বিদাতিদের বিরুদ্ধে বলা থেকে নিষেধ করেন বক্তা আবু ত্বহা আদনান

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
343
Comments
476
Reactions
5,892
আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “আরেকটা নসিহা করব, দলাদলির মধ্যে যাবেন না, ইখতিলাফি ফের্কার দলাদলির মধ্যে যাবেন না। তুই অমুক, আর তুই অমুক, তুই এই, তুই সেই — এগুলোর মধ্যে যাবেন না।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/j7xQTQG2hMA (০:২০ মিনিট থেকে ০:৩০ মিনিট)]

তিনি অন্যত্র বলেছেন, “আমরা সবাই কিন্তু ভাই-ভাই। নাকি আপনারা মনে করেন যে, আমরা অন্যদের ভাই না? আমি অন্তত মনে করি না, আপনারা মনে করলে করতে পারেন। আমার কাছে সবাই ভাই; হোক সে হানাফি, বা শাফেয়ি, বা মালেকি, বা হাম্বলি, বা আহলুল হাদিস, বা সালাফি, বা যে কেউ, তাবলিগ জামাত, বা জামায়াত, বা চরমোনাই — যে আছে। হ্যাঁ, মানুষের মধ্যে ভুলভ্রান্তি আছে, আমি জানি। এমন কোনো কমিউনিটি নাই, যার মধ্যে ভুলভ্রান্তি আপনি পাবেন না। এমন কোনো ব্যক্তি নাই, যাকে আপনি বিতর্কিত করতে পারবেন না। যদি আপনি চান যে, এই ব্যক্তিকে আমি বিতর্কিত করব, আপনি পারবেন।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/AaE7MOMjKwo (শুরু থেকে ০:৩১ মিনিট পর্যন্ত)]

আরেক বক্তব্যে জনাব আদনান বলেছেন, “আমরা পড়ে আছি, কে কোন শব্দ ইউটিউবে বলেছে, ওকে কেমন করে ধোলাই করা যাবে, এটা নিয়ে ব্যস্ত আছি। নিজের ভাই যদি কোনো ভুল করে, ধরে নিলাম, ভুলই করে। নিজেরই ভাই, আপন ভাই। তাকে কি আপনি পাবলিকের সামনে নেংটা করে দিবেন? এই কাজ করছে এখন আমাদের দেশের মানুষ।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/E13RCFUa41w (১০:২৭ মিনিট থেকে ১০:৫৫ মিনিট পর্যন্ত)]

আবু ত্বহা আদনান সাহেব বিদাতিদের খণ্ডন করা থেকে এবং তাদের শরয়ি সমালোচনা করা থেকে নিষেধ করছেন। তিনি একজন ফাসেক মুসলিমের ব্যাপারে কী বলবেন, আমি জানি না, যেই ফাসেক মুসলিম কিনা মাদকদ্রব্যের জোগান দিয়ে থাকে! এই মাদক-জোগানদাতার বিরুদ্ধে বলা যাবে না, তার বিরুদ্ধে পুলিশে কেস করা যাবে না, করলে তাকে পাবলিকের সামনে অপমান করা হবে! কী, এটা মানবেন না? বলে বসবেন, ‘আরে ভাই, এই লোক তো ক্ষতি করছে, তার যথোচিত সমালোচনা না করে এই ক্ষতি এড়ানো যায় না, এজন্য আমরা সমালোচনা করব!’ তাহলে আপনিই বলুন দেখি, ভাই, যেসব লোক ভ্রান্ত আকিদা ও ভ্রষ্ট মতাদর্শ ছড়িয়ে দিয়ে মহান আল্লাহর দিনকে বিকৃত করছে, জনমানুষের দিন-ধর্ম নষ্ট করছে, তার যথোচিত সমালোচনা করা কীভাবে অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়?

এজন্য মনে রাখা দরকার, ইসলামি শরিয়তে গিবত হারাম। কিন্তু কিছু গিবত আছে, যা শরিয়তে বৈধ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইয়াহইয়া বিন শারফ আন-নববি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৬৭৬ হি.) তাঁর লেখা ‘রিয়াদুস সালিহিন’ গ্রন্থে ‘যেসব গিবত বৈধ’ শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ রচনা করেছেন (পরিচ্ছেদ নং: ২৫৬)। এই পরিচ্ছেদের প্রারম্ভিকায় তিনি বলেছেন, “জেনে রেখো, বিশুদ্ধ শরয়ি উদ্দেশ্যে গিবত বৈধ হয়, যখন গিবত ছাড়া সেই উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া সম্ভব হয় না। এমন সিদ্ধ গিবত ছয়টি। যথা:

এক. জুলুমের অভিযোগ করা। মজলুম ব্যক্তির জন্য বৈধ যে, সে শাসক, বিচারক প্রমুখ, যারা অত্যাচারীকে উচিত সাজা দিয়ে ন্যায়বিচার করার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রাখেন তাঁদের নিকট জুলুমের ব্যাপারে অভিযোগ ব্যক্ত করে বলবে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার উপর এই অত্যাচার করেছে।’

দুই. মন্দ কাজের অপসারণ এবং পাপী ব্যক্তিকে সঠিক পথে ফেরানোর কাজে সাহায্য কামনা। ফলে অন্যায় কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তিকে গিয়ে সে বলবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি এই কাজে লিপ্ত, সুতরাং আপনি তাকে তা থেকে বাধা দিন’ ইত্যাদি। তবে এর পিছনে তার উদ্দেশ্য হতে হবে অন্যায় ও মন্দ কাজ অপসারণ করা। পক্ষান্তরে সে যদি এই উদ্দেশ্য না করে, তাহলে তা হারাম হবে।

তিন. ফতোয়া জিজ্ঞেস করা। সে মুফতির নিকট গিয়ে বলবে, ‘আমার পিতা বা আমার ভাই অথবা আমার স্বামী বা অমুক ব্যক্তি আমার প্রতি এই জুলুম করেছে। তার কি এরূপ করার অধিকার আছে? আর এ থেকে মুক্তি পাবার, স্বীয় অধিকার অর্জন করার এবং জুলুম প্রতিকার করার উপায় কী?’ অনুরূপ আবেদন পেশ করা। এই কাজ প্রয়োজনে জায়েয। তবে সতর্কতামূলক ও উত্তম পন্থা হল, নাম না নিয়ে যদি বলে, ‘এক ব্যক্তি, বা এক লোক বা এক স্বামী এই করেছে, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?’ নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম না নিয়ে এরূপ বললেও উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে। এতৎসত্ত্বেও নির্দিষ্ট করে নাম নিয়ে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা বৈধ। যেমন এ মর্মে সামনে হিন্দের হাদীস উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহু তা‘আলা।

চার. মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনা করা। এটা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন:
(ক) দোষযুক্ত রাবি (হাদীস বর্ণনাকারী) ও সাক্ষীর দোষত্রুটি প্রকাশ করা। সর্বসম্মতিক্রমে এরূপ করা জায়েজ; বরং প্রয়োজন হলে এরূপ করা ওয়াজিব।
(খ) কোনো ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য, বা কোনো ব্যবসায়ে অংশীদারি গ্রহণের জন্য, অথবা কারও কাছে আমানত রাখার জন্য, বা কারও সাথে আদানপ্রদান করার জন্য বা কারও প্রতিবেশী হবার জন্য পরামর্শ চাওয়া। আর সে ক্ষেত্রে পরামর্শদাতার ওপর আবশ্যক হলো—যার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে, তার প্রকৃত অবস্থা গোপন না করা। বরং সে নসিহতের নিয়তে যার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে, তার যত দোষত্রুটি আছে, সব ব্যক্ত করবে।

(গ) যখন কোনো দিনের জ্ঞান অর্জনকারীকে দেখবে যে, সে কোনো বিদাতি বা পাপিষ্ঠ লোকের নিকট জ্ঞানার্জন করতে যাচ্ছে এবং আশঙ্কা বোধ করবে যে, এর দ্বারা সেই জ্ঞান অর্জনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাহলে তার জন্য ওই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করে তাকে নসিহত করা আবশ্যক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো যে, সে এর দ্বারা নসিহত প্রদানের উদ্দেশ্য করবে। সাধারণত এক্ষেত্রে ভুল হয়ে থাকে। কখনো কখনো বক্তা হিংসাবশত ওই কথা বলে। কিন্তু শয়তান তার কাছে বিষয়টি সংশয়পূর্ণ বা অস্পষ্ট করে দেয় এবং তাকে এই ধারণা দেয় যে, এটি নসিহতই (অথচ তা নসিহত নয়)। অতএব এ ব্যাপারে মানুষের সাবধান থাকা উচিত।

(ঘ) যখন কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা প্রশাসক সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে –হয় তার অযোগ্যতার কারণে কিংবা পাপাচারী বা গাফিল হওয়ার মতো কারণে– তাহলে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদস্থ নেতার কাছে তার স্বরূপ তুলে ধরা আবশ্যক। যাতে তিনি তাকে অপসারণ করতে পারেন এবং সেই স্থানে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ করতে পারেন কিংবা কমপক্ষে তার সম্পর্কে তাঁর জানা হয়, ফলে সেই অনুযায়ী তিনি তার সাথে আচরণ করেন এবং তার দ্বারা প্রতারিত হন না, আর তিনি তাকে সংশোধন হবার জন্য বা তাকে পরিবর্তন করার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন।

পাঁচ. প্রকাশ্যে কেউ পাপাচারিতা বা বিদাতে লিপ্ত হলে তার কথা বলা। যেমন প্রকাশ্যে মদ্যপান করলে, লোকের ধন অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে, জোরপূর্বক ট্যাক্স বা চাঁদা আদায় করলে, অন্যায়ভাবে শুল্ক বা কর আদায় করলে, অন্যায় কাজের কর্তৃত্ব করলে, তার জন্য কেবল সেই প্রকাশ্য অন্যায়ের কথা উল্লেখ করা বৈধ। পক্ষান্তরে তার অন্যান্য গোপন দোষত্রুটি উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে আমাদের উল্লিখিত কারণসমূহের মধ্য থেকে গোপন দোষ বলা বৈধ হওয়ার অন্য কোনো কারণ থাকলে সে কথা স্বতন্ত্র।

ছয়. পরিচয় দেওয়া। যখন একজন মানুষ কোনো মন্দ উপাধী দ্বারা সুপরিচিত হয়ে যাবে; যেমন আমাশ (ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন), আরাজ (খোঁড়া), আসাম্ম (বধির), আমা (অন্ধ), আহওয়াল (টেরা) ইত্যাদি, তখন সেসব উপাধী উল্লেখ করে তাদের পরিচয় দেওয়া জায়েজ। তবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সেসব উল্লেখ করা হারাম। পক্ষান্তরে উক্ত উপাধী ছাড়া অন্য শব্দ বা নাম দ্বারা যদি পরিচয় দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই সবচেয়ে উত্তম।

এই হলো গিবত বৈধ হওয়ার ছয়টি ক্ষেত্র, যা আলিমগণ উল্লেখ করেছেন। আর এগুলোর অধিকাংশই সর্ববাদিসম্মত। সহিহ হাদীস থেকে এগুলোর দলিলসমূহও প্রসিদ্ধ।” [ইমাম নববি কৃত রিয়াদুস সালিহিন; পৃষ্ঠা: ৫২৫-৫২৭; পরিচ্ছেদ নং: ২৫৬; তাখরিজ: শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ; আল-মাকতাবুল ইসলামি (বৈরুত) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১২ হি./১৯৯২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

শরিয়তবিরোধীদের উপযুক্ত সমালোচনা গিবত নয় বলেই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كَذَبَ سَعْدٌ وَلَكِنْ هَذَا يَوْمٌ يُعَظِّمُ اللهُ فِيْهِ الْكَعْبَةَ وَيَوْمٌ تُكْسَى فِيْهِ الْكَعْبَةُ “সাদ মিথ্যা বলেছে। বরং আজ এমন একটি দিন, যেদিন আল্লাহ কাবাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কাবাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে।” [সহিহুল বুখারি, হা: ৪২৮০]

মক্কা বিজয়ের দিন আবু সুফইয়ানের সামনে দিয়ে বিজেতা দলের বাহিনীগুলো যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে আনসারদের বাহিনী আসল। যাদের ঝাণ্ডাবাহী নেতা হলেন সাদ বিন উবাদা। সাদ বিন উবাদা আবু সুফইয়ানকে অতিক্রম করার সময় বললেন, “হে আবু সুফইয়ান, আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কাবার অভ্যন্তরে রক্তপাত হালাল হওয়ার দিন।” পরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাহিনী নিয়ে আসলে আবু সুফইয়ান ঘটনাটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবহিত করেন। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরিউক্ত কথাটি বলেন।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজি সম্প্রদায়ের জনক ‘যুল খুওয়াইসিরা’র ব্যাপারে বলেছেন, إِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمٌ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ رَطْبًا لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُوْنَ مِنْ الدِّيْنِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنْ الرَّمِيَّةِ لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ثَمُوْدَ “এই লোকের বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব হবে যারা শ্রুতিমধুর কণ্ঠে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করবে। অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দিন থেকে সেভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তির (বাণ) বেরিয়ে যায়। যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে সামুদ জাতির মত হত্যা করব।” [সহিহুল বুখারি, হা: ৪৩৫১; সহিহ মুসলিম, হা: ১০৬৪]

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি লোকটিকে দেখে বললেন, ‘সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান।’ এরপর সে যখন এসে বসল, তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দ সহকারে তার সাথে মেলামেশা করলেন। লোকটি চলে গেলে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল, যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে তার সাথেই আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন।’ তখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আয়িশা, তুমি কখনো আমাকে অশালীন দেখেছ? কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষজন তাকে ত্যাগ করে।” [সহিহুল বুখারি, হা: ৬০৩২; সহিহ মুসলিম, হা: ২৫৯১]

আলি বিন শাকিক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন মুবারাক রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৮১ হি.) লোকদের সম্মুখে বলতে শুনেছি, ﺩَﻋُﻮﺍ ﺣَﺪِﻳﺚَ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺛَﺎﺑِﺖٍ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺴُﺐُّ ﺍﻟﺴَّﻠَﻒَ “তোমরা আমর বিন সাবিতের হাদিস বর্জন করো, কেননা সে সালাফদের গালিগালাজ করে।” [সহিহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ: ৫]

একদা প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ি শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৮১ হি.) বললেন, “মুআল্লা বিন হিলাল যখনই হাদিস বর্ণনা করে, তখনই মিথ্যা বলে।” তখন তাঁকে একজন সুফি বলল, “হে আবু আব্দুর রহমান, আপনি গিবত করছেন?” তখন তিনি বললেন, “চুপ করো তুমি! যদি আমরা এভাবে সুস্পষ্ট বর্ণনা না করি, তবে লোকেরা কীভাবে বাতিল হতে হককে চিনতে পারবে?” [ইমাম সুয়ুতি কৃত তাদরিবুর রাবী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৬৯; গৃহীত: শাইখ হারিসি রাহিমাহুল্লাহ, লাম্মুদ দুর্রিল মানসুর; পৃষ্ঠা: ১৮৪]

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহর ছেলে মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ২৯০ হি.) বর্ণনা করেছেন, ﺟﺎﺀ ﺃﺑﻮ ﺗﺮﺍﺏ ﺍﻟﻨﺨﺸﺒﻲ - ﻋﺴﻜﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺼﻴﻦ - ﺇﻟﻲ ﺃﺑﻲ، ﻓﺠﻌﻞ ﺃﺑﻲ ﻳﻘﻮﻝ : ﻓﻼﻥ ﺿﻌﻴﻒ ﻭ ﻓﻼﻥ ﺛﻘﺔ، ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ: ﻳﺎ ﺷﻴﺦ، ﻻ ﺗﻐﺘﺐ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ. ﻗﺎﻝ: ﻓﺎﻟﺘﻔﺖ ﺃﺑﻲ ﺇﻟﻴﻪ؛ ﻓﻘﺎﻝ: ﻭﻳﺤﻚ، ﻫﺬﺍ ﻧﺼﻴﺤﺔ، ﻫﺬﺍ ﻟﻴﺲ ﻏﻴﺒﺔ “আবু তুরাব আন নাখশাবি –আসকার বিন হুসাইন– আমার বাবার নিকট আসল। তখন আমার বাবা (ইমাম আহমাদ) বলছিলেন, “অমুক জইফ তথা দুর্বল, আর অমুক সিকাহ তথা বিশ্বস্ত।” তখন আবু তুরাব বলল, “শাইখ, আপনি আলিমদের গিবত করবেন না!” আমার বাবা তখন তার দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং বলে উঠলেন, “তোমার ধ্বংস হোক! এটা নসিহত তথা সদুপদেশ, এটা গিবত নয়!” [তাবাকাতুল হানাবিলা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৪৯; গৃহীত: শাইখ হারিসি রাহিমাহুল্লাহ, লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর; পৃষ্ঠা: ১৮৪]
মুহাম্মাদ বিন বুনদার সাব্বাক আল-জুরজানি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, একদা আমি আহমাদ বিন হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ২৪১ হি.) বললাম, إنه ليشتد علي أن أقول: فلان ضعيف، فلان كذاب، قال أحمد: إذا سكت أنت و سكت أنا فمن يعرف الجاهل الصحيح من السقيم “অমুক জইফ (দুর্বল), অমুক কাযযাব (মিথ্যুক)– বলা আমার কাছে খুব ভারি মনে হয়।” আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বললেন, “কিন্তু তুমি যদি চুপ থাক, আর আমিও যদি চুপ থাকি, তাহলে অজ্ঞ মানুষকে সহিহ-জইফ জানাবে কে?” [ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ, মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ২৩১; কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]

এজন্য সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.) এ বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন—

প্রশ্ন: “বিদাতিদের তথা সুফি ও অনুরূপ সম্প্রদায়ের গিবত করা কি বৈধ? আর কীভাবে তাদেরকে নসিহত করা হবে?”
উত্তর: “যে ব্যক্তি মন্দ কাজ প্রকাশ করে, তার গিবত করা জায়েয। বিদাত বা মন্দ কাজ (কেউ প্রকাশ করলে তার গিবত করা জায়েজ)। আর যে প্রকাশ করে না, তার গিবত করা যাবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি মন্দ কাজ প্রকাশ করে, তার প্রকাশ করা মন্দ কর্মের গিবত করা জায়েয। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দিয়ে দুজন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হলো। উপস্থিত ব্যক্তিরা সে দুজন লোকের একজনের ভালো গুণ বর্ণনা করল। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ওয়াজিব হয়ে গেল।’ উপস্থিত ব্যক্তিরা দ্বিতীয় ব্যক্তির খারাপ গুণ বর্ণনা করল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ওয়াজিব হয়ে গেল।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রসুল, কী ওয়াজিব হয়ে গেল?’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘পৃথিবীতে তোমরা (আল্লাহর) সাক্ষী। তোমরা এই ব্যক্তির ভালো গুণ বর্ণনা করেছ, ফলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর তোমরা এই ব্যক্তির খারাপ গুণ বর্ণনা করেছ, ফলে তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে।’ (সহিহুল বুখারি, হা: ১৩৬৭; সহিহ মুসলিম, হা: ৯৪৯) তিনি উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক ওই লোকের খারাপ গুণ আলোচনা করার বিরোধিতা করেননি। কেননা ওই লোক মন্দ কর্ম প্রকাশ করত।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=SONS55yhFos (অডিয়ো ক্লিপ)]

বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাকিহ ও উসুলবিদ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) বলেছেন, “বিদাতিদের সমালোচনা করা এবং তাদের ভুল মতাদর্শ বা বেঠিক মানহাজের সমালোচনা করা নসিহতের অন্তর্ভুক্ত, গিবতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটি আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল ও মুসলিমদের জন্য নসিহত করার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আমরা যখন কোনো বিদাতিকে তার বিদাত প্রচার করতে দেখব, তখন আমাদের জন্য আবশ্যক হলো এটা স্পষ্ট করে দেওয়া যে, সে বিদাতি। যাতে করে মানুষ তার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে। আমরা যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখব যে, তার সালাফদের আদর্শ-বিরোধী মতাদর্শ আছে, তখন আমাদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক। আমরা যখন কোনো মানুষকে দেখব যে, তার একটি স্পষ্ট মানহাজ রয়েছে, যে মানহাজের মন্দ পরিণতি রয়েছে, তখন আমাদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক। যাতে করে মানুষ তার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এটা আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল এবং মুসলিম জনসাধারণ ও তাদের শাসকবর্গের জন্য নসিহত করার অন্তর্ভুক্ত। হোক ওই বিদাতিদের সমালোচনা ছাত্রদের মধ্যে, কিংবা অন্যান্য মজলিসে, তা গিবত নয়। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিদাত বা মতবাদ বা সালাফদের মানহাজ-বিরোধী মানহাজ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব থাকবে। যাতে করে মানুষ তার মাধ্যমে ধোঁকাগ্রস্ত না হয়।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ; লিকা নং: ১২০]

এ বিষয়ে আমরা বেশকিছু আলোচনা বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের ভূমিকায় উল্লেখ করেছি। কলেবর সংক্ষেপের জন্য আমরা আলোচনা দীর্ঘ করা থেকে বিরত থাকছি। তবে একটি বিষয়ে না বললেই নয়, দিনের কল্যাণের জন্য পিতা বা ভাইয়ের সমালোচনাও প্রকাশ্যে পাবলিকের সামনে করা যায়। বিষয়টি মোটেও দোষণীয় নয়, বরং তা প্রশংসনীয়। তাইতো আমরা দেখতে পাই, হাদিসশাস্ত্রের প্রাচীন পণ্ডিত ইমাম আলি ইবনুল মাদিনি রাহিমাহুল্লাহকে যখন তাঁর পিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, اسألوا غيري “আমাকে বাদ দিয়ে অন্যদের জিজ্ঞেস করো।” লোকেরা বলেছিল, ‘আমরা আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি।’ তিনি ক্ষণকাল মস্তক অবনত করেছিলেন। এরপর মাথা উঠিয়ে বলেছিলেন, هذا هو الدين، أبي ضعيف “এটাই তো দিন। হাদিস বর্ণনায় আমার পিতা জইফ (দুর্বল)।” [ইবনু হিব্বান কৃত আল-মাজরুহুন, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫]

জামাতে ইসলামী ও তাবলিগ জামাতের নাম নিয়েছেন জনাব আবু ত্বহা আদনান, সেজন্য বলে রাখছি। মুসলিম ব্রাদারহুড ও জামাতে ইসলামী দলটিকে সামসময়িক যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানগণ ‘পথভ্রষ্ট বিদাতি ফের্কা’ আখ্যা দিয়েছেন। এই ফের্কাভুক্ত যেসব মানুষ এদের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, তাঁদের কথা ভিন্ন, তাঁরা না জানার দরুন বিদাতি হবেন না, ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় এই দল একটি বিদাতি দল, এদের ভ্রান্তি সম্পর্কে জানার পরেও এদের দলভুক্ত থাকা লোকেরা কিংবা তাদের সমর্থকরা পথভ্রষ্ট। একাধারে এ দলকে বিদাতি বলেছেন— ইমাম ইবনু বায, ইমাম আহমাদ শাকির, ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাকি, ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আল-বান্না, ইমাম আলবানি, ইমাম ইবনু উসাইমিন, ইমাম মুকবিল আল-ওয়াদিয়ি, ইমাম ফাওযান, ইমাম আব্বাদ, ইমাম রাবি আল-মাদখালি, ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান, ইমাম আহমাদ আন-নাজমি, আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফি আল-কুরাইশী, আল্লামা আলীমুদ্দীন নদিয়াভী-সহ আরও অনেকে, যাঁরা প্রত্যেকেই উম্মতের প্রথিতযশা সুন্নাহপন্থি বিদ্বান হিসেবে পরিচিত। [বিস্তারিত দেখুন : আমাদের সংকলিত গ্রন্থ ‘কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড’, বইটির কিয়দংশ অনলাইনে প্রকাশিত; সম্পূর্ণ বই এখনও প্রকাশিত হয়নি]

তদ্রুপ তাবলিগ জামাতকেও বিদাতি ফতোয়া দিয়েছেন এবং এদের থেকে সতর্ক করেছেন উম্মতের শ্রেষ্ঠ সু্ন্নাহপন্থি বিদ্বানগণ। যেমন প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ শাইখ, সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায, ইমাম ইবনু উসাইমিন, ইমাম আলবানি, সৌদি ফতোয়া বোর্ডের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান ইমাম আব্দুর রাযযাক আফিফি, ইমাম হামুদ আত-তুওয়াইজিরি, সৌদি ফতোয়া বোর্ডের সাবেক সদস্য ইমাম আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়্যান, ফতোয়া বোর্ডের বর্তমান সদস্য ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ইমাম আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন-নাজমি-সহ আরও অনেক উলামা তাবলিগ জামাত থেকে সতর্ক করেছেন। [বিস্তারিত দেখুন: ইমাম হামুদ বিরচিত আল-কাওলুল বালিগ ফিত তাহযিরি মিন জামাআতিত তাবলিগ, ইমাম আহমাদ আন-নাজমি সম্পাদিত আত-তালিকুল বালিগ আলা রদ্দিশ শাইখ আহমাদ আন-নাজমি আলা মাদিহিত তাবলিগ, শাইখ রাবি বিরচিত আকওয়ালু উলামায়িস সুন্নাহ ফি জামাআতিত তাবলিগ।]



লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 
Back
Top