If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
• সুতরাং যে ব্যক্তিই দীনের কোনো বিষয়াদিতে রাসূলের আনীত বিষয়কে বাদ দিয়ে অন্য কিছুকে ফায়ছালাকারী বানাতে চাইবে ও ধারণা করবে সেটিই উত্তম এবং মনে করবে, এতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনীত বিধান এবং তার বিরোধী বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন হবে, সে বিভ্রান্ত ও মূর্খ হিসাবে গণ্য হবে।
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তা পরিপূর্ণ এবং উম্মতের জন্য তা যথেষ্ট। তাতেই রয়েছে সকল সত্য বিষয়।
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সত্য দীন নিয়ে আগমন করেছেন, যারা নিজেদেরকে তার এ সত্য দীনের অনুসারী বলে দাবি করেছে তাদের অনেকের দ্বারাই ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। তিনি দীনের যেসব মূলনীতি আনয়ন করেছেন, যেসব বিষয়কে ইবাদত হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন এবং যেসব রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে এসেছেন, তারা সেগুলোর অনেকাংশই জানতে ও বুঝতে পারেনি। অথবা তারা ধারণার বশবর্তী হয়ে ও অন্যের অন্ধ অনুসরণ করে রাসূলের শরীআতের মধ্যে এমন কিছু বৃদ্ধি করেছে, যা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তা থেকে এমন অনেক কিছু বের করে দিয়েছে, যা তার শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং এসব লোকের অজ্ঞতা, গোমরাহী ও শৈথিল্যের কারণেই এবং ঐসব লোকের সীমালংঘন, মূর্খতা ও নিফাকের কারণে বহু নিফাকীর উৎপত্তি হয়েছে এবং নাবী-রাসূলদের রিসালাতের অনেকাংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
• সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সত্য দীন নিয়ে এসেছেন, , তার পরিপূর্ণ অনুসন্ধান করা উচিত, তাতে সুক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক এবং তা অর্জনে প্রচুর পরিশ্রম করা আবশ্যক। যাতে করে তা অবগত হওয়া যায়, তাতে বিশ্বাস পোষণ করা যায় এবং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সে অনুযায়ী আমলও করা যায়। এর মাধ্যমে রাসূলের উপর অবতীর্ণ কিতাবের যথাযথ তেলাওয়াত করা সম্ভব হবে এবং তার কোন কিছুর প্রতিই অবহেলা করা হবে না।
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তার কিছু অংশ জানতে অথবা তার প্রতি আমল করতে যদি কেউ অপারগ হয়, তাহলে সে অপারগ ব্যক্তি অন্যকে তার প্রতি আমল করতে নিষেধ করবে না; বরং তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, অপারগতার কারণে নিজে আমল না করতে পারলে তাকে দোষারোপ করা হবে না। তবে অন্যরা সে অনুযায়ী আমল করার কারণে তার খুশি হওয়া উচিত। সে সাথে সে নিজে তা পালন করার আকাঙ্খা করবে। এমনটি যেন না হয় যে, সে রাসূলের দীনের কিছু অংশে বিশ্বাস করবে এবং তার কিয়দাংশ বর্জন করবে। বরং সম্পূর্ণ কিতাবের উপর বিশ্বাস করবে এবং তার সাথে এমন কোনো বর্ণনা অথবা মতামত সংযোজন করা হতে দূরে থাকবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়।
• অথবা আক্বীদাহ ও আমলের ক্ষেত্রে সে এমন কিছুর অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকবে, যা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে আগত নয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
এ ছিল সর্বপ্রথম ইসলাম কবুলকারী সাহাবীদের তরীকা বা পথ। এটিই কিয়ামত দিবস পর্যন্ত উত্তমভাবে সাহাবীদের অনুসরণকারীগণের পদ্ধতি হওয়া চাই। প্রথম শ্রেণীর তাবেঈগণই সাহাবীদের অনুসরণ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন। অতঃপর যারা তাবেঈদের পরে আগমন করেছেন। এদের মধ্যেই রয়েছেন দীনের ঐসব সম্মানিত ইমামগণ, যারা মধ্যমপন্থী উম্মতের নিকট ইমাম হিসাবে স্বীকৃত।
ইমাম আবু ইউসুফ (রাহি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি মুতাযেলা ইমাম বিশর আল- মুরাইসীকে একদা বলেছিলেন, কালামশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাই হলো প্রকৃত মূর্খতা এবং তা সম্পর্কে অজ্ঞতাই হলো প্রকৃত ইলম। কোনো মানুষ যখন কালামশাস্ত্রে সর্বোচ্চ পান্ডিত্য অর্জন করবে, সে নাস্তিকে পরিণত হবে অথবা তার উপর নাস্তিক্যের অভিযোগ উত্থাপিত হবে। এখানে কালামশাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতা অর্থ হলো তা বিশুদ্ধ না হওয়ার আক্বীদাহ রাখা। এটিই উপকারী ইলম। অথবা তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কালামশাস্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অথবা তার প্রতি দৃষ্টি না দেয়া। এতে করেই মানুষের জ্ঞান ও বোধশক্তি সংরক্ষিত হবে। এ দৃষ্টিকোন থেকে ইলমে কালাম সম্পর্কে অজ্ঞতাকেই ইলম হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।
ইমাম আবু ইউসুফ (রাহি.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কালামশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করবে সে নাস্তিকে পরিণত হবে, যে ব্যক্তি মাটিকে স্বর্ণ বানিয়ে ধনী হওয়ার চেষ্টা করবে, সে হবে সর্বহারা এবং যে ব্যক্তি বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা অনুসন্ধান করতে যাবে, সে মিথ্যুকে পরিণত হবে।
ইমাম শাফেঈ (রাহি.) বলেছেন, কালামশাস্ত্রবিদদের ব্যাপারে আমার মত হলো তাদেরকে খেজুর গাছের ডাল ও জুতা দিয়ে পেটানো হবে, মহল্লায় মহল্লায় তাদেরকে ঘুরানো হবে এবং বলা হবে, এ হলো ঐসব লোকদের শাস্তি যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত পরিহার করে কালামশাস্ত্রের প্রতি ঝুকে পড়ে।
ইমাম শাফেঈ (রাহি.) কবিতা আকারে আরো বলেন,
আলেমগণ ফতোয়ায় বলেছেন, রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রের আওকাফ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল যদি শহরের আলেমদের জন্য ধন-সম্পদ বন্টন করার ফরমান জারী করে তাহলে উক্ত শহরে বসবাসকারী কালামশাস্ত্রবিদরা তা থেকে কিছুই পাবে না।[১]
এমনিভাবে কোনো আলেম যদি অসীয়ত করে, তার কিতাবগুলো থেকে দীনী কিতাবগুলো যেন ওয়াক্ফ করে দেয়া হয়, তাহলে সালাফগণের ফতোয়া রয়েছে যে, তার মধ্যকার কালামশাস্ত্রীয় কিতাবগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। অনুরূপ কথা যাহেরীয়া ফতোয়াতেও উল্লেখিত হয়েছে।
সুতরাং ব্যাপারটি যেহেতু এরকম, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা ব্যতীত দীনের মূলনীতিগুলোর জ্ঞান কিভাবে অর্জন করা যেতে পারে! কবি কতই না সুন্দর বলেছেন,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমন বাণী প্রদান করা হয়েছে, যাতে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত কালামের সুন্দর সূচনা ও সর্বোত্তম পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সে সাথে তাকে দেয়া হয়েছে এমন সংক্ষিপ্ত কালাম, যার শব্দ কম, কিন্তু তার ব্যাখ্যা অত্যন্ত ব্যাপক, পরিপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত এবং উত্তম পদ্ধতিতে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের সকল প্রকার ইলমসহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিদ'আতীরা যখনই একটি বিদআত তৈরী করেছে, আলেমগণ বিস্তারিতভাবে তার জবাব দিয়েছেন। এ জন্যই পরবর্তী যুগের আলেমদের বক্তব্য হয়েছে অনেক দীর্ঘ, কিন্তু তাতে বরকত হয়েছে কম। কিন্তু পূর্ববর্তীদের কথা ছিল তার বিপরীত। তাদের কথা ছিল অল্প, কিন্তু তাতে বরকত হয়েছে প্রচুর।
কালামশাস্ত্রবিদদের বিভ্রান্ত ও মূর্খদের কথা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বলে থাকে সালাফদের পথ ও পদ্ধতি অধিক নিরাপদ। আর আমাদের পদ্ধতি হচ্ছে অধিক শক্তিশালী এবং অধিক প্রজ্ঞা ভিত্তিক!! পরবর্তীদের মধ্য হতে যারা নিজেদেরকে ফক্বীহ বলে দাবি করে, তাদের কথাও এর বিপরীত। তারা বলে থাকে সাহাবীগণ যেহেতু জিহাদ এবং ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাই তারা কুরআন ও হাদীস থেকে ফিকহী মাসায়েল নির্গত করা, তার মূলনীতি ও হুকুম-আহকাম সংরক্ষণ করার সুযোগ পাননি। আর পরবর্তীরা যেহেতু সে কাজের সুযোগ পেয়েছেন, তাই তারা ফিকহী মাসায়েলের ক্ষেত্রে সাহাবীদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী হতে পেরেছেন ![২]
সালাফদের মর্যাদার পরিমাণ, তাদের ইলমের গভীরতা, গুরুত্বহীন কাজের প্রতি তাদের আগ্রহের স্বল্পতা এবং তাদের পরিপূর্ণ দূরদর্শিতা ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে এ লোকেরা অবগত নয়। আল্লাহর কসম! পূর্ববর্তীদের তুলনায় পরবর্তীদের বৈশিষ্ট্য শুধু এখানেই যে, তারা কেবল গুরুত্বহীন কাজে শ্রম ব্যয় করেছে এবং এমনসব দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যার মূলনীতিগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া, নিয়ম-কানুন সংরক্ষণ করা এবং তার বন্ধনকে মজবুত করার কাজেই সালাফগণ ব্যস্ত ছিলেন। প্রত্যেক বিষয়ের সুউচ্চ চূড়ায় পৌঁছে যাওয়াই ছিল সালাফদের একমাত্র প্রচেষ্টা। সুতরাং পরবর্তীরা ব্যস্ত হয়েছে একটি বিষয় নিয়ে এবং পূর্ববর্তীরা ব্যস্ত ছিলেন অন্য একটি বিষয় নিয়ে। আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয (রাহি.) বলেন, আমার পূর্বে অনেকেই আল-আকীদাতুত্ ত্বহাবীয়াহ এর ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু দেখেছি যে, তাদের কতিপয় ব্যাখ্যাকারী এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কালামশাস্ত্রবিদদের নিন্দনীয় কথার প্রতি কর্ণপাত করেছেন, তাদের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এবং তাদের পরিভাষাগুলো ব্যবহার করেছে। সালাফগণ জাওহার, জিসিম, আরা এবং সঠিক অর্থে অনুরূপ অন্যান্য নতুন পরিভাষা ব্যবহার করে কথা বলা অপছন্দ করতেন। যেমন সঠিক ইলমকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমনি সত্যের উপর ঐ শব্দগুলোর নির্দেশনা প্রদান এবং বাতিলপন্থীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার সময় ঐ শব্দগুলো ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এ শব্দগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও সত্যের বিপরীত বিষয় সাব্যস্ত করার জন্য ব্যবহার করাকেই অপছন্দ করেছেন। তাদের শব্দগুলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহয় ব্যবহার না হওয়াও তাদের অপছন্দের অন্যতম কারণ।
এ জন্যই আপনি সাধারণ মুমিনগণ, বিশেষ করে আলেমদের নিকট যে সুদৃঢ় ইয়াকীন, ঈমান ও মারেফত উপলব্ধি করবেন, কালামশাস্ত্র বিদদের নিকট তা খুঁজে পাবেন না।
কালামশাস্ত্র বিদরা যেসব পরিভাষা ও ভূমিকা পেশ করেছে, তাতে হক-বাতিলের সংমিশ্রণের কারণে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, অন্যায় ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে এবং অহেতুক সমালোচনা ও অর্থহীন কথা-বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে তারা নির্ভেজাল শরী'আত ও সুস্পষ্ট বোধশক্তির বিপরীত এমন সব কথার উৎপত্তি করেছে, যা এ সংক্ষিপ্ত কিতাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
ইমাম ত্বহাবীর উক্তি, এর মাধ্যমে আমি তাদের পথের পথিক এবং তাদের কাতারে শামিল হতে চাই। যদিও আমাকে তাদের সাথে যোগদান করার আহ্বান করা হয়নি। আমি ঐসব লোকদের মধ্যে শামিল হতে চাই এবং ঐসব লোকদের সাথে হাশরের দিন উপস্থিত হতে চাই, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
এসব লোকদের দলে থাকার সুবাদে আমি পরকালীন সৌভাগ্য অর্জন করতে চাই। মানুষের মনে সংক্ষিপ্ত বিষয়ের প্রতিই আগ্রহ বেশি, এটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো, তাই এর ব্যাখ্যা লম্বা না করে সংক্ষিপ্ত করাকেই আমি প্রাধান্য দিলাম।
১. কারণ তারা আলেমদের মধ্যে শামিল নয়।
২. কোনো কোনো ফিকহী মাযহাবের মুকাল্লিদগণ বলে থাকেন, সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই মুহাদ্দিছ ছিলেন ঠিকই; কিন্তু তারা ফক্বীহ ছিলেন না। তাদের মাযহাবের যেসব কথা হাদীসের বিপরীত হয়, ঐ হাদীসের রাবী (সাহাবী সম্পর্কে তারা বলে যে, তিনি ফক্বীহ ছিলেন না! তাই এ মাস'আলায় তার থেকে বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়; তাদের ইমাম যেহেতু ফক্বীহ ছিলেন, তাই হাদীসের বিপরীত হলেও ইমামের কথাই আমলযোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ তারা আবু হুরায়রা (রা) এর ব্যাপারে বলে থাকে যে, তিনি ফক্বীহ ছিলেন না!! তাই তারা তাদের কতিপয় মাস'আলা আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত হলেও মাযহাবের কথাকেই প্রাধান্য দেয়। মাযহাবী গোঁড়ামির কারণেই তারা এমনটি করে থাকে বলে আমরা মনে করি।
সাহাবীদের প্রতি পরবর্তীদের এরূপ ধারণা করা ঠিক নয়। সাহাবীরাই ছিলেন পরবর্তীদের তুলনায় জ্ঞানে ও আমলে সর্বাধিক পরিপূর্ণ। কুরআন ও হাদীসে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের ইলম ও আমলের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের পথে চলার উপদেশ দিয়েছেন। সুতরাং পরবর্তীতে যত আলেম ও ফক্বীহ আগমন করবেন, তাদের কেউই ইলম, ফিকহ এবং অন্যান্য গুণাবলীতে সাহাবীদের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলাই সৰ্বাধিক অবগত।
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তা পরিপূর্ণ এবং উম্মতের জন্য তা যথেষ্ট। তাতেই রয়েছে সকল সত্য বিষয়।
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সত্য দীন নিয়ে আগমন করেছেন, যারা নিজেদেরকে তার এ সত্য দীনের অনুসারী বলে দাবি করেছে তাদের অনেকের দ্বারাই ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। তিনি দীনের যেসব মূলনীতি আনয়ন করেছেন, যেসব বিষয়কে ইবাদত হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন এবং যেসব রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে এসেছেন, তারা সেগুলোর অনেকাংশই জানতে ও বুঝতে পারেনি। অথবা তারা ধারণার বশবর্তী হয়ে ও অন্যের অন্ধ অনুসরণ করে রাসূলের শরীআতের মধ্যে এমন কিছু বৃদ্ধি করেছে, যা শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তা থেকে এমন অনেক কিছু বের করে দিয়েছে, যা তার শরীয়তের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং এসব লোকের অজ্ঞতা, গোমরাহী ও শৈথিল্যের কারণেই এবং ঐসব লোকের সীমালংঘন, মূর্খতা ও নিফাকের কারণে বহু নিফাকীর উৎপত্তি হয়েছে এবং নাবী-রাসূলদের রিসালাতের অনেকাংশই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
• সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সত্য দীন নিয়ে এসেছেন, , তার পরিপূর্ণ অনুসন্ধান করা উচিত, তাতে সুক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক এবং তা অর্জনে প্রচুর পরিশ্রম করা আবশ্যক। যাতে করে তা অবগত হওয়া যায়, তাতে বিশ্বাস পোষণ করা যায় এবং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সে অনুযায়ী আমলও করা যায়। এর মাধ্যমে রাসূলের উপর অবতীর্ণ কিতাবের যথাযথ তেলাওয়াত করা সম্ভব হবে এবং তার কোন কিছুর প্রতিই অবহেলা করা হবে না।
• রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তার কিছু অংশ জানতে অথবা তার প্রতি আমল করতে যদি কেউ অপারগ হয়, তাহলে সে অপারগ ব্যক্তি অন্যকে তার প্রতি আমল করতে নিষেধ করবে না; বরং তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, অপারগতার কারণে নিজে আমল না করতে পারলে তাকে দোষারোপ করা হবে না। তবে অন্যরা সে অনুযায়ী আমল করার কারণে তার খুশি হওয়া উচিত। সে সাথে সে নিজে তা পালন করার আকাঙ্খা করবে। এমনটি যেন না হয় যে, সে রাসূলের দীনের কিছু অংশে বিশ্বাস করবে এবং তার কিয়দাংশ বর্জন করবে। বরং সম্পূর্ণ কিতাবের উপর বিশ্বাস করবে এবং তার সাথে এমন কোনো বর্ণনা অথবা মতামত সংযোজন করা হতে দূরে থাকবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়।
• অথবা আক্বীদাহ ও আমলের ক্ষেত্রে সে এমন কিছুর অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকবে, যা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে আগত নয়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
“তোমরা মিথ্যার সাথে সত্যকে মিলিয়ে সত্যকে সন্দেহযুক্ত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না”। (সূরা আল-বাকারা: ৪২)এ ছিল সর্বপ্রথম ইসলাম কবুলকারী সাহাবীদের তরীকা বা পথ। এটিই কিয়ামত দিবস পর্যন্ত উত্তমভাবে সাহাবীদের অনুসরণকারীগণের পদ্ধতি হওয়া চাই। প্রথম শ্রেণীর তাবেঈগণই সাহাবীদের অনুসরণ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন। অতঃপর যারা তাবেঈদের পরে আগমন করেছেন। এদের মধ্যেই রয়েছেন দীনের ঐসব সম্মানিত ইমামগণ, যারা মধ্যমপন্থী উম্মতের নিকট ইমাম হিসাবে স্বীকৃত।
ইমাম আবু ইউসুফ (রাহি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি মুতাযেলা ইমাম বিশর আল- মুরাইসীকে একদা বলেছিলেন, কালামশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাই হলো প্রকৃত মূর্খতা এবং তা সম্পর্কে অজ্ঞতাই হলো প্রকৃত ইলম। কোনো মানুষ যখন কালামশাস্ত্রে সর্বোচ্চ পান্ডিত্য অর্জন করবে, সে নাস্তিকে পরিণত হবে অথবা তার উপর নাস্তিক্যের অভিযোগ উত্থাপিত হবে। এখানে কালামশাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতা অর্থ হলো তা বিশুদ্ধ না হওয়ার আক্বীদাহ রাখা। এটিই উপকারী ইলম। অথবা তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কালামশাস্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অথবা তার প্রতি দৃষ্টি না দেয়া। এতে করেই মানুষের জ্ঞান ও বোধশক্তি সংরক্ষিত হবে। এ দৃষ্টিকোন থেকে ইলমে কালাম সম্পর্কে অজ্ঞতাকেই ইলম হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।
ইমাম আবু ইউসুফ (রাহি.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কালামশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করবে সে নাস্তিকে পরিণত হবে, যে ব্যক্তি মাটিকে স্বর্ণ বানিয়ে ধনী হওয়ার চেষ্টা করবে, সে হবে সর্বহারা এবং যে ব্যক্তি বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা অনুসন্ধান করতে যাবে, সে মিথ্যুকে পরিণত হবে।
ইমাম শাফেঈ (রাহি.) বলেছেন, কালামশাস্ত্রবিদদের ব্যাপারে আমার মত হলো তাদেরকে খেজুর গাছের ডাল ও জুতা দিয়ে পেটানো হবে, মহল্লায় মহল্লায় তাদেরকে ঘুরানো হবে এবং বলা হবে, এ হলো ঐসব লোকদের শাস্তি যারা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত পরিহার করে কালামশাস্ত্রের প্রতি ঝুকে পড়ে।
ইমাম শাফেঈ (রাহি.) কবিতা আকারে আরো বলেন,
كُلُّ الْعُلُومِ سِوَى الْقُرْآنِ مَشْغَلَةٌ ... إِلَّا الْحَدِيثَ وَإِلَّا الْفِقْهَ فِي الدِّينِ
الْعِلْمُ مَا كَانَ فِيهِ قَالَ حَدَّثَنَا ... وَمَا سِوَى ذَاكَ وَسْوَاسُ الشَّيَاطِينِ
“কুরআন, হাদীস এবং দীনের গভীর জ্ঞান ব্যতীত যতো ইলম রয়েছে, তা সবই মূল্যহীন। রাসূলের হাদীসেই রয়েছে প্রকৃত ইলম। এ ছাড়া যতো ইলম রয়েছে, তার সবই শয়তানের কুমন্ত্রনা ছাড়া অন্য কিছু নয়”।الْعِلْمُ مَا كَانَ فِيهِ قَالَ حَدَّثَنَا ... وَمَا سِوَى ذَاكَ وَسْوَاسُ الشَّيَاطِينِ
আলেমগণ ফতোয়ায় বলেছেন, রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রের আওকাফ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল যদি শহরের আলেমদের জন্য ধন-সম্পদ বন্টন করার ফরমান জারী করে তাহলে উক্ত শহরে বসবাসকারী কালামশাস্ত্রবিদরা তা থেকে কিছুই পাবে না।[১]
এমনিভাবে কোনো আলেম যদি অসীয়ত করে, তার কিতাবগুলো থেকে দীনী কিতাবগুলো যেন ওয়াক্ফ করে দেয়া হয়, তাহলে সালাফগণের ফতোয়া রয়েছে যে, তার মধ্যকার কালামশাস্ত্রীয় কিতাবগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। অনুরূপ কথা যাহেরীয়া ফতোয়াতেও উল্লেখিত হয়েছে।
সুতরাং ব্যাপারটি যেহেতু এরকম, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা ব্যতীত দীনের মূলনীতিগুলোর জ্ঞান কিভাবে অর্জন করা যেতে পারে! কবি কতই না সুন্দর বলেছেন,
أَيُّهَا الْمُعْتَدِي لِيَطْلُبَ عِلْمًا ... كُلُّ عِلْمٍ عَبْدٌ لِعِلْمِ الرَّسُولِ
تَطْلُبُ الْفَرْعَ كَيْ تُصَحِحَ أَصْلًا ... كَيْفَ أَغْفَلْتَ عِلْمَ أَصْلِ الْأُصُولِ
“ওহে জ্ঞানার্জনের পথে প্রত্যুষে গমণকারী! জেনে রাখো! সমস্ত ইলম রাসূলের ইলমের অনুগত। তুমি দীনের মাসায়েল সম্পর্কে ইলম অর্জন করবে, যাতে তার মূলনীতিকে ঠিক করতে পারো? সকল মূলনীতির মূল সম্পর্কে তুমি উদাসীন হলে কিভাবে ?تَطْلُبُ الْفَرْعَ كَيْ تُصَحِحَ أَصْلًا ... كَيْفَ أَغْفَلْتَ عِلْمَ أَصْلِ الْأُصُولِ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমন বাণী প্রদান করা হয়েছে, যাতে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত কালামের সুন্দর সূচনা ও সর্বোত্তম পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সে সাথে তাকে দেয়া হয়েছে এমন সংক্ষিপ্ত কালাম, যার শব্দ কম, কিন্তু তার ব্যাখ্যা অত্যন্ত ব্যাপক, পরিপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত এবং উত্তম পদ্ধতিতে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের সকল প্রকার ইলমসহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিদ'আতীরা যখনই একটি বিদআত তৈরী করেছে, আলেমগণ বিস্তারিতভাবে তার জবাব দিয়েছেন। এ জন্যই পরবর্তী যুগের আলেমদের বক্তব্য হয়েছে অনেক দীর্ঘ, কিন্তু তাতে বরকত হয়েছে কম। কিন্তু পূর্ববর্তীদের কথা ছিল তার বিপরীত। তাদের কথা ছিল অল্প, কিন্তু তাতে বরকত হয়েছে প্রচুর।
কালামশাস্ত্রবিদদের বিভ্রান্ত ও মূর্খদের কথা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বলে থাকে সালাফদের পথ ও পদ্ধতি অধিক নিরাপদ। আর আমাদের পদ্ধতি হচ্ছে অধিক শক্তিশালী এবং অধিক প্রজ্ঞা ভিত্তিক!! পরবর্তীদের মধ্য হতে যারা নিজেদেরকে ফক্বীহ বলে দাবি করে, তাদের কথাও এর বিপরীত। তারা বলে থাকে সাহাবীগণ যেহেতু জিহাদ এবং ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমানা পাহারা দেয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তাই তারা কুরআন ও হাদীস থেকে ফিকহী মাসায়েল নির্গত করা, তার মূলনীতি ও হুকুম-আহকাম সংরক্ষণ করার সুযোগ পাননি। আর পরবর্তীরা যেহেতু সে কাজের সুযোগ পেয়েছেন, তাই তারা ফিকহী মাসায়েলের ক্ষেত্রে সাহাবীদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী হতে পেরেছেন ![২]
সালাফদের মর্যাদার পরিমাণ, তাদের ইলমের গভীরতা, গুরুত্বহীন কাজের প্রতি তাদের আগ্রহের স্বল্পতা এবং তাদের পরিপূর্ণ দূরদর্শিতা ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে এ লোকেরা অবগত নয়। আল্লাহর কসম! পূর্ববর্তীদের তুলনায় পরবর্তীদের বৈশিষ্ট্য শুধু এখানেই যে, তারা কেবল গুরুত্বহীন কাজে শ্রম ব্যয় করেছে এবং এমনসব দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যার মূলনীতিগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া, নিয়ম-কানুন সংরক্ষণ করা এবং তার বন্ধনকে মজবুত করার কাজেই সালাফগণ ব্যস্ত ছিলেন। প্রত্যেক বিষয়ের সুউচ্চ চূড়ায় পৌঁছে যাওয়াই ছিল সালাফদের একমাত্র প্রচেষ্টা। সুতরাং পরবর্তীরা ব্যস্ত হয়েছে একটি বিষয় নিয়ে এবং পূর্ববর্তীরা ব্যস্ত ছিলেন অন্য একটি বিষয় নিয়ে। আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয (রাহি.) বলেন, আমার পূর্বে অনেকেই আল-আকীদাতুত্ ত্বহাবীয়াহ এর ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু দেখেছি যে, তাদের কতিপয় ব্যাখ্যাকারী এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কালামশাস্ত্রবিদদের নিন্দনীয় কথার প্রতি কর্ণপাত করেছেন, তাদের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এবং তাদের পরিভাষাগুলো ব্যবহার করেছে। সালাফগণ জাওহার, জিসিম, আরা এবং সঠিক অর্থে অনুরূপ অন্যান্য নতুন পরিভাষা ব্যবহার করে কথা বলা অপছন্দ করতেন। যেমন সঠিক ইলমকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমনি সত্যের উপর ঐ শব্দগুলোর নির্দেশনা প্রদান এবং বাতিলপন্থীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার সময় ঐ শব্দগুলো ব্যবহার করতেন না। কিন্তু এ শব্দগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও সত্যের বিপরীত বিষয় সাব্যস্ত করার জন্য ব্যবহার করাকেই অপছন্দ করেছেন। তাদের শব্দগুলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহয় ব্যবহার না হওয়াও তাদের অপছন্দের অন্যতম কারণ।
এ জন্যই আপনি সাধারণ মুমিনগণ, বিশেষ করে আলেমদের নিকট যে সুদৃঢ় ইয়াকীন, ঈমান ও মারেফত উপলব্ধি করবেন, কালামশাস্ত্র বিদদের নিকট তা খুঁজে পাবেন না।
কালামশাস্ত্র বিদরা যেসব পরিভাষা ও ভূমিকা পেশ করেছে, তাতে হক-বাতিলের সংমিশ্রণের কারণে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, অন্যায় ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে এবং অহেতুক সমালোচনা ও অর্থহীন কথা-বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে তারা নির্ভেজাল শরী'আত ও সুস্পষ্ট বোধশক্তির বিপরীত এমন সব কথার উৎপত্তি করেছে, যা এ সংক্ষিপ্ত কিতাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
ইমাম ত্বহাবীর উক্তি, এর মাধ্যমে আমি তাদের পথের পথিক এবং তাদের কাতারে শামিল হতে চাই। যদিও আমাকে তাদের সাথে যোগদান করার আহ্বান করা হয়নি। আমি ঐসব লোকদের মধ্যে শামিল হতে চাই এবং ঐসব লোকদের সাথে হাশরের দিন উপস্থিত হতে চাই, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
“আর যারা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা ঐ সমস্ত লোকের সাথে থাকবে, যাদের উপর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন; তারা হলেন নাবীগণ, সত্যবাদীগণ, শহীদগণ এবং সৎ কর্মশীলগণ। কতই না উত্তম বন্ধু তারা” (সূরা আন নিসা, ৪:৬৯)।এসব লোকদের দলে থাকার সুবাদে আমি পরকালীন সৌভাগ্য অর্জন করতে চাই। মানুষের মনে সংক্ষিপ্ত বিষয়ের প্রতিই আগ্রহ বেশি, এটা আমার দৃষ্টিগোচর হলো, তাই এর ব্যাখ্যা লম্বা না করে সংক্ষিপ্ত করাকেই আমি প্রাধান্য দিলাম।
وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ
“যা কিছু আমি করতে চাই তা সবই আল্লাহর তাওফীকের উপর নির্ভর করে। তার উপর আমি ভরসা করেছি এবং সব ব্যাপারে তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি” (সূরা হুদ ১১:৮৮)। আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি সর্বোত্তম কার্য সম্পাদনকারী।আরও পড়ুন - শারহুল আক্বীদাহ আত-ত্বহাবীয়া
১. কারণ তারা আলেমদের মধ্যে শামিল নয়।
২. কোনো কোনো ফিকহী মাযহাবের মুকাল্লিদগণ বলে থাকেন, সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই মুহাদ্দিছ ছিলেন ঠিকই; কিন্তু তারা ফক্বীহ ছিলেন না। তাদের মাযহাবের যেসব কথা হাদীসের বিপরীত হয়, ঐ হাদীসের রাবী (সাহাবী সম্পর্কে তারা বলে যে, তিনি ফক্বীহ ছিলেন না! তাই এ মাস'আলায় তার থেকে বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়; তাদের ইমাম যেহেতু ফক্বীহ ছিলেন, তাই হাদীসের বিপরীত হলেও ইমামের কথাই আমলযোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ তারা আবু হুরায়রা (রা) এর ব্যাপারে বলে থাকে যে, তিনি ফক্বীহ ছিলেন না!! তাই তারা তাদের কতিপয় মাস'আলা আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত হলেও মাযহাবের কথাকেই প্রাধান্য দেয়। মাযহাবী গোঁড়ামির কারণেই তারা এমনটি করে থাকে বলে আমরা মনে করি।
সাহাবীদের প্রতি পরবর্তীদের এরূপ ধারণা করা ঠিক নয়। সাহাবীরাই ছিলেন পরবর্তীদের তুলনায় জ্ঞানে ও আমলে সর্বাধিক পরিপূর্ণ। কুরআন ও হাদীসে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের ইলম ও আমলের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের পথে চলার উপদেশ দিয়েছেন। সুতরাং পরবর্তীতে যত আলেম ও ফক্বীহ আগমন করবেন, তাদের কেউই ইলম, ফিকহ এবং অন্যান্য গুণাবলীতে সাহাবীদের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলাই সৰ্বাধিক অবগত।