উসূলুল ফিকহ দলীল সেভাবেই বুঝতে হবে যেভাবে সালাফে সালিহীন বুঝেছেন৷

Habib Bin TofajjalVerified member

If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
690
Comments
1,228
Solutions
17
Reactions
7,152
সালাফে সালিহীন এর আদর্শের ব্যাপারে সত্যায়নমূলক ও তাদের পথ অনুসরণ করার পক্ষে অনেক দলীল এসেছে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর মহান কিতাবে বলেছেন:
وَالسَّبِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَنِ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّتٍ تَجْرِى تَحْتَهَا الْأَنْهَرُ خَلِدِينَ فِيهَا أَبَدَأْ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“পূর্ববর্তী মুহাজির ও আনছারদের প্রথম সারির ব্যক্তিবর্গ এবং ঐ সকল ব্যক্তি, যারা হুবহু তাদেরকে অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও আল্লাহর ব্যাপারে সন্তুষ্ট, তিনি তাদের জন্য এমন বাগানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকে, যেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে, এটাই হলো মহা সাফল্য” [আত-তাওবাহ: ১০০]।

ইবনু মাস'ঊদ থেকে বর্ণিত, নবী বলেছেন: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُوهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ.
“সর্বোত্তম যুগ হলো আমার যুগ, এরপরে সর্বোত্তম যুগ হলো পরবর্তীদের যুগ, এরপরে সর্বোত্তম যুগ হলো পরবর্তীদের যুগ”। সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬৪২৯, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২৫৩৫।

সুতরাং তারাই হলো অনুকরণীয়, তারাই হলো অনুসরণযোগ্য। তাই সকল মুসলিমের উপরে ওয়াজিব হলো তারা স্বীয় মত ও আদর্শ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ থেকে দলীল গ্রহণের পাশাপাশি তাদের পদ্ধতিকে অনুসরণ করবে। কারণ, তারা হলেন শারঈ নুছুছু এর প্রামাণিকতা ও নির্দেশনার ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞানী ও সর্বোচ্চ তিক্ষ্ণবুদ্ধির অধিকারী। বিধায়, কোনো মুসলিম যখন তাদের বিচার-বিবেচনা পদ্ধতির বাহিরে যেয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করবে, তখন সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে। কারণ, তারা পূর্ণ বিচক্ষণতার সহিত পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে বিশ্লেষণ করেছেন।

ইবনু আবী যায়েদ আল ক্বায়রাওয়ানী আল জামে' গ্রন্থে (১১৭ পৃষ্ঠা) বলেছেন: সুন্নাহ এর সামনে নিজেকে এমনভাবে সমর্পণ করতে হবে যে, কোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত দ্বারা সুন্নাহকে সাংঘর্ষিক বানানো যাবে না এবং কোনো ক্বিয়াস দ্বারা সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। তবে সালাফে সালিহীন যেই ব্যাখ্যা করেছেন, আমরাও সেই ব্যাখ্যাকে মেনে নিব। তারা যেভাবে আমল করেছেন, আমরাও সেইভাবেই আমল করব। তারা যেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেটাকে আমরাও প্রত্যাখ্যান করব। তারা যেই বিষয় থেকে বিরত থেকেছেন, আমরাও সেই বিষয় থেকে বিরত থাকব। যেই বিষয়টি তারা সুস্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করেছেন, সেই বিষয়ে আমরা তাদের অনুকরণ করব। আর যেই বিধান তারা হাদীসের আলোকে প্রণয়ন করেছেন, সেই বিধানের ক্ষেত্রে আমরা তাদের অনুগামী হব। তারা যেই বিষয়ে মতানৈক্যে জড়িয়েছেন অথবা ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, সেই বিষয়ে আমরা জামা'আত পরিত্যাগ করব না। আর ইতোপূর্বে আমরা যতগুলো বিষয়ের আলোচনা করে আসলাম, তার সবগুলোই আহলুস সুন্নাহ এর অনুসারীবৃন্দ ও ফিক্বহ এবং হাদীস শাস্ত্রের ইমামদের কথা।

ইমাম স্থান'আনী ছুওনুল মানত্বিক গ্রন্থে (১৫৮ পৃষ্ঠা) বলেছেন: আমাদেরকে আনুগত্য করার আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং এই বিষয়ে আমাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, বিদ'আতে লিপ্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে আমাদেরকে ধমক দেওয়া হয়েছে। আহলুস সুন্নাহ এর নিদর্শন হলো সালাফে সালিহীন এর অনুকরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিদ'আতকে বর্জন করা।

ক্বাওওয়ামুস সুন্নাহ আল আছুবাহানী আল হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহ গ্রন্থে (২/৪৩৭, ৪৪০) বলেছেন: অধিক বর্ণনা করতে পারা একমাত্র ‘ইলম নয়। ‘ইলম হলো একমাত্র অনুসরণ ও হাদীসের যথাযথ ব্যবহার। সাহাবা ও তাবেঈন এর অনুসরণ করা আবশ্যক, যদিও অনুসরণকারী অল্প জ্ঞানের অধিকারী হয়। যে সাহাবা ও তাবেঈনের আদর্শের বিরোধিতা করে, সে পথভ্রষ্ট, যদিও সে অনেক জ্ঞানের অধিকারী হয়।

অবশেষে তিনি বলেছেন: এটা এই জন্যে যে, মানুষের সামনে তাদের দীনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তাই আমাদের জন্য তাদেরকে অনুসরণ করা আবশ্যক। কারণ, দীন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এসেছে, মানবীয় জ্ঞান-বুদ্ধি আর চিন্তাধারার আলোকে দীন গঠিত হয়নি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাহকে তাঁর উম্মাহর জন্য ব্যাখ্যা করে গেছেন। তাঁর সাহাবাগণের নিকট তা সুস্পষ্টরূপে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিধায়, যে দীনের কোনো একটি বিষয়ে আল্লাহর রসূল – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাহাবা – রদ্বীয়াল্লাহু আনহুম – এর বিরোধিতা করল, সে পথভ্রষ্ট হলো।

ইবনু রজব ফাদ্বলু ‘ইলমিস সালাফ ‘আলা ‘ইলমিল খালাফ গ্রন্থে (৭২ নং পৃষ্ঠা) বলেছেন: সকল ‘ইলমের মধ্যে সর্বাধিক উপকারী ‘ইলম হলো কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ এর নসমূহ সংরক্ষণ করা, নছুসমূহের অর্থ সঠিকরূপে উপলব্ধি করা। আর এই উপরোক্ত বিষয়টি অর্থাৎ কুরআন-হাদীস এর অর্থ, সাহাবা ও তাবেঈনদের থেকে বর্ণিত হালাল-হারাম সংক্রান্ত মাসআলাগুলোর সঠিক অর্থ, যুহদ, রাক্বাইকও মা'আরিফ সংক্রান্ত মাসআলাসমূহের সঠিক অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র “সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন থেকে বর্ণিত আছারসমূহ” মেনে চলা।

শায়খুল ইসলাম কিতাবুল ঈমান গ্রন্থে (১১৪ পৃষ্ঠা) বলেছেন: মুরজিয়া ফিরক্বার অনুসারীরা এই মৌলিক বিষয়ে (অর্থাৎ ঈমানের বিষয়ে) কিতাব, সুন্নাহ, সাহাবা ও তাবেঈনদের উদ্ধৃতি বর্ণনা থেকে অনেক দূরে। আর তারা নিজেদের যুক্তি ও ভাষাবিদ্যার উপর নির্ভরশীল হয়েছে। এটাই হলো বিদ'আতের অনুসারীদের রীতি।

এই জন্যে ইমাম আহমাদ বলতেন: মানুষ অধিকাংশ ভুল করে থাকে ব্যাখ্যা ও ক্বিয়াস কার্যপদ্ধতির ক্ষেত্রে। এই জন্যেই আমরা মু'তাযিলা, মুরজিয়া ও রাফেযীসহ অন্যান্য বিদ'আতীদেরকে দেখি যে, তারা কুরআন এর তাফসীর ও ভাষাগত ব্যাখ্যা করে থাকে তাদের বুদ্ধি ও মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান দ্বারা। এই জন্যেই তুমি তাদেরকে দেখবে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসসমূহ, সাহাবা, তাবেঈন ও মুসলিম ইমামগণ এর উদ্ধৃতির উপরে নির্ভর করে না। তারা সুন্নাহ, সালাফদের ইজমা' ও তাদের আছারসমূহের উপরে নির্ভর করে না। তারা একমাত্র নির্ভর করে যুক্তি ও ভাষাবিদ্যার উপরে। আমি তাদেরকে দেখেছি তারা উদ্ধৃতিপূর্ণ তাফসীরের কিতাবগুলো, হাদীস ও সালাফদের আছারসমূহের উপরে নির্ভর করতে পারে না।

তিনি মাজমূ' ফাতাওয়ায় (১০/৩৬২) আরো বলেছেন: সুতরাং শরী'আহ সম্মত জ্ঞান ও শরী'আহ সম্মত ইবাদত আল্লাহর রসূল – • সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের থেকে গ্রহণ করতে হবে। তাদের পরবর্তীতেদের থেকে যা এসেছে, সেটাকে মূলনীতির স্থানে রাখা যাবে না। যদিও পরবর্তী ব্যক্তি ওযরগ্রস্ত হয় এবং সে ইজতিহাদ অথবা তাক্বলীদ এর কারণে প্রতিদান প্রাপ্তও হয়ে থাকে।

যে মৌলিক বা শাখাগত কোনো মাসআলার ভিত্তি কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ ও পূর্ববর্তীদের থেকে বর্ণিত আছারসমূহের উপর স্থাপন করল, সে নবূওয়াত এর পথের দিশা পেল। এমনিভাবে যে ব্যক্তি ইচ্ছা (কোনো কাজের নিয়্যাত করা), ইবাদত, আমল ও শ্রুত যেগুলো মৌলিক আমল ও শাখাগত আমলের সঙ্গে সম্পৃক্ত; যেমন, অন্তরের অবস্থাসমূহ ও শারীরিক আমলসমূহ ইত্যাদির ভিত্তি ঈমান, সুন্নাহ ও মুহাম্মাদ • সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - – ও তাঁর সাহাবাগণ এর হেদায়েতের উপরে স্থাপন করল, সেও নবূওয়াতের পথের দিশা পেল। এটাই হলো হেদায়েতপ্রাপ্ত ইমামগণের পথ।

তুমি দেখবে, ইমাম আহমাদ যখন সুন্নাহ এর উচ্ছ্বলসমূহ বর্ণনা করেন, তখন বলেন: সুন্নাহ হলো আল্লাহর রসূল — সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাহাবাগণের মতাদর্শকে ও নবী - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর এবং সাহাবাগণ ও তাবেঈন থেকে বর্ণিত তাফসীরের গ্রন্থসমূহ আঁকড়ে ধরা। আর এর উপরেই তাফসীর এর মৌলিক ও শাখাগত শাত্রগুলোতে নির্ভর করতে হবে, এমনিভাবে যুহদ, রাক্বাইক ও আহওয়াল এর অধ্যায়গুলোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। কারণ, তিনি (ইমাম আহমাদ) কিতাবুয যুহদ এর মধ্যে নবীগণ ছালাওয়াতুল্লাহি আলাইহিম এর মধ্যে আদম থেকে মুহাম্মাদ পর্যন্ত নবীদের সম্পর্কে বর্ণিত আছার এর উপর নির্ভর করেছেন, এরপরে সাহাবা ও তাবেঈন এর আদর্শের উপর নির্ভর করেছেন, এরপরবর্তী আর কোনো প্রজন্মের যুহদ এর কথা তিনি আলোচনা করেননি।

সতর্কবাণী: সালাফে সালিহীন থেকে সকল দলীলের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বিধায় এই কায়দাটি ঐ সকল দলীলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যেগুলোর ব্যাখ্যা সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সকল দলীলের ক্ষেত্রেই সালাফদের ব্যাখ্যা তলব করা যাবে না, যেই দলীলের ব্যাখ্যা সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে, সেই দলীলের ব্যাখ্যা তাদের থেকেই গ্রহণ করতে হবে। আর যেই দলীলের ব্যাখ্যা সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়নি, সেই দলীলের ব্যাখ্যা ছাড়াই বাহ্যিক অর্থ ও মৌলিক অর্থের উপর নির্ভর করতে হবে।
 
Back
Top