প্রবন্ধ যিকরুল্লাহর কিছু কিছু ফায়দা ও উপকার

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
920
Comments
1,093
Reactions
9,911
১. যিকরুল্লাহ শয়তানকে দমিয়ে রাখে ও বিতাড়িত করে। যিকরুল্লাহর মাধ্যমে শয়তান মূলোৎপাটিতও হতে পারে।

২. যিকরুল্লাহর কারণে বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলা রাজি-খুশি হন এবং তাকে ভালোবেসে ফেলেন।

৩. যিকরুল্লাহ অন্তর থেকে যাবতীয় দুশ্চিন্তা, হতাশা ও বিষণ্নতা দূর করে।

৪. যিকরুল্লাহর মাধ্যমে অন্তর আনন্দিত থাকে, খুশির সমীরণ প্রবাহিত হয় এবং সুখের ঊর্মিমালা আঁছড়ে পড়ে।

৫. যিকরুল্লাহ হৃদয় ও শরীরে শক্তি সঞ্চার করে।

৬. যিকরুল্লাহর বিভায় চেহারা ও অন্তর আলোকিত হয়।

৭. যিকরুল্লাহ বান্দার রিজিকের বন্দোবস্ত করে।

৮. যিকিরকারীকে যিকরুল্লাহ আত্মসম্মানবোধ, ভক্তি, প্রশান্তি ও প্রাণবস্তুতার পোশাক পরিয়ে দেয়।

৯. যিকিরের মাধ্যমে রবের ভালোবাসা অর্জন হয়। আর রবের ভালোবাসা হলো, ইসলামের রূহ, দ্বীনের কেন্দ্র এবং সফলতা ও নাজাতের উৎস। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি বস্তুর কিছু উপকরণ ও মাধ্যম নির্ধারণ করে রেখেছেন। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার উপকরণ ও মাধ্যম হলো, তাঁর অহর্নিশ যিকির । অতএব, কেউ যদি রবের ভালোবাসায় সিক্ত হতে চায়, তবে সে যেন তাঁর যিকিরে নিবেদিত হয়। দারস ও পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যেমন জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, তেমনি আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে রবের ভালোবাসা শাণিত হয়। যিকরুল্লাহ হলো রবের ভালোবাসার মূল ফটক এবং প্রধান ও সহজ সড়ক।

১০. যিকরুল্লাহ হলো রবের ধ্যানমগ্ন হওয়া ও ইহসানের স্তরে পৌঁছার উপজীব্য। কেউ ইহসানের স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হলে ইবাদত করার সময় সে যেন সরাসরি আল্লাহকে দেখতে পায়। একজন উপবিষ্ট ব্যক্তি যেমন কখনো ছাদে উঠতে পারে না, তেমনি আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল ব্যক্তি কোনোভাবেই ইহসানের স্তরে পৌঁছাতে পারে না।

১১. যিকরুল্লাহর মাধ্যমে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হয়। যিকিরের মাধ্যমে কেউ বারবার আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করলে একপর্যায়ে সে স্থায়ীভাবে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়। ফলে আল্লাহ তার আশ্রয় ও ভরসাস্থল এবং অন্তরের কিবলা হয়ে যান।

১২. যিকরুল্লাহ বান্দাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। যিকিরের পরিমাণ অনুযায়ী বান্দা তাঁর নৈকট্য লাভ করে এবং যিকির থেকে গাফলতি অনুযায়ী আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়।

১৩. যিকরুল্লাহ আল্লাহর মারিফাতের প্রকাণ্ড দরজাকে খুলে দেয়। যিকিরের পরিমাণ যত বেশি হয় আল্লাহর মারিফাত তত বেশি অর্জন হয়।

১৪. যিকরুল্লাহর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও সম্মান বৃদ্ধি পায়। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা যিকিরকারীর অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং বান্দাও মনে করে যে, সে তার রবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল ব্যক্তির অবস্থান ঠিক এর বিপরীত মেরুতে। তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভক্তি, সম্মান ও ভালোবাসা থাকে না বললেই চলে।

১৫. যিকিরকারীকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা স্মরণ করেন এবং আসমানে তাকে নিয়ে আলোচনা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা আমার যিকির করো, আমি তোমাদের স্মরণ করবো"। [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২]

যিকিরের এই একটি মাত্র ফযিলত ও ফায়দা ছাড়া অন্য কোনো ফযিলত ও ফায়দা না থাকলেও, যিকিরের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে এটাই যথেষ্ট।

নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মনে মনে আমার যিকির করে, আমিও অন্তরে তাকে স্মরণ করি আর যে ব্যক্তি মজলিসে আমার যিকির করে, আমি তাদের থেকে উত্তম মজলিমে তাকে স্মরণ করি'। [বুখারী, হা. ৭৪০৫; মুসলিম, হা. ১৬৭৫]

১৬. যিকির অন্তরের প্রাণ। আমি (ইবনুল কায়্যিম) শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ কদ্দাসাল্লাহু রূহাহু-কে বলতে শুনেছি, ‘অন্তরের জন্য যিকির তেমন, মাছের জন্য পানি যেমন'। পানি ছাড়া কি মাছ বেঁচে থাকতে পারে?! পানি ছাড়া মাছ যেমন তড়পাতে তড়পাতে মারা যায়, যিকির ছাড়া অন্তরও তেমন তড়পাতে তড়পাতে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে।

- যিকরুল্লাহ মুমিন হৃদয়ের প্রাণ (আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব গ্রন্থের অনুবাদ), লেখক: ইমাম ইবনুল কায়্যিম, অনুবাদক: উস্তাদ আব্দুল্লাহ মাহমুদ আযান প্রকাশনী
 
Last edited:
Similar threads Most view View more
Back
Top