কুরআন নিম্নের দু’টি আয়াতের মধ্যে আমরা কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারি?

Abu Umar

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
665
Comments
1,233
Solutions
17
Reactions
7,661
প্রশ্ন:নিম্নের দু’টি আয়াতের মধ্যে আমরা কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারি? যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَن يَّبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيناً فَلَن يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
- ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য দ্বীন তালাশ করে, কখনোই তা কবুল করা হবে না’... (আলে ইমরান ৩/৮৫)।
এবং অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُواْ وَالَّذِيْنَ هَادُواْ وَالصَّابِؤُوْنَ وَالنَّصَارَى مَنْ آمَنَ بِاللّهِ
وَالْيَوْمِ الآخِرِ وعَمِلَ صَالِحاً فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُوْنَ
- ‘নিশ্চয়ই মুসলমান, ইহুদী, ছাবেঈ ও নাছারাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (মায়েদাহ ৫/৬৯)।

উত্তর:দু’টি আয়াতের মধ্যে কোন বিরোধ নেই, যা ধারণা করা হয়েছে। প্রথম আয়াতটি হ’ল ইসলাম আসার পরের অবস্থা সম্পর্কে। আর দ্বিতীয় আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে যাওয়ার পরে যদি তারা ঈমান আনে, আখেরাতে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে তাহ’লে لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‘তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’।

আয়াতে ছাবেঈ (الصابئين) -দের কথা বলা হয়েছে। ছাবেঈ বলতেই ‘তারকা পূজারী’দের (عُبَّاد الكواكب) কথা মাথায় চলে আসে। আসলে ছাবেঈ বলতে ঐসব লোকদের বুঝায়, যারা প্রথমে তাওহীদপন্থী ছিল। কিন্তু পরে তারকাপূজাসহ নানাবিধ শিরকের মধ্যে পতিত হয়েছে। এক্ষণে আয়াতে বর্ণিত ছাবেঈগণ বলতে ইসলাম আসার পূর্বেকার ঈমানদার তাওহীদপন্থী লোকদের বুঝানো হয়েছে। যেমন ইহুদী, নাছারা প্রভৃতি। যেখানে ছাবেঈ কথাটি এসেছে তার পূর্বাপর আলোচনাতেও সেটা বুঝা যায়। অতএব এঁরা হ’লেন সেই সকল মানুষ, যারা স্ব স্ব যুগের দ্বীনের উপরে নিষ্ঠাবান ছিলেন। তারা হ’লেন ঐ সকল মুমিন لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ ‘যাদের কোন ভয় নেই এবং যারা চিন্তান্বিত হবে না’। কিন্তু আল্লাহ পাক মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে দ্বীন ইসলাম সহ প্রেরণের পরে এবং ইসলামের দাওয়াত ঐসব ইহুদী, নাছারা ও ছাবেঈদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পরে তাদের থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছুকেই আর কবুল করা হবে না।

এক্ষণে আল্লাহর বাণী, وَمَن يَّبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيْناً অর্থ আল্লাহর রাসূলের যবানীতে ইসলাম আসার পরে এবং ঐ ব্যক্তির নিকটে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেলে তার কাছ থেকে আর কিছুই কবুল করা হবে না ইসলাম ব্যতীত।

অতঃপর ঐ সমস্ত লোক যারা রাসূলের ইসলাম নিয়ে আগমনের পূর্বে ছিল, অথবা যাদেরকে আজকাল ভূপৃষ্ঠে দেখা যায় যে, তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি, অথবা ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, কিন্তু তার ভিত্তি ও মূল বিষয়কে পরিবর্তন করে পৌঁছানো হয়েছে। যেমন বিভিন্ন প্রসঙ্গে আমি উদাহরণ স্বরূপ কাদিয়ানীদের কথা বলি, যারা আজকাল ইউরোপ-আমেরিকায় ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে। কিন্তু যে ইসলামের দিকে তারা দাওয়াত দিচ্ছে, তাতে ইসলামের কিছু নেই। কেননা তারা বলে থাকে যে, শেষনবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পরেও নবীগণ আসবেন। ফলে ঐসব ইউরোপ-আমেরিকানদের কাছে কাদিয়ানী ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের দাওয়াত তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

এক্ষণে উপরের বক্তব্যগুলি দুই প্রকারের। এক প্রকারের ঐসব লোক যারা তাদের পূর্বধর্মে নিষ্ঠাবান ছিল, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে إِنَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَالَّذِيْنَ هَادُوْا আয়াতটি (মায়েদাহ ৫/৬৯)।

দ্বিতীয় প্রকারের লোক তারাই যারা এই দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে, যেমন আজকাল বহু মুসলমানের মধ্যে দেখা যায়, তাদের বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠিত হবে (অর্থাৎ তাদের থেকে কোন কিছুই কবুল করা হবে না)। অতঃপর যাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত আদৌ পৌঁছেনি, চাই তা ইসলাম আগমনের পরে হৌক বা পূর্বে হৌক, তাদের জন্য আখেরাতে আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকবে। আর সেটা এই যে, তাদের পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তাদের কাছে একজন রাসূলকে পাঠাবেন। যেমন দুনিয়াতে তাদের পরীক্ষার জন্য রাসূল পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিনের ভয়ংকরতার মধ্যে রাসূলের দাওয়াতে সাড়া দিবে ও তার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি অবাধ্যতা করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।[1]

মূল: মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী (রাহি.)
অনুবাদ: মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব​

[1]. আবু ইয়া‘লা, বায্যার, সিলসিলা সহীহাহ হা/২৪৬৮।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top