প্রশ্নোত্তর রমযানে সাওম রাখার নিয়্যাত কী রাতে করা ওয়াজিব নাকি দিনে? আর কেউ যদি পূর্বাহ্নে এসে বলে যে আজকে রমযান, তাহলে তাকে তার কাযা করতে হবে কি না?

Habib Bin TofajjalVerified member

If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
690
Comments
1,228
Solutions
17
Reactions
7,152
প্রশ্ন: একজন নারী তার মাসিক শেষ হওয়ার পর কখন সালাত আদায় করবে, তা কীভাবে সময় নির্ধারণ করবে? একজন নারী তার মাসিকের শেষ সময় শেষ হয়েছে ভেবে সালাত আদায় করল, কিন্তু তারপর তার আবার রক্ত নির্গমন বা বাদামী রঙের স্রাব দেখা গেল, তখন তার কী করা ওয়াজিব?

উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ জন্য।

প্রথমত: যখন কোনো নারীর মাসিক হয় তখন তা থেকে তার পবিত্রতার চিহ্ন হলো রক্ত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া তা কম বা বেশি সময়ের জন্য হোক না কেন। ফকীহগণের অনেকের মতে, মাসিকের সর্বনিম্ন সময় এক দিন এক রাত এবং সর্বোচ্চ সময় ১৫ দিন।

তবে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-এর মতে, মাসিকের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়ের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই, বরং যতক্ষণ তার মধ্যে মাসিকের (রক্তের) বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান থাকবে, তখনই সেটা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। তিনি বলেছেন, “হায়েয, আল্লাহর সাথে কুরআন ও সুন্নাহ এ অনেক রকম বিধি-বিধান সম্পৃক্ত করেছেন, আর এর কোনো সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট করে দেন নি, দুই হায়েযের মাঝখানে পবিত্রতার সময়টিও নির্ধারণ করে দেন নি। কারণ, এতে করে মানুষের জন্য শরী‘আতের বিধান পালন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে...”

এরপর তিনি বলেছেন, “আর ‘আলেমগণের মাঝে অনেকে এর (মাসিকের) সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সময় নির্ধারণ করেছেন। এরপর সেই নির্ধারিত সময়ের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। আবার তাদের মধ্যে অনেকে সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করলেও সর্বনিম্ন সময় নির্ধারণ করেন নি। তবে এখানে তৃতীয় মতটি বেশি সঠিক, আর তা হলো: এর (মাসিকের) সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়ের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই।”[1]

দ্বিতীয়ত: এছাড়া আরও এক ধরণের রক্ত আছে যাকে ইসতিহাযা বলে, যা হায়েযের রক্ত থেকে আলাদা। এর বিধি-বিধান হায়েযের বিধি-বিধান থেকে আলাদা। আর এই রক্তকে হায়েযের রক্ত থেকে নিচের কয়েকটি গুণাবলী দ্বারা পৃথক করা যায়:

রং- হায়েযের রক্ত কালচে আর ইসতিহাযার রক্ত লাল।

ঘনত্ব- হায়েযের রক্ত ঘন, গাঢ় আর ইসতিহাযার রক্ত পাতলা।

ঘ্রাণ - হায়েযের রক্ত দুর্গন্ধযুক্ত আর ইসতিহাযার রক্ত দুর্গন্ধযুক্ত নয়। কারণ, এটি শিরার স্বাভাবিক রক্ত।

জমাটবদ্ধতা- হায়েযের রক্ত বের হওয়ার পর জমাট বাঁধে না, কিন্তু ইসতিহাযা’র রক্ত জমাট বাঁধে। কারণ, তা শিরার রক্ত।

হায়েযের কারণে সালাত নিষিদ্ধ হয় আর ইসতিহাযার কারণে সালাত নিষিদ্ধ হয় না; বরং সে নারী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রতি সালাতের জন্য অযু করবে যদি পরবর্তী ওয়াক্তের সালাত পর্যন্ত রক্ত পড়া অব্যাহত থাকে, এমনকি সালাত আদায়ের সময়েও যদি এ রক্ত পড়তে থাকে তবে তাতে সালাতের কোনো সমস্যা হবে না।

মূলনীতিটি হলো, নির্গত হওয়া রক্ত হায়েযের (মাসিকের) রক্ত হিসেবেই ধর্তব্য হবে, যদি না তা প্রবাহমান হয় এবং গোটা মাস জুড়ে অব্যাহত থাকে, (তখন তা ইস্তেহাযার রক্ত বিবেচিত হবে) এ হচ্ছে শাইখুল ইসলামের মত অথবা হায়েযের (মাসিকের) সর্বোচ্চ সময়সীমা ১৫ দিনের বেশি অতিক্রান্ত হলে তবে অধিকাংশ ‘আলেমের মতে তা ইসতিহাযা-এর রক্ত বলে বিবেচিত হবে।

তৃতীয়ত: একজন নারী তার পবিত্রতা দু’টো চিহ্নের যে কোনো একটির মাধ্যমে জানতে পারে:

(১) শ্বেতস্রাব: আর তা হলো একধরনের সাদা তরল পদার্থ যা জরায়ু থেকে বের হয়। এটি পবিত্রতার একটি চিহ্ন।

(২) পূর্ণ শুষ্কতা: যদি কোনো নারীর এই শ্বেতস্রাব না আসে, সেক্ষেত্রে সে রক্ত বের হওয়ার স্থানে সাদা তুলো প্রবেশ করাবে, তা যদি পরিষ্কার অবস্থায় বের হয় তবে সে জানবে যে সে পবিত্র হয়ে গেছে, এরপর সে গোসল করে সালাত আদায় করবে।

আর যদি সে তুলো লাল, হলুদ ও খয়েরী রঙ এর বের হয় তাহলে সে সালাত আদায় করবে না।

আর মহিলা সাহাবীগণ, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে পাত্রে করে তুলো পাঠাতেন যাতে হলোদে রঙ (এর স্রাব) থাকতো। তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলতেন: “আপনারা শ্বেতস্রাব না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবেন না।”[2]

তবে যদি এই হলোদে বা খয়েরী রঙের স্রাব সে নারীর পবিত্রতার দিনগুলোতে (শ্বেতস্রাব বের হওয়ার পর) আসে, তা ধর্তব্য হবে না এবং সে নারী তার সালাত ত্যাগ করবে না, গোসলও করবে না (তবে তা পরিষ্কার করে অযু করবে) কারণ তা গোসল ওয়াজিব করে না, আর তা থেকে অপবিত্রও হয় না।

এর দলীল হলো উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস:
«كنا لا نعد الصفرة والكدرة بعد الطهر شيئاً».
“আমরা পবিত্রতার পর হলোদে বা খয়েরী স্রাবকে কোনো কিছু হিসেবে (হায়েয হিসেবে) গণ্য করতাম না।”[3] তবে “পবিত্রতার পর’’ কথাটি উল্লেখ করেন নি]

‘কুদরাহ’ বা খয়েরী স্রাব ময়লা পানির ন্যায়। ‘কোনো কিছু হিসেবে (হায়েয হিসেবে) গণ্য করতাম না’ অর্থাৎ হায়েয হিসেবে গণ্য করতাম না, তবে এতে অযু করা ওয়াজিব হয়।

তবে যদি খয়েরী বা হলুদ স্রাব হায়েযের সাথে বের হয় তবে তা হায়েযের মধ্যে বলে গণ্য হবে।

চতুর্থত: যদি কোনো নারী মনে করে যে সে পবিত্র হয়েছে এবং এরপর রক্ত ফিরে আসে এবং সেই রক্ত হায়েযের বৈশিষ্ট্য বহন করে তবে তা হায়েয (মাসিক)। যদি না গোটা মাস জুড়ে অব্যাহত থাকে।

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

ইসলাম কিউ.এ শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
বাংলা বই - সিয়াম বিষয়ক নির্বাচিত ফাতওয়া - PDF

[1] মাজমূ‘উল ফাতাওয়া (১৯/২৩৭)
[2] এটি বর্ণনা করেছেন বুখারী মু‘আল্লাক হিসেবে, (কিতাব আল-হায়েয, বাব ইক্ববাল আল-মাহীদ্ব ওয়া ইদবারিহ) ও মালিক (১৩০)
[3] আবু দাঊদ, হাদীস নং ৩০৭; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২০
 
Similar threads Most view View more
Back
Top