প্রশ্নোত্তর দুঃশ্চিন্তা ও বিপদাপদ দূর হওয়ার দোয়াসমূহ

Joined
Jun 29, 2025
Threads
4,834
Comments
0
Reactions
21,640
প্রশ্ন: মুহাম্মদ আলাওয়ি আল-হুসাইনি আল-মালেকি রচিত ‘আবওয়াবুল ফারাজ’ নামক কিতাব থেকে দোয়া করা কি আমার জন্য জায়েয হবে? দুঃশ্চিন্তা ও বিপদাপদ দূরীভূত হওয়ার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম থেকে কি দোয়া বর্ণিত আছে?


উত্তরঃ আলহামদু লিল্লাহ।


‘আবওয়াবুল ফারাজ’ নামক কিতাবটির সম্পূর্ণ অংশ আমরা দেখতে পারিনি। এ কিতাবের কিছু অংশ আমাদের পড়ার সুযোগ হয়েছে। সে অংশে কিছু বিদাতী দরুদ রয়েছে, যেমন- সালাতুল ফাতেহ, সালাতে নারিয়্যা (দরুদে নারিয়া), সালাতে মুনজিয়া ইত্যাদি; যেগুলোর ভাষা গর্হিত এবং যাতে নিন্দিত বাড়াবাড়ি রয়েছে। এ দরুদগুলোর কোন কোনটি সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। দেখুন: 108382 নং ও 7505 নং ও 123459 নং প্রশ্নোত্তর।


বিপদাপদ ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার দোয়ার মধ্যে রয়েছে:


১। ইমাম আহমাদ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যদি কেউ কখনো দুঃশ্চিন্তা বা বেদনায় আক্রান্ত হয়ে এভাবে বলে: اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ ، وَابْنُ عَبْدِكَ ، وَابْنُ أَمَتِكَ ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ ، أَوْ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي ، وَنُورَ صَدْرِي ، وَجِلاءَ حُزْنِي ، وَذَهَابَ هَمِّي (অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনার বান্দা ও বান্দীর সন্তান। আমার নসীব আপনার হাতে। আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর, আমার প্রতি আপনার ফয়সালা ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমি সেই সমস্ত নামের প্রত্যেকটির বদৌলতে আপনার নিকট কাতর প্রার্থনা জানাই— যে নামগুলো আপনি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন অথবা নিজ কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টি জীবের মধ্যে কাউকে শিখিয়ে দিয়েছেন অথবা স্বীয় ইলমের ভাণ্ডারে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন— কুরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি বানিয়ে দিন, আমার বক্ষের জ্যোতি বানিয়ে দিন, আমার দুঃশ্চিন্তাগুলোর অপসারণকারী বানিয়ে দিন এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিদূরণকারী বানিয়ে দিন।) তাহলে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন, বেদনা অপসারণ করে দিবেন। এর বদলে প্রশান্তি আনয়ন করে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি দোয়াটি শিখে নিব না? তিনি বললেন: অবশ্যই। যে ব্যক্তি দোয়াটি শুনেছে তার উচিত এটি শিখে নেয়া।[আলবানী ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (১৯৯) হাদিসটিকে সহিহ ঘোষণা করেছেন]


২। ইমাম আবু দাউদ ‘সুনান’ গ্রন্থে (৫০৯০) ও ইমাম আহমাদ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (২৭৮৯৮) আবু বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে- اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو ، فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ (অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দয়া প্রত্যাশা করছি। সুতরাং চোখের পাতা ফেলার মত সময়ের জন্যেও আপনি আমাকে আমার নিজের ওপর ছেড়ে দিবেন না। আমার যাবতীয় বিষয় আপনি ঠিক করে দিন। আপনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই।)[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ ঘোষণা করেছেন]


৩। ইমাম মুসলিম ‘সহিহ’ গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপদাপদকালে বলতেন: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ (অর্থ- মহান ও মহা-ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। মহান আরশের রব ‘আল্লাহ’ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আসমানসূমহ ও জমিনের রব এবং মহান আরশের রব ‘আল্লাহ’ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই।)


সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন: এটি একটি মহান হাদিস। এ হাদিসটিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিপদাপদ ও বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে এ দোয়াটি বার বার আওড়ানো উচিত। তাবারী বলেন: সলফে সালেহীনগণ এ দোয়াটি দিয়ে দোয়া করতেন। তাঁরা এটিকে বিপদাপদ মুক্তির দোয়া আখ্যায়িত করতেন। যদি কেউ বলে: এটি তো যিকির, এর মধ্যে তো কোন দোয়া (প্রার্থনা) নেই। এ প্রশ্নের প্রসিদ্ধ দুইটি জবাব রয়েছে: এক. ব্যক্তি এ যিকিরের মাধ্যমে দোয়ার সূচনা করবে; এরপর যে দোয়া করতে চায় সে দোয়া করবে। দুই. সুফিয়ান বিন উয়াইনা যে উত্তরটি দিয়েছেন সেটি হচ্ছে- আপনি কি আল্লাহ তাআলার সে বাণীটি শুনেননি: ‘আমার যিকির করা যাকে আমার কাছে চাওয়া থেকে ব্যস্ত রেখেছে আমি তাকে সওয়ালকারীদেরকে যা দিই তার চেয়ে উত্তম দিব।’ কবি বলেন: ‘যদি কোনদিন কেউ আপনার প্রশংসা করে তাহলে তার চাওয়া-পাওয়া পেশ করার জন্য আপনাকে প্রশংসা করাই যথেষ্ট’।


আল্লাহই ভাল জানেন।


সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
 
Similar threads Most view View more
Back
Top