বরকত হচ্ছে— আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একটি নেয়ামত। চারটি বিষয়ের মাধ্যমে এটি লাভ করা যেতে পারে ও ধরে রাখা যেতে পারে:
প্রথম বিষয়:
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার মাধ্যমে। সেটা হাছিল হয়— নির্দেশিত কর্মসমূহ পালন করা ও নিষিদ্ধ কর্মসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এবং ওয়াজিবসমূহ পালনে কোন কসুর ঘটলে কিংবা নিষিদ্ধ কোন কিছুতে লিপ্ত হয়ে পড়লে অবিলম্বে তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর যদি গ্রামবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু, তারা (সত্যকে) অবিশ্বাস করেছে। তাই আমি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি।”[সূরা আ’রাফ, আয়াত: ৯৬]
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবী নূহ আলাইহিস সালাম এর দাওয়াত সম্পর্কে বলেন: “আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন; ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তোমাদের শক্তিবৃদ্ধি করবেন এবং জন্য বাগ-বাগিচা ও নদ-নদী বানিয়ে দেবেন।”[সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১১]
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবী হূদ আলাইহিস সালামের দাওয়াত সম্পর্কে বলেন: “আর আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তোমরা তো মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছু নও। হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো তাঁর কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তবুও কি তোমরা বুঝবে না? আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), তারপর তওবা কর; তাহলে তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”[সূরা হূদ, আয়াত: ৫০-৫২]
আল্লাহ্ তাআলা আহলে কিতাবদের সম্পর্কে বলেন: “তারা যদি তাওরাত ও ইনজীল এবং তাদের কাছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা (কোরআন) সঠিকভাবে মেনে চলত তাহলে তারা তাদের ওপর থেকে এবং তাদের পায়ের নিচ থেকে খাদ্যের যোগান পেত।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৬৬]
তাকওয়াভিত্তিক যেসব কর্ম রিযিক টেনে আনে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্ম হল: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা; সম্পর্ক ছিন্ন না করা। আনাস বিন বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তারা রুজি রোজগারে বরকত আসুক এবং মৃত্যুর পর তার সুনাম অটুট থাকুক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।”[সহিহ বুখারী (২০৬৭) ও সহিহ মুসলিম (২৫৫৭)]
অনুরূপভাবে মানুষের সাথে লেনদেনে হারাম কাজ বর্জন করা; যেমন জালিয়াতি, সুদী কারবার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কার্যাবলি।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ণ করেন আর দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ কোন পাপিষ্ঠ কাফেরকে পছন্দ করেন না।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭৬]
বিশিষ্ট তাফসিরকারক শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আস-শানক্বিতী (রহঃ) বলেন: আল্লাহ্র বাণী: “আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ণ করেন” এ আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ্ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সুদকে সুদী কারবারকারীর হাত চূড়ান্তভাবে নিঃশেষ করবেন কিংবা তাকে তার সম্পদের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন; ফলে সে এ সম্পদ দিয়ে উপকৃত হতে পারবে না- যেমনটি বলেছেন ইবনে কাছির ও অন্যান্য আলেমগণ।”[আযওয়াউল বায়ান (১/২৭০) থেকে সমাপ্ত]
হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ক্রেতা-বিক্রেতার ততক্ষণ স্বাধীনতা থাকবে; যতক্ষণ না তার বিচ্ছিন্ন হয়। কিংবা বলেছেন: যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিচ্ছিন্ন হয়। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেয়া হবে। আর যদি দোষ গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।”[সহিহ বুখারী (২০৭৯) ও সহিহ মুসলিম (১৫৩২)]
দ্বিতীয় বিষয়:
আল্লাহ্র নেয়ামতের শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও বরকত টেনে আনে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “(স্মরণ কর) যখন তোমাদের প্রভু ঘোষণা করেছিলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ থাক তাহলে তোমাদেরকে আরো দেব, কিন্তু যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে (মনে রাখবে) অবশ্যই আমার শাস্তি বড় কঠোর।”[সূরা ইব্রাহীম, আয়াত: ৭]
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়— অন্তরের মাধ্যমে, জিহ্বার কথার মাধ্যমে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মের মাধ্যমে।
অন্তরের কৃতজ্ঞতা হল: এ স্বীকৃতি দেয়া যে, নেয়ামতগুলো আল্লাহ্র নিছক অনুগ্রহ। বান্দার অন্তর অন্য কারো দিকে ধাবিত না হওয়া। যেমনটি ছিল জাহেলি যুগের লোকদের অবস্থা। তারা নেয়ামতকে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্যের দিকে সম্বোন্ধিত করত। আল্লাহ্ তাআলা তাদের সে অবস্থা উল্লেখ করে বলেন: “তারা জানে যে, (এসব) আল্লাহ্র নেয়ামত, তারপরেও তারা অস্বীকার করে। তাদের অধিকাংশই কাফের (অস্বীকারকারী)।”[সূরা নামল, আয়াত: ৮৩]
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: “তারা জানে যে, (এসব) আল্লাহ্র নেয়ামত, তারপরেও তারা অস্বীকার করে” অর্থাৎ তারা জানে যে, আল্লাহ্ই তাদের উপর অনুকম্পাকারী, অনুগ্রহকারী। তা সত্ত্বেও তারা অস্বীকার করে। আল্লাহ্র সাথে অন্য সত্তার উপাসনা করে। সাহায্য ও রিযিকদানকে অন্যের দিকে সম্বোধিত করে।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৫৯২) থেকে সমাপ্ত]
জিহ্বার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা: এই নেয়ামতগুলোকে সৃষ্টিকর্তার দিকে সম্বোধিত করা, তাঁর প্রশংসা করা, নিজের কলা-কৌশল, বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি ইত্যাদি নিয়ে গর্ব না করা; কারণ এ সব গুণাবলিও আল্লাহ্র নেয়ামত।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা: সেটা হল কোন হারাম কাজে এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার না করার মাধ্যমে।
এ ধরণের কৃতজ্ঞতার মধ্যে পড়বে—অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা যেভাবে আল্লাহ্ তার প্রতি অনুগ্রহ করেছে। অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা আল্লাহ্র অধিক অনুগ্রহ টেনে আনার কারণ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “অনুগ্রহের প্রতিদান অনুগ্রহ ছাড়া আর কী হতে পারে?”[সূরা আর-রহমান, আয়াত: ৬০]
তৃতীয় বিষয়:
এ সকল নেয়ামত ভোগ করার সময় ইসলামী শিষ্টাচার মেনে চলা। যেমন- পানাহারের সময়, ঘরে ঢুকার সময় বিস্মিল্লাহ্ বলা।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন: “কোন ব্যক্তি যখন নিজ বাড়িতে প্রবেশের সময় ও আহারের সময় আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে; তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে, আজ না তোমরা এ ঘরে রাত্রি যাপন করতে পারবে, আর না খাবার পাবে। আর যখন সে প্রবেশকালে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে না, তখন শয়তান বলে: তোমরা রাত্রি যাপন করার স্থান পেলে। আর যখন আহার কালেও আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে না, তখন সে তার চেলাদেরকে বলে, তোমরা রাত্রিযাপন স্থল ও নৈশভোজ উভয়ই পেয়ে গেলে।”[সহিহ মুসলিম (২০১৮)]
অনুরূপভাবে সবাই একসাথে খাওয়া; আলাদা-আলাদাভাবে নয়। খাবার ও পানীয় ইত্যাদির পেছনে অপচয় না করা। খরচ করতে হবে প্রয়োজন মাফিক; বেশিও নয়, কমও নয়।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও; আর মোটেও অপব্যয় করো না। কারণ অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর তোমার প্রভুর কাছ থেকে প্রত্যাশিত কোন অনুগ্রহের অপেক্ষায় থাকাকালে যদি তাদের থেকে (কখনও) মুখ ফিরিয়ে রাখ (আপাতত তাদেরকে কিছু দিতে না পার) তাহলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলবে। তোমার হাত গ্রীবায় আবদ্ধ রেখো না (একেবারে ব্যয়কুন্ঠ হয়ো না) কিংবা তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না (একেবারে মুক্তহস্ত হয়ো না)। তাহলে তিরস্কৃত কিংবা নিঃস্ব হয়ে পড়বে।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৬-২৯]
একজন মুসলিমের উচিত তার নিজের সাথে, তার পরিবারের সাথে ও তার সম্পদের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও তিনি তাঁর উম্মতকে যে সব শিষ্টাচার শিখিয়ে গেছেন সেগুলো অনুসরণে সচেষ্ট হওয়া। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল ও সহজলভ্য বই হচ্ছে- ইমাম নবীর লিখিত “রিয়াদুস সালেহীন”।
চতুর্থ বিষয়:
হাদিসে বর্ণিত দোয়া-দরুদ ও যিকির-আযকারের মাধ্যমে সুরক্ষা গ্রহণ করা। তাই একজন মুসলিম নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যার যিকিরগুলো পড়বেন, ঘুমাবার পূর্বের যিকিরগুলো পড়বেন এবং ইসলামী শরিয়ত আরও যে সকল যিকিরের দিক-নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো পড়বেন। হাদিসে বর্ণিত দোয়া-দরুদ ও যিকির-আযকার জানার জন্য ভাল বই হচ্ছে- সাঈদ বিন আলী বিন ওয়াহাফ আল-কাহতানীর লিখিত حِصن المسلم من أذكار الكتاب والسّنة (হিসনুল মুসলিম)।
সারকথা হল: একজন মুসলিম তাকওয়ার মাধ্যমে বরকত লাভ করেন; তাকওয়া হচ্ছে—নিষিদ্ধ কার্যাবলি বর্জন করা এবং সাধ্যমত নির্দেশিত কার্যাবলি পালন করা। এবং বরকত লাভ করেন— তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে।
সূত্র: ইসলাম কিউএ. ইনফো, ফতোয়া নং ২৬৬২৪৯
প্রথম বিষয়:
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার মাধ্যমে। সেটা হাছিল হয়— নির্দেশিত কর্মসমূহ পালন করা ও নিষিদ্ধ কর্মসমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এবং ওয়াজিবসমূহ পালনে কোন কসুর ঘটলে কিংবা নিষিদ্ধ কোন কিছুতে লিপ্ত হয়ে পড়লে অবিলম্বে তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর যদি গ্রামবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু, তারা (সত্যকে) অবিশ্বাস করেছে। তাই আমি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি।”[সূরা আ’রাফ, আয়াত: ৯৬]
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবী নূহ আলাইহিস সালাম এর দাওয়াত সম্পর্কে বলেন: “আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন; ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তোমাদের শক্তিবৃদ্ধি করবেন এবং জন্য বাগ-বাগিচা ও নদ-নদী বানিয়ে দেবেন।”[সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১১]
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবী হূদ আলাইহিস সালামের দাওয়াত সম্পর্কে বলেন: “আর আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তোমরা তো মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছু নও। হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো তাঁর কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তবুও কি তোমরা বুঝবে না? আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), তারপর তওবা কর; তাহলে তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”[সূরা হূদ, আয়াত: ৫০-৫২]
আল্লাহ্ তাআলা আহলে কিতাবদের সম্পর্কে বলেন: “তারা যদি তাওরাত ও ইনজীল এবং তাদের কাছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তা (কোরআন) সঠিকভাবে মেনে চলত তাহলে তারা তাদের ওপর থেকে এবং তাদের পায়ের নিচ থেকে খাদ্যের যোগান পেত।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৬৬]
তাকওয়াভিত্তিক যেসব কর্ম রিযিক টেনে আনে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্ম হল: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা; সম্পর্ক ছিন্ন না করা। আনাস বিন বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তারা রুজি রোজগারে বরকত আসুক এবং মৃত্যুর পর তার সুনাম অটুট থাকুক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।”[সহিহ বুখারী (২০৬৭) ও সহিহ মুসলিম (২৫৫৭)]
অনুরূপভাবে মানুষের সাথে লেনদেনে হারাম কাজ বর্জন করা; যেমন জালিয়াতি, সুদী কারবার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কার্যাবলি।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ণ করেন আর দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ কোন পাপিষ্ঠ কাফেরকে পছন্দ করেন না।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ২৭৬]
বিশিষ্ট তাফসিরকারক শাইখ মুহাম্মদ আল-আমীন আস-শানক্বিতী (রহঃ) বলেন: আল্লাহ্র বাণী: “আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ণ করেন” এ আয়াতে কারীমাতে আল্লাহ্ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি সুদকে সুদী কারবারকারীর হাত চূড়ান্তভাবে নিঃশেষ করবেন কিংবা তাকে তার সম্পদের বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন; ফলে সে এ সম্পদ দিয়ে উপকৃত হতে পারবে না- যেমনটি বলেছেন ইবনে কাছির ও অন্যান্য আলেমগণ।”[আযওয়াউল বায়ান (১/২৭০) থেকে সমাপ্ত]
হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ক্রেতা-বিক্রেতার ততক্ষণ স্বাধীনতা থাকবে; যতক্ষণ না তার বিচ্ছিন্ন হয়। কিংবা বলেছেন: যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিচ্ছিন্ন হয়। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেয়া হবে। আর যদি দোষ গোপন করে ও মিথ্যা বলে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়।”[সহিহ বুখারী (২০৭৯) ও সহিহ মুসলিম (১৫৩২)]
দ্বিতীয় বিষয়:
আল্লাহ্র নেয়ামতের শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও বরকত টেনে আনে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “(স্মরণ কর) যখন তোমাদের প্রভু ঘোষণা করেছিলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ থাক তাহলে তোমাদেরকে আরো দেব, কিন্তু যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে (মনে রাখবে) অবশ্যই আমার শাস্তি বড় কঠোর।”[সূরা ইব্রাহীম, আয়াত: ৭]
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়— অন্তরের মাধ্যমে, জিহ্বার কথার মাধ্যমে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মের মাধ্যমে।
অন্তরের কৃতজ্ঞতা হল: এ স্বীকৃতি দেয়া যে, নেয়ামতগুলো আল্লাহ্র নিছক অনুগ্রহ। বান্দার অন্তর অন্য কারো দিকে ধাবিত না হওয়া। যেমনটি ছিল জাহেলি যুগের লোকদের অবস্থা। তারা নেয়ামতকে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্যের দিকে সম্বোন্ধিত করত। আল্লাহ্ তাআলা তাদের সে অবস্থা উল্লেখ করে বলেন: “তারা জানে যে, (এসব) আল্লাহ্র নেয়ামত, তারপরেও তারা অস্বীকার করে। তাদের অধিকাংশই কাফের (অস্বীকারকারী)।”[সূরা নামল, আয়াত: ৮৩]
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: “তারা জানে যে, (এসব) আল্লাহ্র নেয়ামত, তারপরেও তারা অস্বীকার করে” অর্থাৎ তারা জানে যে, আল্লাহ্ই তাদের উপর অনুকম্পাকারী, অনুগ্রহকারী। তা সত্ত্বেও তারা অস্বীকার করে। আল্লাহ্র সাথে অন্য সত্তার উপাসনা করে। সাহায্য ও রিযিকদানকে অন্যের দিকে সম্বোধিত করে।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৫৯২) থেকে সমাপ্ত]
জিহ্বার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা: এই নেয়ামতগুলোকে সৃষ্টিকর্তার দিকে সম্বোধিত করা, তাঁর প্রশংসা করা, নিজের কলা-কৌশল, বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি ইত্যাদি নিয়ে গর্ব না করা; কারণ এ সব গুণাবলিও আল্লাহ্র নেয়ামত।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা: সেটা হল কোন হারাম কাজে এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার না করার মাধ্যমে।
এ ধরণের কৃতজ্ঞতার মধ্যে পড়বে—অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা যেভাবে আল্লাহ্ তার প্রতি অনুগ্রহ করেছে। অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা আল্লাহ্র অধিক অনুগ্রহ টেনে আনার কারণ। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “অনুগ্রহের প্রতিদান অনুগ্রহ ছাড়া আর কী হতে পারে?”[সূরা আর-রহমান, আয়াত: ৬০]
তৃতীয় বিষয়:
এ সকল নেয়ামত ভোগ করার সময় ইসলামী শিষ্টাচার মেনে চলা। যেমন- পানাহারের সময়, ঘরে ঢুকার সময় বিস্মিল্লাহ্ বলা।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন: “কোন ব্যক্তি যখন নিজ বাড়িতে প্রবেশের সময় ও আহারের সময় আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে; তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে, আজ না তোমরা এ ঘরে রাত্রি যাপন করতে পারবে, আর না খাবার পাবে। আর যখন সে প্রবেশকালে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে না, তখন শয়তান বলে: তোমরা রাত্রি যাপন করার স্থান পেলে। আর যখন আহার কালেও আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে না, তখন সে তার চেলাদেরকে বলে, তোমরা রাত্রিযাপন স্থল ও নৈশভোজ উভয়ই পেয়ে গেলে।”[সহিহ মুসলিম (২০১৮)]
অনুরূপভাবে সবাই একসাথে খাওয়া; আলাদা-আলাদাভাবে নয়। খাবার ও পানীয় ইত্যাদির পেছনে অপচয় না করা। খরচ করতে হবে প্রয়োজন মাফিক; বেশিও নয়, কমও নয়।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরকেও; আর মোটেও অপব্যয় করো না। কারণ অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর তোমার প্রভুর কাছ থেকে প্রত্যাশিত কোন অনুগ্রহের অপেক্ষায় থাকাকালে যদি তাদের থেকে (কখনও) মুখ ফিরিয়ে রাখ (আপাতত তাদেরকে কিছু দিতে না পার) তাহলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলবে। তোমার হাত গ্রীবায় আবদ্ধ রেখো না (একেবারে ব্যয়কুন্ঠ হয়ো না) কিংবা তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না (একেবারে মুক্তহস্ত হয়ো না)। তাহলে তিরস্কৃত কিংবা নিঃস্ব হয়ে পড়বে।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৬-২৯]
একজন মুসলিমের উচিত তার নিজের সাথে, তার পরিবারের সাথে ও তার সম্পদের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ও তিনি তাঁর উম্মতকে যে সব শিষ্টাচার শিখিয়ে গেছেন সেগুলো অনুসরণে সচেষ্ট হওয়া। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল ও সহজলভ্য বই হচ্ছে- ইমাম নবীর লিখিত “রিয়াদুস সালেহীন”।
চতুর্থ বিষয়:
হাদিসে বর্ণিত দোয়া-দরুদ ও যিকির-আযকারের মাধ্যমে সুরক্ষা গ্রহণ করা। তাই একজন মুসলিম নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যার যিকিরগুলো পড়বেন, ঘুমাবার পূর্বের যিকিরগুলো পড়বেন এবং ইসলামী শরিয়ত আরও যে সকল যিকিরের দিক-নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো পড়বেন। হাদিসে বর্ণিত দোয়া-দরুদ ও যিকির-আযকার জানার জন্য ভাল বই হচ্ছে- সাঈদ বিন আলী বিন ওয়াহাফ আল-কাহতানীর লিখিত حِصن المسلم من أذكار الكتاب والسّنة (হিসনুল মুসলিম)।
সারকথা হল: একজন মুসলিম তাকওয়ার মাধ্যমে বরকত লাভ করেন; তাকওয়া হচ্ছে—নিষিদ্ধ কার্যাবলি বর্জন করা এবং সাধ্যমত নির্দেশিত কার্যাবলি পালন করা। এবং বরকত লাভ করেন— তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে।
সূত্র: ইসলাম কিউএ. ইনফো, ফতোয়া নং ২৬৬২৪৯