তাওবা পাপ মোচনকারী আমল সমূহ

Habib Bin TofajjalVerified member

If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
690
Comments
1,228
Solutions
17
Reactions
7,152
আল্লাহ তা‘আলা শরী‘আতে এমন কতিপয় আমল বাতলে দিয়েছেন যা সম্পাদন করলে গোনাহ সমূহ মাফ হয়। গোনাহ এমন একটি বিষয়, যা একের পর এক করতে থাকলে মুমিন নারী-পুরুষের ঈমানী নূর নিভে যেতে থাকে। যা এক সময় তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। আর শয়তান সেটাই চায়। সে চায় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাকে দ্বীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে তার পথে পরিচালিত করতে। এজন্য সে সদা একাজে নিয়োজিত থাকে। এর সঙ্গে আছে তার দোসর ও অসংখ্য মানবরূপী শয়তান, যারা আল্লাহর দেয়া শরী‘আত ও তাঁর আদেশ-নিষেধকে সর্বাবস্থায় অমান্য করতে থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَفَأَمِنُوْا مَكْرَ اللهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُوْنَ ‘তারা কি আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউই নিরাপদ হ’তে পারে না’ (আ‘রাফ ৭/৯৯)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন,إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ ‘তোমরা তুচ্ছ-নগণ্য পাপ থেকেও বেঁচে থাক। কেননা তা যার মধ্যে একত্রিত হ’তে থাকবে তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’।[1]

পাপের অশুভ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিক :

ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) পাপের অশুভ পরিণতি ও তার বহুবিধ ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করেছেন, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার। যা পাপকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক হবে। নিম্নে ক্ষতিকর দিকগুলি তুলে ধরা হ’ল।-

(১) حرمان العلم বা ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। অর্থাৎ পাপ করতে থাকলে, আল্লাহর দ্বীনের ইলম পাপীর হৃদয়ে প্রবেশ করে না। যদিও দুনিয়াতে আধুনিক জ্ঞানীর স্বল্পতা নেই। আর বস্তুবাদীরা তাদেরকেই বুদ্ধিজীবি হিসাবে আখ্যায়িত করে।

(২) حرمان الطاعة বা আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া। অর্থাৎ পাপে জড়িত থাকলে আল্লাহর আনুগত্য করা সম্ভব হয় না।

(৩) قلة التوفيق বা শক্তির স্বল্পতা। অর্থাৎ পাপ কাজে জড়িত থাকলে আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণরূপে তার প্রতি থাকে না।

(৪) هوان المذنب বা পাপীর লাঞ্ছনা। অর্থাৎ এর ফলে অনেক পাপী দুনিয়াতেই লাঞ্ছনার স্বীকার হয়। এছাড়া আখেরাতে অবমাননাকর শাস্তি তো আছেই।

(৫) ذهاب الحياء বা লজ্জা-শরম দূর হওয়া। লজ্জা-শরম এমন এক মানবীয় গুণ, যার ফলে অনেক অন্যায় ও পাপের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর এর অভাবে নানা ধরনের পাপাচার ও গর্হিত কর্মে মানুষ জড়িয়ে পড়ে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُولَى إِذَا لَمْ تَسْتَحِى فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ ‘প্রথম যুগের আম্বিয়ায়ে কেরামের বাণী সমূহ হ’তে যা মানবজাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হ’ল, যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহ’লে তুমি যা ইচ্ছা তাই কর’।[2]

(৬) سوء الخاةمة বা মন্দ পরিণতি। অর্থাৎ গোনাহের পরিণতি জাহান্নাম।

(৭) الوحشة في القلب বা হৃদয়ে হিংস্রতা। অর্থাৎ পাপের কারণে মানুষ হিংস্র ও পশু স্বভাবের হয়ে ওঠে। ফলে পাপী বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। সমাজে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস সহ নানাবিধ অপরাধের সাথে পাপী ব্যক্তিরাই সংশ্লিষ্ট।

(৮) محق البركة বা বরকত মুছে যাওয়া। অর্থাৎ এর কারণে বরকত চলে যায়।

(৯) ضيق الصدر বা হৃদয়ের সংকীর্ণতা। অর্থাৎ পাপের কারণে হৃদয় সংকীর্ণ হয়।

(১০) الطبع على القلب বা হৃদয়ে মোহর। অর্থাৎ পাপীর হৃদয়ে মোহর বসে যায়। ফলে সে হক অনুযায়ী চলতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الَّذِيْنَ يُجَادِلُوْنَ فِيْ آيَاتِ اللهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ وَعِنْدَ الَّذِيْنَ آمَنُوا كَذَلِكَ يَطْبَعُ اللهُ عَلَى كُلِّ قَلْبِ مُتَكَبِّرٍ جَبَّارٍ- ‘যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতন্ডায় লিপ্ত হয় তাদের একর্ম আল্লাহ ও মুমিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়কে মোহর করে দেন’ (মুমিন ৪০/৩৫)

(১১) نزول النقم বা ঘৃণা বা ক্রোধের অবতরণ। অর্থাৎ পাপে নিমজ্জিত ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ ও মুমিন বান্দার ঘৃণা সৃষ্টি হয়। আর পুণ্যবান লোক সর্বাবস্থায় পাপী থেকে দূরে থাকেন।

(১২) عذاب الآخرة বা পরকালে শাস্তি। পাপের কারণে পরকালে শাস্তি হবে।[3]

গোনাহ মোচনকারী আমল সমূহ :

মানব জীবনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঈমান আনয়ন করা। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য করা। অর্থাৎ আমলে ছারেহ সম্পাদন করা। ইসলামী শরী‘আতে এমন অনেক আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আলোচ্য নিবন্ধে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে এরকম কিছু আমল তুলে ধরা হ’ল।-

১. পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা ও মসজিদে গমন করা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ- ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি বলুন। তিনি বললেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করা, ছালাতের জন্য অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক ছালাতের পর আরেক ছালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হ’ল প্রস্ত্ততি (রিবাত)’।[4]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন,مَنْ تَوَضَّأَ هَكَذَا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَكَانَتْ صَلاَتُهُ وَمَشْيُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ نَافِلَةً ‘যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) ওযূ করে, তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার ছালাত ও মসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত আমল বলে গণ্য হয়’।[5] তিনি আরো বলেন,

إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوِ الْمُؤْمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيْئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيْئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ.

‘কোন মুসলিম বা মুমিন বান্দা ওযূর সময় যখন মুখমন্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার মুখমন্ডলের গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে অর্জিত সব গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তার পা দু’খানা ধৌত করে তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। এভাবে সে যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়’।[6]

২. ওযূর পর ছালাত আদায় করা :

ওছমান বিন আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পূর্ণাঙ্গরূপে ওযূ করার পর বলেন, مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوئِى هَذَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، لاَ يُحَدِّثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি আমার এ ওযূর ন্যায় ওযূ করার পর একাগ্রচিত্তে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করবে এবং এ সময় অন্য কোন ধারণা তার অন্তরে উদয় হবে না। তাহ’লে তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[7]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,لاَ يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ مُسْلِمٌ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ فَيُصَلِّى صَلاَةً إِلاَّ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلاَةِ الَّتِى تَلِيْهَا- ‘কোন মুসলিম উত্তম রূপে ওযূ করে ছালাত আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের ছালাত পর্যন্ত তার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’।[8]

তিনি আরো বলেন, مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوعَهَا إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةً وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ ‘যখন কোন মুসলিমের নিকটে ফরয ছালাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন যদি উত্তমরূপে ওযূ করে এবং একান্ত বিনীতভাবে ছালাতের রুকূ, সিজদাহ ইত্যাদি আদায় করে তাহ’লে সে পুনরায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার পূর্বেকার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হ’তে থাকে’।[9]

৩. আরাফার দিন ও আশূরার ছিয়াম পালন করা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন,صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّى أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالَّتِى بَعْدَهُ. ‘আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট আরাফার দিনের ছিয়াম সম্পর্কে আশা করি যে, তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন’।[10]

আশূরার ছিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ ‘আশূরা বা ১০ই মুহাররমের ছিয়াম আমি আশা করি আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসাবে গন্য হবে’।[11]

৪. খুশূ-খুযূ বা বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ছালাত আদায় করা :

রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন,خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلاَّهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ. ‘আললাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করবে, সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করবে এবং ছালাতের রুকূ-সিজদাহ ও খুশূ-খুযূকে পরিপূর্ণ করবে, তার জন্য আল্লাহর উপর প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন। আর যে এরূপ করবে না, তার জন্য কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দিবেন’।[12]

৫. জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা :

ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,مَنْ تَوَضَّأَ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ مَشَى إِلَى صَلاَةٍ مَكْتُوبَةٍ فَصَلاَّهَا مَعَ الإِِمَامِ، غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ. ‘যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করে ফরয ছালাতের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়’।[13]

৬. ছালাতে সশব্দে আমীন বলা :

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, إِذَا أَمَّنَ الإِمَامُ فَأَمِّنُوْا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِيْنَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. ‘ইমাম যখন আমীন বলে, তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলা ফেরেশতাগণের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।[14]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন,إِذَا قَالَ أَحَدُكُمْ آمِيْنَ وَقَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ فِى السَّمَاءِ آمِيْنَ فَوَافَقَتْ إِحْدَاهُمَا الأُخْرَى، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যখন তোমাদের কেউ (ছালাতে) আমীন বলে এবং আকাশের ফেরেশতারাও আমীন বলেন। অতঃপর উভয়ের আমীন একই সাথে হ’লে তার পূর্ববর্তী সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[15]

৭. ‘আললাহুম্মা রববানা ওয়ালাকাল হাম্দ’ বলা :

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِذَا قَالَ الإِمَامُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ. فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ. فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. ‘ইমাম যখন সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলেন, তখন তোমরা আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হাম্দ বলবে। কেননা যার এ উক্তি ফেরেশতার উক্তির সঙ্গে মিলে যাবে, তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’।[16]

৮. বেশী বেশী সিজদা করা :

মাদান ইবনু আবু ত্বালহা আল-ইয়ামাবী হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আযাদকৃত গোলাম ছাওবানের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাকে প্রিয় ও পসন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনও চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُوْدِ لِلَّهِ فَإِنَّكَ لاَ تَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلاَّ رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيْئَةً. ‘তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশী বেশী সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন’।[17]

৯. জুম‘আর দিন মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করা ও ছালাত আদায় করা :

সালমান ফারিসী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيْبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّى مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হ’তে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে। অতঃপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা করে না। অতঃপর তার নির্ধারিত ছালাত (ইমাম খুৎবায় দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যথাসাধ্য) আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তাহ’লে তার সে জুম‘আহ হ’তে অপর জুম‘আর মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়’।[18]

১০. ক্বিয়ামে রামাযান তথা তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করা :

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে রামাযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, مَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি রামাযানে ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় ক্বিয়ামে রামাযান অর্থাৎ তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী গোনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়’।[19]

১১. কদরের রাত্রিতে ইবাদত করা :

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. ‘যে ব্যক্তি রামাযানে ঈমানের সাথে ও ছওয়াব লাভের আশায় ছিয়াম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) জেগে ছালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[20]

১২. হজ্জ ও ওমরা একত্রে আদায় করা :

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّ الْمُتَابَعَةَ بَيْنَهُمَا تَنْفِى الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা পরপর একত্রে আদায় কর। কেননা এ হজ্জ ও ওমরা দারিদ্র্য ও গোনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়। একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়’।[21]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন, مَنْ حَجَّ لِلَّهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করল, যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি এবং অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হ’তে ফিরে আসবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়), যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’।[22]

১৩. অসচ্ছল ও অভাবীকে অবকাশ দেয়া :

নবী করীম (ﷺ) বলেন,كَانَ تَاجِرٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، فَإِذَا رَأَى مُعْسِرًا قَالَ لِفِتْيَانِهِ تَجَاوَزُوا عَنْهُ، لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَتَجَاوَزَ اللهُ عَنْه ‘জনৈক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দেয়। কোন অভাবগ্রস্তকে দেখলে সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন’।[23]

হুযাইফাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, مَاتَ رَجُلٌ، فَقِيلَ لَهُ قَالَ كُنْتُ أُبَايِعُ النَّاسَ، فَأَتَجَوَّزُ عَنِ الْمُوسِرِ، وَأُخَفِّفُ عَنِ الْمُعْسِرِ، فَغُفِرَ لَهُ ‘একজন লোক মারা গেল, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, তুমি কি বলতে? সে বলল, আমি লোকদের সাথে বেচা-কেনা করতাম। ধনীদেরকে অবকাশ (সুযোগ) দিতাম এবং গরীবদেরকে হ্রাস (সহজ) করে দিতাম। কাজেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয়’।[24]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন,تَلَقَّتِ الْمَلاَئِكَةُ رُوحَ رَجُلٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ قَالُوا أَعَمِلْتَ مِنَ الْخَيْرِ شَيْئًا قَالَ كُنْتُ آمُرُ فِتْيَانِى أَنْ يُنْظِرُوا وَيَتَجَاوَزُوا عَنِ الْمُوسِرِ قَالَ قَالَ فَتَجَاوَزُوا عَنْهُ ‘তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তির রূহের সাথে ফেরেশতা সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? লোকটি উত্তর দিল, আমি আমার কর্মচারীদের আদেশ করতাম যে, তারা যেন অসচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দেয়। রাবী বলেন, রাসূল (ﷺ) বললেন, অতঃপর তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হ’ল’।[25]

১৪. মুছাফাহা করা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ‘যে দু’জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুছাফাহা করে তাদের আলাদা হবার পূর্বেই তাদের (ছগীরা) গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’।[26]

১৫. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيْقٍ، وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ فَأَخَذَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল এবং সেটাকে রাস্তা হ’তে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে কবুল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন’।[27]

১৬. আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়া :

রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তা‘আলা তার আমল কবুল করলেন এবং তার গোনাহ মাফ করে দিলেন। রাসূল (ﷺ) বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই নেকী রয়েছে’।[28]

১৭. মন্দ কাজের পরেই ভাল কাজ করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘নিঃসন্দেহে সৎকার্যাবলী মুছে ফেলে মন্দ কার্য সমূহকে’ (হূদ ১১/১১৪)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু যারকে বলেন,اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। মন্দ কাজের পরপরই ভাল কাজ কর, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সাথে উত্তম আচরণ কর’।[29]

১৮. ধৈর্য ধারণ করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘ধৈর্যশীলদেরকে অপরিসীম পুরস্কার দেওয়া হবে’ (যুমার ৩৯/১০)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاَءِ وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ ‘নিশ্চয়ই বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাদেরকে পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ তা‘আলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ তা‘আলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান’।[30]

মুছ‘আব ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সা‘দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! মানুষের মাঝে কার পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবীদের পরীক্ষা। মানুষকে তার দ্বীন অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যে লোক বেশী ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে, তাহ’লে তাকে সে মোতাবিক পরীক্ষা করা হয়। অতএব বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে। অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গোনাহ থাকে না’।[31]

অন্যত্র তিনি বলেন,مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِى نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ ‘মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তাদের সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সে গোনাহ হীন অবস্থায় মিলিত হয়’।[32]

১৯. খাবার শেষে ও কাপড় পরিধানের পর দো‘আ পড়া :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খাবার পর বলবে, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَطْعَمَنِىْ هَذَا الطَّعَامَ وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّى وَلاَ قُوَّةٍ ‘সেই আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আমাকে আমার ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই এই খাবার খাইয়েছেন এবং এই রূযী দান করেছেন, তাহ’লে তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হবে’।[33]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাপড় পরিধানের পর বলবে, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى كَسَانِى هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّى وَلاَ قُوَّةٍ ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি আমার কোন ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন, তাহ’লে তার আগে-পিছের সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’।[34]

২০. হাট-বাজারে প্রবেশের সময় দো‘আ করা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكُ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ دَرَجَةٍ ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশের সময় বলবে, ‘আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সকল ক্ষমতা তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনি প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি চিরজীবি, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তার হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সবসময় প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতার অধিকারী, তাহ’লে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা দশ লক্ষ নেকী বরাদ্দ করেন, তার দশ লক্ষ গোনাহ মাফ করেন এবং তার দশ লক্ষ গুণ সম্মান বৃদ্ধি করেন’।[35]

২১. ছালাতের উদ্দেশ্যে আযান দেওয়া :

নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘মুয়াযযিনের কণ্ঠস্বর যতদূর পর্যন্ত যায়, তাকে ততদূর ক্ষমা করে দেয়া হয়। তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি (জিনিসই কিয়ামতের দিন) তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামা‘আতে হাযির হ’লে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত ছালাতের ছওয়াব লিখা হয় এবং এক ছালাত হ’তে আরেক ছালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহ ক্ষমা করা হয়’।[36]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন (মুছল্লীদের ছালাতের) যামিন এবং মুয়াযযিন হ’ল (তাদের ছালাতের) আমানতদার। হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন ও মুয়াযযিনদের ক্ষমা করে দিন’।[37]

২২. আল্লাহর পথে জিহাদ করা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন,يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلاَّ الدَّيْنَ ‘শহীদের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় ঋণ ব্যতীত’।[38] তিনি আরো বলেন, لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِى أَوَّلِ دَفْعَةٍ مِنْ دَمِهِ وَيُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الأَكْبَرِ وَيُحَلَّى حُلَّةَ الإِيمَانِ وَيُزَوَّجُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ وَيُشَفَّعُ فِى سَبْعِينَ إِنْسَانًا مِنْ أَقَارِبِهِ ‘আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। তা হ’ল ১. তার রক্তবিন্দু মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং জান বের হওয়ার প্রাক্কালেই জান্নাতে তার বাসস্থানটি দেখানো হয়। ২. তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হয়। ৩. ক্বিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা হ’তে তাকে নিরাপদে রাখা হয়। ৪. সেদিন তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে, যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। ৫. তাকে ৭২ জন সুন্দর চক্ষু বিশিষ্ট হূরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। ৬. তার ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল হবে’।[39]

২৩. আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে যিকির ও দ্বীনী আলোচনার বৈঠকে হাযির হওয়া :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মানুষের আমল লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাগণ ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার আরও কিছু ফেরেশতা আছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহ তা‘আলার যিকিরে মশগূল ব্যক্তিদের পেয়ে গেলে একে অন্যকে ডেকে বলেন, নিজেদের উদ্দেশ্যে তোমরা এদিকে চলে এসো। অতএব তারা সেদিকেই ছুটে আসেন এবং যিকিরে রত লোকদের পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত পরিবেষ্টন করে রাখেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা সে সময় (ফেরেশতাদের) বলেন, আমার বান্দাদের তোমরা কি কাজে লিপ্ত অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? ফেরেশতারা বলেন, আমরা তাদেরকে আপনার প্রশংসারত, আপনার মর্যাদা বর্ণনারত এবং আপনার যিকিরে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তারা আমাকে দেখেছে কি? তারা বলেন, না। নবী করীম (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় প্রশ্ন করেন, তারা আমাকে দেখলে কেমন হ’ত? ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার দর্শন পেলে আপনার অনেক বেশী প্রশংসাকারী, অধিক মাহাত্ম্য বর্ণনাকারী এবং অধিক যিকিরকারী হ’ত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের আবারও বলেন, আমার কাছে তারা কি চায়? ফেরেশতারা বলেন, আপনার নিকট তারা জান্নাত পেতে চায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রশ্ন করেন, তারা জান্নাত দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে প্রশ্ন করেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হ’ত? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ফেরেশতাগণ বলেন, তারা জান্নাতের দর্শন পেলে তা পাওয়ার জন্য আরও অধিক প্রার্থনা করত, আরও বেশী আকাঙ্ক্ষা করত।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আবারও প্রশ্ন করবেন, তারা কোন বস্তু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে? ফেরেশতারা বলেন, তারা জাহান্নাম হ’তে আশ্রয় প্রার্থনা করে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা তা দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হ’ত? ফেরেশতারা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে তা থেকে আরো অধিক পালিয়ে যেত, আরো অধিক ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচার জন্য বেশী বেশী আশ্রয় প্রার্থনা করত। নবী করীম (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমাদেরকে আমি সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলেন, তাদের মাঝে এমন এক লোক আছে যে, তাদের সঙ্গে একত্র হওয়ার জন্য আসেনি, বরং ভিন্ন কোন দরকারে এসেছে। সে সময় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা এরূপ একদল ব্যক্তি যে, তাদের সাথে উপবেশনকারীও বঞ্চিত হয় না’।[40]

২৪. তওবা করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَحِيْمًا ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহ সমূহ পরিবর্তন করে দিবেন নেকী দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)

পরিশেষে বলব, আসুন! উপরোক্ত আমল সমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা পাপ মোচনের জন্য চেষ্টা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেক মুমিন নারী-পুরুষের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন। অধিক হারে নেকী অর্জনের তাওফীক দিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসের পথ সহজ করে দিন-আমীন!

মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান।​


[1]. মুসনাদে আহমাদ; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৮৭। [2]. বুখারী হা/৬১২০, ৩৪৮৩; মিশকাত হা/৫০৭২। [3]. আত-তারীকু ইলাল জান্নাতী, (দারু ইবনুল মোবারক, প্রথম সংস্করণ, ১৪২০ হিঃ), ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৫১। [4]. মুসলিম হা/৬০১; আহমাদ হা/৪৭৬; তিরমিযী হা/৫১; ইবনু মাজাহ হা/৪২৮। [5]. মুসলিম হা/৫৬৬; ইবনু মাজাহ হা/২৮২। [6]. মুসলিম হা/২৪৪; আহমাদ হা/৮০২০। [7]. বুখারী হা/১৫৯, ১৬৪; মুসলিম হা/২২৬; আহমাদ হা/৪১৮। [8]. মুসলিম হা/২২৭। [9]. মুসলিম হা/১৩৮; মিশকাত হা/২৮৬। [10]. তিরমিযী, হা/৭৪৯, ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৭৩০; মিশকাত হা/২০৪৪। [11]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৪। [12]. আবু দাউদ হা/৪২৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৭২; মিশকাত হা/৫৭০, সনদ ছহীহ। [13]. ইবনু খুযায়মাহ হা/১৪৮৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩০০, ৪০৭, হাদীছ ছহীহ। [14]. বুখারী হা/৭৮০; মুসলিম হা/৪১০; মিশকাত হা/৮২৫। [15]. বুখারী হা/৭৮১; মুসলিম হা/৪১০। [16]. বুখারী হা/৭৯৬; আহমাদ হা/৯৯৩০। [17]. মুসলিম হা/১১২১; তিরমিযী হা/৩৮৮; ইবনু মাজাহ হা/১৪২৩। [18]. বুখারী হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১। [19]. বুখারী, হা/২০০৮। [20]. বুখারী হা/২০১৪। [21]. ইবনু মাজাহ, হা/২৮৮৭; তিরমিযী হা/৮১০ মিশকাত হা/২৫২৪-২৫, হাসান ছহীহ। [22]. বুখারী হা/১৫২১। [23]. বুখারী হা/২০৭৮; আহমাদ হা/৭৫৮২। [24]. বুখারী হা/২৩৯১। [25]. বুখারী হা/২০৭৭। [26]. আবু দাউদ হা/৫২১২; তিরমিযী, হা/২৭২৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০৩; মিশকাত হা/৪৬৭৯, সনদ ছহীহ। [27]. বুখারী হা/২৪৭২। [28]. বুখারী হা/২৩৬৩। [29]. ছহীহ আত-তিরমিযী, হা/১৯৮৭ হাদীছ হাসান। [30]. তিরমিযী, হা/২৩৯৬; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৩১ হাদীছ হাসান। [31]. তিরমিযী, হা/২৩৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৪০২৩, হাদীছ হাসান ছহীহ। [32]. তিরমিযী, হা/২৩৯৯, হাদীছ হাসান ছহীহ, ছহীহাহ হা/২২৮০। [33]. তিরমিযী হা/৩৪৫৮; আবুদাঊদ হা/৪০২৩; মিশকাত হা/৪৩৪৩, সনদ ছহীহ।[34]. আবূদাঊদ হা/৪০২৩, ছহীহুল জামে‘ হা/৬০৮৬; মিশকাত হা/৪৩৪৩। [35]. তিরমিযী হা/৩৪২৮; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; মিশকাত হা/২৩১৮, সনদ হাসান। [36]. আবূদাঊদ হা/৫১৫; ইবনু মাজাহ হা/৭২৪; আহমাদ হা/৭৬১১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯২৯; মিশকাত হা/৬৬৭। [37]. আবূদাঊদ হা/৫১৭; তিরমিযী হা/২০৭; আহমাদ হা/৭১৬৯; ইরওয়া হা/২১৭; মিশকাত হা/৬৬৩। [38]. মুসলিম হা/১৮৮৬; আহমাদ হা/২২৫৮৫; তিরমিযী হা/১৬৪০; ইরওয়া হা/১১৯৬; মিশকাত হা/৩৮০৬। [39]. তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯; মিশকাত হা/৩৮৩৪, সনদ ছহীহ। [40]. বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী হা/৩৬০০।
 
Last edited:
Back
Top