Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “আমরা —আমাদের এই উম্মাহ— কনস্ট্রাকটিভ কোনো সিলেবাসে পড়াশোনা করতে পারি নাই। আমাদের পড়াশোনার সিলেবাস ঠিক নাই। কী মাদরাসা, আর কী জেনারেল লাইন — কোনো দিকেই পড়াশোনার সিস্টেম ঠিক নাই। আল্লাহ পাক আমাকে ইনডিভিজুয়ালি দুইদিকে পড়ার চান্স দিয়েছেন। দুইদিকের অপারগতা আমি বলতে পারব। আপনি মাদরাসায় পড়েন, সেখানে আপনি হিস্ট্রি পাবেন না, ইকনোমিক্স পাবেন না, ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স পাবেন না, জিয়ো-পলিটিক্স পাবেন না, কিছুই পাবেন না এখানে। ইভেন একজন ইমাম-খতিব মিম্বরে দাঁড়িয়ে পাঁচটা মিনিট ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে পারে না। তো কীভাবে আপনি ওয়ার্ল্ডকে ডিল করবেন? এই ওয়ার্ল্ড তো এগিয়ে যাচ্ছে।” [দেখুন: https://youtu.be/Y7XCauV_078 (৩১:৪১ মিনিট থেকে ৩২:২২ মিনিট); ‘Al Lahir Media’ নামক এই চ্যানেলের ভিডিয়োগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে, আমাদের তৈরিকৃত ভিডিয়োতে দেখুন।]
মাদরাসার সিলেবাসের এরকম নগ্ন সমালোচনা বক্তা আদনান আরও বিভিন্ন জায়গায় করেছেন। সমালোচনা যদি যৌক্তিক হত, তাহলে মানা যেত, কিন্তু অযৌক্তিক সমালোচনা তো মানা সম্ভব নয়। জ্ঞাতব্য যে, আবু ত্বহা আদনানের মতে আলিয়া ধারার মাদরাসাগুলোর চেয়ে কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে ইসলামি শরিয়তের ওপর বেশি ভালো পড়ালেখা হয়। [দেখুন: https://youtu.be/yESz1-ce71o]
আলিয়া ধারার মাদরাসা বলতে সরকারি বা এমপিওভুক্ত মাদরাসা উদ্দেশ্য, যেসব মাদরাসা সরকারি বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং সেখানে ইসলামিক কারিকুলাম ও জেনারেল কারিকুলামের মাঝে সমন্বয় করে পড়ানো হয়। এসব মাদরাসায় জেনারেল কারিকুলামেরই প্রভাব বেশি দেখা যায়। পক্ষান্তরে কওমি ধারার মাদরাসাগুলো সরকারি বা এমপিওভুক্ত মাদরাসা নয় এবং এসব মাদরাসায় অনেকটা স্বায়ত্তশাসিত সিলেবাস পড়ানো হয়, যেখানে ইসলামিক কারিকুলামের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। কওমি ধারার মাদরাসাগুলো যেমন বেরলভি ও দেওবন্দি সম্প্রদায়ের বলয়ে আছে, তেমনি কওমি ধারার মাদরাসা আহলেহাদিসদের মাঝেও রয়েছে।
যেহেতু বক্তা আদনান সাহেব কওমি মাদরাসাকে তুলনামূলক বেশি ভালো বলেছেন, সেহেতু এই মাদরাসা নিয়েই আমরা আলোচনা করব। পরন্তু অনেক মানুষ যেহেতু মনে করেন, কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে ভালো পড়ালেখা হয় না, এরা বৈষয়িক বিষয়ে অজ্ঞ থাকে, সেহেতু এই ধারার মাদরাসা নিয়ে আলোচনা করাই বাঞ্ছনীয় হবে। আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “আপনি মাদরাসায় পড়েন, সেখানে আপনি হিস্ট্রি পাবেন না, ইকনোমিক্স পাবেন না, ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স পাবেন না, জিয়ো-পলিটিক্স পাবেন না, কিছুই পাবেন না এখানে।” [প্রাগুক্ত]
অথচ কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে ইতিহাস (history), অর্থনীতি (economics), বৈশ্বিক পরিস্থিতি (world affairs) ও ভূ-রাজনীতি (geo-politcs) সম্পর্কে মৌলিক পড়াশোনা করানো হয়। হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই এরকম আশা করতে পারেন না যে, কওমি মাদরাসা থেকে ডিগ্রি বা অনার্স সমমানের ‘দাওরা’ পাশ করলেই কেউ উক্ত বিষয়ে এক্সপার্ট হিসেবে পরিগণিত হবে! কারণ দাওরা পর্যন্ত মূলত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের মৌলিক বিষয়গুলোই পাঠদান করা হয়। আর এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ হতে হলে স্রেফ মৌলিক পড়াশোনা যথেষ্ট নয়। এটাকে আপনি জ্ঞানের গভীরে ডাইভ দেওয়ার প্রথম ধাপ বলতে পারেন।
আমি এখন প্রমাণ দেখাচ্ছি যে, কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে এসব সাবজেক্ট পড়ানো হয়। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস কর্তৃক পরিচালিত “বাংলাদেশ আহলে হাদীস তা‘লীমী বোর্ড” – এর অধীনে রয়েছে দেশের কওমি ধারার সেরা সেরা আহলেহাদিস প্রতিষ্ঠান। উক্ত বোর্ডের নির্ধারিত সিলেবাসে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ানো হয় নবিচরিতের ওপর রচিত সম্পূর্ণ ‘রাহিকুল মাখতুম’ গ্রন্থ। [দেখুন: বাংলাদেশ আহলে হাদীস তা‘লীমী বোর্ডের সিলেবাস, পৃষ্ঠা: ১০-১১; জমঈয়তের অফিসিয়ামল ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত সফটকপি]
একাদশ শ্রেণিতে পড়ানো হয় খোলাফায়ে রাশেদিনের ইতিহাস। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ানো হয় বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা শাইখ মাহমুদ শাকির রচিত উমাইয়্যা যুগের ইতিহাস। কুল্লিয়া উলা তথা ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়ানো হয় শাইখ মাহমুদ শাকির রচিত আব্বাসী যুগের ইতিহাস। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১২-১৬] অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হয় বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের ইতিহাস। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮] ইসলামি অর্থনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক সামসময়িক মাসায়েলের ওপর স্বতন্ত্র সাবজেক্ট পড়ানো হয় কুল্লিয়া সানিয়া তথা ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ারে। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১৭-১৮]
আর বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ভূ-রাজনীতি, মুসলিম বিশ্বের সামসময়িক সমস্যা, মুসলিমবিদ্বেষী মতবাদ ও রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসন নিয়েও স্বতন্ত্র সাবজেক্ট পড়ানো হয় কুল্লিয়া সানিয়া তথা ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ারে। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১৭-১৮] এগুলো আমি আহলেহাদিস মাদরাসার কথা বলছি। অপরপক্ষে বিদাতি দেওবন্দি মতাদর্শের কওমি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ জাতীয় সাবজেক্ট পড়ানো হয়, বেফাক বোর্ডের সিলেবাস দেখলেই বিষয়টি জানা যায়। পরন্তু জমঈয়ত পরিচালিত আহলে হাদীস তা‘লীমী বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী আহলেহাদিস মাদরাসাগুলোতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত রীতিমতো বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও আইসিটির মতো সাবজেক্টের মৌলিক বিষয়গুলো পাঠদান করা হয়।
মনে রাখা দরকার, মদিনা ভার্সিটি-সহ বিশ্বের সেরা সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চতর পড়াশোনা করে আসা উস্তায ও শাইখগণ উক্ত বোর্ড পরিচালনা করেন। এখন ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফি ও ড. শহীদুল্লাহ খান মাদানী প্রমুখের মতো বিদ্বানগণ কি আবু ত্বহা আদনানের কাছে শিখবেন, কীভাবে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হয়? হ্যাঁ, আপনি যৌক্তিক পরামর্শ বা গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু এরকম উদ্ভট, মিথ্যা ও অযৌক্তিক সমালোচনার নেপথ্যে হেতুবাদ কী?
এরপর বক্তা আদনান বলেছেন, “ইভেন একজন ইমাম-খতিব মিম্বরে দাঁড়িয়ে পাঁচটা মিনিট ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে পারে না।” [রেফারেন্স পূর্বে গত হয়েছে] প্রত্যেক ইমাম-খতিবের জন্য ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে পারা জরুরি না। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী ওয়ার্ল্ডকে ডিল করার জন্য একদল যোগ্য মানুষের ভালো ইংরেজি জানা দরকার এবং কওমি ধারার মাদরাসা থেকে পাস করে বের হওয়া অনেকে ভালো ইংরেজি জানেন, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। সাহাবিগণের সময় ভিন্ন ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও তাঁদের সবার জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিনদেশী ভাষা শেখা জরুরি করেননি। বরং প্রয়োজনের তাগিদে তিনি তীব্র ধীশক্তিসম্পন্ন সাহাবি যাইদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইহুদিদের সুরিয়ানি ভাষা শেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, দিন-প্রচারের কাজে নিয়োজিত সকল সাহাবিকে এরূপ নির্দেশ দেননি।
সাহাবি যাইদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইহুদিদের কিতাবের ভাষা অধ্যয়নের জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি আমার চিঠিপত্রের ব্যাপারে ইহুদিদের ওপর আস্থা রাখতে পারি না।’ সাহাবি যাইদ বলেন, তারপর মাসের অর্ধেক যেতে না যেতেই আমি সুরিয়ানি ভাষা আয়ত্ত করে ফেললাম। এ ভাষা শেখার পর থেকে তিনি ইহুদিদের নিকট কোনো কিছু লিখতে চাইলে আমিই তা লিখে দিতাম। আর তারা তার নিকট কোনো চিঠি পাঠালে, আমি তাঁকে তা পড়ে শুনাতাম।” [তিরমিজি, হা: ২৭১৫; সনদ: সহিহ]
সুতরাং এসব বক্তব্য দিয়ে পাবলিক ডোমেইনে মাদরাসার অন্যায় সমালোচনা এবং ইমাম-খতিবদের অযৌক্তিক নিন্দা করা ভদ্রজনোচিত আচরণ নয়। এসব বিষয়ে সংযত হওয়া এবং এরূপ অন্যায় সমালোচনার দরুন প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করা বক্তা আদনান সাহেবের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহ সহায় হোন। আমিন।
মাদরাসার সিলেবাসের এরকম নগ্ন সমালোচনা বক্তা আদনান আরও বিভিন্ন জায়গায় করেছেন। সমালোচনা যদি যৌক্তিক হত, তাহলে মানা যেত, কিন্তু অযৌক্তিক সমালোচনা তো মানা সম্ভব নয়। জ্ঞাতব্য যে, আবু ত্বহা আদনানের মতে আলিয়া ধারার মাদরাসাগুলোর চেয়ে কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে ইসলামি শরিয়তের ওপর বেশি ভালো পড়ালেখা হয়। [দেখুন: https://youtu.be/yESz1-ce71o]
আলিয়া ধারার মাদরাসা বলতে সরকারি বা এমপিওভুক্ত মাদরাসা উদ্দেশ্য, যেসব মাদরাসা সরকারি বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং সেখানে ইসলামিক কারিকুলাম ও জেনারেল কারিকুলামের মাঝে সমন্বয় করে পড়ানো হয়। এসব মাদরাসায় জেনারেল কারিকুলামেরই প্রভাব বেশি দেখা যায়। পক্ষান্তরে কওমি ধারার মাদরাসাগুলো সরকারি বা এমপিওভুক্ত মাদরাসা নয় এবং এসব মাদরাসায় অনেকটা স্বায়ত্তশাসিত সিলেবাস পড়ানো হয়, যেখানে ইসলামিক কারিকুলামের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। কওমি ধারার মাদরাসাগুলো যেমন বেরলভি ও দেওবন্দি সম্প্রদায়ের বলয়ে আছে, তেমনি কওমি ধারার মাদরাসা আহলেহাদিসদের মাঝেও রয়েছে।
যেহেতু বক্তা আদনান সাহেব কওমি মাদরাসাকে তুলনামূলক বেশি ভালো বলেছেন, সেহেতু এই মাদরাসা নিয়েই আমরা আলোচনা করব। পরন্তু অনেক মানুষ যেহেতু মনে করেন, কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে ভালো পড়ালেখা হয় না, এরা বৈষয়িক বিষয়ে অজ্ঞ থাকে, সেহেতু এই ধারার মাদরাসা নিয়ে আলোচনা করাই বাঞ্ছনীয় হবে। আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “আপনি মাদরাসায় পড়েন, সেখানে আপনি হিস্ট্রি পাবেন না, ইকনোমিক্স পাবেন না, ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স পাবেন না, জিয়ো-পলিটিক্স পাবেন না, কিছুই পাবেন না এখানে।” [প্রাগুক্ত]
অথচ কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে ইতিহাস (history), অর্থনীতি (economics), বৈশ্বিক পরিস্থিতি (world affairs) ও ভূ-রাজনীতি (geo-politcs) সম্পর্কে মৌলিক পড়াশোনা করানো হয়। হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই এরকম আশা করতে পারেন না যে, কওমি মাদরাসা থেকে ডিগ্রি বা অনার্স সমমানের ‘দাওরা’ পাশ করলেই কেউ উক্ত বিষয়ে এক্সপার্ট হিসেবে পরিগণিত হবে! কারণ দাওরা পর্যন্ত মূলত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের মৌলিক বিষয়গুলোই পাঠদান করা হয়। আর এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ হতে হলে স্রেফ মৌলিক পড়াশোনা যথেষ্ট নয়। এটাকে আপনি জ্ঞানের গভীরে ডাইভ দেওয়ার প্রথম ধাপ বলতে পারেন।
আমি এখন প্রমাণ দেখাচ্ছি যে, কওমি ধারার মাদরাসাগুলোতে এসব সাবজেক্ট পড়ানো হয়। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস কর্তৃক পরিচালিত “বাংলাদেশ আহলে হাদীস তা‘লীমী বোর্ড” – এর অধীনে রয়েছে দেশের কওমি ধারার সেরা সেরা আহলেহাদিস প্রতিষ্ঠান। উক্ত বোর্ডের নির্ধারিত সিলেবাসে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ানো হয় নবিচরিতের ওপর রচিত সম্পূর্ণ ‘রাহিকুল মাখতুম’ গ্রন্থ। [দেখুন: বাংলাদেশ আহলে হাদীস তা‘লীমী বোর্ডের সিলেবাস, পৃষ্ঠা: ১০-১১; জমঈয়তের অফিসিয়ামল ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত সফটকপি]
একাদশ শ্রেণিতে পড়ানো হয় খোলাফায়ে রাশেদিনের ইতিহাস। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ানো হয় বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা শাইখ মাহমুদ শাকির রচিত উমাইয়্যা যুগের ইতিহাস। কুল্লিয়া উলা তথা ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়ানো হয় শাইখ মাহমুদ শাকির রচিত আব্বাসী যুগের ইতিহাস। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১২-১৬] অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হয় বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের ইতিহাস। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৮] ইসলামি অর্থনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ক সামসময়িক মাসায়েলের ওপর স্বতন্ত্র সাবজেক্ট পড়ানো হয় কুল্লিয়া সানিয়া তথা ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ারে। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১৭-১৮]
আর বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ভূ-রাজনীতি, মুসলিম বিশ্বের সামসময়িক সমস্যা, মুসলিমবিদ্বেষী মতবাদ ও রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসন নিয়েও স্বতন্ত্র সাবজেক্ট পড়ানো হয় কুল্লিয়া সানিয়া তথা ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ারে। [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১৭-১৮] এগুলো আমি আহলেহাদিস মাদরাসার কথা বলছি। অপরপক্ষে বিদাতি দেওবন্দি মতাদর্শের কওমি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ জাতীয় সাবজেক্ট পড়ানো হয়, বেফাক বোর্ডের সিলেবাস দেখলেই বিষয়টি জানা যায়। পরন্তু জমঈয়ত পরিচালিত আহলে হাদীস তা‘লীমী বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী আহলেহাদিস মাদরাসাগুলোতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত রীতিমতো বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও আইসিটির মতো সাবজেক্টের মৌলিক বিষয়গুলো পাঠদান করা হয়।
মনে রাখা দরকার, মদিনা ভার্সিটি-সহ বিশ্বের সেরা সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চতর পড়াশোনা করে আসা উস্তায ও শাইখগণ উক্ত বোর্ড পরিচালনা করেন। এখন ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফি ও ড. শহীদুল্লাহ খান মাদানী প্রমুখের মতো বিদ্বানগণ কি আবু ত্বহা আদনানের কাছে শিখবেন, কীভাবে সিলেবাস প্রণয়ন করতে হয়? হ্যাঁ, আপনি যৌক্তিক পরামর্শ বা গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু এরকম উদ্ভট, মিথ্যা ও অযৌক্তিক সমালোচনার নেপথ্যে হেতুবাদ কী?
এরপর বক্তা আদনান বলেছেন, “ইভেন একজন ইমাম-খতিব মিম্বরে দাঁড়িয়ে পাঁচটা মিনিট ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে পারে না।” [রেফারেন্স পূর্বে গত হয়েছে] প্রত্যেক ইমাম-খতিবের জন্য ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে পারা জরুরি না। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী ওয়ার্ল্ডকে ডিল করার জন্য একদল যোগ্য মানুষের ভালো ইংরেজি জানা দরকার এবং কওমি ধারার মাদরাসা থেকে পাস করে বের হওয়া অনেকে ভালো ইংরেজি জানেন, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। সাহাবিগণের সময় ভিন্ন ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও তাঁদের সবার জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিনদেশী ভাষা শেখা জরুরি করেননি। বরং প্রয়োজনের তাগিদে তিনি তীব্র ধীশক্তিসম্পন্ন সাহাবি যাইদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইহুদিদের সুরিয়ানি ভাষা শেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, দিন-প্রচারের কাজে নিয়োজিত সকল সাহাবিকে এরূপ নির্দেশ দেননি।
সাহাবি যাইদ বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইহুদিদের কিতাবের ভাষা অধ্যয়নের জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি আমার চিঠিপত্রের ব্যাপারে ইহুদিদের ওপর আস্থা রাখতে পারি না।’ সাহাবি যাইদ বলেন, তারপর মাসের অর্ধেক যেতে না যেতেই আমি সুরিয়ানি ভাষা আয়ত্ত করে ফেললাম। এ ভাষা শেখার পর থেকে তিনি ইহুদিদের নিকট কোনো কিছু লিখতে চাইলে আমিই তা লিখে দিতাম। আর তারা তার নিকট কোনো চিঠি পাঠালে, আমি তাঁকে তা পড়ে শুনাতাম।” [তিরমিজি, হা: ২৭১৫; সনদ: সহিহ]
সুতরাং এসব বক্তব্য দিয়ে পাবলিক ডোমেইনে মাদরাসার অন্যায় সমালোচনা এবং ইমাম-খতিবদের অযৌক্তিক নিন্দা করা ভদ্রজনোচিত আচরণ নয়। এসব বিষয়ে সংযত হওয়া এবং এরূপ অন্যায় সমালোচনার দরুন প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করা বক্তা আদনান সাহেবের জন্য অত্যাবশ্যক। আল্লাহ সহায় হোন। আমিন।
লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।