সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Md Atiar Rahaman Halder

বিদআত নিষেধ তো করেননি

Md Atiar Rahaman Halder

Salafi

Salafi User
Threads
62
Comments
84
Reactions
756
Credits
422
সংশয় (নিষেধ তো করেননি)

বাপ-দাদা কর্তৃক ছলাতের পর সম্মিলিত দু'আর নতুন প্রথা ও অভ্যাসকে দলীল দ্বারা সিদ্ধ বা জায়িয সাব্যস্ত করার চেষ্টায় যারা ব্যর্থ হয় তারা শেষ পর্যন্ত এ সংশয়টিকে তাদের শেষ সম্বল হিসাবে ব্যবহার করেন। বলেন যে, নিষেধ তো করেননি ।

পাঠকবৃন্দ যাদের মুখ দিয়ে এ কথাটি বের হয় জানবেন এটা তাদের মুখের স্বীকৃতি যে, নবী (স) নিজে এ পদ্ধতিতে ছলাতের পর দু'আ করেননি, নির্দেশ ও অনুমোদনও দেননি। এ তিনটির কোন একটি থাকলে অবশ্যই তা উল্লেখ করতো; এ বিদআতী ও কুফরী যুক্তির অবতারণা করতো না। নবী (সঃ) নিষেধ করেননি এ যুক্তিতে নতুন কোন এবাদত শরীয়ত সম্মত বলা হলে, পৃথিবীতে এ যাবৎ যত বিদআত চালু হয়েছে ও হবে এ সমস্ত বিদআত শরীয়ত সম্মত ইবাদতে পরিণত হবে।

কারণ এগুলোর কোনটিকেই নবী (সঃ) নাম ধরে নিষেধ করেননি। আর এটা তার পক্ষে সম্ভবও নয়। কারণ বিদআত তো হলো ঐ কাজ বা আচার-অনুষ্ঠান যা ধর্মীয় ও এবাদত তথা নেকী লাভের উদ্দেশ্যে পালন করা হয় অথচ নবী ও ছাহাবীদের যুগে তার কোন অস্তিত্ব ছিল না। যে এবাদত বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে ছিল না তা তিনি কিভাবে নিষেধ করবেন? এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষেধ তো করেননি বাক্যটি শব্দগত ভাবে মার্জিত ও সহজ মনে হলেও দাবীগতভাবে বিরাট ধরনের কুফরী ও বিদআতী কথা। এই একটি যুক্তির মাধ্যমে পুরা ইসলাম ধ্বংস করা যাবে। উদাহরণ স্বরূপ কিছু বিষয় বা পদ্ধতি নিম্নে তুলে ধরা হলো যা নবী (সঃ) নিষেধ করে যাননি।

১। ছলাত ও অন্যান্য এবাদতের পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়া। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে পড়েছেন পাওয়া যায় না তবে নিষেধ করেছেন এটাও পাওয়া যায় না।

২। ছলাতের পূর্বে বিভিন্ন ধরনের দু'আ পাঠ করা। যেমন- কিছু ভাই إني
...... وجهت পাঠ করে থাকেন। নবী (সঃ) ছলাতের পূর্বে এ ধরনের দুআ পাঠ করতেন, এ মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে নিষেধ করেছেন এ মর্মেও কোন দলীল নেই।

৩। নবী (দ্র) প্রতি রাক'আতে একটি রুকূ দু'টি সাজদাহ করেছেন কিন্তু দু'টি রুকূ ও চারটি সাজদাহ করতে নিষেধ করেননি বরং বিদআতীদের কায়দায় দলীলের আশ্রয় নিলে এর সপক্ষে দলীলও পাওয়া যাবে। নবী (সঃ) বলেছেন, اعني على نفسك بكثرة السجود নবী (সঃ) তার এক খাদিমকে বলেছিলেন “তুমি নিজের ব্যাপারে বেশী বেশী সাজদাহর মাধ্যমে আমাকে সাহায্য কর । (মুসলিম শরীফ)

৪। নবী (সঃ) যোহর ৪, আছর ৪ মাগরিব ৩, এশা ৪, ফজর ২, জুমআহ ২ রাকআত করে ফরয ছলাত আদায় করেছেন ও করতে বলেছেন কিন্তু কোন হাদীছে এর চেয়ে বেশী রাকআত পড়তে নিষেধ করেনি। অনুরূপভাবে সাজদাহ আগে ও রুকূ পরে করতেও নবী (সঃ) নিষেধ করেননি। বরং এর সমর্থনে বিদআতীদের কায়দায় পূর্বোক্ত হাদীস দ্বারা দলীল নেয়া যাবে। আর যেহেতু ছলাত উত্তম এবাদত এ যুক্তিতেও এরূপ করা চলে ।

৫। যোহর ও আছরের মধ্যবর্তী সময়ে একটি নফল ছলাতের প্রবর্তন করলাম যার নাম দেয়া হলো ছলাতুল “কুরবাহ” নৈকট্য অর্জনের ছলাত। কারণ এই ছলাত চালু করতে নবী (সঃ) নিষেধ করেননি।

৬। মাগরিব ও ইশার মাঝে ছলাত বিররুল ওয়ালিদাইন চালু করার প্রস্তাব রাখলাম। যেমন কোন কোন দেশে এর অস্তিত্ব রয়েছে। কারণ এর ব্যাপারে নবী নসঃ) থেকে নিষেধ আসেনি।

৭। নবী (সঃ) সপ্তাহে একদিন জুমআহ পড়েছেন একাধিক দিন পড়তে নিষেধ করেননি। তাহলে একাধিক দিন জুমআ পড়াও জায়েয হওয়ার কথা ।

৮। নবী (সঃ) পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত একটা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করেছেন কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত একবারে বা দুইবারে বা তিন বারে পড়তে নিষেধ করেননি। যার জন্য বর্তমান যুগের শিয়ারা তিন ব্যারে পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত পড়ে থাকে। যোহরের সাথে আছর ও মাগরিবের সাথে ইশা এবং ফজর আলাদ ভাবে। এরূপ সফরে করা যায়। মক্কীম অবস্থাতেও নির্দিষ্ট কিছু কারণে এরূপ করা যায় যার দলীল হাদীছ অধ্যয়নকারীদের নিকটি পরিচিত। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থা ও সময়ে নিয়মিত এভাবে পাচ ওয়াক্ত ছলাত নিষেধ করেছেন এ মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না ।

৯। সালামের পরিবর্তে অন্য কোন নিয়মে ছলাত সমাপ্ত করতে নবী (সঃ) নিষেধ করেননি। অতএব এ নিয়মে ও সলাত সমাপ্ত করা যাবে। যেমনটি হানাফী মাযহাবে জায়িয আছে।

১০। মীলাদ ও ঈদে মীলাদুন্নাবী উযযাপন্ন করতে নবী (সঃ) নিষেধ করেননি। ১১। হজ্জের মাসের বাইরে অন্য কোন মাসে হজ্জ পালন করতে নবী ( নিষেধ করেননি। অতএব যে কোন মাসে হজ্জ করা বৈধ ও শুদ্ধ হওয়া উচিত।

এভাবে নবী (সঃ) নিষেধ করেন নি এ যুক্তির মাধ্যমে বিদআতের বিরাট পাহাড় ইসলামে ঢুকে যাবে এবং ইসলামের চেহারায় পাল্টে যাবে। অতএব এ যুক্তি দিয়ে যারা ছলাতের পর সম্মিলিত দুআ সাব্যস্ত করেন তারা বিরাট অপরাধ ও মুর্খতার ভিতর ডুবে রয়েছেন। আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা ও রক্ষা করুন।​

সংশয় ও বিভ্রান্তির বেড়াজালে মুনাজাত
লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন: আকরাম আল-জামান বিন আব্দুল সালাম ‎, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক​
 
COMMENTS ARE BELOW
Top