উসূলুল হাদিস তাদলীস, মুদাল্লাস হাদিস ও মুদাল্লিস রাবী

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
343
Comments
476
Reactions
5,791

মুদাল্লাস হাদিস

‏‏مدلس‏‏ শব্দটি تدليس থেকে গৃহীত, যার ধাতু دُلسة অর্থ অন্ধকার। ‘তাদলিস’ শব্দটি মূলত ব্যবহার হয় কেনাকাটায়। ক্রেতাদের বিভ্রাটে ফেলার জন্য পশু মোটা-তাজা করাকে তাদলিস বলা হয়। অনুরূপ গাভীর স্তনে দুধ জমা করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করাও তাদলিস, কারণ তার দ্বারা ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া হয়।

তাদলিস দু’প্রকার:

১. তাদলিসুল ইসনাদ
২. তাদলিসুস শুয়ুখ।

কেউ তাদলিসকে তিনভাগে ভাগ করেছেন, তৃতীয় প্রকার- ৩. তাদলিসুত তাসওয়িয়াহ।

নিম্নে সংজ্ঞাসহ প্রত্যেক প্রকার প্রদত্ত হল:

১. تدليس الإسناد ‘তাদলিসুল ইসনাদ’ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: নিজ শায়খকে বাদ দিয়ে পরবর্তী শায়খ থেকে عن বা أن শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা, যেন সনদ মুত্তাসিল বুঝা যায়, যেমন বলা: حدثنا فلان عن فلان كذا অথবা বলা: حدثنا فلان أنَّ فلانا قال كذا এখানে أنَّ তাশদীদ যুক্ত, লেখক কবিতার অন্ত্যমিলের জন্য أن সাকিন যুক্ত উল্লেখ করেছেন।

‘তাদলিসুল ইসনাদ’ প্রসঙ্গে খতিব, ইব্‌নুস সালাহ, নববি, ইব্‌ন কাসির, ইব্‌নুল মুলাক্কিন ও ইরাকি প্রমুখ বলেন: ‘শায়খ থেকে অশ্রুত হাদিস রাবির এমনভাবে বর্ণনা করা যে, শ্রোতাগণ মনে করেন তিনি এ হাদিসও শায়খ থেকে শ্রবণ করেছেন’। অথবা ‘রাবি সমকালীন কোনো মুহাদ্দিস থেকে এমনভাবে হাদিস বর্ণনা করবেন, যার সাথে তার সাক্ষাত হয়নি, যেন শ্রোতাগণ মনে করেন তিনি তার থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন’।

সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “আলেমগণ মুদাল্লিসদের নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন, তাই এ নিয়ে অধিক ঘাটাঘাটি করা ফলদায়ক নয়, তবে এখনো কতক মুদাল্লিসকে জানা সম্ভব, যাদেরকে তারা মুদাল্লিসদের কাতারে শামিল করেননি, কারণ তাদের তাদলিস খুব কম। আল্লাহ ভালো জানেন”।

২. تدليس الشيوخ ‘তাদলিসুশ শুয়ুখ’ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “রাবি নিজ শায়খকে উহ্য করবে না ঠিক, তবে তার অপরিচিত গুণ বর্ণনা করবে, যা তাকে চিহ্নিত করবে না”। অর্থাৎ মুদাল্লিস শায়খকে উল্লেখ না করে তার উপাধি, গুণাগুণ, পদবী বা উপনাম উল্লেখ করবে, যার ফলে মানুষের নিকট সে পরিচিত হবে না, অজ্ঞাতই থাকবে।

এ প্রকার সনদ পূর্বোক্ত তাদলিসুল ইসনাদ অপেক্ষা কম দোষণীয়। যদি রাবি শায়খের দুর্বলতার কারণে এরূপ করে তাহলে খিয়ানত। মুদাল্লিসের শায়খের কারণে কখনো তাদলিসুল ইসনাদ নিকৃষ্টতর, কখনো হয় তাদলিসুস শুয়ুখ, তবে স্বাভাবিক হালতে তাদলিসুল ইসনাদ নিন্দনীয়। কারণ তাদলিসুস শুয়ূখে অনুল্লেখ রাবি জানা অধিকতর সহজ, যা তাদলিসুল ইসনাদে সম্ভব নয়।

৩. تدليس التسوية তাদলিসুত তাসওয়িয়াহ লেখক উল্লেখ করেননি। এ প্রকারের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে হাফেয ইরাকি রহ. বলেন: ‘মুদাল্লিস’ একটি হাদিস বর্ণনার ইচ্ছা করে, যা সে তার সিকাহ শায়খ থেকে শ্রবণ করেছে, কিন্তু তার সিকাহ শায়খ শ্রবণ করেছে দুর্বল শায়খ থেকে, মুদাল্লিস এখানে শায়খের শায়খ তথা দুর্বল শায়খকে ফেলে অস্পষ্ট শব্দ দ্বারা বর্ণনা করে, যেন বুঝা যায় সনদের সকল রাবি সিকাহ। কখনো বয়স কমের কারণে মুদাল্লিস শায়খের শায়খকে ফেলে দেয়, যদিও সে সিকাহ হয়।

‘আলায়ি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এ প্রকার তাদলিস সাধারণত রাবির দুর্বলতার কারণে করা হয়। এ তাদলিস নিকৃষ্ট ও সবচেয়ে খারাপ, তবে অন্যান্য প্রকারের তুলনায় তার সংখ্যা কম”। সুলাইমানি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “এখানে কম দ্বারা উদ্দেশ্য তাদলিসুল ইসনাদ ও তাদলিসুস শুয়ূখ অপেক্ষা কম, কিন্তু যারা এতে লিপ্ত হয়েছে তাদের সংখ্যা কম নয়। আমার নিকট তাদের সংখ্যা (১৯) পর্যন্ত রয়েছে।

তাদলিস করার কারণ:

তাদলিস করে রাবি কখনো নিজেকে গোপন করতে চান, যেন কেউ না বলে তিনি অমুক শায়খ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। কখনো রাজনৈতিক কারণে তাদলিস করা হয়। কখনো শাসক বা কারো থেকে রাবি নিজের উপর ক্ষতির আশঙ্কা করে তাদলিস করেন। কখনো শায়খের স্মরণ শক্তি কম, বা দীনদারী কম বা তার চেয়ে মর্যাদায় ছোট ইত্যাদি করণে রাবি তাদলিস করেন।

শায়খকে উল্লেখ না করার কারণ অনেক, তবে আদিল না হওয়ার কারণে শায়খকে বাদ দেওয়া সবচেয়ে খারাপ। এ জাতীয় তাদলিস হারাম, কারণ হতে পারে হাদিসটি বাদ পড়া রাবির মিথ্যা রচনা। অতএব মুদাল্লিস সিকাহ হলেও তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না সে শায়খ থেকে শোনার কথা স্পষ্ট বলে।

তাদলিসের বিধান:
তাদলিস করা হারাম, কারণ তাদলিস একপ্রকার ধোঁকা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا».​

“যে ধোঁকা দিল, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের দোষ গোপনকারীকে বলেছেন, তাহলে হাদিসের সনদের দোষ গোপনকারীর পরিণতি আরো জঘন্য হবে সন্দেহ নেই। তবুও অনেক তাবে‘ঈ ও পরবর্তী মনীষীগণ কিছু কারণে তাদলিস করতেন, যার পশ্চাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিথ্যা সম্পৃক্ত করার দুঃসাহস কিংবা মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ছিল না, বরং ভালো উদ্দেশ্যে ছিল। এ কারণেও আমরা তাদেরকে দায় মুক্ত বলতে পারি না। আমরা বলব: তারা মুজতাহিদ ছিলেন, তারা তাদের ইজতিহাদের সওয়াব পাবেন, কিন্তু তারা যদি প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে দিতেন, তাহলে অনেক ভালো ছিল ও সুন্দর হত সন্দেহ নেই।

মুদাল্লিস রাবীর হাদীস কি গ্রহণযোগ্যতা পায়

‘মুদাল্লিস’ রাবীর এককভাবে বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়- যে পর্যন্ত না তিনি কেবলমাত্র সিকাহ রাবী হ’তে তাদলীস করেন বলে সাব্যস্ত হয় অথবা তিনি সেটি নিজে সরাসরি শ্রবণ করেছেন মর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন
 
Similar threads Most view View more
Back
Top