আদব ও শিষ্টাচার দান-সদকার কিছু আদব সম্পর্কে জানতে চাই?

Joined
Feb 23, 2023
Threads
367
Comments
419
Reactions
2,163
প্রশ্ন: দান-সদকার কিছু আদব সম্পর্কে জানতে চাই। অনেকে দানের সময় অধিক কল্যাণের আশায় যাকে দান করবে তার গায়ে হাত দিয়ে বুলিয়ে তারপর দান করে। এটা কি জায়েজ?

উত্তর: নিম্নে সাধারণ নফল দান-সদকার ২০টি আদব উল্লেখ পূর্বক এ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হল:
আদব সমূহ:

১. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য দান করা। এতে মানুষের প্রশংসা কুড়ানো বা দুনিয়াবি কোন স্বার্থে জড়িত না থাকা।

২. পবিত্র অর্থ দান করা। কেননা আল্লাহ নিজে পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।

৩. নিয়মিত দান করা যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। এটি আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল।

৪. সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা এবং অল্প দানকে তুচ্ছ না ভাবা।

৫. প্রশস্ত মনে, উদার চিত্তে সওয়াবের নিয়তে দান করা।

৬. রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় অভাবীদেরকে দান করার সওয়াব দ্বিগুণ: দান ও আত্মীয়তা রক্ষার সওয়াব

৭. আত্মীয়দের বাইরে দানের ক্ষেত্রে যার বাড়ি যত বেশি কাছে সে বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার হকদার।

৮. অত:পর বেশী অভাবীকে অগ্রাধিকার দেয়া। (যদিও বিশেষ প্রয়োজনে ও জরুরি ক্ষেত্রে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি নয়।)

৯. গোপনে দান করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এমনভাবে গোপনে দান করতে হবে যে, যেন ডানহাত দান করলে বামহাত জানতে না পারে। এভাবে গোপনে দানকারীকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন। তবে কেউ তাকে দান করতে দেখলে উৎসাহিত হবে বা অন্যরাও এগিয়ে আসবে এই নিয়তে প্রকাশ্যে দান করা জায়েজ আছে।

১০. আর্থিক সহায়তা পেলে কোন অমুসলিম ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হবে বা কোন পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি পাপাচার থেকে ফিরে আসবে এমন সম্ভাবনা থাকলে তাকে দান করা জায়েজ।

১১. যদি জানা যায়, যাকে দান করা হবে তার হাতে অর্থ গেলে সে তা হারাম ও গুনাহের কাজে ব্যয় করবে তাহলে তাকে দান করা জায়েজ নাই।

১২. বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে পূরণের নিয়তে মাজার, কবর, মৃত ব্যক্তি বা কোন মন্দিরে দান করা জায়েজ নাই।

১৩. দীনী প্রতিষ্ঠানে দান করার ক্ষেত্রে ঐ সব প্রতিষ্ঠানে দান করা উচিৎ, যেখানে তাওহিদ ও সুন্নাহ ভিত্তিক দীনী ইলম শিক্ষা দেয়া হয়। যে সব প্রতিষ্ঠানে শিরক-বিদআত শেখানো হয় সেগুলোতে দান করা হারাম। কারণ তাতে শিরক-বিদআত চর্চায় সহায়তা করা হয়।

১৪. দান করার পর খোটা দেয়া হারাম। এতে দানের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়।

১৫. দান করার পর তা ফিরিয়ে নেয়া হারাম।

১৬. নিজের প্রিয় জিনিস দান করা অধিক সওয়াবের।

১৭. পিতামাতা বা অন্যান্য মৃত মুসলিমদের পক্ষ থেকে দান-সদকা করা জায়েজ। এতে তারা কবরে থেকেও সওয়াব লাভ করে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সম্পদ দান করা উত্তম যা দ্বারা মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়। যেমন: জায়গা-জমি ওয়াকফ করা, মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ, টিউবওয়েলের ব্যবস্থা, দরিদ্র দীনী শিক্ষার্থীদের জন্য বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাক, বই-পুস্তক ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। এগুলো সব সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

১৮. সারা বছর দান করা যায়। তবে রমাযানে অধিক পরিমাণে দান করা সুন্নত। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে 'প্রবহমান বাতাস' এর চেয়ে বেশি দান করতেন।

১৯. সুস্থ-সবল অবস্থায় যখন সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থাকে তখনকার দান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় একান্ত মুমূর্ষ অবস্থায় জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দানের চেয়ে।

২০. সমাজের অভাবী লোকদের খোঁজ নিয়ে তাদের বাড়িতে দানের সামগ্রী গোপনে পৌঁছিয়ে দেয়া উত্তম। কারণ এ শ্রেণীর মানুষেরা অভাবে কষ্ট পায় কিন্তু চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারে না।

যাকে দান করা হবে তার প্রতি স্নেহ ও মমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়ায় কোন আপত্তি নাই যদি তাকে স্পর্শ করা জায়েজ হয়। সুতরাং কোনও নন মাহরাম গরিব-অসহায় নারীর গায়ে স্পর্শ করা জায়েজ নয়। অনেকে টাকা-পয়সা দান করার সময় তাতে চুমু খায় ও কপালে লাগায়। এটা কুসংস্কার পূর্ণ কাজ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কেবল তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তার দেয়া নিয়ামত থেকে মানব কল্যাণে এবং দীনের খেদমতে অর্থ-সম্পদ খরচ করার তওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
 
Similar threads Most view View more
Back
Top