ফাযায়েলে আমল ফাযায়িলে জুমুআহ

Joined
Jan 3, 2023
Threads
730
Comments
875
Reactions
7,736
১. আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদয় হয় তাঁর মধ্যে জুমু’আর দিনই উত্তম। এ দিনেই আদম (আঃ) -কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিনই তাঁকে জান্নাত হতে বের করা হয়েছে। আর জুমু’আর দিনেই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। - (সহীহ) আবূ দাঊদ- (৯৬১),তিরমিজি, (৪৮৮)

 ২. আবূ মূসা আল-আশ'আরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্বিয়ামাতের দিনসমূহকে তার আকৃতিতে পুনরুত্থান করবেন। সেদিন জুমু'আর দিনকে উত্থিত করা হবে উজ্জ্বল আলোকময় করে। যারা জুমু'আর সলাত আদায় করেছে তারা তাকে ঘিরে রাখবে নববধূর মত, যেন তার বরকে হাদিয়া দেয়া হয়। সে তাদেরকে আলো দান করবে। তারা তার আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মতো সাদা এবং তাদের ঘ্রাণ মিশকের ঘ্রাণের মতো ছড়িয়ে পড়বে, তারা কর্পূরের পাহাড়ে আরোহণ করবে। জিন এবং মানুষেরা আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে যতক্ষণ না তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে মুআজ্জিন সওয়াবের আশায় আযান দিয়েছে তারা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের সাথে মিলিত হতে পারবে না। - (সহীহ) ইবনু খুযায়মা,হা/১৭৩০; সিলসিলাহ সহীহা, হা/৭০৬

৩. আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : আমরা সর্বশেষ আগত উম্মত। কিন্তু ক্বিয়ামাতের দিন আমরাই হবো সকলের অগ্রবর্তী। যদিও তাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের আগে এবং আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। এটি সেই দিন যা তাদের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল, কিন্তু তারা এই দিনটি সম্পর্কে মতভেদে লিপ্ত হলো। আল্লাহ আমাদেরকে এ দিনটির ব্যাপারে হিদায়াত দান করেছেন। অতএব তারা আমাদের পশ্চাদগামী। ইয়াহুদীদের জন্য পরের দিন (শনিবার) এবং খৃষ্টানদের জন্য তার পরের দিন (রবিবার)। (অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের দিন জুমু'আর ফাযীলাতের মাধ্যমে উম্মাতে মুহাম্মাদী পূর্ববর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাবে)। - (সহীহ) আহমাদ,হা/৭৪০১

৪. আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্‌র দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমু’আহ্‌র সলাত আদায়ের জন্য মাসজিদে যাবে, সেখানে (সামনে যাওয়ার জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সলাত আদায় করে ইমামদের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সলাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে- তাহলে এটা তার জন্য এ জুমুআহ্‌ ও তার পূর্ববর্তী জুমু’আর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ্‌র কাফ্‌ফারা হয়ে যাবে। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, আরো তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা নেক কাজের সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। - (সহীহ) ইবনু খুযাইমাহ্‌ (১৭৬২), আবু দাউদ, (৩৪৩)

৫. আওস ইবনু আওস আস-সাক্বাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্‌র দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগবে এবং জাগাবে, জুমু’আহ্‌র জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে, তার (মাসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর সলাত আদায়ের (সমান) সাওয়াব পাবে। - (সহীহ) আবু দাউদ, (৩৪৫); ইবনু মাজাহ, (১০৮৭)

৬. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্‌র দিন গোসল করবে, তার স্ত্রীর সুগন্ধি থাকলে তা থেকে ব্যবহার করবে এবং উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে (মাসজিদে এসে) লোকদের ঘাড় না টপকিয়ে খুতবাহ্‌র সময় কোন নিরর্থক কথাবার্তা না বলে চুপ থাকবে- তার দু’ জুমু’আহ্‌র মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গুনাহ্‌র জন্য তা কাফ্‌ফারা হবে। আর যে ব্যক্তি নিরর্থক কথা বলবে এবং লোকদের ঘাড় টপকাবে সে জুমু’আহ্‌র (সাওয়াব পাবে না), কেবল যুহরের সলাতের সম (সাওয়াব পাবে)। - (সহীহ) আবু দাউদ,৩৪৭

৭. আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আহ্‌র দিন জানাবাতের গোসালের ন্যায় গোসল করে সর্বপ্রথম জুমু’আহ্‌র সলাতের জন্য মাসজিদে চলে আসবে, সে যেন একটি উট কুরবানীর সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি তার পরে আসবে, সে একটি গাভী কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর তৃতীয় নম্বরে যে আসবে সে একটি ছাগল কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর চতুর্থ নম্বরে যে আসবে সে একটি মুরগী কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপর পঞ্চম নম্বরে যে আসবে সে আল্লাহর পথে একটি ডিম সদাক্বাহ করার সাওয়াব পাবে। অতঃপর ইমাম যখন খুতবাহ দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসেন, তখন মালায়িকাহ (ফেরেশতারা) খুতবাহ্‌ শোনার জন্য উপস্থিত হন।

ফুটনোটঃ
এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১/ জুমু’আহ্‌র সলাতে উপস্থিত ব্যক্তির উপর গোসল করার প্রতি গুরুত্বদান।
২/ ইমামের উপচত, তার অধিনস্থদের (মুসল্লীদের) ব্যাপারে সচেতন থাকা। কেউ ভাল ও ফাযীলাতপূর্ণ কাজ পরিহার করলে তার কাছে এর কৈফিয়াত চাওয়া বা কারণ জানতে চাওয়া, যদিও সে বড় হয়।
৩/ প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তিকে জুমু’আহর দিনে গোসলের প্রতি জোরদান, যদিও সলাতে উপস্থিত না হয়।
৪/ প্রত্যের প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জুমু’আহ্‌র সলাতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।
৫/ জুমু’আহ্‌র দিনে মুমিনদের উত্তম কাপড় পরার প্রতি উৎসাহ প্রদান।
৬/ জুমু’আহ্‌র দিনে সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব, যদি সুগন্ধি থাকে।
৭/ জুমু’আহ্‌র দিনে যথাশিঘ্র মাসজিদে উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব ও ফাযীলাতপূর্ণ কাজ।
৮/ জুমু’আহ্‌র দিনে অন্যের ঘাড় টপকিয়ে সামনে যাওয়া অপছন্দনীয়।
৯/ ইমাম মিম্বারে আসার পূর্ব পর্যন্ত মাসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির নাফ্‌ল সলাত আদায় করা জায়িয।
১০/ ইমামের খুৎবাহ্‌ চলাকালে অহেতুক কিছু করা নিষেধ ও অপন্দনীয়।
- (সহীহ) আবু দাউদ,৩৫১

৮. আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমু’আহর সালাত আদায়ের জন্য উত্তমরূপে উযু করে (মাসজিদে) উপস্থিত হয়, অতঃপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমু’আহ হতে (পরবর্তী) জুমু’আহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যাক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো। - (সহীহ) আবু দাউদ, ১০৫০; তিরমিজি, ৪৯৮

৯. আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : জুমু'আর দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সলাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই তিনি তাকে দান করেন। তিনি তাঁর হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সেই সময়টি খুবই সংক্ষিপ্ত। - (সহীহ) আহমাদ, হা/১০৩০২; বায়হাকী,হা/১০৪৮
 
Last edited by a moderator:
Similar threads Most view View more
Back
Top