মধ্যে ১০০টিরও অধিক বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। চিন্তা করুন! ১০০টিরও অধিক বিষয়ে মতভেদ ছিল, কিন্তু তারা কি পরস্পর ঝগড়া করতেন? অশালীন সমালোচনা করতেন? পরস্পরে ঘৃণা করতেন? না, কখনোই না। তাদের জীবনীতে লেখা রয়েছে, উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সম্পর্কে বলতেন যে,
كَنِيفٌ مُلِئَ عِلْمًا آثَرْتُ بِهِ أَهْلَ الْقَادِسِيَّةِ
‘তিনি (ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)) হচ্ছেন ইলমের আশ্রয়স্থল, আমি তাঁর কারণেই কাদেসিয়াবাসীদের প্রতি প্রভাবিত হয়েছি’।[2]

শত মতভেদ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তার জ্ঞানের প্রশংসা করছেন। অপরদিকে ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যুর পর বলতেন,
إِنَّ عُمَرَ كَانَ لِلْإِسْلَامِ حِصْنًا حَصِينًا يَدْخُلُ فِيهِ الْإِسْلَامُ وَلَا يَخْرُجُ مِنْهُ فَلَمَّا قُتِلَ عُمَرُ انْثَلَمَ الْحِصْنُ فَالْإِسْلَامُ يَخْرُجُ مِنْهُ وَلَا يَدْخُلُ فِيهِ
‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন ইসলামের এক অতি মযবূত দূর্গ, তার মাধ্যমে ইসলাম (বিভিন্ন স্থানে) প্রবেশ করেছিল কিন্তু কখনোও (সে স্থানগুলো থেকে) ইসলাম বের হয়নি। যখন তিনি শহীদ হয়ে গেলেন, তখন সে দূর্গ ভেঙে গেল, ফলে সেখান থেকে ইসলাম বেরিয়ে গেল আর প্রবেশ করল না’।[3] এই ছিল তাদের পরস্পর ভালোবাসা ও সম্মানের দৃষ্টান্ত। আজ আমরা কোথায়?

(২) যায়েদ ইবনু সাবিত ও আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মতভেদ : আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)সহ অনেক সাহাবীর মতোই ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মত ছিল যে, পিতার উপস্থিতিতে যেমন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার থেকে ভাই-বোন বঞ্চিত হয়ে যায়, ঠিক তেমনি দাদার উপস্থিতিতেও ভাই-বোন বঞ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু যায়েদ ইবনু সাবিতসহ অন্যান্য সাহাবীর মত ছিল, দাদার উপস্থিতিতে ভাই-বোনের অংশ বলবৎ থাকবে।

একদিন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আশ্চর্য ব্যাপার! যায়েদের আল্লাহর ভয় হয় না? পৌত্র (পোতা)-কে পুত্রের স্থান দিচ্ছে কিন্তু দাদাকে পিতার স্থান দেয় না!

তবুও দেখুন, পরস্পরের ভালোবাসা ও সম্মান। একদা ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যায়েদ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আরোহণ অবস্থায় দেখলেন। তারপর ইবনু আব্বাস যায়েদ ইবনু সাবিতের পশুর লাগাম ধরে চলতে লাগলেন। তাঁকে লাগাম ছাড়তে বলা হলে, তিনি বললেন, উলামা ও বড়দের সাথে আমাদের এ ধরনের আচরণ করতে হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবার যায়েদ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আপনার হাতটা আমাকে একটু দেখাবেন? সঙ্গে সঙ্গে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিজের হাতখানা বের করে দেখালেন। দেখামাত্রই যায়েদ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার হাতে চুমু দিয়ে বলেন, আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আহলে বায়েতের সাথে এ ধরনের আচরণ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া যখন যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যু হয়, তখন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেন, এভাবেই জ্ঞান শেষ হয়ে যাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এভাবেই ইলম শেষ হয়ে যায়, আজকে অনেক জ্ঞান দাফন করা হলো।

এই ছিল সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসা ও সম্মানের দৃষ্টান্ত। সাহাবীগণের এরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়।
এবার কিছু উদাহরণ আয়িম্মা ও মুহাদ্দিসগণের যুগ থেকে দেখা যাক :

(১) ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিখ্যাত ঘটনা : ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বয়স ছিল ১৫ বছর। এটা ছিল তার ছাত্রজীবনের ঘটনা। এক ব্যক্তির ঘটনা সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, একটা বুলবুল পাখি সবসময় কিচিরমিচির করবে এই শর্তে ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু সেটা দিনের কিছু অংশে কিচিরমিচির করে, সারা দিন করে না। তখন ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন, সেই পাখিকে ফেরত দেওয়া বৈধ হবে। প্রশ্নকারী ফিরে গিয়ে ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যদি দিনের বেশিক্ষণ কিচিরমিচির করে, তবে ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই। প্রশ্নকারী ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এই বিষয়ে আবার চিন্তা-ভাবনা করতে বললেন; কিন্তু তিনি বললেন, সেটাই আমার মত, যেটা আমি তোমাকে বলেছি। প্রশ্নকারী বলেন, আপনার একজন সুযোগ্য ছাত্র বলেছেন যে, ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই। তখন ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, তাকে ডেকে নিয়ে এসো। তারপর ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে উপস্থিত করা হলে তিনি বললেন, তুমি বলেছ, সেটা ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সেটা তুমি কীভাবে বলছ? তখন ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ফাতেমা বিনতু ক্বয়েস (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছ শুনিয়ে বললেন, নবী করীম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বললেন, আবূ জাহাম এমন একজন লোক, যে তার কাঁধ থেকে লাঠি নামিয়ে রাখে না। আর মুআবিয়া গরীব মানুষ, তুমি উসামাকে বিয়ে করে নাও। তিনি এখান থেকে বুঝাতে চাইছেন যে, আবূ জাহাম কাঁধ থেকে লাঠি রাখে না অর্থাৎ সবসময় সফর করে কিন্তু অনেক সময় বাড়িতেও থাকে। অতএব, এখান থেকে নবী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অধিকাংশ সময় ধরে নিয়ে সম্পূর্ণ সময়কে বুঝাতে চেয়েছেন আর এই ধরনের তা‘বীর (ব্যাখ্যা) আরবী ভাষায় বৈধ রয়েছে। এর জন্য আমিও বললাম যে, দিনের অধিকাংশ সময় কিচিরমিচির করলে তো সেটা ফেরত দেওয়া ঠিক হবে না। কেননা এটা সম্পূর্ণ সময়কে ধরে নেওয়া হয়েছে।

অবস্থা দেখুন, ইমাম মালেকর ছাত্র ইমাম শাফেঈ নিজের শিক্ষকের উত্তর অথবা মাসআলাকে খণ্ডন করেছেন। তবুও শিক্ষক নিজের ছাত্রের উপর অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং সেটা কবুল করে নিলেন। মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও এটাই ছিল পরস্পর ভালোবাসা ও সম্মানের উদাহরণ।[4]

(২) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনী (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর ঘটনা : একদা ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল ও আলী ইবনু মাদীনী (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর মধ্যে কোনো এক বিষয় নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। ওই দিন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে তিনি আরোহী অবস্থায় এসেছিলেন। বাহন থেকে নেমে সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। বর্ণনাকারী বলছেন, আলোচনার মধ্যে খুব উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ হতে শুরু করেছিল। কিন্তু আলোচনা শেষে রওনা হবার সময় ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) আলী ইবনুল মাদীনী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ভালোভাবে বাহনের উপর বসালেন এবং বিদায় জানালেন। সুবহানাল্লাহ! কী অবাক ঘটনা! এত তর্ক-বিতর্ক হওয়ার পরপরই এই ভালোবাসা ও সম্মান।

এগুলো তো ছিল সোনালিযুগের কিছু দৃষ্টান্ত। এবার দেখা যাক বিংশ শতাব্দীর কিছু উদাহরণ :

(১) আল্লামা সানাউল্লাহ আমৃতসরি (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন একজন বিখ্যাত আলেম এবং নামকরা মুনাযির (তার্কিক)। তিনি বিভিন্ন ফেরকা ও নানান ধর্মের লোকের সাথে মুনাযারা করেছেন। তাঁর একটা বড় গুণ ছিল যে, মুনাযারা (তর্ক) শেষে তিনি বিপক্ষের লোকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য দাওয়াত দিতেন এবং তার বাসায় অবস্থান করার দাওয়াত দিতেন।

(২) শায়খুল হাদীস ইসমাঈল সালাফী গুজরানওয়ালা (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, একদা হজ্জের মৌসুমে হাজীগণের দল একসাথে বের হয়ে স্টেশনে পৌঁছান। সেখানে খুব ভিড় ছিল। ছালাতের সময় হলে কিছুসংখ্যক লোক সেখানে কাতার হয়ে শায়খ ইসমাঈলকে ইমামতি করার জন্য আগে যেতে বলেন। যখনই তিনি মুসাল্লায় দাঁড়াতে যাবেন, তখনই পিছন থেকে আওয়াজ এলো যে, তাঁর পিছনে সালাত হবে না। কারণ তিনি সালাফী আক্বীদার মানুষ। তখন তিনি নিজের রুমাল কাঁধে নিয়ে পিছনে সরে গিয়ে বললেন, তাহলে আপনিই (নির্দিষ্ট কাউকে সম্বোধন করে) সালাত পড়িয়ে দিন। আপনার পিছনে আমার ছালাত হয়ে যাবে। সেই লোকটি তখন খুব লজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করল এবং তাকেই সালাত পড়াতে বলল। বর্তমান সময়ের মতো মানুষ যদি সেই জায়গায় থাকতো, তবে অবস্থা কেমন হতো! অন্ততপক্ষে এমনটা তো হতোই যে, ইমাম সাহেব তাঁর লোকদের নিয়ে একটা জামাআত করতেন, আর আরেকদল আরেকটা জামাআত করত। এভাবে দুই দলে বিভক্ত হয়ে যেত।[5]

বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত তিন জন ইসলামী পণ্ডিত আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনু বায ও আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উসায়মীন (রাহিমাহুমুল্লাহ), তাদের মধ্যেও অনেক বিষয়ে পরস্পরে মতবিরোধ দেখা যায়। এমনকি এই তিন জন শায়খকে নিয়ে দুই খণ্ডের একটি বই রচনা করা হয়েছে, যার নাম—
الإيجاز في بعض ما اختلف فيه الألباني وابن عثيمين وابن باز
এই বইয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উল্লিখিত শায়েখদের মতানৈক্যগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের প্রমাণ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতামতগুলোও বর্ননা করা হয়েছে। অথচ তারা পরস্পরে কোনোদিন শত্রুতা, ঝগড়া-বিবাদ, খারাপ সমালোচনা করেননি, বরং তারা একে অপরের প্রশংসা করেছেন এবং আন্তরিকতা ও সুধারণায় অন্যের জ্ঞানী হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের মতভেদ পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ রাখার জন্য ছিল না।

তার একটি উদাহরণ হলো রুকূর পরে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, রুকূর পরে বুকে হাত বাঁধা হচ্ছে বিদআত। কিন্তু শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, এটা স্পষ্ট ভুল ফৎওয়া; এটা বিদআত নয়, আর আমার জানা মতে কোনো আলেম এ রকম বলেননি।

তা সত্ত্বেও দেখুন! শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে বলছেন, আমি তার জ্ঞানের পরিধি ও পরিসর সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না। আমার জানামতে তিনি একজন সুযোগ্য আলেম। আমি সাক্ষ্য দিই যে, তিনি সুন্নাতের প্রতি খুবই আগ্রহী এবং অনেক উপকারী বই রচনা করেছেন। তবে অন্যান্য আলেমের মতো তাঁরও কিছু বিষয়ে ভুল হয়েছে, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন।

শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে বলছেন, ইবনু বায এমন একজন আলেম, যিনি ইসলামী দুনিয়াকে নিজের জ্ঞান দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।

এই ছিল তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানবোধ।

এছাড়া শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইবনু উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মধ্যেও কিছু মতানৈক্য ছিল। তার একটি উদাহরণ বলি, শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, ক্বিবলামুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা খোলা জায়গায় হোক অথবা কোনো আড়ালে হোক একেবারেই অবৈধ। কিন্তু ইবনু উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, খোলা জায়গায় ক্বিবলামুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা ঠিক নয়, তবে কোনো আড়াল থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এ ধরনের মতবিরোধের কারণে শায়খ ইবনু উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ছোট মনে করেননি, বরং তার জ্ঞানের প্রশংসা করে বলেছেন, ইবনু উসায়মীন হচ্ছেন, একজন বড় মাপের যোগ্য আলেম।[6]

সুধী পাঠক! উল্লিখিত উদাহরণসমূহ বর্ননা করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, সেখান থেকে আমাদের কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা আর তা হলো এই যে, আমাদের মধ্যে পরস্পরে মতভেদ থাকতেই পারে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, এই মতভেদের কারণে আমাদের কথা বা কাজের মাধ্যমে অপর পক্ষের যেন সম্মানহানি না হয় বা তারা যেন কষ্ট না পায়। আর এটাও ভাবা উচিত যে, কিছু বিষয় এমনও রয়েছে, যাতে কোনো রকমের আদর্শ বা বিশ্বাসের কথাই আসবে না, বরং সামাজিক ও মানবিক কল্যাণের জন্য হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে, তা না হলে আমাদের মধ্যে মদভেদ, বিরোধিতা, শত্রুতা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং ধ্বংসের পথ প্রশস্ত হতে থাকবে, যা আমাদের জন্য খুবই ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে।

আসুন! আমরা পরস্পরে মতভেদ, মতপার্থক্য ও ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। পরস্পরকে ভাই-ভাই মনে করে সকলেই দ্বীনে ইসলামের ছায়াতলে একতাবদ্ধ হই। আল্লাহ প্রদত্ত বিধান এবং রাসূল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আদর্শের আলোকে জীবন গড়ে তুলি। আমাদের ইহকাল-পরকালকে সাফল্যমণ্ডিত করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন! ছুম্মা আমীন!!
- তাওহীদুর রহমান ইবনু মঈনুল হক্ব
ফারেগ সালাফিয়া বেনারস উত্তর প্রদেশ।​


[1]. শায়খ আসআদ আ‘জামী (হাফি.) (শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বানারাস, ভারত)-এর লেখনী থেকে নেওয়া কিছু অংশ।
[2]. তারিখে দেমাশক, ৩৩/১৪৫।
[3]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/৩১৩৫৫।
[4]. ‘আদাবুল খেলাফ’-এর উর্দূ অনুবাদ সালীকায়ে ইখতিলাফ, পৃ. ৩৭।
[5]. শায়খ আসআদ আ‘জামী (হাফিযাহুল্লাহ) (শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বানারাস, ভারত)-এর লেখনী থেকে নেওয়া কিছু অংশ।
[6]. আল-ইজায ফী বা‘যি মা ইখতালাফা ফীহিল আলবানী ওয়া ইবনু উছায়মীন ওয়া ইবনু বায, পৃ. ৮৮।
 
মুসলিম বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও উলামায়ে কেরামের মধ্যে শরীআতের বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েলে মতানৈক্য দেখা যায়। আর এই মতভেদের কারণে ধীরে ধীরে বিভিন্ন দল ও ফেরকা তৈরি হয়েছে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
‘আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)। মহান আল্লাহ আরও বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
‘নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই’ (আল-আনআম,৬/১৫৯)।

এ জাতীয় বহু প্রমাণ আছে যা দ্বারা বুঝা যায় যে, ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করা এবং দলাদলি হতে বিরত থাকা প্রত্যেকের একান্ত কর্তব্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও জ্ঞানীদের মধ্যে বিশেষ কারণবশত মতভেদ থাকতে পারে।

জ্ঞানীদের মধ্যে যে মতানৈক্য দেখা যায়, তার অধিকাংশই ছোটখাটো বা শাখাগত বিষয়। এইসব মতভেদ সম্পূর্ণরূপে মিটানো সম্ভব নয়, তবে কমানো অবশ্যই সম্ভব। এই মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও পরস্পরকে সম্মান করা, সৌজন্যমূলক আচরণ করা, গালমন্দ ও খারাপ সমালোচনা থেকে বিরত থাকা প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়। তাছাড়া মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে মিলেমিশে থাকা যায় এবং এক্ষেত্রে ইসলামের যে শিক্ষা রয়েছে তার আলোকে কীভাবে নিজেদের জীবন গড়া যায়, তা নিয়ে সর্বদা ভাবতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষ করে আলেম সমাজকে বেশি ভাবতে হবে এবং উদারতার পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

মহান আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,
أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلْكَٰفِرِينَ
‘তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে’ (আল-মায়েদা, ৫/৫৪)। মুমিনের প্রতি নরম আর কাফেরের প্রতি কঠোর আচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের নৈতিক আদর্শ হওয়া যেমনটি ছিল ছাহাবায়ে কেরামের আচরণ। পরস্পরের মধ্যে মুমিনের আচরণ কেমন হবে এবং কাফেরের সাথে সে কেমন ব্যবহার করবে তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَشِدَّاءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
‘তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল’ (আল-ফাতহ, ৪৮/২৯)।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, নিজেদের মধ্যে সামান্য মতভেদকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, কেউ কাউকে একদমই সহ্য করতে পারে না। আর মাযহাবী ক্ষেত্র হলে তো কথাই নেই। সেটা তিক্ততার এমন কঠিন পর্যায়ে চলে যায় যে, তা কোনো অমুসলিমের ক্ষেত্রেও ঘটে না। নিজের মত বা বিশ্বাসকে অভ্রান্ত সত্যের উত্স মনে করে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় যে, তাকেই একমাত্র দ্বীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়; যা মোটেও কাম্য নয়। তারা মনে করছে যে, নিজ পথ বা মাযহাবের প্রচার করছে মানে প্রকৃত দ্বীন প্রচার করছে।

নিজের বিশ্বাস বা মাযহাব রক্ষার চেষ্টা করা মানে দ্বীন রক্ষার চেষ্টা করা। এটাই আমাদের দুর্বলতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীআতের মাসআলা-মাসায়েল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে মতভেদপূর্ণ মাসআলা কম, কিন্তু এই মতভেদপূর্ণ মাসআলাগুলোই বেশির ভাগ সময় বিজয়ী হয়ে থাকে। সর্বদাই আমরা এসব মাসআলার পেছনে লেগে রয়েছি অথচ শরীআতের আরও অনেক মাসআলা আছে, যাতে কোনো রকম মতপার্থক্য নেই। সেগুলো নিয়ে আমাদের সেরকম আলোচনা হয় না বললেই চলে। কেন এই অবস্থা? যখন এতগুলো বিষয়ে ঐক্য রয়েছে। তখন আংশিক বিষয়গুলোতে কেন ঐক্য হয় না? ইখতিলাফী বিষয়গুলো কেন সর্বদা প্রাধান্য পাচ্ছে? এসব বিষয় সব সময় কেন আমাদের মস্তিষ্কে ও সমাজে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে?

‘আদাবুল খেলাফ’ অর্থাৎ মতভেদের আদব সম্পর্কে অনেক লেখনি, প্রবন্ধ, বই ইত্যাদি লেখা হয়েছে। এই বিষয়ের মূলকথা এই যে, একে অপরের সাথে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও পরস্পরকে সম্মান করতে হবে, ভালোবাসা বজায় রাখতে হবে, মিলেমিশে থাকতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে, পরামর্শ দিতে ও নিতে হবে ইত্যাদি। এসব বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

এর অনেক দৃষ্টান্ত স্বর্ণ যুগ থেকে আজ পর্যন্ত হাদীছের পাতায়, ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়।[1]

কতিপয় উদাহরণসমূহ :
(১) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মতভেদ : উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দুজনেই বিখ্যাত ছাহাবী ছিলেন। ইমাম ইবনুল ক্বায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন যে, দুজনের মধ্যে ১০০টিরও অধিক বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল। চিন্তা করুন! ১০০টিরও অধিক বিষয়ে মতভেদ ছিল, কিন্তু তারা কি পরস্পর ঝগড়া করতেন? অশালীন সমালোচনা করতেন? পরস্পরে ঘৃণা করতেন? না, কখনোই না। তাদের জীবনীতে লেখা রয়েছে, উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সম্পর্কে বলতেন যে,
كَنِيفٌ مُلِئَ عِلْمًا آثَرْتُ بِهِ أَهْلَ الْقَادِسِيَّةِ
‘তিনি (ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)) হচ্ছেন ইলমের আশ্রয়স্থল, আমি তাঁর কারণেই কাদেসিয়াবাসীদের প্রতি প্রভাবিত হয়েছি’।[2]

শত মতভেদ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তার জ্ঞানের প্রশংসা করছেন। অপরদিকে ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যুর পর বলতেন,
إِنَّ عُمَرَ كَانَ لِلْإِسْلَامِ حِصْنًا حَصِينًا يَدْخُلُ فِيهِ الْإِسْلَامُ وَلَا يَخْرُجُ مِنْهُ فَلَمَّا قُتِلَ عُمَرُ انْثَلَمَ الْحِصْنُ فَالْإِسْلَامُ يَخْرُجُ مِنْهُ وَلَا يَدْخُلُ فِيهِ
‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন ইসলামের এক অতি মযবূত দূর্গ, তার মাধ্যমে ইসলাম (বিভিন্ন স্থানে) প্রবেশ করেছিল কিন্তু কখনোও (সে স্থানগুলো থেকে) ইসলাম বের হয়নি। যখন তিনি শহীদ হয়ে গেলেন, তখন সে দূর্গ ভেঙে গেল, ফলে সেখান থেকে ইসলাম বেরিয়ে গেল আর প্রবেশ করল না’।[3] এই ছিল তাদের পরস্পর ভালোবাসা ও সম্মানের দৃষ্টান্ত। আজ আমরা কোথায়?

(২) যায়েদ ইবনু সাবিত ও আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মতভেদ : আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)সহ অনেক সাহাবীর মতোই ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মত ছিল যে, পিতার উপস্থিতিতে যেমন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার থেকে ভাই-বোন বঞ্চিত হয়ে যায়, ঠিক তেমনি দাদার উপস্থিতিতেও ভাই-বোন বঞ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু যায়েদ ইবনু সাবিতসহ অন্যান্য সাহাবীর মত ছিল, দাদার উপস্থিতিতে ভাই-বোনের অংশ বলবৎ থাকবে।

একদিন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আশ্চর্য ব্যাপার! যায়েদের আল্লাহর ভয় হয় না? পৌত্র (পোতা)-কে পুত্রের স্থান দিচ্ছে কিন্তু দাদাকে পিতার স্থান দেয় না!

তবুও দেখুন, পরস্পরের ভালোবাসা ও সম্মান। একদা ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যায়েদ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আরোহণ অবস্থায় দেখলেন। তারপর ইবনু আব্বাস যায়েদ ইবনু সাবিতের পশুর লাগাম ধরে চলতে লাগলেন। তাঁকে লাগাম ছাড়তে বলা হলে, তিনি বললেন, উলামা ও বড়দের সাথে আমাদের এ ধরনের আচরণ করতে হুকুম দেওয়া হয়েছে। এবার যায়েদ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আপনার হাতটা আমাকে একটু দেখাবেন? সঙ্গে সঙ্গে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিজের হাতখানা বের করে দেখালেন। দেখামাত্রই যায়েদ ইবনু সাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার হাতে চুমু দিয়ে বলেন, আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আহলে বায়েতের সাথে এ ধরনের আচরণ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া যখন যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মৃত্যু হয়, তখন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেন, এভাবেই জ্ঞান শেষ হয়ে যাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এভাবেই ইলম শেষ হয়ে যায়, আজকে অনেক জ্ঞান দাফন করা হলো।

এই ছিল সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসা ও সম্মানের দৃষ্টান্ত। সাহাবীগণের এরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়।
এবার কিছু উদাহরণ আয়িম্মা ও মুহাদ্দিসগণের যুগ থেকে দেখা যাক :

(১) ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বিখ্যাত ঘটনা : ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বয়স ছিল ১৫ বছর। এটা ছিল তার ছাত্রজীবনের ঘটনা। এক ব্যক্তির ঘটনা সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, একটা বুলবুল পাখি সবসময় কিচিরমিচির করবে এই শর্তে ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু সেটা দিনের কিছু অংশে কিচিরমিচির করে, সারা দিন করে না। তখন ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) উত্তরে বলেন, সেই পাখিকে ফেরত দেওয়া বৈধ হবে। প্রশ্নকারী ফিরে গিয়ে ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যদি দিনের বেশিক্ষণ কিচিরমিচির করে, তবে ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই। প্রশ্নকারী ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ)-কে এই বিষয়ে আবার চিন্তা-ভাবনা করতে বললেন; কিন্তু তিনি বললেন, সেটাই আমার মত, যেটা আমি তোমাকে বলেছি। প্রশ্নকারী বলেন, আপনার একজন সুযোগ্য ছাত্র বলেছেন যে, ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই। তখন ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, তাকে ডেকে নিয়ে এসো। তারপর ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে উপস্থিত করা হলে তিনি বললেন, তুমি বলেছ, সেটা ফেরত দেওয়ার অধিকার নেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সেটা তুমি কীভাবে বলছ? তখন ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ফাতেমা বিনতু ক্বয়েস (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাদীছ শুনিয়ে বললেন, নবী করীম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বললেন, আবূ জাহাম এমন একজন লোক, যে তার কাঁধ থেকে লাঠি নামিয়ে রাখে না। আর মুআবিয়া গরীব মানুষ, তুমি উসামাকে বিয়ে করে নাও। তিনি এখান থেকে বুঝাতে চাইছেন যে, আবূ জাহাম কাঁধ থেকে লাঠি রাখে না অর্থাৎ সবসময় সফর করে কিন্তু অনেক সময় বাড়িতেও থাকে। অতএব, এখান থেকে নবী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অধিকাংশ সময় ধরে নিয়ে সম্পূর্ণ সময়কে বুঝাতে চেয়েছেন আর এই ধরনের তা‘বীর (ব্যাখ্যা) আরবী ভাষায় বৈধ রয়েছে। এর জন্য আমিও বললাম যে, দিনের অধিকাংশ সময় কিচিরমিচির করলে তো সেটা ফেরত দেওয়া ঠিক হবে না। কেননা এটা সম্পূর্ণ সময়কে ধরে নেওয়া হয়েছে।

অবস্থা দেখুন, ইমাম মালেকর ছাত্র ইমাম শাফেঈ নিজের শিক্ষকের উত্তর অথবা মাসআলাকে খণ্ডন করেছেন। তবুও শিক্ষক নিজের ছাত্রের উপর অসন্তুষ্ট হলেন না, বরং সেটা কবুল করে নিলেন। মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও এটাই ছিল পরস্পর ভালোবাসা ও সম্মানের উদাহরণ।[4]

(২) ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনী (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর ঘটনা : একদা ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল ও আলী ইবনু মাদীনী (রাহিমাহুমুল্লাহ)-এর মধ্যে কোনো এক বিষয় নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। ওই দিন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে তিনি আরোহী অবস্থায় এসেছিলেন। বাহন থেকে নেমে সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। বর্ণনাকারী বলছেন, আলোচনার মধ্যে খুব উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ হতে শুরু করেছিল। কিন্তু আলোচনা শেষে রওনা হবার সময় ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) আলী ইবনুল মাদীনী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ভালোভাবে বাহনের উপর বসালেন এবং বিদায় জানালেন। সুবহানাল্লাহ! কী অবাক ঘটনা! এত তর্ক-বিতর্ক হওয়ার পরপরই এই ভালোবাসা ও সম্মান।

এগুলো তো ছিল সোনালিযুগের কিছু দৃষ্টান্ত। এবার দেখা যাক বিংশ শতাব্দীর কিছু উদাহরণ :

(১) আল্লামা সানাউল্লাহ আমৃতসরি (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন একজন বিখ্যাত আলেম এবং নামকরা মুনাযির (তার্কিক)। তিনি বিভিন্ন ফেরকা ও নানান ধর্মের লোকের সাথে মুনাযারা করেছেন। তাঁর একটা বড় গুণ ছিল যে, মুনাযারা (তর্ক) শেষে তিনি বিপক্ষের লোকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য দাওয়াত দিতেন এবং তার বাসায় অবস্থান করার দাওয়াত দিতেন।

(২) শায়খুল হাদীস ইসমাঈল সালাফী গুজরানওয়ালা (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে যে, একদা হজ্জের মৌসুমে হাজীগণের দল একসাথে বের হয়ে স্টেশনে পৌঁছান। সেখানে খুব ভিড় ছিল। ছালাতের সময় হলে কিছুসংখ্যক লোক সেখানে কাতার হয়ে শায়খ ইসমাঈলকে ইমামতি করার জন্য আগে যেতে বলেন। যখনই তিনি মুসাল্লায় দাঁড়াতে যাবেন, তখনই পিছন থেকে আওয়াজ এলো যে, তাঁর পিছনে সালাত হবে না। কারণ তিনি সালাফী আক্বীদার মানুষ। তখন তিনি নিজের রুমাল কাঁধে নিয়ে পিছনে সরে গিয়ে বললেন, তাহলে আপনিই (নির্দিষ্ট কাউকে সম্বোধন করে) সালাত পড়িয়ে দিন। আপনার পিছনে আমার ছালাত হয়ে যাবে। সেই লোকটি তখন খুব লজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করল এবং তাকেই সালাত পড়াতে বলল। বর্তমান সময়ের মতো মানুষ যদি সেই জায়গায় থাকতো, তবে অবস্থা কেমন হতো! অন্ততপক্ষে এমনটা তো হতোই যে, ইমাম সাহেব তাঁর লোকদের নিয়ে একটা জামাআত করতেন, আর আরেকদল আরেকটা জামাআত করত। এভাবে দুই দলে বিভক্ত হয়ে যেত।[5]

বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত তিন জন ইসলামী পণ্ডিত আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনু বায ও আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উসায়মীন (রাহিমাহুমুল্লাহ), তাদের মধ্যেও অনেক বিষয়ে পরস্পরে মতবিরোধ দেখা যায়। এমনকি এই তিন জন শায়খকে নিয়ে দুই খণ্ডের একটি বই রচনা করা হয়েছে, যার নাম—
الإيجاز في بعض ما اختلف فيه الألباني وابن عثيمين وابن باز
এই বইয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উল্লিখিত শায়েখদের মতানৈক্যগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের প্রমাণ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতামতগুলোও বর্ননা করা হয়েছে। অথচ তারা পরস্পরে কোনোদিন শত্রুতা, ঝগড়া-বিবাদ, খারাপ সমালোচনা করেননি, বরং তারা একে অপরের প্রশংসা করেছেন এবং আন্তরিকতা ও সুধারণায় অন্যের জ্ঞানী হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের মতভেদ পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ রাখার জন্য ছিল না।

তার একটি উদাহরণ হলো রুকূর পরে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, রুকূর পরে বুকে হাত বাঁধা হচ্ছে বিদআত। কিন্তু শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, এটা স্পষ্ট ভুল ফৎওয়া; এটা বিদআত নয়, আর আমার জানা মতে কোনো আলেম এ রকম বলেননি।

তা সত্ত্বেও দেখুন! শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে বলছেন, আমি তার জ্ঞানের পরিধি ও পরিসর সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না। আমার জানামতে তিনি একজন সুযোগ্য আলেম। আমি সাক্ষ্য দিই যে, তিনি সুন্নাতের প্রতি খুবই আগ্রহী এবং অনেক উপকারী বই রচনা করেছেন। তবে অন্যান্য আলেমের মতো তাঁরও কিছু বিষয়ে ভুল হয়েছে, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন।

শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) সম্পর্কে বলছেন, ইবনু বায এমন একজন আলেম, যিনি ইসলামী দুনিয়াকে নিজের জ্ঞান দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।

এই ছিল তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানবোধ।

এছাড়া শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইবনু উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মধ্যেও কিছু মতানৈক্য ছিল। তার একটি উদাহরণ বলি, শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, ক্বিবলামুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা খোলা জায়গায় হোক অথবা কোনো আড়ালে হোক একেবারেই অবৈধ। কিন্তু ইবনু উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, খোলা জায়গায় ক্বিবলামুখী হয়ে পেশাব-পায়খানা করা ঠিক নয়, তবে কোনো আড়াল থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এ ধরনের মতবিরোধের কারণে শায়খ ইবনু উসায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ছোট মনে করেননি, বরং তার জ্ঞানের প্রশংসা করে বলেছেন, ইবনু উসায়মীন হচ্ছেন, একজন বড় মাপের যোগ্য আলেম।[6]

সুধী পাঠক! উল্লিখিত উদাহরণসমূহ বর্ননা করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, সেখান থেকে আমাদের কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা আর তা হলো এই যে, আমাদের মধ্যে পরস্পরে মতভেদ থাকতেই পারে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, এই মতভেদের কারণে আমাদের কথা বা কাজের মাধ্যমে অপর পক্ষের যেন সম্মানহানি না হয় বা তারা যেন কষ্ট না পায়। আর এটাও ভাবা উচিত যে, কিছু বিষয় এমনও রয়েছে, যাতে কোনো রকমের আদর্শ বা বিশ্বাসের কথাই আসবে না, বরং সামাজিক ও মানবিক কল্যাণের জন্য হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে, তা না হলে আমাদের মধ্যে মদভেদ, বিরোধিতা, শত্রুতা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং ধ্বংসের পথ প্রশস্ত হতে থাকবে, যা আমাদের জন্য খুবই ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে।

আসুন! আমরা পরস্পরে মতভেদ, মতপার্থক্য ও ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। পরস্পরকে ভাই-ভাই মনে করে সকলেই দ্বীনে ইসলামের ছায়াতলে একতাবদ্ধ হই। আল্লাহ প্রদত্ত বিধান এবং রাসূল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আদর্শের আলোকে জীবন গড়ে তুলি। আমাদের ইহকাল-পরকালকে সাফল্যমণ্ডিত করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন! ছুম্মা আমীন!!
- তাওহীদুর রহমান ইবনু মঈনুল হক্ব
ফারেগ সালাফিয়া বেনারস উত্তর প্রদেশ।​


[1]. শায়খ আসআদ আ‘জামী (হাফি.) (শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বানারাস, ভারত)-এর লেখনী থেকে নেওয়া কিছু অংশ।
[2]. তারিখে দেমাশক, ৩৩/১৪৫।
[3]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/৩১৩৫৫।
[4]. ‘আদাবুল খেলাফ’-এর উর্দূ অনুবাদ সালীকায়ে ইখতিলাফ, পৃ. ৩৭।
[5]. শায়খ আসআদ আ‘জামী (হাফিযাহুল্লাহ) (শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বানারাস, ভারত)-এর লেখনী থেকে নেওয়া কিছু অংশ।
[6]. আল-ইজায ফী বা‘যি মা ইখতালাফা ফীহিল আলবানী ওয়া ইবনু উছায়মীন ওয়া ইবনু বায, পৃ. ৮৮।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ধন্যবাদ ❤️
 
Similar threads Most view View more
Back
Top