সালাফী আকিদা ও মানহাজে

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

SignUp Now!

রুকিয়াহর যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
344
Comments
475
Reactions
5,283
চলুন! জ্বিন ও জাদুর চিকিৎসায় কুরআন পাঠের যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা অনুধাবনের জন্য আগে সূরা ফালাক ও সূরা নাসের অর্থ পড়ে নিইঃ

বল, ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের অন্ধকারের অনিষ্ট থেকে যখন তা গভীর হয়, আর গিরায় ফুঁ-দানকারী নারীদের অনিষ্ট থেকে, আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে’। (সূরা ফালাকঃ ১১২)

“বলাে, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের প্রভু, মানুষের অধিপতি ও মানুষের ইলাহের কাছে ওয়াসওয়াসা দানকারী খান্নাস মানুষ ও জ্বিনের অনিষ্ট থেকে, যারা মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা প্রক্ষেপণ করে।”- (সূরা নাস)

উল্লিখিত সূরাদ্বয় থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়:

১.
কুরআন যদি জ্বিন, হিংসা ও জাদুর চিকিৎসায় যথেষ্ট না হত, তবে আল্লাহর পানাহ চাওয়ার নির্দেশ এবং সূরাদ্বয়ের মর্ম অনর্থক ও অসাড় সাব্যস্ত হয়ে যেত! নাউযুবিল্লাহ!

২. আল্লাহ এ সূরা দুটিতে পানাহ চাওয়ার নির্দেশ দিয়ে যেন আমাদেরকে শারঈ চিকিৎসার পন্থা বাতলে দিচ্ছেন।

৩. সমগ্র কুরআন মাজীদ আল্লাহ নাযিল করেছেন আমলের জন্য, নিজে তিলাওয়াতের জন্য এবং অন্যকে মুখে বলার জন্য। তারপরও আল্লাহ কোথাও কোথাও ‘বলাে বলে আয়াত নাযিল করেন। যেমন সূরা ফালাক ও সূরা নাস আল্লাহ শুরু করছেন 'বলাে' কথার মাধ্যমে। তার মানে সে আয়াতগুলাে বলা স্বতন্ত্র একটা ইবাদাত বা 'বলাে' শব্দের মর্ম হলাে সে আয়াতগুলাে বারংবার বলার জন্য বিশেষ গুরুত্বারােপ করা হচ্ছে। সুতরাং জ্বিন-জাদু-বদনজর ইত্যাদির অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে উক্ত সূরাদ্বয় পড়তে হবে এবং পড়ে পড়ে আত্মরক্ষা করতে হবে।

পরিতাপের বিষয় হলাে, আমরা আল্লাহর নির্দেশিত পাঠের বিধানকে উপেক্ষা করি; আর শুধু ঝুলাঝুলিতে বিশ্বাস করি। আমরা তাবিজ ঝুলাই; পৈতা ঝুলাই; এবং.. এবং... আমাদের গলায় তাবিজ, কোমরে তাবিজ, হাতে তাবিজ, ঘরের দরজায় তাবিজ, বালিশের নিচে তাবিজ, মাজারের গাছে তাবিজ... শুধু তাবিজ ঝুলাঝুলি। শিশু ভয় পেয়েছে! তাবিজ দাও। সাপে কেটেছে! তাবিজ দাও। সন্তান হয় না! তাবিজ নাও। অথচ হাদীসের কিতাবাদি খুলে দেখুন! রাসূল (ﷺ) ও সাহাবাদের আমল কেমন ছিল।

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) জ্বিন থেকে এবং মানুষের নজর থেকে পানাহ চাইতেন। যখন সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলাে, তিনি এ দুটি গ্রহণ করলেন, অন্য সমস্ত পাঠ তিনি বর্জন করলেন। [তিরমিযি, আস-সুনান: ২০১৮]

অন্য সমস্ত পাঠ বর্জন করলেন মানে তিনি সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠে তিনি অধিক গুরুত্ব দিলেন। কেননা, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ছাড়াও জ্বিন-জাদু-বদনজর থেকে পানাহ চাওয়ার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর বেশ কিছু দোয়া মাসূরাও আছে।

রুকিয়াহর আমল সাহাবাদের মাঝেও ছিল। বুখারি-তে বর্ণিত একাট ঘটনা সংক্ষেপে বলি। রাসূল (ﷺ)-এর একদল সাহাবি আরবের কোনও এক জনপদে এলেন। কিন্তু জনপদবাসী তাদেরকে মেহমানদারি করল না। এমন সময় এই জনপদের প্রধানকে সাপ দংশন করল। তারা আগন্তুক সাহাবিদেরকে বলল, 'আপনাদের কাছে কি কোনও ঔষধ আছে কিংবা কোনও ঝাড়ফুঁক করার মতাে কেউ?' সাহাবিরা বললেন, 'আপনারা আমাদেরকে আপ্যায়ন করেননি। প্রতিদান ধার্য না করলে আমরা কিছুই করব না।' জনপদবাসী তাদের জন্য এক পাল মেষ নির্ধারণ করলেন। তখন একজন সাহাবি সূরা ফাতিহা পড়ে রুকিয়াহ করলেন। সেই জনপদের সরদার আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে গেলেন।

রুকিয়াহ ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য শর্ত হলাে—কুরআনের দোয়া ও রুকিয়াহর পাঠ অন্তর থেকে হতে হবে; এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত দোয়া ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম' (হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সরল পথ দেখাও) দোয়াটি এতবার পাঠের পরও মানুষ ভ্রষ্ট হয় কেন? কারণ অন্তর থেকে আসে না যে দোয়া, তা নিছক অসাড়-প্রার্থনা। মাছের পেটে ইউনুস আলাইহিস সালাম আটকা পড়লেন। এ বিপদে ইউনুস (আঃ)-এর মুক্তির বাহ্যিক কোনও অবলম্বনই ছিল না। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন—
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লা-আনতা সুব্‌হা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্‌যা-লিমীন্।

অর্থঃ ‘আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’। [সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৭]

আল্লাহ তাঁর দোয়া শুনলেন; তাঁকে মুক্তি দিলেন। আপনি যদি মনে করেন, এ দোয়া পড়ার দ্বারা আপনার মুক্তি মিলবে না, তা হলে এ দোয়া কুরআনে উল্লেখের কি মানে? শুধু ইউনুস নয়! আল্লাহ বলেন,
وَكَذَلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ
অর্থঃ আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। [সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৮৮]

আইয়ূব (আঃ)-এর কথা স্মরণ করুন। তিনি শয়তানদের আছর ও জাদুর দ্বারা আক্রান্ত হলেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ বলেন,
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا أَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الشَّيْطَانُ بِنُصْبٍ وَعَذَابٍ
অর্থঃ আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, ‘শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে’। [সূরা সােয়াদ ৩৮:৪১]

আল্লাহ এ দোয়ার ওসিলায় আইয়ূব (আঃ)-কে সুস্থ করলেন। আল্লাহ তাআলা তাকে পা দ্বারা জমিনে আঘাত করতে বললেন। তিনি আঘাত করলেন। দেখা গেল গােসল ও খাবারের জন্য শীতল পানি উৎসরিত হচ্ছে। সূরা সােয়াদের ৪১ নং আয়াত থেকে ঘটনাটা দেখতে পারেন। প্রিয় পাঠক! রুকিয়াহ আর কিছু নয়, কুরআন হাদীসে বর্ণিত এ-সমস্ত দোয়া পড়ার নামই রুকিয়াহ। রুকিয়াহতে এ-সমস্ত পাঠের পাশাপাশি কুরআন হাদীসে বর্ণিত নির্দিষ্ট কিছু ট্রিটমেন্ট মেথডও ফলাে করি আমরা।

রক্বীকে ও রােগীকে মনে রাখতে হবে, কুরআন পাঠের দ্বারা আল্লাহ উপকৃত করবেন কি করবেন না, এটা আল্লাহর বিষয়। রােগের নিরাময় কারও ঔষধ দ্বারা হয় আবার কেউ সেই একই অসুস্থতায় ভুগে ভুগে মারা যায়। তাই রুকিয়াহ আস্থা নিয়ে পাঠ করতে হবে; তবে এ বিশ্বাস রাখতে হবে, এ পাঠের বিনিময় আল্লাহ কোনও-না-কোনওভাবে অবশ্যই দেবেন। আল্লাহ বলেন,
فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُحْسِنِينَ
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইহসানকারীদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। [সুরা হুদ: ১১৫]

কুসংস্কারপূর্ণ সমাজে কুরআনের শুদ্ধতা ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আপনার প্রতিদান অবশ্যই দেবেন ইন শা আল্লাহ। সমাজে মানুষের ক্ষতির জন্য যতটুকু জাদু হয়, কুসংস্কারের কারণে কবিরাজদের কাছে গিয়ে জাদুর শিকার মানুষ এর চেয়ে বেশি হয়। আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন। আল্লাহর বিধান হলাে,
إِنَّمَآ أَمْرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيْـًٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
অর্থঃ “যখন তিনি কোনও কিছুর ইচ্ছা করেন আর বলেন 'হও', সাথে সাথেই তা হয়ে যায়।" [সূরা ইয়াসীন, ৩৬:৮২]

হতাশ হবেন না! হাল ছাড়বেন না। বাহ্যিক উপকরণকেও তথা মেডিকেল ট্রিটমেন্টকেও উপেক্ষা করবেন না। ওই যে! আল্লাহ বদরে পাঁচ হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করলেন। শুধু ফেরেশতারাই তাে যথেষ্ট ছিল। তারপরও মুসলমানদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। কারণ সাহায্য তাে আল্লাহই করবেন! কিন্তু তিনি দেখেন, বান্দা তার সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে কি না! আযীযের স্ত্রীর বন্ধ দরজাগুলাে তাে আল্লাহই খুলে দিয়েছেন নবি ইউসুফের জন্য। কিন্তু আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য নবি ইউসুফ (আঃ)-কে দৌড় তাে দিতে হয়েছিল। আল্লাহ আপনার কাছে এই দৌড়টুকুই দেখতে চান।

শারীরিক রােগের জন্য প্রয়ােজনে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নিন।

সোর্সঃ দুআরুকইয়াহ.কম
 
Similar threads Most view View more
Back
Top