পীরতন্ত্র : সংশয় নিরসন (শেষ)

Joynal Bin TofajjalVerified member

Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
344
Comments
475
Reactions
5,424

পীরতন্ত্র : সংশয় নিরসন (শেষ)

.


ষষ্ঠ দলীল :
নবীগণ যেমন তাঁদের উম্মাতের জন্য সুফারিশ করবেন, পীরগণ তেমনি তাদের মুরীদদের জন্য সুফারিশ করবে। হাদীছে এসেছে, যখন ঈমানদারগণ দেখবে যে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছে, তখন তারা বলবে,رَبَّنَا إِخْوَانُنَا كَانُوا يُصَلُّونَ مَعَنَا وَيَصُومُونَ مَعَنَا وَيَعْمَلُونَ مَعَنَا، ‘হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাই কোথায়, যারা আমাদের সঙ্গে ছালাত আদায় করত, ছিয়াম পালন করত, নেক কাজ করত? তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন,اذْهَبُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِى قَلْبِهِ مِثْقَالَ دِينَارٍ مِنْ إِيمَانٍ فَأَخْرِجُوهُ، ‘তোমরা যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা পর্যায়ক্রমে অর্ধ দীনার এমনকি সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানের অধিকারী ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দিবেন।[1] আর পীর ছাহেবরা যেহেতু প্রথম সারির মুমিন। তাই তারা তাদের মুরীদদের জন্য সুফারিশ করে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অধিক হকদার।

জবাব : সম্মানিত পাঠক! শাফা‘আত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা যরূরী। যা আমাদের শাফা‘আত সম্পর্কিত বিশ্বাসকে পরিশুদ্ধ ও সঠিক করবে। শাফা‘আত হ’ল,التوسط للغير بجلب منفعةٍ مشروعةٍ له، أو دفع مضرة عنه، ‘অন্যের জন্য তার বৈধ উপকারিতার অথবা তার থেকে অনিষ্ঠ দূর করার মাধ্যম হওয়া’।[2] এটা দুই প্রকার। (১) شفاعة في الدنيا তথা দুনিয়ার শাফা‘আত। (২) شفاعة في الآخرة، তথা পরকালের শাফা‘আত।

প্রিয় পাঠক! দুনিয়ার শাফা‘আত বলতে দুনিয়ায় কোন উপকার লাভ কিংবা কোন অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য কারো সাহায্য চাওয়াকে বুঝায়। এক্ষেত্রে কতিপয় শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।

প্রথম শর্ত : যার কাছে সাহায্য চাওয়া হবে তার জীবিত থাকা : অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না। কেননা মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার মানুষের আহবান শুনতে পায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ إِنَّ اللهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ، ‘আর সমান নয় জীবিত ও মৃতগণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে চান তাকে শ্রবণ করান। বস্ত্ততঃ তুমি শুনাতে পারো না কোন কবরবাসীকে’ (ফাতির ৩৫/২২)। তাই মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার মানুষের আহবান শুনতে পাবে না। এমনকি যারা তাদেরকে ডাকে ক্বিয়ামতের দিন তারা বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوْا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ، ‘যদি তোমরা তাদের ডাক, তাহ’লে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তোমরা যে তাদের শরীক করতে, সে বিষয়টি তারা ক্বিয়ামতের দিন অস্বীকার করবে। বস্ত্ততঃ সর্বজ্ঞ আল্লাহ্র ন্যায় তোমাকে কেউ (গায়েবী খবর) অবহিত করতে পারবে না’ (ফাতির ৩৫/১৪)।

প্রিয় পাঠক! যদি মৃত ব্যক্তিকে ডাকা জায়েয হ’ত, তারা দুনিয়ার মানুষের আহবান শুনতে পেত এবং কোন উপকার করার ক্ষমতা রাখত তাহ’লে কথিত পীর দরবেশদেরকে না ডেকে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-কে ডাকাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হ’ত। অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে ছাহাবায়ে কেরাম কখনো রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে সাহায্য চাননি। যেমন- রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে অনাবৃষ্টি দেখা দিলে ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর অসীলায় দো‘আ না করে তাঁর চাচা আববাস ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিব (রাঃ)-এর মাধ্যমে বৃষ্টি বর্ষণের দো‘আ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا صلى الله عليه وسلم فَتَسْقِيْنَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا قَالَ فَيُسْقَوْنَ، ‘হে আল্লাহ! (অনাবৃষ্টি দেখা দিলে) আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর (দো‘আর) অসীলায় তোমার কাছে দো‘আ করতাম, তখন তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করতে। এখন আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর চাচার (দো‘আর) অসীলায় বৃষ্টি বর্ষণের দো‘আ করছি, তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। তখন বৃষ্টি হয়’।[3]

প্রিয় পাঠক! পীরতন্ত্রে বিশ্বাসীগণ উল্লিখিত হাদীছটিকে নিজেদের পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন। অথচ উক্ত হাদীছ পীরতন্ত্রের বৈধতার প্রমাণ বহন করে না; বরং উল্টো পীরতন্ত্রের অবৈধতার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। কেননা প্রথমতঃ মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েয হ’লে ওমর (রাঃ) সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতেন। কিন্তু তিনি তা না করে আববাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর মাধ্যমে দো‘আ করেছিলেন।

দ্বিতীয়তঃ উক্ত হাদীছে বর্ণিত,إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا صلى الله عليه وسلم، ‘আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর অসীলায় তোমার কাছে দো‘আ করতাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল, নবী করীম (ছাঃ)-এর দো‘আর অসীলা। অর্থাৎ যে কোন প্রয়োজনে তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে দো‘আ চাইতেন। আর তিনি দো‘আ করতেন। অনুরূপভাবে وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا، ‘আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর চাচা আববাস (রাঃ)-এর অসীলায় বৃষ্টি বর্ষণের দো‘আ করছি’ দ্বারা উদ্দেশ্যে হ’ল, আববাস ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিব (রাঃ)-এর দো‘আর আসীলা। অর্থাৎ তাঁকে বৃষ্টি বর্ষণের দো‘আ করতে বলা এবং অন্যেরা তাঁর দো‘আয় শরীক হওয়া।[4] শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘ওমর (রাঃ)-এর কথা ‘(অনাবৃষ্টি দেখা দিলে) আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর অসীলায় তোমার নিকট দো‘আ করতাম এবং এখন আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর চাচা (আববাস রাঃ)-এর অসীলায় বৃষ্টি বর্ষণের দো‘আ করছি’-এর অর্থ হ’ল, আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর নিকট যেতাম ও তাঁকে আমাদের জন্য দো‘আ করতে বলতাম এবং তাঁর দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিল করতাম। কিন্তু এখন তিনি মহান প্রভুর দরবারে চলে গেছেন। তিনি ফিরে এসে আমাদের জন্য দো‘আ করা অসম্ভব। তাই আমরা আমাদের নবী (ছাঃ)-এর চাচা আববাস (রাঃ)-এর শরণাপন্ন হয়েছি এবং তাঁর নিকট আমাদের জন্য দো‘আর আবেদন করছি। পক্ষান্তরে তাদের (ছাহাবায়ে কেরাম) দো‘আর অর্থ এই নয় যে, তারা তাদের দো‘আয় বলতেন, হে আল্লাহ! তোমার নবীর মর্যাদার অসীলায় বৃষ্টি বর্ষণ কর। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে বলতেন, হে আল্লাহ! আববাস (রাঃ)-এর মর্যাদার অসীলায় আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ কর। কেননা এরূপ দো‘আ বিদ‘আত। কুরআন ও সুন্নাহতে এর কোন ভিত্তি নেই এবং সালাফে ছালেহীনের কেউ এরূপ দো‘আ করেননি’।[5]

প্রিয় পাঠক! তাই আমরা কখনো মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাইব না এবং তাদের কবরকে ইবাদতের স্থান বানাবো না। যে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّى أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ، ‘সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও নেক লোকেদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ হ’তে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি’।[6]

দ্বিতীয় শর্ত : দুনিয়ায় যে ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া হবে তার উপস্থিত থাকা : অর্থাৎ অনুপস্থিত কোন ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না, যে আপনার কথা শুনতে পাবে না। সরাসরি অথবা ফোনের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে হবে। যাতে সে আপনার কথা শুনতে পায় এবং বুঝতে পারে। কেননা প্রথমতঃ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের শ্রবণ শক্তি এমন করেননি যে, দূর থেকে অন্যের ডাক শুনতে পাবে। দ্বিতীয়তঃ মানুষ গায়েবের খবরও জানে না; যার মাধ্যমে দূর থেকে মানুষের ডাক বুঝতে পারবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ، ‘বলে দাও, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না আল্লাহ ব্যতীত’ (নামল ২৭/৬৫)। তিনি আরো বলেন, وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না’ (আন‘আম ৬/৫৯)।

তৃতীয় শর্ত : যার কাছে যা সাহায্য চাওয়া হবে তার সে জিনিস দেওয়ার ক্ষমতা থাকা : অর্থাৎ দুনিয়ার কোন মানুষের কাছে এমন কোন জিনিস চাওয়া যাবে না যে জিনিস দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত কারো নেই। যেমন- কোন মানুষের কাছে সন্তান চাওয়া। অথচ আল্লাহ ব্যতীত কেউ কাউকে সন্তান দিতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ্র জন্যই রাজত্ব নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের। তিনি যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন ও যাকে চান পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা যাকে চান পুত্র ও কন্যা যমজ সন্তান দান করেন এবং যাকে চান বন্ধ্যা করেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান’ (শূরা ৪২/৪৯-৫০)। অনুরূপভাবে কোন মানুষের কাছে সুস্থতা কামনা করা। অথচ আল্লাহ ব্যতীত কেউ কাউকে সুস্থতা দান করতে পারে না। আল্লাহ বলেন,وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، ‘আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা দূর করার কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমার কোন মঙ্গল করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপরে ক্ষমতাবান’ (আন‘আম ৬/১৭)। এছাড়াও অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যাবে, যা দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্র। কিন্তু মানুষ বিভিন্ন পীর-দরবেশের কাছে তা চেয়ে থাকে।

প্রিয় পাঠক! আমরা কথিত পীর দরবেশদেরকে যতই আল্লাহ্র অলী আখ্যা দেই না কেন তারা আমাদের মত সাধারণ মানুষ। তারা কোন উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِيْنَ- ‘আর আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুকে আহবান (ইবাদত) করো না, যা না তোমার কোন উপকার করতে পারে, আর না কোন ক্ষতি করতে পারে। বস্ত্ততঃ যদি এরূপ কর, তবে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (ইউনুস ১০/১০৬)। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা তো তোমাদেরই ন্যায় বান্দা। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাকতে থাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিবে’ (আ‘রাফ ৭/১৯৪)।

পীর-দরবেশতো দূরের কথা পরকালে স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) কোন উপকার করতে পারবেন না বলে তিনি ঘোষণা করেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে বানী কা‘ব ইবনে লুআই! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী মুর্রাহ ইবনে কা‘ব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহানণাম থেকে বাঁচাও। হে বানী হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দিল মুত্তালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। কারণ আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের (উপকার-অপকার) কিছুরই মালিক নই। তবে তোমাদের সাথে (আমার) যে আত্মীয়তা রয়েছে তা আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই আর্দ্র রাখব। (পরকালে আমার আনুগত্য ছাড়া আত্মীয়তা কোন কাজে আসবে না)।[7]

উল্লেখ্য, পরকালীন শাফা‘আত বলতে পরকালে কারো শাফা‘আতের মাধ্যমে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করা বুঝায়। এটাও দুই প্রকার। যথা :

(১) কবুলযোগ্য শাফা‘আত : এটা তাওহীদপন্থীদের জন্য খাছ। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কেবল তাওহীদপন্থীদেরকে শাফা‘আত করার অনুমতি দিবেন এবং তাদের শাফা‘আত কবুল করবেন। কোন মুশরিককে শাফা‘আত করার অনুমতি দেওয়া হবে না। আল্লাহ বলেন, مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ، ‘তাঁর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুফারিশ করে? তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবকিছু তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন’ (বাক্বারাহ ২/২৫৫)। তিনি আরো বলেন,وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ، ‘আর তারা কোন সুফারিশ করে না, কেবল যার প্রতি তিনি (আল্লাহ) সন্তুষ্ট তিনি ব্যতীত এবং তারা থাকে তাঁর ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত’ (আম্বিয়া ২১/২৮)। তিনি আরো বলেন, ‘সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন এবং যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন, সে ব্যতীত কারু সুফারিশ কোন কাজে আসবে না’ (ত্বহা ২০/১০৯)।

প্রিয় পাঠক! আল্লাহ যেমন তাওহীদপন্থীদেরকে শাফা‘আত করার অনুমতি প্রদান করবেন, তেমনি কেবল তাওহীদপন্থীদের জন্যই শাফা‘আত করার অনুমতি দেওয়া হবে। যেমন একদা রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘ক্বিয়ামতের দিন আপনার সুফারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান হবে? উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বললেন, أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ، ‘ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠচিত্তে لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) বলে’।[8]

প্রিয় পাঠক! শিরকের লালনকারী পীরদের শাফা‘আতকারী মনে না করে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভের চেষ্টা করা কর্তব্য। আর তার জন্য প্রয়োজন যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত পরিহার করে প্রকৃত তাওহীদপন্থী হওয়া। পীরতন্ত্রে বিশ্বাসীরা পীরদের শাফা‘আতের পক্ষে ছহীহুল বুখারীর ৭৪৩৯ নং হাদীছ থেকে যে দলীল পেশ করে থাকে, যেখানে বলা হয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন মুমিনরা তাদের সাথীদের জন্য আল্লাহ্র কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, আমাদের ঐসকল ভাইয়েরা কোথায়? যারা আমাদের সাথে ছালাত আদায় করত। ছিয়াম পালন করত এবং নেক কাজ করত। তখন আললাহ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দিবেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল, আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদপন্থী মুমিনদের শাফা‘আত কবুল করবেন এবং তাওহীদপন্থীদেরকেই জাহান্নাম থেকে বের করে আনার অনুমতি দিবেন। এখানে কথিত পীরদের শাফা‘আতের সাথে হাদীছটির কোন সম্পর্ক নেই।

(২) অগ্রহণযোগ্য শাফা‘আত : এটা মুশরিকদের জন্য। অর্থাৎ কোন মুশরিককে শাফা‘আত করার অনুমতি দেওয়া হবে না এবং কোন মুশরিক শাফা‘আত লাভ করবে না। আল্লাহ বলেন, وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ، ‘আর তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারু কোন উপকারে আসবে না এবং কারু পক্ষে কোন সুফারিশ কবুল করা হবে না। কারু কাছ থেকে কোনরূপ বিনিময় নেওয়া হবে না এবং কেউ কোন সাহায্য পাবে না’ (বাক্বারাহ ২/৪৮)। তিনি আরো বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় কর সেদিন আসার আগেই, যেদিন নেই কোন ক্রয়-বিক্রয়, নেই কোন বন্ধুত্ব, নেই কোন সুফারিশ। আর কাফেররাই হ’ল যালেম’ (বাক্বারাহ ২/২৫৪)।

প্রিয় পাঠক! তাই আসুন আমরা কোন পীরের শাফা‘আত লাভের মিথ্যা আশায় না থেকে আমাদের আক্বীদাহ-আমল বিশুদ্ধ করি। বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করি। কুরআন আমাদের জন্য শাফা‘আত করবে। ছিয়াম পালন করি, ছিয়াম আমাদের জন্য শাফা‘আত করবে। রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত পালনের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করি। তাহ’লে তিনি আমাদের জন্য শাফা‘আত করবেন। আমরা প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার চেষ্টা করি। তাহ’লে তাওহীদপন্থী মুমিনরা আমাদের জন্য শাফা‘আত করবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওহীদপন্থী প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

-মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।​



[1]. বুখারী হা/৭৪৩৯।
[2]. সায়্যিদ আব্দুল গনী, আক্বীদাহ ছাফিয়াহ, পৃঃ ১৮৪।
[3]. বুখারী হা/১০১০, ৩৭১০; মিশকাত হা/১৫০৯।
[4]. ফাতাওয়া উছায়মীন ২/২৭৭ পৃঃ।
[5]. নাছিরুদ্দীন আলবানী, আত-তাওয়াস্সুল, পৃঃ ২৬।
[6]. মুসলিম হা/৫৩২; মিশকাত হা/৭১৩।
[7]. মুসলিম হা/২০৪, ৫২২; তিরমিযী হা/৩১৮৫; মিশকাত হা/৫৩৭৩।
[8]. বুখারী হা/৯৯।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top