সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

মহিলাদের চুল মুন্ডন বা ছোট করার বিধান কি

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic
Uploader
Salafi User
Top Active User
LV
12
 
Awards
19
Credit
4,168
উত্তর: হজ্জ বা উমরাহ ছাড়া নারীদের মাথার চুল ছোট করাকে আহালুল আলেমগন মাকরূহ বলেছেন। এটি হাম্বালী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত। কোন কোন বিদ্বান এটিকে স্পষ্ট হারাম বলেছেন। আবার কেউ কেউ শর্ত সাপেক্ষে কিছুটা ছোট করা বৈধ বলেছেন হাদীসের আলোকে এটিই বিশুদ্ধ মত। মহিলার মাথার চুল একটি প্রকৃতিগত সৌন্দর্য।সুকেশিনী নারী মুগ্ধ করে তার স্বামীর চক্ষু ও মন। সুতরাং সেই সৌন্দর্যেরও আদব রয়েছে ইসলামে। মহিলাদের মাথায় চুল লম্বা থাকাই শরী‘আত সম্মত। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় মহিলাদের মাথায় লম্বা চুল ছিল। যেমন-

উম্মু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাথার বেনী তো খুবই মোটা এবং শক্ত। আমি কি জানাবাতের গোসলের জন্য তা খুলে ফেলব? তিনি বললেন, না। তোমার মাথায় কেবল তিন আজলা পানি ঢেলে দিলেই চলবে। এরপর তোমার সর্বাঙ্গে পানি ঢেলে দিবে। এ ভাবেই তুমি পবিত্রতা অর্জন করবে’ (সহীহ মুসলিম, হা/৩৩০; মিশকাত, হা/৪৩৮)। মৃত নারীদের চুল লম্বা থাকার কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত নারীদের চুল তিনভাগ করে পিছনে রেখে দিতেন (সহীহ বুখারী, হা/১২৬৩;সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৯)

তবে নারীর চুল অস্বাভাবিক লম্বা হ’লে স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বা চুলের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে অথবা বা এ জাতীয় যদি কোন গ্রহনযোগ্য উদ্দেশ্যে হয় তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী চুল ছোট করা জায়েয আছে,চাইলে লম্বা চুল মেশিন দ্বারা কিছুটা কেটে স্বাভাবিক লম্বা রাখতে পারে।(ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)

আর এই মর্মে সহীহ মুসলিমে দলিল রয়েছে যেমন:-আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি এবং ‘আয়িশাহ(রাঃ) এর দুধ ভাই একবার তাঁর কাছে গেলাম। অতঃপর তাঁর দুধ ভাই তাঁকে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি একটি পাত্র আনালেন যা ছিল এক ‘সা’ পরিমাণ। তারপর তিনি গোসল করলেন। আমাদের এবং তাঁর মধ্যে পর্দা ছিল। তিনি তাঁর মাথায় তিনবার পানি ঢাললেন। আবূ সালামা বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ মাথার চুল কেটে রাখতেন তা ওয়াফরা-এর ন্যায় হয়ে যেত (ঘার বরাবর লম্বা চুলই ওয়াফরা)। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬১৫ ই.ফা. ৬১৯, ই.সে. ৬৩৪)উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নওবী (রহ.)বলেন:“এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।”(শরহে মুসলিম, ৫/৪)বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,ফাদ্বীলাতুশ শাইখ শায়খ ইবনে উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:নারীর মাথার চুল কাটা কিছু আলেমদের কাছে অপছন্দনীয়, কিছু আলেম নিষেধ করেছেন এবং কিছু আলেম এর অনুমতি দিয়েছেন।তবে আমি আমার সময়ের এই মুহূর্ত পর্যন্ত এমন কোন দলীল আমার জানা নাই যা দ্বারা নারীদের চুল কাটা হারাম প্রমাণিত হয়। হারাম বলার মত দূর্বল; এর কোন যৌক্তিকতা নেই। মাকরূহ বলার মতটিও প্রশ্নবিদ্ধ । মৌলিক নীতি হল এটা জায়েজ যা দলীল ও মূলনীতির কাছাকাছি। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর ইন্তিকালের পর তার এর স্ত্রীদের চুল কাটার হাদীস সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।(ফতোয়া নূর ‘আলা আল-দারব টেপ সাইড বি ৩৩৬)।

নারীগণ তাদের চুল কাটতে পারবে কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,ফাদ্বীলাতুশ শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন,স্বামীর পছন্দও রুচিসম্মত হ’লে চুলের দৈর্ঘ্য কমানো দোষণীয় নয়’।(আব্দুল্লাহ বিন বায, ফাতাওয়া আল-মার’আতিল মুসলিমা ২/৫১৫)

যে সকল শর্তসাপেক্ষে নারীদের মাথার চুল কিছুটা ছোট করা জায়েজ শর্ত হ’ল:-

(১). পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া যাবে না। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,আল্লাহ তা‘আলা পুরুষের সাথে মহিলার এবং মহিলার সাথে পুরুষের সাদৃশ্য পোষণকারীকে অভিসম্পাত করেছেন’।(সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯)

(২). অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া যাবে না। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’।[আহমাদ, আবুদাঊদ, হা/৪৩৪৭)যেমন- ‘ডায়েনা’ স্টাইলে চুল কাঁটা, খৃষ্টানদের মত ববকাট চুল রাখা ইত্যাদি। আর পশুর আকৃতিতে চুল কর্তন করা নিষিদ্ধ।[শায়খ সালেহ আল-ফাওযান, ফাতাওয়া আল-মার’আতিল মুসলিমা ২/৫১৬, ৫১৭)

(৩). বিবাহিত মহিলাদের চুল ছোট করার ক্ষেত্রে তার স্বামীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।কেননা বৈধ কাজে স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব (আবূদাঊদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৫৫)।মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬১)।

(৪). চুলের কিছু অংশ কেঁটে ফেলা এবং কিছু অংশ রেখে দেয়া যাবেনা কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন।(বুখারী হা/৫৯২০, ৫৯২১; মুসলিম হা/৫৪৫২। মনে রাখতে হবে, চুল হ’ল নারীদের সৌন্দর্যের প্রতীক। এটি আল্লাহর এক অমূল্য নে‘মত। একে কেটে ছেটে অসুন্দর করা যাবে না। বিশেষ করে অমুসলিম, ফাসিক নারী-পুরুষদের অনুকরণ করা একেবারেই নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যে কওমের সাদৃশ্য বরণ করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। এ বিষয়ে আলোচনা দ্রষ্টব্য : মির‘আত ৯/২৬৭-৬৮)

কখন মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন জায়েজ:

ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কোন নারী বিপদ-মসিবত অপতিত হলে অথবা তার কোন আপনজনের মৃত্যুতে শোক পালনের উদ্দেশ্যে মহিলাদের জন্য মাথার চুল ন্যাড়া করা বা সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।কেননা হাদীসে এসেছে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনি সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন,যে শোকে উচ্চ স্বরে মাতম ক’রে কান্না করে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’(সহীহ মুসলিম ১০৪, নাসায়ী ১৮৬১, ১৮৬৩, ১৮৬৫-১৮৬৭, আবূ দাউদ ৩১৩০, ইবনু মাজাহ ১৫৮৬, আহমাদ ১৯০৪১, ১৯০৫৩, ১৯১১৯, ১৯১২৯, ১৯১৯১, ১৯২৩০) তাছাড়া সম্পূর্ণ মাথার চুল ন্যাড়া করা খারেজীদের বৈশিষ্ট্য (আবুদাউদ হা/৪৭৬৫-৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৭৫)তবে জরুরি কারণ অর্থাৎ নারীর মাথায় বিশেষ কোনও রোগ-ব্যাধি বা জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন করা জায়েজ রয়েছে(সূরা তাগাবুন,১৬ বাকারা,২৮৬)

কখন নারীদের চুল মুন্ডুন করা জায়েজ মর্মে বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.],কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রয়োজন থাকলে মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন করায় কোনও দোষ নেই। যেমন: যদি মাথায় ক্ষত থাকে এবং মাথার চুল মুণ্ডন করা ছাড়া তা চিকিৎসা করা সম্ভব না হয় তাহলে এতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু জরুরি দরকার ছাড়া মাথার চুল মুণ্ডন করা হারাম-যেমনটি বিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন। কেননা তা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনের অন্তর্ভুক্ত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন কারীনী নারীদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। [ফতোয়া নূরুন আলাদ দারব ১০/১৩-শামেলা]

বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

“নারীর মাথা মুণ্ডন করা জায়েজ নয় বরং তার মাথায় চুল অবশিষ্ট রাখা অপরিহার্য। কেননা চুল নারীর সৌন্দর্য এবং অলঙ্করণ। এটি নারী এবং পুরুষদের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য। তাই হজের সময়ও তার মাথার চুল মুণ্ডন করার সুযোগ নেই। বরং হজ ও ওমরাতে চুল ছোট করবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, মহিলাদের জন্য মুণ্ডন নেই। তারা চুল ছোট করবে।মাথার চুল তাদের সৌন্দর্য।সুতরাং তা মুণ্ডন করা যাবে না। তবে যদি মাথায় কোনও রোগ-ব্যাধি থাকে যার কারণে ডাক্তার মাথার চুল মুণ্ডন করার অভিমত দেয় তাহলে ভিন্ন কথা। রোগের বিষয়টি ভিন্ন। কিন্তু অবহেলা বশত: বা কাফের বা অন্যদের অন্ধ অনুকরণ হলে এমনটি করা যাবে না। বরং তার জন্য আবশ্যক হল, চুলের পরিচর্যা করা ও যত্ন নেয়া। কারণ এতে সৌন্দর্য রয়েছে। তবে যদি চুল খুব ঘন বা লম্বা হয় তাহলে ছোট করতে অসুবিধা নেই।”(binbaz-org-sa ফতোয়া নং,১৫০৩০ ফতোয়া অনুবাদক,আব্দুল্লাহিল হাদী হাফিঃ)

পরিশেষে,উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে,স্বাভাবিক ভাবে নারীদের মাথার চুল ছোট করা জায়েজ নয়। আর মুন্ডন করা হারাম কবিরা গুনাহ। তবে শর্তসাপেক্ষে কিছুটা ছোট করা যেমন জায়েজ তেমনি গ্রহণযোগ্য শরীয়তী ওজর থাকলে মুন্ডন করাও নাজায়েজ নয়, যার দলিল প্রমান পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুক।
(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)


উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি​
 

Golam Rabby

Knowledge Sharer
ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
LV
12
 
Awards
21
Credit
2,547
উত্তর: হজ্জ বা উমরাহ ছাড়া নারীদের মাথার চুল ছোট করাকে আহালুল আলেমগন মাকরূহ বলেছেন। এটি হাম্বালী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত। কোন কোন বিদ্বান এটিকে স্পষ্ট হারাম বলেছেন। আবার কেউ কেউ শর্ত সাপেক্ষে কিছুটা ছোট করা বৈধ বলেছেন হাদীসের আলোকে এটিই বিশুদ্ধ মত। মহিলার মাথার চুল একটি প্রকৃতিগত সৌন্দর্য।সুকেশিনী নারী মুগ্ধ করে তার স্বামীর চক্ষু ও মন। সুতরাং সেই সৌন্দর্যেরও আদব রয়েছে ইসলামে। মহিলাদের মাথায় চুল লম্বা থাকাই শরী‘আত সম্মত। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যামানায় মহিলাদের মাথায় লম্বা চুল ছিল। যেমন-

উম্মু সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাথার বেনী তো খুবই মোটা এবং শক্ত। আমি কি জানাবাতের গোসলের জন্য তা খুলে ফেলব? তিনি বললেন, না। তোমার মাথায় কেবল তিন আজলা পানি ঢেলে দিলেই চলবে। এরপর তোমার সর্বাঙ্গে পানি ঢেলে দিবে। এ ভাবেই তুমি পবিত্রতা অর্জন করবে’ (সহীহ মুসলিম, হা/৩৩০; মিশকাত, হা/৪৩৮)। মৃত নারীদের চুল লম্বা থাকার কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত নারীদের চুল তিনভাগ করে পিছনে রেখে দিতেন (সহীহ বুখারী, হা/১২৬৩;সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৯)

তবে নারীর চুল অস্বাভাবিক লম্বা হ’লে স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বা চুলের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে অথবা বা এ জাতীয় যদি কোন গ্রহনযোগ্য উদ্দেশ্যে হয় তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী চুল ছোট করা জায়েয আছে,চাইলে লম্বা চুল মেশিন দ্বারা কিছুটা কেটে স্বাভাবিক লম্বা রাখতে পারে।(ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৮২৯)

আর এই মর্মে সহীহ মুসলিমে দলিল রয়েছে যেমন:-আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি এবং ‘আয়িশাহ(রাঃ) এর দুধ ভাই একবার তাঁর কাছে গেলাম। অতঃপর তাঁর দুধ ভাই তাঁকে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি একটি পাত্র আনালেন যা ছিল এক ‘সা’ পরিমাণ। তারপর তিনি গোসল করলেন। আমাদের এবং তাঁর মধ্যে পর্দা ছিল। তিনি তাঁর মাথায় তিনবার পানি ঢাললেন। আবূ সালামা বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ মাথার চুল কেটে রাখতেন তা ওয়াফরা-এর ন্যায় হয়ে যেত (ঘার বরাবর লম্বা চুলই ওয়াফরা)। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬১৫ ই.ফা. ৬১৯, ই.সে. ৬৩৪)উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নওবী (রহ.)বলেন:“এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।”(শরহে মুসলিম, ৫/৪)বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,ফাদ্বীলাতুশ শাইখ শায়খ ইবনে উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:নারীর মাথার চুল কাটা কিছু আলেমদের কাছে অপছন্দনীয়, কিছু আলেম নিষেধ করেছেন এবং কিছু আলেম এর অনুমতি দিয়েছেন।তবে আমি আমার সময়ের এই মুহূর্ত পর্যন্ত এমন কোন দলীল আমার জানা নাই যা দ্বারা নারীদের চুল কাটা হারাম প্রমাণিত হয়। হারাম বলার মত দূর্বল; এর কোন যৌক্তিকতা নেই। মাকরূহ বলার মতটিও প্রশ্নবিদ্ধ । মৌলিক নীতি হল এটা জায়েজ যা দলীল ও মূলনীতির কাছাকাছি। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর ইন্তিকালের পর তার এর স্ত্রীদের চুল কাটার হাদীস সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।(ফতোয়া নূর ‘আলা আল-দারব টেপ সাইড বি ৩৩৬)।

নারীগণ তাদের চুল কাটতে পারবে কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,ফাদ্বীলাতুশ শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন,স্বামীর পছন্দও রুচিসম্মত হ’লে চুলের দৈর্ঘ্য কমানো দোষণীয় নয়’।(আব্দুল্লাহ বিন বায, ফাতাওয়া আল-মার’আতিল মুসলিমা ২/৫১৫)

যে সকল শর্তসাপেক্ষে নারীদের মাথার চুল কিছুটা ছোট করা জায়েজ শর্ত হ’ল:-

(১). পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া যাবে না। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,আল্লাহ তা‘আলা পুরুষের সাথে মহিলার এবং মহিলার সাথে পুরুষের সাদৃশ্য পোষণকারীকে অভিসম্পাত করেছেন’।(সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯)

(২). অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া যাবে না। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’।[আহমাদ, আবুদাঊদ, হা/৪৩৪৭)যেমন- ‘ডায়েনা’ স্টাইলে চুল কাঁটা, খৃষ্টানদের মত ববকাট চুল রাখা ইত্যাদি। আর পশুর আকৃতিতে চুল কর্তন করা নিষিদ্ধ।[শায়খ সালেহ আল-ফাওযান, ফাতাওয়া আল-মার’আতিল মুসলিমা ২/৫১৬, ৫১৭)

(৩). বিবাহিত মহিলাদের চুল ছোট করার ক্ষেত্রে তার স্বামীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।কেননা বৈধ কাজে স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব (আবূদাঊদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৫৫)।মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬১)।

(৪). চুলের কিছু অংশ কেঁটে ফেলা এবং কিছু অংশ রেখে দেয়া যাবেনা কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমনটি করতে নিষেধ করেছেন।(বুখারী হা/৫৯২০, ৫৯২১; মুসলিম হা/৫৪৫২। মনে রাখতে হবে, চুল হ’ল নারীদের সৌন্দর্যের প্রতীক। এটি আল্লাহর এক অমূল্য নে‘মত। একে কেটে ছেটে অসুন্দর করা যাবে না। বিশেষ করে অমুসলিম, ফাসিক নারী-পুরুষদের অনুকরণ করা একেবারেই নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যে কওমের সাদৃশ্য বরণ করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। এ বিষয়ে আলোচনা দ্রষ্টব্য : মির‘আত ৯/২৬৭-৬৮)

কখন মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন জায়েজ:

ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কোন নারী বিপদ-মসিবত অপতিত হলে অথবা তার কোন আপনজনের মৃত্যুতে শোক পালনের উদ্দেশ্যে মহিলাদের জন্য মাথার চুল ন্যাড়া করা বা সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।কেননা হাদীসে এসেছে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনি সেই মহিলা থেকে সম্পর্কমুক্ত হয়েছেন,যে শোকে উচ্চ স্বরে মাতম ক’রে কান্না করে, মাথা মুণ্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে ফেলে।’(সহীহ মুসলিম ১০৪, নাসায়ী ১৮৬১, ১৮৬৩, ১৮৬৫-১৮৬৭, আবূ দাউদ ৩১৩০, ইবনু মাজাহ ১৫৮৬, আহমাদ ১৯০৪১, ১৯০৫৩, ১৯১১৯, ১৯১২৯, ১৯১৯১, ১৯২৩০) তাছাড়া সম্পূর্ণ মাথার চুল ন্যাড়া করা খারেজীদের বৈশিষ্ট্য (আবুদাউদ হা/৪৭৬৫-৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৭৫)তবে জরুরি কারণ অর্থাৎ নারীর মাথায় বিশেষ কোনও রোগ-ব্যাধি বা জরুরি চিকিৎসার স্বার্থে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন করা জায়েজ রয়েছে(সূরা তাগাবুন,১৬ বাকারা,২৮৬)

কখন নারীদের চুল মুন্ডুন করা জায়েজ মর্মে বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.],কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “প্রয়োজন থাকলে মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন করায় কোনও দোষ নেই। যেমন: যদি মাথায় ক্ষত থাকে এবং মাথার চুল মুণ্ডন করা ছাড়া তা চিকিৎসা করা সম্ভব না হয় তাহলে এতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু জরুরি দরকার ছাড়া মাথার চুল মুণ্ডন করা হারাম-যেমনটি বিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন। কেননা তা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনের অন্তর্ভুক্ত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন কারীনী নারীদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। [ফতোয়া নূরুন আলাদ দারব ১০/১৩-শামেলা]

বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,

“নারীর মাথা মুণ্ডন করা জায়েজ নয় বরং তার মাথায় চুল অবশিষ্ট রাখা অপরিহার্য। কেননা চুল নারীর সৌন্দর্য এবং অলঙ্করণ। এটি নারী এবং পুরুষদের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য। তাই হজের সময়ও তার মাথার চুল মুণ্ডন করার সুযোগ নেই। বরং হজ ও ওমরাতে চুল ছোট করবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, মহিলাদের জন্য মুণ্ডন নেই। তারা চুল ছোট করবে।মাথার চুল তাদের সৌন্দর্য।সুতরাং তা মুণ্ডন করা যাবে না। তবে যদি মাথায় কোনও রোগ-ব্যাধি থাকে যার কারণে ডাক্তার মাথার চুল মুণ্ডন করার অভিমত দেয় তাহলে ভিন্ন কথা। রোগের বিষয়টি ভিন্ন। কিন্তু অবহেলা বশত: বা কাফের বা অন্যদের অন্ধ অনুকরণ হলে এমনটি করা যাবে না। বরং তার জন্য আবশ্যক হল, চুলের পরিচর্যা করা ও যত্ন নেয়া। কারণ এতে সৌন্দর্য রয়েছে। তবে যদি চুল খুব ঘন বা লম্বা হয় তাহলে ছোট করতে অসুবিধা নেই।”(binbaz-org-sa ফতোয়া নং,১৫০৩০ ফতোয়া অনুবাদক,আব্দুল্লাহিল হাদী হাফিঃ)

পরিশেষে,উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে,স্বাভাবিক ভাবে নারীদের মাথার চুল ছোট করা জায়েজ নয়। আর মুন্ডন করা হারাম কবিরা গুনাহ। তবে শর্তসাপেক্ষে কিছুটা ছোট করা যেমন জায়েজ তেমনি গ্রহণযোগ্য শরীয়তী ওজর থাকলে মুন্ডন করাও নাজায়েজ নয়, যার দলিল প্রমান পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুক।
(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)


উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি​
জাযাকাল্লাহু খাইরান
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Similar threads

Latest posts

Total Threads
8,094Threads
Total Messages
9,690Comments
Total Members
1,361Members
Latest Messages
Amir104Latest member
Top