প্রশ্নোত্তর প্রশ্ন: যারাই যাকাত গ্রহণের জন্য হাত বাড়ায় তারাই কি তার হকদার?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Joined
Nov 1, 2022
Threads
4,874
Comments
4,360
Solutions
1
Reactions
62,398
উত্তর: যাকাতের জন্য যে কেউ হাত বাড়ালেই তাকে যাকাত দেওয়া উচিৎ নয়। কেননা সম্পদশালী হওয়া সত্বেও অনেক মানুষ পয়সার লোভে হাত বাড়ায়। এসমস্ত লোক কিয়ামত দিবসে এমন অবস্থায় আসবে যে তার মুখমন্ডলে এক টুকরা গোশতও থাকবে না (নাউযুবিল্লাহ) সমস্ত মানুষের সাক্ষাতে কিয়ামত দিবসে তার মুখ মন্ডলের শুধুমাত্র হাড়-হাড্ডি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ»

“যে ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে হাত পাতে সে যেন জাহান্নামের আগুন চাইল। অতএব, বেশি চাইলে চাইতে পারে বা কম চাইলে চাইতে পারে।”[1] এ সুযোগে আমি সর্তক করছি সেই লোকদেরকে যারা ভিক্ষা বৃত্তি চর্চা করে। সর্তক করছি সেই লোকদেরকে যারা যাকাতের হকদার না হওয়া সত্বেও যাকাত গ্রহণ করে। সাবধান! যাকাতের হকদার না হয়েও আপনি যদি যাকাত গ্রহণ করেন, তবে আপনি হারাম খেলেন। (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহকে ভয় করুন। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ»

“যে ব্যক্তি অভাব মুক্ত থাকতে চায় আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত করেন। যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায় আল্লাহ তাকে পবিত্র করে দেন।”[2] তবে কোনো লোক যদি আপনার কাছে হাত পাতে, আর তার বাহ্যিক অবস্থা দেখে আপনি মনে করেন সে যাকাতের হকদার, তবে তাকে যাকাত দিলে আদায় হয়ে যাবে এবং আপনি দায় মুক্ত হবেন। পরবর্তীতে যদি জানা যায় যে, সে যাকাতের হকদার ছিল না তবে পুনরায় যাকাত দিতে হবে না। দলীল:
«قَالَ رَجُلٌ لَأَتَصَدَّقَنَّ الليلة بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدِ سَارِقٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ عَلَى سَارِقٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدَيْ زَانِيَةٍ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ اللَّيْلَةَ عَلَى زَانِيَةٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى زَانِيَةٍ لَأَتَصَدَّقَنَّ بِصَدَقَةٍ فَخَرَجَ بِصَدَقَتِهِ فَوَضَعَهَا فِي يَدَيْ غَنِيٍّ فَأَصْبَحُوا يَتَحَدَّثُونَ تُصُدِّقَ عَلَى غَنِيٍّ فَقَالَ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى سَارِقٍ وَعَلَى زَانِيَةٍ وَعَلَى غَنِيٍّ فَأُتِيَ فَقِيلَ لَهُ أَمَّا صَدَقَتُكَ عَلَى سَارِقٍ فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعِفَّ عَنْ سَرِقَتِهِ وَأَمَّا الزَّانِيَةُ فَلَعَلَّهَا أَنْ تَسْتَعِفَّ عَنْ زِنَاهَا وَأَمَّا الْغَنِيُّ فَلَعَلَّهُ يَعْتَبِرُ فَيُنْفِقُ مِمَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ»

“একদা (বনী ইসরাঈলের) জনৈক ব্যক্তি বলল, অবশ্যই আমি এ রাত্রে কিছু দান করব। এ উদ্দেশ্যে সে স্বীয় দান নিয়ে বের হলো এবং (গোপনীয়তার কারণে নিজের অজান্তে) এক চোরের হাতে তা রেখে দিল। সকালে মানুষে বলাবলি করতে লাগল, কি আশ্চর্য! আজ রাতে এক চোরকে দান করা হয়েছে! সে বলল, হে আল্লাহ চোরের হাতে আমার দান যাওয়ার কারণে সকল প্রশংসা তোমার জন্য। অবশ্যই (আবার) দান করব। অতঃপর সে তার দান নিয়ে বের হলো এবং এক ব্যভিচারিনীর হাতে রেখে দিল। সকালে মানুষ বলাবলি করতে লাগল, কি আশ্চর্য! গত রাতে একজন ব্যভিচারিনীকে দান করা হয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহ ব্যভিচারিনীকে দান করার কারণে সমসত প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। অবশ্যই (আবার) সাদকা করব। সে তার দান নিয়ে বের হলো অতঃপর এক ধনী লোকের হাতে দিয়ে দিল। সকালে মানুষ বলতে লাগল, আশ্চর্য ব্যাপার! আজ রাতে একজন ধনী মানুষকে দান করা হয়েছে। সে বললঃ হে আল্লাহ যাবতীয় প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। চোর ব্যভিচারিনী এবং ধনী লোককে দান করার কারণে। তার নিকট আসা হলো (কোন ঐশী দূত হতে পারে), অতঃপর তাকে বলা হলো, তোমার দান চোরের হাতে যাওয়ার কারণে- হতে পারে সে চুরি থেকে বিরত থাকবে। আর ব্যভিচারিনী, হতে পারে সে এ দানের কারণে ব্যভিচার থেকে বিরত হবে। আর ধনী ব্যক্তি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে হতে পারে সেও তার সম্পদ থেকে দান করবে।”[3] দেখুন সৎ নিয়তের কিরূপ প্রভাব হয়। অতএব, যে ব্যক্তি আপনার কাছে হাত পেতেছে আপনি তাকে ফকীর বা অভাবী মনে করে দান করেছেন কিন্তু পরে জানা গেল সে অভাবী নয় সম্পদশালী তবে আপনার যাকাত হয়ে যাবে। পুনরায় আদায় করতে হবে না।
[1] সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েয। [2] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: সম্পদের প্রতি লোভমুক্ত না হয়ে সাদকা হয় না সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: পবিত্র থাকা ও ধৈর্যাবলম্বন করার ফযীলত। [3] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: ধনী মানুষের অজান্তে তাকে দান করা সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: দানকারীর প্রতিদানের আবশ্যকতা যদিও তা অপাত্রে দেওয়া হয়।
সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম। লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top