প্রবন্ধ যেমন ছিল নবীজীর চরিত্র

  • Thread Author
চরিত্র কী?

চরিত্র শব্দটি চরিত থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো জীবনাচার। যেমন : ছাহাবীগণের জীবনীসংক্রান্ত বইয়ের নাম রাখা হয়েছে ‘ছাহাবা চরিত’। অর্থাৎ ছাহাবীগণের জীবনী বা ছাহাবীগণের জীবনকথা। চরিত্রের আরবী হচ্ছে খুলুকুন, যার বহুবচন আখলাক, যার অর্থ হচ্ছে স্বভাব, চরিত্র, অভ্যাস ও শিষ্টাচার। সুতরাং আমরা বলতে পারি- ‘জীবনে চলার পথে আমাদের কথা ও কর্মের মাধ্যমে যে স্বভাব ফুটে উঠে, তারই নাম চরিত্র’। অন্যভাবে বলা যায়- মানবজীবনের সকল আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের সমষ্টিই হচ্ছে চরিত্র।[1] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহি.) বলেন,الدِّينُ كُلُّهُ خُلُقٌ فَمَنْ زَادَ عَلَيْكَ فِي الْخُلُقِ زَادَ عَلَيْكَ فِي الدِّينِ ‘চরিত্রই হচ্ছে দ্বীন। চরিত্রের দিক দিয়ে যিনি তোমার চেয়ে বেশি অগ্রসর, দ্বীনের দিক দিয়েও তিনি তোমার চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর’।[2]

আমাদের জীবনে চরিত্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা সাধারণত কোনো মানুষকে ভালো-মন্দের বিচার করে থাকি তার চরিত্রের মানদণ্ডে। এজন্যই ইসলাম উত্তম চরিত্রের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। নিম্নবর্ণিত হাদীছগুলো অধ্যয়ন করলেই বোঝা যাবে উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব। একদা নবী (ﷺ) বললেন,تَدْرُونَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّارَ‏؟‏ قَالُوا‏:‏ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ‏:‏ الأَجْوَفَانِ‏:‏ الْفَرْجُ وَالْفَمُ، وَأَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ الْجَنَّةَ‏؟‏ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ‏ ‘তোমরা কি জানো, কোন জিনিসটি অধিকাংশ মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে?’ ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেন, ‘দুইটি ছিদ্র (১) লজ্জাস্থান ও (২) মুখ। আর (তোমরা কি জানো) কোন জিনিসটি অধিক পরিমাণে মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? (সেগুলো হলো) আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র’।[3]

আবূ হুরায়রা (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ‘ঐ মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ, যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট’।[4] নবী (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَةَ الصَّائِمِ الْقَائِمِ ‘নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) ছিয়াম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে’।[5]

এছাড়াও অনেক আয়াত ও হাদীছ রয়েছে, যা উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব বহন করে।

নবী (ﷺ)-এর চরিত্র কেমন ছিল?

আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন, এটা কেবল মুসলিমজাতি মেনে নিয়েছে তা নয়, বরং মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও এটা মানতে বাধ্য হয়েছে যে, তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান ও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী মহাপুরুষ। একজন অমুসলিম বিশ্ববিখ্যাত লেখক মাইকেল এইচ হার্ট তিনি ‘দি হানড্রেড’ নামে একটি বই লিখেছেন, যার জন্য তিনি বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। সেই বইয়ে তিনি ১০০ জন ভূবনবিখ্যাত ব্যক্তির জীবনকাহিনী লিখেছেন, যার মধ্যে তিনি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নাম প্রথম স্থানে উল্লেখ করেছেন একমাত্র তাঁর প্রভাব ও আদর্শের জন্যই।

একজন কবি ছাহাবী হাসসান ইবনু ছাবেত (রাযি.) নবী (ﷺ)-এর সম্পর্কে বলেছেন,

وَأَحسَنُ مِنكَ لَم تَرَ قَطُّ عَيني

وَأَجمَلُ مِنكَ لَم تَلِدِ النِساءُ

خُلِقتَ مُبَرَّءً مِن كُلِّ عَيبٍ

كَأَنَّكَ قَد خُلِقتَ كَما تَشاءُ

‘আপনার চেয়ে সুন্দর আমার দু‘চোখ কাউকে কখনো দেখেনি। আপনার চেয়ে সুন্দর সন্তান কোনো নারী কখনো জন্ম দেয়নি। আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সকল দোষত্রুটি মুক্ত করে। যেমনটি আপনি চেয়েছেন, ঠিক তেমন করেই যেন আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে’।

কবির এই কবিতাই বলে দিচ্ছে কেমন ছিলেন তিনি। কেমন ছিল তার অনুপম চরিত্রের সৌন্দর্য। অনুভব করে বুঝার বিষয় অথবা বুঝানোর বিষয় নয়। এজন্য তাঁর উন্নত আদর্শের স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বজাহানের মালিক মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ﴾ ‘আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন’ (আল-ক্বালাম ৬৮/৪)। এজন্যই তো নবী (ﷺ)-কে চলন্ত কুরআনও বলা যেতে পারে, যেমনটি আম্মা আয়েশা g-কে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন, كَانَ خُلُقُهُ القُرْآنَ ‘তাঁর চরিত্র ছিল আল-কুরআন’।[6] অর্থাৎ কুরআন মাজীদে যে সকল উত্তম চরিত্র ও মহান নৈতিকতার উল্লেখ রয়েছে, সে সবই তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিল। কুরআনে বর্ণিত চরিত্র অপেক্ষা উত্তম চরিত্র আর কী হতে পারে? তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনের চরিত্রমালার জীবন্ত প্রতীক।

অতএব, আমরা আমাদের চরিত্র গঠন করব একমাত্র নবী (ﷺ)-এর আদর্শানুযায়ী; কোনো দার্শনিক, ঐতিহাসিক বা রাজনীতিবিদের আদর্শ অনুযায়ী নয়। তবেই আমাদের সফল হওয়া সম্ভব। যেহেতু উত্তম আদর্শ একমাত্র নবী (ﷺ)-এর মধ্যেই রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ﴾ ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ’ (আল-আহযাব, ৩৩/২১)।

নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত :

১. সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতা : নবী (ﷺ) কেমন সত্যবাদী ছিলেন, সত্যবাদিতার শিক্ষা কত তাকীদের সাথে দিয়েছেন, শুধু শিক্ষাই নয়, সত্যবাদিতার গুণে গুণান্বিত করার জন্য তাঁর ছাহাবীগণকে কীভাবে তারবিয়াত করেছেন, সুন্নাহ ও সীরাতের কিতাবে তা বিস্তারিতভাবে আছে। তাঁর জীবনের, স্বভাবের এক উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সত্যবাদিতা। নবুঅতের আগ থেকেই তিনি তাঁর সমাজে প্রসিদ্ধ ছিলেন সত্যবাদী ও আমানতদার হিসেবে। মক্কার কাফের-মুশরিকরাও তাঁকে ‘আল-আমীন’ বলে ডাকত। এমনকি আবূ সুফিয়ান (রাযি.) যিনি ঐ সময় পর্যন্ত তাঁর প্রাণের দুশমন ছিলেন এবং তার মর্যাদাহানীর সুযোগ খুঁজছিলেন, তিনি পর্যন্ত বলছেন যে, আমরা তাকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারিনি।[7] আমরা সবাই এই বিষয়গুলো জানি। এই প্রসিদ্ধি কি এক দিনে অর্জিত হয়েছিল? না, এক দিনে হয়নি। সম্মান ও মর্যাদা এক দিনে গড়ে ওঠে না। তা গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে— নানা ঘটনায়, নানা পরিস্থিতিতে। আরবের কুরাইশের মাঝে তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাঁর কথা-কাজ, আচার-আচরণ, শৈশব, কৈশোর, যৌবন সবই তাদের সামনে ছিল। এই দীর্ঘ জীবনে তাঁর কর্ম ও আচরণ থেকে তাঁর সমাজ এই বিশ্বাস গ্রহণ করেছে যে, এই মানুষটি একজন সত্যবাদী, আমানতদার মানুষ।

তার একটি বড় দৃষ্টান্ত— দাওয়াতের প্রথম দিকের ঐ ঘটনা তো আমাদের সবারই জানা আছে। ছাফা পাহাড়ের ঘটনা। ছহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস h-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, (কুরআন মাজীদে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াতের আদেশ— وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ অর্থাৎ, ‘আপনার নিকটস্থ জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে সতর্ক করুন’) নাযিল হওয়ার পর নবী (ﷺ) ছাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং উচ্চৈঃস্বরে বললেন, ‘ইয়া সাবাহাহ!’ অর্থাৎ বিপদ! বিপদ! কুরাইশের লোকেরা পাহাড়ের সামনে উপস্থিত হলো। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন,أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخْبَرْتُكُمْ أَن خَيْلًا تَخْرُجُ مِنْ سَفْحِ هَذَا الجَبَلِ أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِي ‘আমি যদি তোমাদের বলি যে, একটি শত্রুদল এই পাহাড়ের ওপার থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করবে, তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে?’ সকলে বলল, مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ كَذِبًا ‘আমরা আপনাকে কখনো মিথ্যা বলতে দেখিনি’। তখন তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের জন্য এক কঠিন আযাবের সতর্ককারী’।[8]

এই ঘটনায় অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তবে এখানে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি হচ্ছে নবী (ﷺ) সম্পর্কে তার জাতির সাক্ষ্য, مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ كَذِبًا ‘আমরা কখনো আপনাকে মিথ্যা বলতে দেখিনি’। তিনি কত সত্যবাদী ছিলেন এখান থেকে সেটি বুঝা যায়![9]

২. দয়া-মমতা : দয়া করা একটি মহৎ গুণ, যা মানুষের উচ্চ ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। যে ব্যক্তি দয়া করে না, তার উপরও দয়া করা হয় না।[10] মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় দয়ালু ছিলেন নবী মুহাম্মদ (ﷺ)। তিনি শুধু মানুষের উপর দয়া করেননি, বরং পশু-পাখি ও জন্তু-জানোয়ারের উপরেও দয়া করেছেন এবং দয়া করতেও অন্যকে আদেশ করেছেন। যেহেতু তাঁকে পাঠানোই হয়েছিল সারা বিশ্বজাহানের জন্য রহমত তথা দয়াস্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ﴾ ‘আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতস্বরূপই পাঠিয়েছে’ (আল-আম্বিয়া, ২১/১০৭)। নবী (ﷺ) কত দয়ালু ছিলেন তার একটি বড় দৃষ্টান্ত, আনাস ইবনু মালেক (রাযি.) বলছেন,خَدَمْتُ النَّبِيَّ ﷺ عَشْرَ سِنِينَ فَمَا قَالَ لِي أُفٍّ‏ وَلاَ لِمَ صَنَعْتَ وَلاَ أَلاَّ صَنَعْتَ‏ ‘আমি ১০টি বছর নবী (ﷺ) এর খেদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি ‘উহ!’ শব্দটি করেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না?’[11] এই ছিল নবী (ﷺ) এর দয়া একজন খাদেমের সাথে।

৩. বিনয় ও নম্রতা : নবী (ﷺ) ছিলেন উচ্চ সম্মানের অধিকারী ব্যক্তি, রাষ্ট্রনায়ক, সুবিচারক ইত্যাদি। তা সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে কোনো রকমের গর্ব অহংকার ছিল না। তিনি এত নম্র ও ভদ্র ছিলেন যে, সাধারণত তিনি ছাহাবীদগণের মধ্যেই বসতেন। ফলে কোনো অপরিচিত ব্যক্তি আসলে প্রশ্ন না করা পর্যন্ত বলতে পারতেন না যে, কোন ব্যক্তিটি নবী (ﷺ)।[12]

তিনি কেমন নম্র ও ভদ্র ছিলেন তার আরেকটা দৃষ্টান্ত— তিনি (ﷺ) যখন বাড়িতে থাকতেন, তখন পরিবারের ছোটখাটো কাজ-কর্মে অংশগ্রহণ করতেন। স্ত্রীদের পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করতেন, যা দ্বারা নম্রতার প্রকাশ পায়। আসওয়াদ (রাহি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা g-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (ﷺ) ঘরে থাকাবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন,كَانَ يَكُونُ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ تَعْنِي خِدْمَةَ أَهْلِهِ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ‏ ‘ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারবর্গের সহায়তা করতেন। আর ছালাতের সময় হলে ছালাতের জন্য চলে যেতেন’।[13] একদা আনাস ইবনু মালেক (রাযি.) একদল শিশুর পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি তাদের সালাম দিয়ে বললেন, كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَفْعَلُهُ ‘নবী (ﷺ)ও এমনটি করতেন’।[14] অর্থাৎ নবী (ﷺ) একজন বড় মানুষ হয়েও ছোট বাচ্চাদের সালাম দিতেন, যেটি তার বিনয় ও নম্রতারই প্রমাণ করে।

৪. সহনশীলতা : কোনো অপছন্দনীয় জিনিস দেখে বা কঠিন থেকে কঠিনতর মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করাকে সহনশীলতা বলে। সহনশীলতায় প্রিয় নবী (ﷺ) ছিলেন সর্বোচ্চ আদর্শ।

তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত— আনাস ইবনু মালেক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি নবী (ﷺ) এর সঙ্গে পথ চলছিলাম। তখন তিনি নাজরানে প্রস্তুত মোটা পাড়ের চাদর পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে খুব জোরে টেনে ধরল। অবশেষে আমি দেখলাম, জোরে টানার কারণে নবী (ﷺ)-এর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। অতঃপর বেদুঈন বলল, আল্লাহর যে সম্পদ আপনার নিকট আছে তা হতে আমাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিন। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন, আর তাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিলেন’।[15] এই ছিল নবী (ﷺ) এর সহনশীলতা।

আবূ হুরায়রা (রাযি.) বলেন, একবার এক বেদুঈন মসজিদে প্রস্রাব করে দিলেন। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বললেন,دَعُوهُ وَأَهْرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ ذَنُوبًا مِنْ مَاءٍ أَوْ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ‏ ‘তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে নম্র ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে; কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি’।[16] নবীজীবনের সবকিছুই তো উম্মতের জন্য শিক্ষা। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরাও যেন নিজেদেরকে সহনশীলতার মহোত্তম গুণে গুণান্বিত করি।

৫. ন্যায়পরায়ণতা : ন্যায়পরায়ণতা মানবচরিত্রের এক মহৎ গুণ, যার ফলে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ফিরে আসে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো প্রিয় নবী (ﷺ)। তিনি ধনী-গরীব, ছোট-বড়, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে মানুষ হিসেবে সমান দৃষ্টিতে দেখতেন। এমনকি শত্রু-মিত্রের মধ্যেও কোনো ভেদাভেদ করতেন না।

তার একটা বড় দৃষ্টান্ত— উরওয়া ইবনুয যুবায়ের (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যামানায় মক্কা বিজয় অভিযানের সময়ে এক সম্ভ্রান্ত গোত্রের স্ত্রীলোক চুরি করেছিল। তাই তার গোত্রের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে উসামা ইবনু যায়েদ (রাযি.)-এর কাছে এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ জানালো। উরওয়া (রাযি.) বলেন, উসামা (রাযি.)-এ বিষয়ে নবী (ﷺ)-এর কাছে কথা বলামাত্র তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি উসামা (রাযি.)-কে বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তিগুলোর একটি শাস্তির ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? উসামা (রাযি.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এরপর সন্ধ্যা হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খুৎবা দিতে দাঁড়ালেন। যথাযথভাবে আল্লাহর হামদ-ছানা করে বললেন, ‘আম্মা বা‘দ’ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এজন্য ধ্বংস হয়েছিল যে, তারা তাদের মধ্যকার উচ্চ শ্রেণির কোনো লোক চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত। পক্ষান্তরে কোনো দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করত। অতঃপর শপথ করে বললেন, ‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত, তাহলেও আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই মহিলাটির ব্যাপারে আদেশ দিলেন। ফলে তার হাত কেটে দেওয়া হলো। পরবর্তীকালে তিনি উত্তম তওবার অধিকারিণী হয়েছিলেন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। আয়েশা g বলেন, এরপর তিনি আমার কাছে প্রায়ই আসতেন। আমি তার প্রয়োজনাদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে তুলে ধরতাম’।[17]

৬. রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমা : রাগ মানুষকে অনেক সময় সঠিক পথ হতে বিচ্যুত করে। তাছাড়া সমাজের মানুষ মেজাজী মানুষকে ভালোবাসে না। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমা করে দেওয়া একটা মহৎ গুণ, যাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।

উপসংহার: আর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নেওয়ার নামই ক্ষমা । এর সর্বোচ্চ আদর্শ প্রিয় নবী -এর চরিত্রে পাওয়া যায় । তার একটা বড় দৃষ্টান্ত— মক্কা বিজয়ের ঘটনা। মক্কা বিজয়ের আগে কুরাইশরা নবী -এর উপর অত্যাচার - নির্যাতন , তিরস্কার , সামাজিকভাবে বয়কট করা এমনকি হত্যার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন । চাইলে তিনি এক এক করে প্রত্যেক ব্যক্তি থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি । তিনিই হলেন প্রিয় নবী , দয়ার নবী মুহাম্মাদ ﷺ।এগুলো নবী -এর চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের কয়েকটি দিক মাত্র , যা আমাদের ব্যক্তি জীবনে বা সামাজিক জীবনে বেশি ফুটে উঠে । যেহেতু নবী আমাদের জন্য মডেল তথা আদর্শ , সেহেতু আমাদের উপর অপরিহার্য সেই মডেলকে সামনে রেখে নিজের চরিত্র গঠন করা । যাতে করে আমাদের মালিক আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন । অতএব , নবী - এর সেই আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে নিজেদের চরিত্র ও স্বভাবকে সমাজের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রমাণ করতে হবে । তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন- আমীন

– তাওহীদুর রহমান ইবনু মঈনুল হক্ব
ফারেগ জামিয়া সালাফিয়া বেনারস উত্তর প্রদেশ ভারত।​


[1]. চাই সুন্দর চরিত্র, পৃ. ১ (সামান্য পরিবর্তিত)।
[2]. মাদারিজুস সালিকীন, ২/২৯৪।
[3]. আদাবুল মুফরাদ, হা/২৮৯, হাদীছ হাসান।
[4]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬৮২, হদীছ ছহীহ।
[5]. আবূ দাঊদ, হা/৪৭৯৮, হাদীছ ছহীহ।
[6]. ছহীহুল জামে‘, হা/৪৭১১।
[7]. ছহীহ বুখারী, হা/৭।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৭১।
[9]. প্রবন্ধ: নবী-জীবনে সত্যবাদিতা, মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল ২০১৮
[10]. ছহীহ জামে‘, হা/৬৫৯৮, হাদীছ ছহীহ।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৩৮।
[12]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬৯৮, হাদীছ ছহীহ।
[13]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৬।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৬২৪৭।
[15]. ছহীহ বুখারী, হা/৩১৪৯।
[16]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১২৮।
[17]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩০৪।
 
উপরোক্ত প্রবন্ধের শেষাংশ টা ছুটে গেছে।

উপসংহার 👇

আর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নেওয়ার নামই ক্ষমা । এর সর্বোচ্চ আদর্শ প্রিয় নবী -এর চরিত্রে পাওয়া যায় । তার একটা বড় দৃষ্টান্ত— মক্কা বিজয়ের ঘটনা। মক্কা বিজয়ের আগে কুরাইশরা নবী -এর উপর অত্যাচার - নির্যাতন , তিরস্কার , সামাজিকভাবে বয়কট করা এমনকি হত্যার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন । চাইলে তিনি এক এক করে প্রত্যেক ব্যক্তি থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি । তিনিই হলেন প্রিয় নবী , দয়ার নবী মুহাম্মাদ ﷺ।এগুলো নবী -এর চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের কয়েকটি দিক মাত্র , যা আমাদের ব্যক্তি জীবনে বা সামাজিক জীবনে বেশি ফুটে উঠে । যেহেতু নবী আমাদের জন্য মডেল তথা আদর্শ , সেহেতু আমাদের উপর অপরিহার্য সেই মডেলকে সামনে রেখে নিজের চরিত্র গঠন করা । যাতে করে আমাদের মালিক আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন । অতএব , নবী - এর সেই আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে নিজেদের চরিত্র ও স্বভাবকে সমাজের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রমাণ করতে হবে । তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন- আমীন
 
উপরোক্ত প্রবন্ধের শেষাংশ টা ছুটে গেছে।

উপসংহার 👇

আর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নেওয়ার নামই ক্ষমা । এর সর্বোচ্চ আদর্শ প্রিয় নবী -এর চরিত্রে পাওয়া যায় । তার একটা বড় দৃষ্টান্ত— মক্কা বিজয়ের ঘটনা। মক্কা বিজয়ের আগে কুরাইশরা নবী -এর উপর অত্যাচার - নির্যাতন , তিরস্কার , সামাজিকভাবে বয়কট করা এমনকি হত্যার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন । চাইলে তিনি এক এক করে প্রত্যেক ব্যক্তি থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি । তিনিই হলেন প্রিয় নবী , দয়ার নবী মুহাম্মাদ ﷺ।এগুলো নবী -এর চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের কয়েকটি দিক মাত্র , যা আমাদের ব্যক্তি জীবনে বা সামাজিক জীবনে বেশি ফুটে উঠে । যেহেতু নবী আমাদের জন্য মডেল তথা আদর্শ , সেহেতু আমাদের উপর অপরিহার্য সেই মডেলকে সামনে রেখে নিজের চরিত্র গঠন করা । যাতে করে আমাদের মালিক আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন । অতএব , নবী - এর সেই আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করে নিজেদের চরিত্র ও স্বভাবকে সমাজের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রমাণ করতে হবে । তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন- আমীন
যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
 
Back
Top