প্রশ্নোত্তর বেপর্দা নারীর মসজিদে প্রবেশ

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Joined
Nov 1, 2022
Threads
4,871
Comments
4,360
Solutions
1
Reactions
60,541
প্রশ্ন : আমি ও আমার দুই বান্ধবী ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য মসজিদে যেতে চাই; কিন্তু তারা দুজন পর্দা করে না। তাদের জন্য কি নিজেদের অভ্যস্ত পোশাকের সঙ্গে কেবল ওড়না পেঁচিয়ে মসজিদে যাওয়া জায়েয হবে?


উত্তর:


জবাব:


আলহামদু লিল্লাহ।


এক:


পর্দাহীনতা ফেতনার সদর দরজা। পর্দাহীনতা কেবল বেপর্দা মেয়ের জন্য অনিষ্টকর নয়, তাকে যারা দেখবে তাদের জন্যেও অনিষ্টের কারণ। হতে পারে পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্যপ্রদর্শনের ফলে কোনো দূরাচারী লোক কথা বা কাজের মাধ্যমে বেপর্দা নারীকে আক্রমন করে বসবে। পর্দাহীন নারী নিজেকে যতই ভালো দাবি করেন না কেন তাকে কেন্দ্র করে সমাজে গুনাহ ছড়ানো স্বাভাবিক। কারণ, তিনি নিজে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও অন্যকে নিয়ন্ত্রণের দাবি করতে পারেন না। তাই পর্দাহীনতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী; যাদেরকে আমি আমার যুগে দেখে যাইনি। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যা দিয়ে তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী;অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের কুঁজের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।’[মুসলিম (২১২৮)]


দুই:


মুসলিমমাত্রই অন্যের হেদায়েত, তার সত্য গ্রহণ ও তাতে তার অবিচলতায় আগ্রহী। সুতরাং এই বোনদের মসজিদে প্রবেশে হয়তো তাদের জন্য অনেক উপকার ডেকে আনবে। যেমন- তারা সেখানে সালাত আদায় করবেন, উত্তম উপদেশ ও ওয়াজ-নসিহত শুনবেন, যা থেকে তাদের অন্তর প্রভাবিত হবে। তেমনি মসজিদের ঈমানী পরিবেশ তাদের অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করবে এবং উদাসী মনকে জাগ্রত করবে। এ কারণে আপনি প্রাথমিকভাবে এ বোনদেরকে ওড়না পরে ও মাথা ঢেকে মসজিদে নিয়ে যেতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করুন। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে প্রশস্ত ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের উপদেশ দিয়ে যেতে হবে।


তিন:


আল্লাহ তায়ালা মসজিদকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। মসজিদের পবিত্রতা ও সম্মানের পরিপন্থী সব কিছু থেকে হেফাযতে রাখার আদেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন: “(এ রকম আলো জ্বালানো হয়) সে সব গৃহে (অর্থাৎ মসজিদে ও উপাসনালয়ে) যেগুলোকে সমুন্নত রাখতে আর তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ওগুলোতে তাঁর মাহাত্ন্য (তাসবিহ) ঘোষণা করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায় (বার বার)।”[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬]


হাফেয ইবনে কাছির (রহ) বলেন: ‘আল্লাহ তায়ালা মসজিদগুলোকে সমুন্নত করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থাৎ মসজিদগুলোকে অপবিত্রতা, অনর্থকতা ও এর মর্যাদাবিরোধী কথা ও কর্ম থেকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’[তাফসীরে ইবনে কাছির: ৬/৬২]


বেপর্দা নারীদেরকে মসজিদে প্রবেশে ছাড় দিলে সেটা রাস্তাঘাট ও বাজারের ফেতনা আল্লাহ তায়ালার ঘর মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তবুওবেপর্দা মুসলিম নারী যখন তার ফিতনা কমিয়ে ফেলবে, তার গুনাহ কাফেরের কুফরি থেকে তো বেশি ক্ষতিকর নয়, অথচ প্রয়োজনবশত কাফেরকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।


শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,


‘অমুসলিমের মসজিদে প্রবেশে কোনো অসুবিধা নেই যদি তা হয় কোনো শরয়ি বা বৈধ প্রয়োজনে। যেমন, ধর্মীয় উপদেশ শ্রবণ, পানি পান বা এ জাতীয় অন্য কোনো প্রয়োজন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অমুসলিম কাফেলাকে মসজিদে নববীতে এনেছেন যাতে তারা মুসল্লিদের দেখতে পারে এবং তাঁর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন তেলাওয়াত ও খুতবা শুনতে পারে। যাতে তিনি তাদেরকে কাছে বসিয়ে আল্লাহর দিকে ডাকতে পারেন। যেমন ছুমামা বিন আছাল হানাফীকে যখন বন্দি করে আনা হয় তখন তিনি তাকে মসজিদে বেঁধে রেখেছিলেন।ফলে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দেন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহই তো তাওফিকদাতা।’[বিন বাযের প্রবন্ধসমগ্র, ৮/৩৫৬]


অতএব, আপনার বান্ধবী যদি কল্যাণের প্রতি আগ্রহী হন এবং তাদের মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয়নগ্নতা না ছড়িয়ে উপকৃত হওয়া, তারা তাদের মাথার চুল ঢাকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের মাধ্যমে ফিতনাগুলো কমানোর চেষ্টা করেন তাহলে আশা করা যায় তারা মসজিদে অনুষ্ঠিত দরসগুলোতে অংশগ্রহণ করলে এটি তাদের জন্য কল্যাণের দরজা খুলে দিবে। আল্লাহর শরীয়ত পরিপালনে তাদের পথ উন্মুক্ত হবে। অতএব আপনি তাদের এতে উদ্বুদ্ধ করুন।




আল্লাহই ভালো জানেন।


সূত্র : islamqa.info
 
Similar threads Most view View more
Back
Top