উসূলুল হাদিস যঈফ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীসের প্রকারসমূহ

Abu AbdullahVerified member

Knowledge Sharer
ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Joined
Jan 12, 2023
Threads
765
Comments
1,017
Solutions
19
Reactions
10,588
যে হাদীসে হাসান লি গাইরিহী হাদীসের শর্ত পাওয়া যায় না তাকে যঈফ বা দুর্বল হাদীস বলে। ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে হাদীসের (বর্ণনাকারীর মধ্যে) সহীহ্ ও হাসান হাদীসের শর্ত পাওয়া যায় না তাকে যঈফ হাদীস বলে। এরূপ হাদীস অগ্রহণযোগ্য।

হাদীস প্রধানত দু'টি কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়।

(ক) সানাদ থেকে কোন বর্ণনাকারী বাদ পড়ে যাওয়া।​
(খ) বর্ণনাকারী সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকা।​

এই অভিযোগ বর্ণনাকারীর দ্বীনদারী সম্পর্কিত হতে পারে আবার আয়ত্বশক্তি সম্পর্কিতও হতে পারে। নিম্নে যে সকল হাদীস অগ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিযুক্ত হাদীস শাস্ত্রে সেগুলোর পরিভাষাগত পরিচয় তুলে ধরা হলো:

মু‘আল্লাক: যে হাদীসে সানাদের শুরু থেকে এক বা একাধিক বর্ণনাকারী বাদ পড়েছে তাকে মু‘আল্লাক বলা হয়।

মুনকাতি: হাদীসের সানাদের যে কোন স্থান থেকে বর্ণনাকারী বাদ পড়াকে মুনকাতি বলা হয়।

মুরসাল: যে হাদীসের সানাদের শেষ ভাগে বর্ণনাকারী বাদ পড়েছে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ও তাবিঈর মাঝে ঘাটতি পড়ে গেছে তাকে মুরসাল বলা হয়। মুরসাল হাদীসকে প্রত্যাখ্যাত শ্রেণীর মধ্যে উল্লেখ করার কারণ হলো উহ্য বর্ণনাকারীর অবস্থা সম্পর্কে না জানা। কেননা, উক্ত উহ্য ব্যক্তি সাহাবীও হতে পারেন, তাবিঈও হতে পারেন। দ্বিতীয় অবস্থায় তিনি দুর্বলও হতে পারে, আবার নির্ভরযোগ্যও হতে পারে- ইত্যাদি।

তবে যদি উক্ত তাবিঈ সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি কেবল নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছাড়া কারো নিকট থেকে মুরসাল বর্ণনা করেন না, তাহলে মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসটিকে মুলতবী রাখার পক্ষপাতী। কেননা, তাতে সন্দেহ বহাল থেকে যায়।

ইমাম আবূ হানীফা রহিমাহুল্লাহ ও ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ মুরসাল হাদীস সন্দেহাতীতভাবে গ্রহণের মত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ তা অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইমাম শাফিঈ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যদি তা অন্য একটি সানাদে বর্ণিত হবার কারণে শক্তি সঞ্চয় করে, চাই সে সানাদ মুত্তাসিল হোক বা মুরসাল। তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। কেননা, এর দ্বারা উহ্য ব্যক্তি মৌলিকভাবে নির্ভরযোগ্য হবার সম্ভাবনা জোরদার হবে। হানাফীদের মধ্যে আবূ বাক্ রাজী ও মালিকীদের মধ্যে আবুল ওলীদ রাজী বর্ণনা করেছেন- কোন বর্ণনাকারী যদি নির্ভরযোগ্য এবং অনির্ভরযোগ্য সব ধরনের ব্যক্তি থেকে মুরসাল বর্ণনা করেন, তাহলে তার মুরসাল বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে না- এ ব্যাপারে সকলেই একমত।

মু‘দাল: হাদীসের সানাদ থেকে ধারাবাহিকভাবে দু' বা ততোধিক বর্ণনাকারী বাদ পড়ে গেলে তাকে মু’দাল বলে।

মুদাল্লাস: সানাদের ত্রুটিকে গোপন করে তার প্রকাশ্যকে সুন্দর করে তুলে ধরা। অর্থাৎ, বর্ণনাকারী সানাদে স্বীয় শাইখের নাম গোপন রেখে তার উপরস্থ শাইখের নামে এমনভাবে হাদীস বর্ণনা করা যেন তিনি নিজেই তার কাছ থেকে হাদীসটি শুনেছেন। অথচ তিনি তার কাছ থেকে শুনেননি। এরূপ হাদীসকে মুদাল্লাস বলা হয়। সানাদে তাদ্‌লীস বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। মুদাল্লাস হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। আর মুদাল্লিস ব্যক্তি যদি যঈফ হয় তাহলে তার সবই বাতিল।

শা'য: একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির বর্ণনা যদি তার চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির বর্ণনা সাথে গড়মিল হয় (বিপরীত হয়) তাহলে তাকে শা'য বলা হয়। শায হাদীস সহীহ্ নয়। এটি হাদীস শাস্ত্রের জন্য দোষণীয়।

মা'রুফ: যদি দু'জন দুর্বল বর্ণনাকারীর বর্ণনায় গড়মিল দেখা যায় তাহলে যার বর্ণনাটিকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাকে মা'রুফ বলে। অন্য কথায় পরস্পর বিরোধী দু'টি যঈফ হাদীসের মধ্যে যেটি অপেক্ষাকৃত কম যঈফ তাকে মা'রুফ বলা হয়।

মুনকার: মা'রুফ হাদীসের বিপরীতে অধিকতর দুর্বল হাদীসকে মুনকার বলা হয়। মুনকার হাদীস ত্রুটিযুক্ত।

মাতরূক: যে হাদীসের বর্ণনাকারী মিথ্যাবাদীতায় সন্দেহভাজন অর্থাৎ দৈনন্দিন ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলার কারণে যার হাদীস প্রত্যাখ্যান করা হয় তাকে মাতরূক বলে। তবে খাঁটি মনে তাওবাহ্ করে যদি সে সত্য পথ অবলম্বন করে বলে প্রমাণিত হয় তাহলে পরবর্তীতে তার হাদীস গ্রহণ করা যেতে পারে।

মাওযু বা বানোয়াট: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলের নামে বানোয়াট হাদীস তৈরী করে। তবে তার হাদীসকে মাওযূ বা বানোয়াট বলা হয়। বানোয়াট হাদীস সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য এবং তা বর্ণনা করা হারাম। হাদীস জালকারী খাঁটি মনে তাওবাহ্ করলেও তা গ্রহণ করা হবে না।

মুবহাম: যে হাদীসের বর্ণনাকারী পরিচয় ভাল করে জানা যায়নি যার দ্বারা তার দোষগুণ যাচাই করা যায় তাকে মুবহাম বলা হয়। সাহাবী ব্যতীত কারোর মুবহাম হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।

মুদরাজ: যে হাদীসের বর্ণনাকারী নিজের অথবা অন্য কারোর কথা সংযোজন করে দেয় তাকে মুদরাজ বলা হয়। মুদরাজ সানাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে আবার মাতানের মধ্যেও হতে পারে। হাদীসে এরূপ সংযোজন করা হারাম।


 
Back
Top