- Joined
- Dec 7, 2022
- Threads
- 151
- Comments
- 158
- Reactions
- 1,316
- Thread Author
- #1
: الحمد لله رب العالمين، وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين، أما بعد
অনন্তর, পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী আজকের আলোচ্য বিষয়: ফিতনার সময় একজন মুসলিমের করণীয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকেই ফিতনার অনিষ্টতা থেকে মুক্তি দান করুন। আমীন।ফিতান (فتن) শব্দটি ফিতনা (فتنة) শব্দের বহুবচন। এর শাব্দিক অর্থ হলো: পরীক্ষা, যাচাই-বাছাই।
সৃষ্টির মাঝে আল্লাহর এক অমোঘ নীতি হলো: তিনি তাদেরকে পরীক্ষা করবেন, পরীক্ষা ছাড়া এমনিতেই ছেড়ে দেবেন না। কেননা, পরীক্ষা ছাড়া ছেড়ে দিলে মুমিন-মুনাফিক আলাদা করা যাবে না, সত্যবাদী-মিথ্যুক স্পষ্ট হবে না; সব একাকার হয়ে যাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:
أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا ءَامَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
"মানুষ কি মনে করেছে যে, 'আমরা ঈমান এনেছি' এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেয়া হবে?” [সূরা আনকাবূত, ০২]সুতরাং, বোঝা গেল যে, আল্লাহ ফিতনা ঘটান সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য প্রকাশ করার জন্য। এরকম ব্যবস্থাপনা না থাকলে পৃথক করা যেত না, সব মিলে যেত।
মুসলিমরা বাহ্যিক ইসলামী পোশাক দেখেই কারো উপর (দ্বীনের ব্যাপারে নির্ভর করতে শুরু করবে, অথচ সে ধোঁকাবাজির জন্যই এরূপ বেশ ধরেছে; যাতে লোকজন তার থেকে সতর্ক হতে না পারে, তার গোপনীয় বিষয়ে কেউ যেন হাত না দেয়। ফিতনা তথা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা না থাকলে সাধারণ মুসলিমরা তাকে চিনতে পারত না, মুমিন-মুনাফিক সব এক হয়ে যেত। সত্যবাদি-মিথ্যুক মিলে যেত। ফলশ্রুতিতে, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতো, ভেদরেখা বলে কিছু থাকত না।
আল্লাহ তা'আলার অন্যতম হিকমত ও রহমতের বহিঃপ্রকাশ হলো: তিনি এইসব ফিতনাকে দুই বিপরীত দলের মাঝে পার্থক্যের ভেদরেখা বানিয়েছেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাঁর কর্মে প্রজ্ঞাবান এবং জগতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা তাঁরই জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। তিনি বলেছেন:
مَّا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاءُ فَتَامِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرُ عَظِيمٌ
"অপবিত্র (মুনাফিক)কে পবিত্র (মু'মিন) হতে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় রয়েছ, আল্লাহ সে অবস্থায় মুমিনগণকে ছেড়ে দিতে পারেন না। আবার গায়েব সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করাও আল্লাহর (নিয়ম) নয়; এ বিষয়ের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস কর। বস্তুতঃ তোমরা বিশ্বাস করলে ও সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চললে, তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।" [সূরা আলে ইমরান, ১৭৯]এখানে {অপবিত্র (মুনাফিক)কে পবিত্র (মু'মিন) হতে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় রয়েছ, আল্লাহ সে অবস্থায় মুমিনগণকে ছেড়ে দিতে পারেন না} এই কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: মিথ্যুক মুনাফিকদেরকে সত্যবাদী মুমিনদের সাথে মিশ্র অবস্থা। কারণ, এই মিশ্রিত অবস্থার মাঝে দ্বীন-দুনিয়ার সমূহ ক্ষতি নিহিত। আর এই পার্থক্যটা ফিতনা সংঘটনের মাধ্যমেই ঘটবে।
আর {আবার গায়েব সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করাও আল্লাহর (নিয়ম) নয়} এতটুকু দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: তোমরা তো জানো না অন্তরে কি লুকায়িত আছে ।
অনেক লোক আছে তোমাদের সামনে যারা বন্ধুত্ব, মিত্রতা ও ঈমানের প্রকাশ দেখিয়ে তোমাদের আস্থাভাজন হতে চায়; অথচ সে সুযোগসন্ধানী শত্রু। আর মানুষ যেহেতু অন্যের অন্তরের খবর জানে না, সেহেতু আল্লাহ তা'আলা এই মনের ভাবটা প্রকাশ করে দেয়ার জন্যই ফিতনার ব্যবস্থা করেছেন।
ফিতনা আসলেই মুনাফিকরা কথা বলে ওঠে, আর এর মাধ্যমেই তারা ধরা পড়ে যায়; তারা কাফেরদের দিকে ঝুঁকে পড়ে, দৃঢ় থাকতে পারে না। অথচ স্বাভাবিক সময়ে তাদের চেনা যায় না, ফলে তারা ধোঁকা, প্রতারণা, সর্বোপরি তাদের ভ্রান্ত আমলের চর্চা করে যায়।
{এ বিষয়ের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন} এই অংশটি পূর্বের অংশ থেকে আলাদা। কারণ, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের মধ্যে যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকুই গায়েবের জ্ঞান দান করেন; যেটা তাদের সত্যতার প্রমাণ বহন করে এবং যাতে করে তাঁরা উম্মাহর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:
عَلِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا
"তিনিই গায়েবী বিষয়ের জ্ঞানী, তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারও কাছে প্রকাশ করেন না।" [সূরা জিন, ২৬]তো আল্লাহ তাঁর রাসূলদের দাওয়াতের সুবিধার স্বার্থে ও রিসালাতের সত্যতা প্রমাণের জন্য কিছু গায়েবী বিষয় জানাতে পারেন। কিন্তু, নবীরা ছাড়া অন্যরা যেমন নিজেরা গায়েব জানতে পারে না তেমনি আল্লাহও তাদের জানান না। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
“বলুন, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও যমীনে কেউই গায়েব জানে না এবং তারা উপলব্ধিও করেনা কখন উত্থিত হবে।" [সূরা নামল, ৬৫]ফিতনা সংঘটনের পিছনে এটাই হলো আল্লাহর হিকমত।
- শায়খ সালেহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ