Salafi
Salafi User
- Joined
- Jun 16, 2023
- Threads
- 70
- Comments
- 97
- Reactions
- 1,079
- Thread Author
- #1
তাকফির এর ক্ষেত্রে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর মানহাজ, পর্ব-২.
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
"ইমাম আহমাদ (রহ.) খলীফা ও অন্যদের জন্য দো‘আ করেছেন যারা তাঁকে প্রহার করেছিল এবং কারাবন্দি করেছিল। তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং তাদের জুলুম ও কুফরী মতবাদ প্রচারের অপকর্ম থেকে মুক্ত করেছেন। যদি তারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে মুরতাদ হয়ে যেতো, তবে তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়া জায়েয হতো না। কেননা কাফিরদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামদের এসব উক্তি ও কর্ম সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, জাহমী সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের তারা কাফির বলেননি—যারা “কুরআন মাখলুক” ও “আখিরাতে আল্লাহকে দেখা যাবে না” মতবাদে বিশ্বাস করত। অবশ্য আহমাদ (রহ.) সম্পর্কে এমন বর্ণনাও পাওয়া যায় যেখানে তিনি কুরআনকে মাখলুক বলার জন্যই কিছু সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কাফির বলেছেন। তবে এই বিষয়ে তাঁর থেকে দু’টি ভিন্ন রেওয়ায়েতের কথা উল্লেখ করা হলে তা বিবেচনাযোগ্য বা বিষয়টিকে সূক্ষ্মভাবে যাচাই করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, যাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে কাফির বলা হয়, তাদের ব্যাপারে কুফরীর শর্ত পূর্ণ হওয়া এবং প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হওয়ার দলীল প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর যাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে কাফির বলা হয়নি তাদের ক্ষেত্রে কুফরীর শর্ত পূরণ ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ হওয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত, তাই তাদের বক্তব্য সাধারণভাবে কুফরী হওয়া সত্ত্বেও সুনির্দিষ্টভাবে কাফির ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকা হয়েছে।
এই মূলনীতির দলীল কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ। কুরআনের প্রমাণ হলো মহান আল্লাহর বাণী:
“তোমাদের ভুলবশত যা ঘটে যায়, তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ নেই” (সূরা আল-আহযাব: ৫),
এবং “হে আমাদের রব! আমাদের ভুল বা ভ্রান্তির কারণে শাস্তি দিয়ো না” (সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৬)।
সহীহ মুসলিমে আবূ হুরাইরা (রা:) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবী ﷺ বলেন: “আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘নবী ও মুমিনদের এই দো‘আ কবুল করলাম'। যখন নবী ﷺ এবং মুমিনগণ এই আয়াত দিয়ে দুআ করেছিলেন।" অন্যদিকে সহীহ বুখারিতে ইবনু আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, যে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ প্রদান করা হয়েছে, যা ‘আরশের নিচে রক্ষিত ভাণ্ডার থেকে নেয়া হয়েছে’।” আরও বর্ণিত: “যে ব্যক্তি এই সুরাসমূহের একটি হরফও তিলাওয়াত করবে, তাকে তার প্রতিদান দেওয়া হবে।”
যদি কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হয়ে থাকে যে, আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের ভুল ও বিস্মৃতিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাহলে এটি একটি সর্বব্যাপী আম এবং মাহফুয (অটল) বিধান যার কোনো সীমারেখা নেই। শরয়ী এমন কোনো দলীল-প্রমাণ নেই যাতে প্রতীয়মান হয় যে, এই উম্মতের কোনো ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে আল্লাহ তাকে সেই ভুলের কারণে শাস্তি দেবেন, যদিও অন্য উম্মতের (আহলে কিতাবদের) ভ্রান্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হতে পারে।
আবূ হুরাইরা (রা:) বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন— “এক ব্যক্তি কোনো নেক কাজ করেনি। মৃত্যুর সময় সে তার পরিবারকে বলল, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার দেহ পুড়িয়ে ফেলো, তার অর্ধেক ভস্ম মরুভূমিতে আর অর্ধেক সমুদ্রে ছড়িয়ে দিও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন, তবে তিনি তাকে এমন শাস্তি দেবেন যা বিশ্বজগতের কাউকেই দেননি।’ যখন সে মারা গেল, তারা তা-ই করল। তখন আল্লাহ মরুভূমিকে আদেশ দিলেন সমস্ত ভস্ম একত্র করতে, সমুদ্রকেও অনুরূপ করলেন। ব্যক্তিটি আল্লাহর সামনে জীবিত হয়ে দাঁড়াল। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এ কাজ কেন করলে?’ সে বলল, ‘হে প্রভু! আপনার ভয়েই এটা করেছি, আপনি তো সব জানেন।’ আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।"
এই ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ ও অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছিল যে আদন সন্তান পুড়ে ভস্ম হয়ে গেলেও বা তার দেহাবশেষ বিক্ষিপ্ত হলেও তিনি তা পুনরুত্থিত করতে পারবেন কি না, কিংবা মৃতকে পুনরায় জীবিত করে হাশরের মাঠে সমবেত করতে পারবেন কি না। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি রয়েছে যা সে অস্বীকার করেছে:
প্রথমটি হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত এ বিশ্বাস যে তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
দ্বিতীয়টি হলো: আখিরাতের সাথে সম্পর্কিত—এ বিশ্বাস যে আল্লাহ এই মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং তার আমলের প্রতিদান দেবেন।
তা সত্ত্বেও, যেহেতু এই ব্যক্তি সামগ্রিকভাবে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করত (অর্থাৎ এ বিশ্বাস যে মৃত্যুর পর আল্লাহ প্রতিদান ও শাস্তি দেবেন) এবং সে একটি সৎকর্ম করেছিল যা হলো সে নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয় করেছিল। সেই সৎকর্ম ও আল্লাহ-আখিরাতের প্রতি তার ঈমানের কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
আরও প্রমাণস্বরূপ, সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে:
“নিশ্চয় আল্লাহ জাহান্নাম থেকে এমন ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন যার অন্তরে একটি দীনারের সমপরিমাণ ঈমান থাকবে।”
এক বর্ণনায় এসেছে: “যার অন্তরে একটি দীনারের পরিমাণ নেকী থাকবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।” অন্য রেওয়ায়েতে আছে: “একটি সরিষার দানার পরিমাণ ঈমান” বা “একটি পরমাণুর পরিমাণ ঈমান বা নেকী”। এসব হাদিস এবং নবী ﷺ থেকে বর্ণিত এর অনুরুপ এ সকল ব্যাপক হাদীস প্রমাণ করে যে, যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান বা নেককারিতা অবশিষ্ট থাকবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে না। ঈমানের অংশবিভাজন সম্ভব আর একাংশ থাকলেও তা গণ্য।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকের মধ্যেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি কিছু না কিছু ঈমান বিদ্যমান। সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফদের মধ্যেও অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে ভুল করেছেন, কিন্তু তারা একে অপরকে কাফির বলেননি। যেমন—কিছু সাহাবা মৃতের জন্য জীবিতের দো‘আ শোনার বিষয়টি মানেননি, কেউ রাসূল ﷺ এর মি‘রাজকে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে বলে স্বীকার করেননি, কেউ নবী ﷺ যে আল্লাহকে দর্শন করেছেন সে বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার খিলাফত ও চার খুলাফা এর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের ক্রম নিয়ে কারো কারো বিতর্কিত বক্তব্য রয়েছে। এমনকি কেউ কেউ যুদ্ধ করা বা অভিশাপ দানের ব্যাপারে কতক উগ্র মত পোষণ করেছেন।
কাযী শুরাইহ (রহ.) “بَلْ عَجِبْت” (সূরা সোয়াদ: ৫) এই কিরআতকে প্রত্যাখ্যান করে বলতেন: “আল্লাহ বিস্মিত হন না!” ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহ.) এটা শুনে মন্তব্য করলেন: “শুরাইহ তো একজন কবি, তিনি নিজের জ্ঞানে আত্মবিমোহিত!” অন্যদিকে আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ (রা.)—যিনি শুরাইহ এর চেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন, তিনি এই কিরআতকে স্বীকার করতেন। এখানে শুরাইহ (রহ.) একটি প্রমাণিত কিরাআত ও কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সিফাত (আল্লাহর গুণ) অস্বীকার করলেও, উম্মত তাঁকে ইমাম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কিছু সালাফ কুরআনের শব্দ পরিবর্তন করেছেন। যেমন—“أَفَلَمْ يَيْأَسِ” (সূরা আর-রা‘দ: ৩১) এর স্থলে “أَوَلَمْ يَتَبَيَّنِ” বলা, অথবা “وَقَضَىٰ رَبُّكَ” (সূরা বনি ইসরাঈল: ২৩) এর পরিবর্তে “وَوصَّىٰ رَبُّكَ” দাবি করা। কেউ মু‘আওইযাতাইন (সূরা ফালাক ও নাস) বাদ দিয়েছেন, কেউ কুনুতের সূরা রচনা করেছেন। এগুলো ইজমা ও তাওয়াতুর (নিরবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত হাদিস) দ্বারা প্রমাণিত ভ্রান্তি। তবে তাদের কাছে তাওয়াতুর সাব্যস্ত না হওয়ায় তাদেরকে কাফির বলা যায়নি। অন্যদিকে, যার বিরুদ্ধে তাওয়াতুরের মাধ্যমে প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত, তাকে কাফির বলা যাবে।
কুরআন ও সুন্নাহ সুস্পষ্ট করে যে, আল্লাহ রিসালাত পৌঁছানোর আগে কাউকে শাস্তি দেন না। যার কাছে সম্পূর্ণ বার্তা পৌঁছায়নি, তাকে শাস্তি দেওয়া হয় না। আর যার কাছে মূলনীতি পৌঁছালেও বিস্তারিত জানা নেই, তাকে কেবল সেসব বিষয়ের জন্যই শাস্তি দেওয়া হবে যার প্রতি রিসালাতের দলীল প্রতিষ্ঠিত ছিল। যেমন আল্লাহর বাণী:
“যাতে রাসূল প্রেরণের পর মানুষের আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি না থাকে” (সূরা আন-নিসা: ১৬৫),
“হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য থেকেই কি তোমাদের নিকট রাসূল আসেনি?” (সূরা আল-আন‘আম: ১৩০),
“আমি কি তোমাদেরকে এতদিন জীবন দেইনি, যাতে উপদেশ গ্রহণ করে কেউ?” (সূরা ফাতির: ৩৭),
“জাহান্নামের রক্ষীরা বলবে: ‘তোমাদের নিকট কি তোমাদের রবের আয়াত শোনানোর জন্য রাসূল আসেননি?’” (সূরা আল-মুলক: ৮-৯),
“আমি রাসূল প্রেরণের আগে শাস্তি দেই না” (সূরা বনি ইসরাঈল: ১৫),
“তোমার রব জনপদ ধ্বংসকারী নন, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেন” (সূরা আল-কাসাস: ৫৯)।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “যখনই জাহান্নামে কোনো দল নিক্ষেপ করা হবে, তার রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করবে: ‘তোমাদের নিকট কি সতর্ককারী আসেননি?’ তারা বলবে: ‘হ্যাঁ, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিলেন, কিন্তু আমরা তাঁকে মিথ্যা বলেছি এবং বলেছি: আল্লাহ কোনো কিছুই অবতীর্ণ করেননি।’” (সূরা আল-মুলক: ৮-৯)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: “যদি আমি তাদের পূর্বেই কোনো শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করতাম, তবে তারা বলত: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে আমরা আপনার আয়াত অনুসরণ করতাম—অপমানিত হওয়ার আগেই!’” (সূরা ত্বোয়া-হা: ১৩৪)। আরও ইরশাদ হয়েছে: “যদি তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের বিপদ আঘাত হানে, তবে তারা বলবে: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের কাছে রাসূল পাঠালে না কেন? আমরা আপনার আয়াত মেনে মুমিন হতাম!’” (সূরা আল-কাসাস: ৪৭)। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এজাতীয় বক্তব্য বিদ্যমান।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, কিন্তু রাসূলের আনীত কিছু বিস্তারিত বিধান সম্পর্কে জানে না—হয় তা শোনেনি, অথবা এমন সূত্রে শুনেছে যা গ্রহণযোগ্য নয়, অথবা ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভিন্ন অর্থে বিশ্বাস করেছে—তার মধ্যে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানের যে অংশ রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আর যে অংশে সে বিশ্বাস স্থাপন করেনি, তার বিরুদ্ধে রিসালাতের দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা অস্বীকার করলে কুফরী হয়।
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে কিছু ভ্রান্তি এমন রয়েছে যার জন্য ভুলকারীকে কাফির, ফাসিক বা গুনাহগারও বলা যায় না। যেমন—ইবাদত-মু‘আমালাতের ফুরূ‘ (বিস্তারিত) বিষয়ে ভুল করা। যদিও কিছু মুতাকাল্লিম (ধর্মতাত্ত্বিক) ও ফকীহ মনে করেন যে এতে ভুলকারী গুনাহগার, আবার কেউ কেউ বলেন যে ইজতিহাদকারী সঠিক। এ দুটি মতই বিচ্ছিন্ন। তবে কারও মতে ইজতিহাদকারীদেরকে কাফির বলা যায় না। অথচ কিছু ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নুসূস (কুরআন-হাদীস) ও প্রাচীন ইজমার ভিত্তিতে ভ্রান্তি প্রমাণিত, যেমন—কিছু সালাফ ও খলাফ সুদের নির্দিষ্ট রূপকে হালাল মনে করতেন, কেউ মদ্যের বিশেষ প্রকারকে বৈধ বলতেন, আবার কেউ ফিতনার সময় যুদ্ধকে জায়েয গণ্য করতেন।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন যে, জান্নাতুল বাকী, সিফফীন প্রভৃতি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উভয় পক্ষের প্রসিদ্ধ সাহাবা ও অন্যান্য সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কাউকেই ফাসিক বলা যায় ন, তাদেরকে কাফির বলা তো দূরের কথা। এমনকি পরবর্তী যুগে (আবু বকর ও উছমানের যুগে) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিধান দেয়া ফকীহগণও তাদেরকে ‘ফাসিক’ আখ্যায়িত করেননি, কারণ তারা ভুল ব্যাখ্যা (তাবিল) এর ভিত্তিতে কাজ করেছিল। যেমন ইমামগণ বলেন: “যে ব্যক্তি বিতর্কিত মদের (যেমন নবীয) শরাব পান করে তাবিলের ভিত্তিতে, তাকে না চাবুক মারতে হবে, না ফাসিক বলা যাবে।”
মহান আল্লাহর বাণী:
“স্মরণ করুন দাঊদ ও সুলায়মানের ঘটনা, যখন তারা একটি ক্ষেতের ফসল নিয়ে বিচার করছিল, যাতে রাতের বেলা ভেড়া ঢুকে সেটি নষ্ট করেছিল। আমি তাদের ফয়সালা প্রত্যক্ষ করছিলাম। অতঃপর আমি সুলায়মানকে তা বুঝিয়ে দিলাম। আমি উভয়কে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করেছিলাম” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৭৮-৭৯)।
আরও বলেন: “তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছ বা যেগুলোকে মূলসহ দাঁড় করিয়ে রেখেছ, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই” (সূরা আল-হাশর: ৫)।
সহীহ হাদীসে আমর ইবনুল আস্ব (রা.) ও আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে নবী ﷺ বলেন:
“যখন কোনো বিচারক ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে দুটি সওয়াব দেওয়া হয়। আর যদি ভুল করে, তবুও একটি সওয়াব পায়।”
অন্য সহীহ হাদীসে বুরাইদা ইবনুল হুসাইব (রা.) থেকে বর্ণিত:
“যখন তুমি কোনো দুর্গ অবরোধ করবে এবং শত্রুরা আল্লাহর হুকুম মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দেবে, তখন তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমে সমর্পণ করবে না; বরং নিজের ও সঙ্গীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করবে। কারণ তুমি জান না আল্লাহ তাদের ব্যাপারে কী ফয়সালা করবেন।”
এই মূলনীতির পক্ষে অসংখ্য দলীল রয়েছে, যা অন্যত্র আলোচনার বিষয়। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত যে, নবী ﷺ এর দাওয়াত যার নিকট পৌঁছেছে অথচ সে ঈমান আনেনি, সে কাফির, যেহেতু রিসালাতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও নবুয়্যতের প্রমাণসমূহ উপস্থিত থাকায় তার পক্ষে ইজতিহাদের অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলের কারণে ক্ষমা প্রার্থনার বিধান একটি শরঈ হুকুম; যেমন গুনাহর বিষয়টি কাবীরাহ ও সাগীরাহ তে বিভক্ত আর ওয়াজিব এর বিষয়টি রুকন ও রুকন-বহির্ভূত ওয়াজিবে বিভক্ত, তেমনি ভুলও ক্ষমাযোগ্য ও অক্ষমাযোগ্য প্রকারে বিভক্ত। নুসূস (কুরআন-হাদীসের টেক্সট) শুধুমাত্র এই উম্মতের জন্য ভুলের কারণে শাস্তি রহিত করার বিধান দিয়েছে।
এখন যদি কেউ এসব বিষয়ের কোনো একটিতে ভুল করে ফেলে, তাহলে তাকে এ দুই শ্রেণীর যেকোনো একটির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে:
১. মুশরিক ও আহলে কিতাব কাফিরদের সাথে - যদিও ঈমানের মূলনীতিতে তাদের সাথে তার পার্থক্য ব্যাপক।
২. হালাল-হারাম সংক্রান্ত ভ্রান্ত মতবাদ লালনকারীদের সাথে—যদিও এসব বিষয়ও ঈমানের মূলনীতির অন্তর্গত।
কেননা প্রতিষ্ঠিত ও তাওয়াতুর (নিরবচ্ছিন্ন বর্ণনা) দ্বারা প্রমাণিত ওয়াজিব বিধানে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং প্রতিষ্ঠিত হারাম ও তাওয়াতুর দ্বারা প্রমাণিত হারামকে বর্জন করা ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। এগুলো অস্বীকারকারী সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। তবে এ বিষয়ে ইজতিহাদকারী ভুল করলেও কাফির নয়।
যদি তাকে উক্ত দুই শ্রেণীর যেকোনো একটিতে ফেলতেই হয়, তবে এটা সুবিদিত যে, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও ভুলকারী ব্যক্তি মুশরিক বা আহলে কিতাবদের চেয়ে মুমিনদের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই তাকে মুমিনদের শ্রেণীতেই গণ্য করতে হবে। এ নীতির ভিত্তিতেই উম্মাহ অতীত ও বর্তমানে এসব ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের উপর সাধারণ মুসলিমের মতো শরঈ আহকাম (বিধান) প্রযোজ্য করেছে।
তবে এ সত্যও স্বীকৃত যে, অনেক বিদ‘আতপন্থীর মধ্যে বড় ধরনের নিফাক (অন্তরের মুনাফেকী) রয়েছে। তারা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। রাফেযী, জাহমীয়া প্রভৃতি গোষ্ঠীতে প্রচুর যিনদীক (নাস্তিক) ও মুনাফিক বিদ্যমান। বরং এসব বিদ‘আতের মূল উৎসই হলো মুনাফিক যিনদীকরা—যারা সাবেয়ীন ও মুশরিকদের কাছ থেকে কুফরীর বীজ সংগ্রহ করেছে। এরা অন্তরে কাফির, আর যাদের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়, তারা প্রকাশ্যেও কাফির।
এসব ভ্রান্তির মূল উৎস হলো রাসূলের আনীত কিতাব ও হিকমাহ (জ্ঞান) থেকে বিমুখতা এবং তা ব্যতীত অন্যত্র হিদায়াত অনুসন্ধান। সুতরাং, যার মৌলিক বিশ্বাস এমন, সে রিসালাতের বার্তা পৌঁছার পর নিঃসন্দেহে কাফির। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি মনে করে রিসালাত শুধু সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষজ্ঞদের জন্য নয়—যেমন কিছু দার্শনিক, চরমপন্থী কালামবিদ ও সুফি বলে থাকেন; অথবা বিশ্বাস করে যে নবী নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত, অন্যাদের জন্য নন—যেমন বহু ইহুদী ও নাসারা দাবি করে।
এ আলোচনা দুটি মহান মূলনীতির ভিত্তি স্থাপন করে:
প্রথমত: জ্ঞান, ঈমান ও হিদায়াত কেবল রাসূলের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয়েই নিহিত। এর বিপরীত সবকিছুই পরিপূর্ণ কুফরী। যেমন—আল্লাহর সিফাত অস্বীকার করা, আখিরাতে তাঁকে দেখা যাবে না বলা, আরশের উপর তাঁর অবস্থান না মানা, কুরআনকে তাঁর কালাম না বলা, মূসা (আ.)-এর সাথে তাঁর কথোপকথন প্রত্যাখ্যান করা, কিংবা ইবরাহীম (আ.)-কে খলীল হিসেবে গ্রহণ না মানা—সবই কুফরী। এটাই আহলে সুন্নাত ও হাদীসের ইমামদের মূল বক্তব্য।
দ্বিতীয়ত: সাধারণভাবে কুফরীর ফতোয়া (যেমন সাধারণ শাস্তির ঘোষণা) সর্বব্যাপীভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফির বা জাহান্নামী বলা তার ব্যক্তিগত অবস্থার প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। কেননা শরঈ সিদ্ধান্ত শর্ত পূরণ ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণের সাথে যুক্ত।
এ প্রসঙ্গে জ্ঞাতব্য যে, শরীয়ত কখনো কাউকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতে নির্দেশ দেয়—হত্যা, চাবুক বা অন্য কোনোভাবে—অথচ আখিরাতে তার শাস্তি নাও হতে পারে। যেমন: ভুল ব্যাখ্যাকারী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, যারা ন্যায়পরায়ণ থাকে; অথবা এমন ব্যক্তির উপর হদ প্রয়োগ করা যে তাওবার পরও শাস্তি পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাআইয ইবন মালিক ও গামিদীয়া নারীর উপর হদ প্রয়োগ করেছিলেন, অথচ বলেছিলেন: “নিশ্চয় সে এমন তাওবা করেছে, যা করলে কোনো করণদাতাও ক্ষমা পেত!”
তেমনিভাবে যে ব্যক্তি তাবিলের ভিত্তিতে বিতর্কিত মদ পান করে এবং নিজেকে ন্যায়পরায়ণ মনে করে থাকে, তার উপর হদ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু যার কোনো তাবিল নেই, যেমন কিছু সাহাবা শরাব পান করেছিলেন এবং মনে করেছিলেন তা বিশেষ শ্রেণীর জন্য হালাল—তারা এ আয়াতকে ভিত্তি করেছিলেন: “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের পূর্বের ভক্ষণে কোনো পাপ নেই যদি তারা তাকওয়া অবলম্বন করে...” (সূরা আল-মায়িদাহ: ৯৩)। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.), আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) প্রমুখ সাহাবা ঐকমত্যে পৌঁছেন: যদি তারা হারাম স্বীকার করে, তবে চাবুক মারবেন; আর যদি হালাল দাবি করে, তবে হত্যা করবেন।
আমরা জানি, কিছু কাফির দুনিয়ায় শাস্তি পায় না, যদিও আখিরাতে তারা কাফির। যেমন—জিম্মি সম্প্রদায় যারা জিযিয়া দেয়, অথবা মুনাফিক যারা প্রকাশ্যে ইসলামের মোড়ক ধরে রাখে। কুরআনের বহু আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে:
“নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে...” (সূরা আন-নিসা: ১৪৫),
“সেদিন মুনাফিকরা মুমিনদের বলবে:
‘আমাদের দিকে তাকাও, তোমাদের আলো থেকে কিছু গ্রহণ করি’...” (সূরা আল-হাদীদ: ১৩-১৫)।
এটা এজন্য যে, প্রকৃত প্রতিদান আখিরাতের জন্য নির্ধারিত। দুনিয়ার শাস্তি শুধুমাত্র অত্যাচার রোধের জন্য, যেমন আল্লাহ বলেন:
“তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যতক্ষণ না ফিতনা দূর হয়...” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৩),
“কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর যুলম করে এবং যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়।” (সূরা আশ-শূরা: ৪২)।
রাসূলদের প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা, যেমন ইরশাদ হয়েছে:
“আমি রাসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি... যাতে মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে...” (সূরা আল-হাদীদ: ২৫)।
এ কারণে দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের শাস্তির সমান নয়।
এ কারণেই অধিকাংশ সালাফগণ বিদআতের দিকে আহ্বানকারীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিতেন, কারণ তারা দ্বীনের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে। যদিও তারা উক্ত ব্যক্তিবর্গদের কাফের আখ্যায়িত করে থাকুক বা না থাকুক। তবে এ বিষয়টি জেনে রাখা আবশ্যক যে, এরুপ অজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফের সাব্যস্ত করা (তাকফির মুয়াইয়্যিন করা) তথা তার সম্পর্কে কাফির হবার ফায়সালা প্রদান করা জায়েয নয়, যতক্ষণ না তাদের কারো বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে তারা রাসূলগণের বিরোধীতা করছে। যদিওবা তার উক্ত বক্তব্যটি নিঃসন্দেহে কুফরী হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যক্তিকে কাফের বলার বিষয়েও একই নীতি প্রযোজ্য। যদিও তাদের কতক বিদ‘আত অন্যান্য বিদআতের তুলনায় অধিক গুরুতর হয়ে থাকে, তবুও কিছু বিদ‘আতকারীর মধ্যে এমন ঈমান থাকতে পারে যা অন্যদের নেই। তাই কোনো মুসলিমের ভুল বা বিভ্রান্তির কারণে ভ্রান্ত পথে চললেও, তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দলীল ও যুক্তি উপস্থাপন এবং সঠিক পথ স্পষ্ট করে দেওয়ার পূর্বে তাকে কাফের বলা জায়েয নয়। যে ব্যক্তির ঈমান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, সন্দেহের বশে তার ঈমান বাতিল হয় না; বরং দলীলের মাধ্যমে তার সামনে সত্য উপস্থাপন করা ও সকল সন্দেহ দূর করেই কেবল তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। এই বিষয়ে আরও ব্যাখ্যা প্রদান এ সংক্ষিপ্ত উত্তরের আওতায় সম্ভব নয়। আল্লাহই আমাদের ও আমাদের সকল ভাইদেরকে তাঁর পছন্দের ও সন্তুষ্টির পথে অবিচল রাখতে পারেন। মহান আল্লাহই সর্বজ্ঞ।'
ثم إن الإمام أحمد دعا للخليفة وغيره. ممن ضربه وحبسه واستغفر لهم وحللهم مما فعلوه به من الظلم والدعاء إلى القول الذي هو كفر ولو كانوا مرتدين عن الإسلام لم يجز الاستغفار لهم؛ فإن الاستغفار للكفار لا يجوز بالكتاب والسنة والإجماع وهذه الأقوال والأعمال منه ومن غيره من الأئمة صريحة في أنهم لم يكفروا المعينين من الجهمية الذين كانوا يقولون: القرآن مخلوق وإن الله لا يرى في الآخرة وقد نقل عن أحمد ما يدل على أنه كفر به قوما معينين فأما أن يذكر عنه في المسألة روايتان ففيه نظر أو يحمل الأمر على التفصيل. فيقال: من كفره بعينه؛ فلقيام الدليل على أنه وجدت فيه شروط التكفير وانتفت موانعه ومن لم يكفره بعينه؛ فلانتفاء ذلك في حقه هذه مع إطلاق قوله بالتكفير على سبيل العموم. والدليل على هذا الأصل: الكتاب والسنة والإجماع والاعتبار. أما الكتاب: فقوله سبحانه وتعالى: {وليس عليكم جناح فيما أخطأتم به} وقوله تعالى {ربنا لا تؤاخذنا إن نسينا أو أخطأنا} .
وقد ثبت في صحيح مسلم عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم {أن الله تعالى قال: قد فعلت لما دعا النبي صلى الله عليه وسلم والمؤمنون بهذا الدعاء} . وروى البخاري في صحيحه عن ابن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " {أعطيت فاتحة الكتاب وخواتيم سورة البقرة من كنز تحت العرش} " و " {أنه لم يقرأ بحرف منها إلا أعطيه} ". وإذا ثبت بالكتاب المفسر بالسنة أن الله قد غفر لهذه الأمة الخطأ والنسيان فهذا عام عموما محفوظا وليس في الدلالة الشرعية ما يوجب أن الله يعذب من هذه الأمة مخطئا على خطئه وإن عذب المخطئ. من غير هذه الأمة. و " أيضا " قد ثبت في الصحيح من حديث أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: {إن رجلا لم يعمل خيرا قط فقال لأهله: إذا مات فأحرقوه ثم اذروا نصفه في البر ونصفه في البحر فوالله لئن قدر الله عليه ليعذبنه عذابا لا يعذبه أحدا من العالمين فلما مات الرجل فعلوا به كما أمرهم فأمر الله البر فجمع ما فيه وأمر البحر فجمع ما فيه فإذا هو قائم بين يديه. ثم قال: لم فعلت هذا؟ قال من خشيتك يا رب وأنت أعلم؛ فغفر الله له} ". فهذا الرجل كان قد وقع له الشك والجهل في قدرة الله تعالى على إعادة ابن آدم؛ بعد ما أحرق وذري وعلى أنه يعيد الميت ويحشره إذا فعل به ذلك وهذان أصلان عظيمان: " أحدهما " متعلق بالله تعالى وهو الإيمان بأنه على كل شيء قدير. و " الثاني " متعلق باليوم الآخر. وهو الإيمان بأن الله يعيد هذا الميت ويجزيه على أعماله ومع هذا فلما كان مؤمنا بالله في الجملة ومؤمنا باليوم الآخر في الجملة وهو أن الله يثيب ويعاقب بعد الموت وقد عمل عملا صالحا - وهو خوفه من الله أن يعاقبه على ذنوبه - غفر الله له بما كان منه من الإيمان بالله واليوم الآخر والعمل الصالح. وأيضا: فقد ثبت في الصحيح عن النبي صلى الله عليه وسلم {إن الله يخرج من النار من كان في قلبه مثقال دينار من إيمان} وفي رواية: {مثقال دينار من خير ثم يخرج من النار من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان} " وفي رواية " من خير " " {ويخرج من النار من كان في قلبه مثقال ذرة من إيمان أو خير} " وهذا وأمثاله من النصوص المستفيضة عن النبي صلى الله عليه وسلم يدل أنه لا يخلد في النار من معه شيء من الإيمان والخير وإن كان قليلا وأن الإيمان مما يتبعض ويتجزأ.
ومعلوم قطعا أن كثيرا من هؤلاء المخطئين معهم مقدار ما من الإيمان بالله ورسوله إذ الكلام فيمن يكون كذلك. وأيضا فإن السلف أخطأ كثير منهم في كثير من هذه المسائل واتفقوا على عدم التكفير بذلك مثل ما أنكر بعض الصحابة أن يكون الميت يسمع نداء الحي وأنكر بعضهم أن يكون المعراج يقظة وأنكر بعضهم رؤية محمد ربه ولبعضهم في الخلافة والتفضيل كلام معروف وكذلك لبعضهم في قتال بعض ولعن بعض وإطلاق تكفير بعض أقوال معروفة. وكان القاضي شريح ينكر قراءة من قرأ: {بل عجبت} ويقول: إن الله لا يعجب؛ فبلغ ذلك إبراهيم النخعي فقال: إنما شريح شاعر يعجبه علمه. كان عبد الله أفقه منه فكان يقول: {بل عجبت} فهذا قد أنكر قراءة ثابتة وأنكر صفة دل عليها الكتاب والسنة واتفقت الأمة على أنه إمام من الأئمة وكذلك بعض السلف أنكر بعضهم حروف القرآن مثل إنكار بعضهم قوله: {أفلم ييأس الذين آمنوا} وقال: إنما هي: أو لم يتبين الذين آمنوا وإنكار الآخر قراءة قوله: {وقضى ربك ألا تعبدوا إلا إياه} وقال: إنما هي: ووصى ربك. وبعضهم كان حذف المعوذتين وآخر يكتب سورة القنوت. وهذا خطأ معلوم بالإجماع والنقل المتواتر ومع هذا فلما لم يكن قد تواتر النقل عندهم بذلك لم يكفروا وإن كان يكفر بذلك من قامت عليه الحجة بالنقل المتواتر. وأيضا فإن الكتاب والسنة قد دل على أن الله لا يعذب أحدا إلا بعد إبلاغ الرسالة فمن لم تبلغه جملة لم يعذبه رأسا ومن بلغته جملة دون بعض التفصيل لم يعذبه إلا على إنكار ما قامت عليه الحجة الرسالية. وذلك مثل قوله تعالى {لئلا يكون للناس على الله حجة بعد الرسل} وقوله: {يا معشر الجن والإنس ألم يأتكم رسل منكم يقصون عليكم آياتي} الآية. وقوله: {أولم نعمركم ما يتذكر فيه من تذكر وجاءكم النذير} وقوله: {وقال لهم خزنتها ألم يأتكم رسل منكم يتلون عليكم آيات ربكم} الآية. وقوله: {وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا} وقوله: {وما كان ربك مهلك القرى حتى يبعث في أمها رسولا يتلو عليهم آياتنا} وقوله: {كلما ألقي فيها فوج سألهم خزنتها ألم يأتكم نذير} {قالوا بلى قد جاءنا نذير فكذبنا وقلنا ما نزل الله من شيء} وقوله: {ولو أنا أهلكناهم بعذاب من قبله لقالوا ربنا لولا أرسلت إلينا رسولا فنتبع آياتك من قبل أن نذل ونخزى} وقوله " {ولولا أن تصيبهم مصيبة بما قدمت أيديهم فيقولوا ربنا لولا أرسلت إلينا رسولا فنتبع آياتك ونكون من المؤمنين} ونحو هذا في القرآن في مواضع متعددة. فمن كان قد آمن بالله ورسوله ولم يعلم بعض ما جاء به الرسول فلم يؤمن به تفصيلا؛ إما أنه لم يسمعه. أو سمعه من طريق لا يجب التصديق بها أو اعتقد معنى آخر لنوع من التأويل الذي يعذر به.
فهذا قد جعل فيه من الإيمان بالله وبرسوله ما يوجب أن يثيبه الله عليه وما لم يؤمن به فلم تقم عليه به الحجة التي يكفر مخالفها. وأيضا فقد ثبت بالكتاب والسنة والإجماع أن من الخطأ في الدين ما لا يكفر مخالفه؛ بل ولا يفسق؛ بل ولا يأثم؛ مثل الخطأ في الفروع العملية؛ وإن كان بعض المتكلمة والمتفقهة يعتقد أن المخطئ فيها آثم وبعض المتكلمة والمتفقهة يعتقد أن كل مجتهد فيها مصيب فهذان القولان شاذان ومع ذلك فلم يقل أحد بتكفير المجتهدين المتنازعين فيها ومع ذلك فبعض هذه المسائل قد ثبت خطأ المنازع فيها بالنصوص والإجماع القديم مثل استحلال بعض السلف والخلف لبعض أنواع الربا واستحلال آخرين لبعض أنواع الخمر واستحلال آخرين للقتال في الفتنة. وأهل السنة والجماعة متفقون على أن المعروفين بالخير كالصحابة المعروفين وغيرهم من أهل الجمل وصفين من الجانبين لا يفسق أحد منهم فضلا عن أن يكفر حتى عدى ذلك من عداه من الفقهاء إلى سائر أهل البغي فإنهم مع إيجابهم لقتالهم منعوا أن يحكم بفسقهم لأجل التأويل كما يقول هؤلاء الأئمة: إن شارب النبيذ المتنازع فيه متأولا لا يجلد ولا يفسق. وقد قال تعالى: {وداود وسليمان إذ يحكمان في الحرث إذ نفشت فيه غنم القوم وكنا لحكمهم شاهدين} {ففهمناها سليمان وكلا آتينا حكما وعلما} وقال تعالى: {ما قطعتم من لينة أو تركتموها قائمة على أصولها فبإذن الله} . وثبت في الصحاح من حديث عمرو بن العاص وأبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: {إذا اجتهد الحاكم فأصاب فله أجران وإذا اجتهد فأخطأ فله أجر} ". وثبت في الصحيح {عن بريدة بن الحصيب أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا حاصرت أهل حصن فسألوك أن تنزلهم على حكم الله فلا تنزلهم على حكم الله ولكن أنزلهم على حكمك وحكم أصحابك فإنك لا تدري ما حكم الله فيهم} "
وأدلة هذا الأصل كثيرة لها موضع آخر. وقد ثبت بالكتاب والسنة والإجماع أن من بلغته رسالة النبي صلى الله عليه وسلم فلم يؤمن به فهو كافر لا يقبل منه الاعتذار بالاجتهاد لظهور أدلة الرسالة وأعلام النبوة؛ ولأن العذر بالخطأ حكم شرعي فكما أن الذنوب تنقسم إلى كبائر وصغائر والواجبات تنقسم إلى أركان وواجبات ليست أركانا: فكذلك الخطأ ينقسم إلى مغفور وغير مغفور والنصوص إنما أوجبت رفع المؤاخذة بالخطأ لهذه الأمة وإذا كان كذلك فالمخطئ في بعض هذه المسائل: إما أن يلحق بالكفار من المشركين وأهل الكتاب مع مباينته لهم في عامة أصول الإيمان. وإما أن يلحق بالمخطئين في مسائل الإيجاب والتحريم مع أنها أيضا من أصول الإيمان. فإن الإيمان بوجوب الواجبات الظاهرة المتواترة وتحريم المحرمات الظاهرة المتواترة؛: هو من أعظم أصول الإيمان وقواعد الدين والجاحد لها كافر بالاتفاق مع أن المجتهد في بعضها ليس بكافر بالاتفاق مع خطئه. وإذا كان لا بد من إلحاقه بأحد الصنفين: فمعلوم أن المخطئين من المؤمنين بالله ورسوله أشد شبها منه بالمشركين وأهل الكتاب فوجب أن يلحق بهم وعلى هذا مضى عمل الأمة قديما وحديثا في أن عامة المخطئين من هؤلاء تجري عليهم أحكام الإسلام التي تجري على غيرهم هذا مع العلم بأن كثيرا من المبتدعة منافقون النفاق الأكبر وأولئك كفار في الدرك الأسفل من النار فما أكثر ما يوجد في الرافضة والجهمية ونحوهم زنادقة منافقون بل أصل هذه البدع هو من المنافقين الزنادقة ممن يكون أصل زندقته عن الصابئين والمشركين فهؤلاء كفار في الباطن ومن علم حاله فهو كافر في الظاهر أيضا. وأصل ضلال هؤلاء الأعراض عما جاء به الرسول من الكتاب والحكمة وابتغاء الهدى في خلاف ذلك فمن كان هذا أصله فهو بعد بلاغ الرسالة كافر لا ريب فيه مثل من يرى أن الرسالة للعامة دون الخاصة كما يقوله قوم من المتفلسفة وغالية المتكلمة والمتصوفة أو يرى أنه رسول إلى بعض الناس دون بعض كما يقوله كثير من اليهود والنصارى. فهذا الكلام يمهد أصلين عظيمين: " أحدهما " أن العلم والإيمان والهدى فيما جاء به الرسول وأن خلاف ذلك كفر على الإطلاق فنفي الصفات كفر والتكذيب بأن الله يرى في الآخرة أو أنه على العرش أو أن القرآن كلامه أو أنه كلم موسى أو أنه اتخذ إبراهيم خليلا كفر وكذلك ما كان في معنى ذلك وهذا معنى كلام أئمة السنة وأهل الحديث. و " الأصل الثاني " أن التكفير العام - كالوعيد العام - يجب القول بإطلاقه وعمومه. وأما الحكم على المعين بأنه كافر أو مشهود له بالنار: فهذا يقف على الدليل المعين فإن الحكم يقف على ثبوت شروطه وانتفاء موانعه. ومما ينبغي أن يعلم في هذا الموضع أن الشريعة قد تأمرنا بإقامة الحد على شخص في الدنيا؛ إما بقتل أو جلد أو غير ذلك ويكون في الآخرة غير معذب مثل قتال البغاة والمتأولين مع بقائهم على العدالة ومثل إقامة الحد على من تاب بعد القدرة عليه توبة صحيحة فإنا نقيم الحد عليه مع ذلك كما أقامه النبي صلى الله عليه وسلم على ماعز بن مالك وعلى الغامدية مع قوله: {لقد تابت توبة لو تابها صاحب مكس لغفر له} " ومثل إقامة الحد على من شرب النبيذ المتنازع فيه متأولا مع العلم بأنه باق على العدالة. بخلاف من لا تأويل له فإنه لما شرب الخمر بعض الصحابة واعتقدوا أنها تحل للخاصة تأول قوله: {ليس على الذين آمنوا وعملوا الصالحات جناح فيما طعموا إذا ما اتقوا وآمنوا وعملوا الصالحات ثم اتقوا وآمنوا ثم اتقوا وأحسنوا} اتفق الصحابة مثل عمر بن الخطاب وعلي بن أبي طالب وغيرهما على أنهم إن أقروا بالتحريم جلدوا وإن أصروا على الاستحلال قتلوا. وكذلك نعلم أن خلقا لا يعاقبون في الدنيا مع أنهم كفار في الآخرة مثل أهل الذمة المقرين بالجزية على كفرهم.
ومثل المنافقين المظهرين الإسلام فإنهم تجري عليهم أحكام الإسلام وهم في الآخرة كافرون كما دل عليه القرآن في آيات متعددة كقوله: {إن المنافقين في الدرك الأسفل من النار ولن تجد لهم نصيرا} الآية. وقوله: {يوم يقول المنافقون والمنافقات للذين آمنوا انظرونا نقتبس من نوركم قيل ارجعوا وراءكم فالتمسوا نورا فضرب بينهم بسور له باب باطنه فيه الرحمة وظاهره من قبله العذاب} {ينادونهم ألم نكن معكم قالوا بلى ولكنكم فتنتم أنفسكم وتربصتم وارتبتم وغرتكم الأماني حتى جاء أمر الله وغركم بالله الغرور} {فاليوم لا يؤخذ منكم فدية ولا من الذين كفروا} الآية. وهذا لأن الجزاء في الحقيقة إنما هو في الدار الآخرة التي هي دار الثواب والعقاب. وأما الدنيا فإنما يشرع فيها من العقاب ما يدفع به الظلم والعدوان كما قال تعالى: {وقاتلوهم حتى لا تكون فتنة ويكون الدين لله فإن انتهوا فلا عدوان إلا على الظالمين} وقال تعالى: {إنما السبيل على الذين يظلمون الناس ويبغون في الأرض بغير الحق} وهذا لأن المقصود بإرسال الرسل وإنزال الكتب هو إقامة القسط كما قال تعالى: {لقد أرسلنا رسلنا بالبينات وأنزلنا معهم الكتاب والميزان ليقوم الناس بالقسط وأنزلنا الحديد فيه بأس شديد ومنافع للناس وليعلم الله من ينصره ورسله بالغيب إن الله قوي عزيز} . وإذا كان الأمر كذلك فعقوبة الدنيا غير مستلزمة لعقوبة الآخرة ولا بالعكس. ولهذا أكثر السلف يأمرون بقتل الداعي إلى البدعة الذي يضل الناس لأجل إفساده في الدين سواء قالوا: هو كافر أو ليس بكافر. وإذا عرف هذا فتكفير " المعين " من هؤلاء الجهال وأمثالهم - بحيث يحكم عليه بأنه من الكفار - لا يجوز الإقدام عليه إلا بعد أن تقوم على أحدهم الحجة الرسالية التي يتبين بها أنهم مخالفون للرسل وإن كانت هذه المقالة لا ريب أنها كفر. وهكذا الكلام في تكفير جميع " المعينين " مع أن بعض هذه البدعة أشد من بعض وبعض المبتدعة يكون فيه من الإيمان ما ليس في بعض فليس لأحد أن يكفر أحدا من المسلمين وإن أخطأ وغلط حتى تقام عليه الحجة وتبين له المحجة. ومن ثبت إيمانه بيقين لم يزل ذلك عنه بالشك؛ بل لا يزول إلا بعد إقامة الحجة وإزالة الشبهة. وهذا الجواب لا يحتمل أكثر من هذا. والله المسئول أن يوفقنا وسائر إخواننا لما يحبه ويرضاه والله سبحانه أعلم.
'মাজমু' আল ফাতাওয়া লি ইবন তাইমিয়্যাহ', ১২/৪৮৯-৫০১
অনুবাদ: সাফিন চৌধুরী
Join Telegram: ideology of salaf
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
"ইমাম আহমাদ (রহ.) খলীফা ও অন্যদের জন্য দো‘আ করেছেন যারা তাঁকে প্রহার করেছিল এবং কারাবন্দি করেছিল। তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং তাদের জুলুম ও কুফরী মতবাদ প্রচারের অপকর্ম থেকে মুক্ত করেছেন। যদি তারা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে মুরতাদ হয়ে যেতো, তবে তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়া জায়েয হতো না। কেননা কাফিরদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা অনুযায়ী নিষিদ্ধ। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামদের এসব উক্তি ও কর্ম সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, জাহমী সম্প্রদায়ের সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের তারা কাফির বলেননি—যারা “কুরআন মাখলুক” ও “আখিরাতে আল্লাহকে দেখা যাবে না” মতবাদে বিশ্বাস করত। অবশ্য আহমাদ (রহ.) সম্পর্কে এমন বর্ণনাও পাওয়া যায় যেখানে তিনি কুরআনকে মাখলুক বলার জন্যই কিছু সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কাফির বলেছেন। তবে এই বিষয়ে তাঁর থেকে দু’টি ভিন্ন রেওয়ায়েতের কথা উল্লেখ করা হলে তা বিবেচনাযোগ্য বা বিষয়টিকে সূক্ষ্মভাবে যাচাই করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, যাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে কাফির বলা হয়, তাদের ব্যাপারে কুফরীর শর্ত পূর্ণ হওয়া এবং প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হওয়ার দলীল প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর যাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে কাফির বলা হয়নি তাদের ক্ষেত্রে কুফরীর শর্ত পূরণ ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ হওয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত, তাই তাদের বক্তব্য সাধারণভাবে কুফরী হওয়া সত্ত্বেও সুনির্দিষ্টভাবে কাফির ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকা হয়েছে।
এই মূলনীতির দলীল কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ। কুরআনের প্রমাণ হলো মহান আল্লাহর বাণী:
“তোমাদের ভুলবশত যা ঘটে যায়, তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ নেই” (সূরা আল-আহযাব: ৫),
এবং “হে আমাদের রব! আমাদের ভুল বা ভ্রান্তির কারণে শাস্তি দিয়ো না” (সূরা আল-বাকারাহ: ২৮৬)।
সহীহ মুসলিমে আবূ হুরাইরা (রা:) এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবী ﷺ বলেন: “আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘নবী ও মুমিনদের এই দো‘আ কবুল করলাম'। যখন নবী ﷺ এবং মুমিনগণ এই আয়াত দিয়ে দুআ করেছিলেন।" অন্যদিকে সহীহ বুখারিতে ইবনু আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, যে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ প্রদান করা হয়েছে, যা ‘আরশের নিচে রক্ষিত ভাণ্ডার থেকে নেয়া হয়েছে’।” আরও বর্ণিত: “যে ব্যক্তি এই সুরাসমূহের একটি হরফও তিলাওয়াত করবে, তাকে তার প্রতিদান দেওয়া হবে।”
যদি কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হয়ে থাকে যে, আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের ভুল ও বিস্মৃতিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাহলে এটি একটি সর্বব্যাপী আম এবং মাহফুয (অটল) বিধান যার কোনো সীমারেখা নেই। শরয়ী এমন কোনো দলীল-প্রমাণ নেই যাতে প্রতীয়মান হয় যে, এই উম্মতের কোনো ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃত ভুল করলে আল্লাহ তাকে সেই ভুলের কারণে শাস্তি দেবেন, যদিও অন্য উম্মতের (আহলে কিতাবদের) ভ্রান্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হতে পারে।
আবূ হুরাইরা (রা:) বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন— “এক ব্যক্তি কোনো নেক কাজ করেনি। মৃত্যুর সময় সে তার পরিবারকে বলল, ‘আমার মৃত্যুর পর আমার দেহ পুড়িয়ে ফেলো, তার অর্ধেক ভস্ম মরুভূমিতে আর অর্ধেক সমুদ্রে ছড়িয়ে দিও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন, তবে তিনি তাকে এমন শাস্তি দেবেন যা বিশ্বজগতের কাউকেই দেননি।’ যখন সে মারা গেল, তারা তা-ই করল। তখন আল্লাহ মরুভূমিকে আদেশ দিলেন সমস্ত ভস্ম একত্র করতে, সমুদ্রকেও অনুরূপ করলেন। ব্যক্তিটি আল্লাহর সামনে জীবিত হয়ে দাঁড়াল। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এ কাজ কেন করলে?’ সে বলল, ‘হে প্রভু! আপনার ভয়েই এটা করেছি, আপনি তো সব জানেন।’ আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।"
এই ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ ও অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছিল যে আদন সন্তান পুড়ে ভস্ম হয়ে গেলেও বা তার দেহাবশেষ বিক্ষিপ্ত হলেও তিনি তা পুনরুত্থিত করতে পারবেন কি না, কিংবা মৃতকে পুনরায় জীবিত করে হাশরের মাঠে সমবেত করতে পারবেন কি না। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি রয়েছে যা সে অস্বীকার করেছে:
প্রথমটি হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত এ বিশ্বাস যে তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
দ্বিতীয়টি হলো: আখিরাতের সাথে সম্পর্কিত—এ বিশ্বাস যে আল্লাহ এই মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং তার আমলের প্রতিদান দেবেন।
তা সত্ত্বেও, যেহেতু এই ব্যক্তি সামগ্রিকভাবে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করত (অর্থাৎ এ বিশ্বাস যে মৃত্যুর পর আল্লাহ প্রতিদান ও শাস্তি দেবেন) এবং সে একটি সৎকর্ম করেছিল যা হলো সে নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয় করেছিল। সেই সৎকর্ম ও আল্লাহ-আখিরাতের প্রতি তার ঈমানের কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
আরও প্রমাণস্বরূপ, সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে:
“নিশ্চয় আল্লাহ জাহান্নাম থেকে এমন ব্যক্তিকে মুক্তি দেবেন যার অন্তরে একটি দীনারের সমপরিমাণ ঈমান থাকবে।”
এক বর্ণনায় এসেছে: “যার অন্তরে একটি দীনারের পরিমাণ নেকী থাকবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।” অন্য রেওয়ায়েতে আছে: “একটি সরিষার দানার পরিমাণ ঈমান” বা “একটি পরমাণুর পরিমাণ ঈমান বা নেকী”। এসব হাদিস এবং নবী ﷺ থেকে বর্ণিত এর অনুরুপ এ সকল ব্যাপক হাদীস প্রমাণ করে যে, যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ ঈমান বা নেককারিতা অবশিষ্ট থাকবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে না। ঈমানের অংশবিভাজন সম্ভব আর একাংশ থাকলেও তা গণ্য।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকের মধ্যেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি কিছু না কিছু ঈমান বিদ্যমান। সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফদের মধ্যেও অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে ভুল করেছেন, কিন্তু তারা একে অপরকে কাফির বলেননি। যেমন—কিছু সাহাবা মৃতের জন্য জীবিতের দো‘আ শোনার বিষয়টি মানেননি, কেউ রাসূল ﷺ এর মি‘রাজকে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে বলে স্বীকার করেননি, কেউ নবী ﷺ যে আল্লাহকে দর্শন করেছেন সে বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার খিলাফত ও চার খুলাফা এর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের ক্রম নিয়ে কারো কারো বিতর্কিত বক্তব্য রয়েছে। এমনকি কেউ কেউ যুদ্ধ করা বা অভিশাপ দানের ব্যাপারে কতক উগ্র মত পোষণ করেছেন।
কাযী শুরাইহ (রহ.) “بَلْ عَجِبْت” (সূরা সোয়াদ: ৫) এই কিরআতকে প্রত্যাখ্যান করে বলতেন: “আল্লাহ বিস্মিত হন না!” ইবরাহীম নাখ‘ঈ (রহ.) এটা শুনে মন্তব্য করলেন: “শুরাইহ তো একজন কবি, তিনি নিজের জ্ঞানে আত্মবিমোহিত!” অন্যদিকে আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ (রা.)—যিনি শুরাইহ এর চেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন, তিনি এই কিরআতকে স্বীকার করতেন। এখানে শুরাইহ (রহ.) একটি প্রমাণিত কিরাআত ও কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সিফাত (আল্লাহর গুণ) অস্বীকার করলেও, উম্মত তাঁকে ইমাম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কিছু সালাফ কুরআনের শব্দ পরিবর্তন করেছেন। যেমন—“أَفَلَمْ يَيْأَسِ” (সূরা আর-রা‘দ: ৩১) এর স্থলে “أَوَلَمْ يَتَبَيَّنِ” বলা, অথবা “وَقَضَىٰ رَبُّكَ” (সূরা বনি ইসরাঈল: ২৩) এর পরিবর্তে “وَوصَّىٰ رَبُّكَ” দাবি করা। কেউ মু‘আওইযাতাইন (সূরা ফালাক ও নাস) বাদ দিয়েছেন, কেউ কুনুতের সূরা রচনা করেছেন। এগুলো ইজমা ও তাওয়াতুর (নিরবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত হাদিস) দ্বারা প্রমাণিত ভ্রান্তি। তবে তাদের কাছে তাওয়াতুর সাব্যস্ত না হওয়ায় তাদেরকে কাফির বলা যায়নি। অন্যদিকে, যার বিরুদ্ধে তাওয়াতুরের মাধ্যমে প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত, তাকে কাফির বলা যাবে।
কুরআন ও সুন্নাহ সুস্পষ্ট করে যে, আল্লাহ রিসালাত পৌঁছানোর আগে কাউকে শাস্তি দেন না। যার কাছে সম্পূর্ণ বার্তা পৌঁছায়নি, তাকে শাস্তি দেওয়া হয় না। আর যার কাছে মূলনীতি পৌঁছালেও বিস্তারিত জানা নেই, তাকে কেবল সেসব বিষয়ের জন্যই শাস্তি দেওয়া হবে যার প্রতি রিসালাতের দলীল প্রতিষ্ঠিত ছিল। যেমন আল্লাহর বাণী:
“যাতে রাসূল প্রেরণের পর মানুষের আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি না থাকে” (সূরা আন-নিসা: ১৬৫),
“হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য থেকেই কি তোমাদের নিকট রাসূল আসেনি?” (সূরা আল-আন‘আম: ১৩০),
“আমি কি তোমাদেরকে এতদিন জীবন দেইনি, যাতে উপদেশ গ্রহণ করে কেউ?” (সূরা ফাতির: ৩৭),
“জাহান্নামের রক্ষীরা বলবে: ‘তোমাদের নিকট কি তোমাদের রবের আয়াত শোনানোর জন্য রাসূল আসেননি?’” (সূরা আল-মুলক: ৮-৯),
“আমি রাসূল প্রেরণের আগে শাস্তি দেই না” (সূরা বনি ইসরাঈল: ১৫),
“তোমার রব জনপদ ধ্বংসকারী নন, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেন” (সূরা আল-কাসাস: ৫৯)।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “যখনই জাহান্নামে কোনো দল নিক্ষেপ করা হবে, তার রক্ষীরা জিজ্ঞাসা করবে: ‘তোমাদের নিকট কি সতর্ককারী আসেননি?’ তারা বলবে: ‘হ্যাঁ, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিলেন, কিন্তু আমরা তাঁকে মিথ্যা বলেছি এবং বলেছি: আল্লাহ কোনো কিছুই অবতীর্ণ করেননি।’” (সূরা আল-মুলক: ৮-৯)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: “যদি আমি তাদের পূর্বেই কোনো শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করতাম, তবে তারা বলত: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে আমরা আপনার আয়াত অনুসরণ করতাম—অপমানিত হওয়ার আগেই!’” (সূরা ত্বোয়া-হা: ১৩৪)। আরও ইরশাদ হয়েছে: “যদি তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের বিপদ আঘাত হানে, তবে তারা বলবে: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের কাছে রাসূল পাঠালে না কেন? আমরা আপনার আয়াত মেনে মুমিন হতাম!’” (সূরা আল-কাসাস: ৪৭)। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এজাতীয় বক্তব্য বিদ্যমান।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, কিন্তু রাসূলের আনীত কিছু বিস্তারিত বিধান সম্পর্কে জানে না—হয় তা শোনেনি, অথবা এমন সূত্রে শুনেছে যা গ্রহণযোগ্য নয়, অথবা ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে ভিন্ন অর্থে বিশ্বাস করেছে—তার মধ্যে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানের যে অংশ রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আর যে অংশে সে বিশ্বাস স্থাপন করেনি, তার বিরুদ্ধে রিসালাতের দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা অস্বীকার করলে কুফরী হয়।
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে কিছু ভ্রান্তি এমন রয়েছে যার জন্য ভুলকারীকে কাফির, ফাসিক বা গুনাহগারও বলা যায় না। যেমন—ইবাদত-মু‘আমালাতের ফুরূ‘ (বিস্তারিত) বিষয়ে ভুল করা। যদিও কিছু মুতাকাল্লিম (ধর্মতাত্ত্বিক) ও ফকীহ মনে করেন যে এতে ভুলকারী গুনাহগার, আবার কেউ কেউ বলেন যে ইজতিহাদকারী সঠিক। এ দুটি মতই বিচ্ছিন্ন। তবে কারও মতে ইজতিহাদকারীদেরকে কাফির বলা যায় না। অথচ কিছু ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নুসূস (কুরআন-হাদীস) ও প্রাচীন ইজমার ভিত্তিতে ভ্রান্তি প্রমাণিত, যেমন—কিছু সালাফ ও খলাফ সুদের নির্দিষ্ট রূপকে হালাল মনে করতেন, কেউ মদ্যের বিশেষ প্রকারকে বৈধ বলতেন, আবার কেউ ফিতনার সময় যুদ্ধকে জায়েয গণ্য করতেন।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন যে, জান্নাতুল বাকী, সিফফীন প্রভৃতি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উভয় পক্ষের প্রসিদ্ধ সাহাবা ও অন্যান্য সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কাউকেই ফাসিক বলা যায় ন, তাদেরকে কাফির বলা তো দূরের কথা। এমনকি পরবর্তী যুগে (আবু বকর ও উছমানের যুগে) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিধান দেয়া ফকীহগণও তাদেরকে ‘ফাসিক’ আখ্যায়িত করেননি, কারণ তারা ভুল ব্যাখ্যা (তাবিল) এর ভিত্তিতে কাজ করেছিল। যেমন ইমামগণ বলেন: “যে ব্যক্তি বিতর্কিত মদের (যেমন নবীয) শরাব পান করে তাবিলের ভিত্তিতে, তাকে না চাবুক মারতে হবে, না ফাসিক বলা যাবে।”
মহান আল্লাহর বাণী:
“স্মরণ করুন দাঊদ ও সুলায়মানের ঘটনা, যখন তারা একটি ক্ষেতের ফসল নিয়ে বিচার করছিল, যাতে রাতের বেলা ভেড়া ঢুকে সেটি নষ্ট করেছিল। আমি তাদের ফয়সালা প্রত্যক্ষ করছিলাম। অতঃপর আমি সুলায়মানকে তা বুঝিয়ে দিলাম। আমি উভয়কে বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান দান করেছিলাম” (সূরা আল-আম্বিয়া: ৭৮-৭৯)।
আরও বলেন: “তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছ বা যেগুলোকে মূলসহ দাঁড় করিয়ে রেখেছ, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই” (সূরা আল-হাশর: ৫)।
সহীহ হাদীসে আমর ইবনুল আস্ব (রা.) ও আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে নবী ﷺ বলেন:
“যখন কোনো বিচারক ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে দুটি সওয়াব দেওয়া হয়। আর যদি ভুল করে, তবুও একটি সওয়াব পায়।”
অন্য সহীহ হাদীসে বুরাইদা ইবনুল হুসাইব (রা.) থেকে বর্ণিত:
“যখন তুমি কোনো দুর্গ অবরোধ করবে এবং শত্রুরা আল্লাহর হুকুম মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দেবে, তখন তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমে সমর্পণ করবে না; বরং নিজের ও সঙ্গীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করবে। কারণ তুমি জান না আল্লাহ তাদের ব্যাপারে কী ফয়সালা করবেন।”
এই মূলনীতির পক্ষে অসংখ্য দলীল রয়েছে, যা অন্যত্র আলোচনার বিষয়। কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত যে, নবী ﷺ এর দাওয়াত যার নিকট পৌঁছেছে অথচ সে ঈমান আনেনি, সে কাফির, যেহেতু রিসালাতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও নবুয়্যতের প্রমাণসমূহ উপস্থিত থাকায় তার পক্ষে ইজতিহাদের অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলের কারণে ক্ষমা প্রার্থনার বিধান একটি শরঈ হুকুম; যেমন গুনাহর বিষয়টি কাবীরাহ ও সাগীরাহ তে বিভক্ত আর ওয়াজিব এর বিষয়টি রুকন ও রুকন-বহির্ভূত ওয়াজিবে বিভক্ত, তেমনি ভুলও ক্ষমাযোগ্য ও অক্ষমাযোগ্য প্রকারে বিভক্ত। নুসূস (কুরআন-হাদীসের টেক্সট) শুধুমাত্র এই উম্মতের জন্য ভুলের কারণে শাস্তি রহিত করার বিধান দিয়েছে।
এখন যদি কেউ এসব বিষয়ের কোনো একটিতে ভুল করে ফেলে, তাহলে তাকে এ দুই শ্রেণীর যেকোনো একটির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে:
১. মুশরিক ও আহলে কিতাব কাফিরদের সাথে - যদিও ঈমানের মূলনীতিতে তাদের সাথে তার পার্থক্য ব্যাপক।
২. হালাল-হারাম সংক্রান্ত ভ্রান্ত মতবাদ লালনকারীদের সাথে—যদিও এসব বিষয়ও ঈমানের মূলনীতির অন্তর্গত।
কেননা প্রতিষ্ঠিত ও তাওয়াতুর (নিরবচ্ছিন্ন বর্ণনা) দ্বারা প্রমাণিত ওয়াজিব বিধানে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং প্রতিষ্ঠিত হারাম ও তাওয়াতুর দ্বারা প্রমাণিত হারামকে বর্জন করা ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। এগুলো অস্বীকারকারী সর্বসম্মতিক্রমে কাফির। তবে এ বিষয়ে ইজতিহাদকারী ভুল করলেও কাফির নয়।
যদি তাকে উক্ত দুই শ্রেণীর যেকোনো একটিতে ফেলতেই হয়, তবে এটা সুবিদিত যে, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও ভুলকারী ব্যক্তি মুশরিক বা আহলে কিতাবদের চেয়ে মুমিনদের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই তাকে মুমিনদের শ্রেণীতেই গণ্য করতে হবে। এ নীতির ভিত্তিতেই উম্মাহ অতীত ও বর্তমানে এসব ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের উপর সাধারণ মুসলিমের মতো শরঈ আহকাম (বিধান) প্রযোজ্য করেছে।
তবে এ সত্যও স্বীকৃত যে, অনেক বিদ‘আতপন্থীর মধ্যে বড় ধরনের নিফাক (অন্তরের মুনাফেকী) রয়েছে। তারা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। রাফেযী, জাহমীয়া প্রভৃতি গোষ্ঠীতে প্রচুর যিনদীক (নাস্তিক) ও মুনাফিক বিদ্যমান। বরং এসব বিদ‘আতের মূল উৎসই হলো মুনাফিক যিনদীকরা—যারা সাবেয়ীন ও মুশরিকদের কাছ থেকে কুফরীর বীজ সংগ্রহ করেছে। এরা অন্তরে কাফির, আর যাদের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়, তারা প্রকাশ্যেও কাফির।
এসব ভ্রান্তির মূল উৎস হলো রাসূলের আনীত কিতাব ও হিকমাহ (জ্ঞান) থেকে বিমুখতা এবং তা ব্যতীত অন্যত্র হিদায়াত অনুসন্ধান। সুতরাং, যার মৌলিক বিশ্বাস এমন, সে রিসালাতের বার্তা পৌঁছার পর নিঃসন্দেহে কাফির। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি মনে করে রিসালাত শুধু সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষজ্ঞদের জন্য নয়—যেমন কিছু দার্শনিক, চরমপন্থী কালামবিদ ও সুফি বলে থাকেন; অথবা বিশ্বাস করে যে নবী নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত, অন্যাদের জন্য নন—যেমন বহু ইহুদী ও নাসারা দাবি করে।
এ আলোচনা দুটি মহান মূলনীতির ভিত্তি স্থাপন করে:
প্রথমত: জ্ঞান, ঈমান ও হিদায়াত কেবল রাসূলের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয়েই নিহিত। এর বিপরীত সবকিছুই পরিপূর্ণ কুফরী। যেমন—আল্লাহর সিফাত অস্বীকার করা, আখিরাতে তাঁকে দেখা যাবে না বলা, আরশের উপর তাঁর অবস্থান না মানা, কুরআনকে তাঁর কালাম না বলা, মূসা (আ.)-এর সাথে তাঁর কথোপকথন প্রত্যাখ্যান করা, কিংবা ইবরাহীম (আ.)-কে খলীল হিসেবে গ্রহণ না মানা—সবই কুফরী। এটাই আহলে সুন্নাত ও হাদীসের ইমামদের মূল বক্তব্য।
দ্বিতীয়ত: সাধারণভাবে কুফরীর ফতোয়া (যেমন সাধারণ শাস্তির ঘোষণা) সর্বব্যাপীভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফির বা জাহান্নামী বলা তার ব্যক্তিগত অবস্থার প্রমাণের উপর নির্ভরশীল। কেননা শরঈ সিদ্ধান্ত শর্ত পূরণ ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণের সাথে যুক্ত।
এ প্রসঙ্গে জ্ঞাতব্য যে, শরীয়ত কখনো কাউকে দুনিয়াতে শাস্তি দিতে নির্দেশ দেয়—হত্যা, চাবুক বা অন্য কোনোভাবে—অথচ আখিরাতে তার শাস্তি নাও হতে পারে। যেমন: ভুল ব্যাখ্যাকারী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, যারা ন্যায়পরায়ণ থাকে; অথবা এমন ব্যক্তির উপর হদ প্রয়োগ করা যে তাওবার পরও শাস্তি পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাআইয ইবন মালিক ও গামিদীয়া নারীর উপর হদ প্রয়োগ করেছিলেন, অথচ বলেছিলেন: “নিশ্চয় সে এমন তাওবা করেছে, যা করলে কোনো করণদাতাও ক্ষমা পেত!”
তেমনিভাবে যে ব্যক্তি তাবিলের ভিত্তিতে বিতর্কিত মদ পান করে এবং নিজেকে ন্যায়পরায়ণ মনে করে থাকে, তার উপর হদ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু যার কোনো তাবিল নেই, যেমন কিছু সাহাবা শরাব পান করেছিলেন এবং মনে করেছিলেন তা বিশেষ শ্রেণীর জন্য হালাল—তারা এ আয়াতকে ভিত্তি করেছিলেন: “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের পূর্বের ভক্ষণে কোনো পাপ নেই যদি তারা তাকওয়া অবলম্বন করে...” (সূরা আল-মায়িদাহ: ৯৩)। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.), আলী ইবনে আবী তালিব (রা.) প্রমুখ সাহাবা ঐকমত্যে পৌঁছেন: যদি তারা হারাম স্বীকার করে, তবে চাবুক মারবেন; আর যদি হালাল দাবি করে, তবে হত্যা করবেন।
আমরা জানি, কিছু কাফির দুনিয়ায় শাস্তি পায় না, যদিও আখিরাতে তারা কাফির। যেমন—জিম্মি সম্প্রদায় যারা জিযিয়া দেয়, অথবা মুনাফিক যারা প্রকাশ্যে ইসলামের মোড়ক ধরে রাখে। কুরআনের বহু আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে:
“নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে...” (সূরা আন-নিসা: ১৪৫),
“সেদিন মুনাফিকরা মুমিনদের বলবে:
‘আমাদের দিকে তাকাও, তোমাদের আলো থেকে কিছু গ্রহণ করি’...” (সূরা আল-হাদীদ: ১৩-১৫)।
এটা এজন্য যে, প্রকৃত প্রতিদান আখিরাতের জন্য নির্ধারিত। দুনিয়ার শাস্তি শুধুমাত্র অত্যাচার রোধের জন্য, যেমন আল্লাহ বলেন:
“তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যতক্ষণ না ফিতনা দূর হয়...” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৩),
“কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর যুলম করে এবং যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়।” (সূরা আশ-শূরা: ৪২)।
রাসূলদের প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা, যেমন ইরশাদ হয়েছে:
“আমি রাসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি... যাতে মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে...” (সূরা আল-হাদীদ: ২৫)।
এ কারণে দুনিয়ার শাস্তি আখিরাতের শাস্তির সমান নয়।
এ কারণেই অধিকাংশ সালাফগণ বিদআতের দিকে আহ্বানকারীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিতেন, কারণ তারা দ্বীনের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে। যদিও তারা উক্ত ব্যক্তিবর্গদের কাফের আখ্যায়িত করে থাকুক বা না থাকুক। তবে এ বিষয়টি জেনে রাখা আবশ্যক যে, এরুপ অজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফের সাব্যস্ত করা (তাকফির মুয়াইয়্যিন করা) তথা তার সম্পর্কে কাফির হবার ফায়সালা প্রদান করা জায়েয নয়, যতক্ষণ না তাদের কারো বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে তারা রাসূলগণের বিরোধীতা করছে। যদিওবা তার উক্ত বক্তব্যটি নিঃসন্দেহে কুফরী হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যক্তিকে কাফের বলার বিষয়েও একই নীতি প্রযোজ্য। যদিও তাদের কতক বিদ‘আত অন্যান্য বিদআতের তুলনায় অধিক গুরুতর হয়ে থাকে, তবুও কিছু বিদ‘আতকারীর মধ্যে এমন ঈমান থাকতে পারে যা অন্যদের নেই। তাই কোনো মুসলিমের ভুল বা বিভ্রান্তির কারণে ভ্রান্ত পথে চললেও, তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দলীল ও যুক্তি উপস্থাপন এবং সঠিক পথ স্পষ্ট করে দেওয়ার পূর্বে তাকে কাফের বলা জায়েয নয়। যে ব্যক্তির ঈমান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, সন্দেহের বশে তার ঈমান বাতিল হয় না; বরং দলীলের মাধ্যমে তার সামনে সত্য উপস্থাপন করা ও সকল সন্দেহ দূর করেই কেবল তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। এই বিষয়ে আরও ব্যাখ্যা প্রদান এ সংক্ষিপ্ত উত্তরের আওতায় সম্ভব নয়। আল্লাহই আমাদের ও আমাদের সকল ভাইদেরকে তাঁর পছন্দের ও সন্তুষ্টির পথে অবিচল রাখতে পারেন। মহান আল্লাহই সর্বজ্ঞ।'
ثم إن الإمام أحمد دعا للخليفة وغيره. ممن ضربه وحبسه واستغفر لهم وحللهم مما فعلوه به من الظلم والدعاء إلى القول الذي هو كفر ولو كانوا مرتدين عن الإسلام لم يجز الاستغفار لهم؛ فإن الاستغفار للكفار لا يجوز بالكتاب والسنة والإجماع وهذه الأقوال والأعمال منه ومن غيره من الأئمة صريحة في أنهم لم يكفروا المعينين من الجهمية الذين كانوا يقولون: القرآن مخلوق وإن الله لا يرى في الآخرة وقد نقل عن أحمد ما يدل على أنه كفر به قوما معينين فأما أن يذكر عنه في المسألة روايتان ففيه نظر أو يحمل الأمر على التفصيل. فيقال: من كفره بعينه؛ فلقيام الدليل على أنه وجدت فيه شروط التكفير وانتفت موانعه ومن لم يكفره بعينه؛ فلانتفاء ذلك في حقه هذه مع إطلاق قوله بالتكفير على سبيل العموم. والدليل على هذا الأصل: الكتاب والسنة والإجماع والاعتبار. أما الكتاب: فقوله سبحانه وتعالى: {وليس عليكم جناح فيما أخطأتم به} وقوله تعالى {ربنا لا تؤاخذنا إن نسينا أو أخطأنا} .
وقد ثبت في صحيح مسلم عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم {أن الله تعالى قال: قد فعلت لما دعا النبي صلى الله عليه وسلم والمؤمنون بهذا الدعاء} . وروى البخاري في صحيحه عن ابن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " {أعطيت فاتحة الكتاب وخواتيم سورة البقرة من كنز تحت العرش} " و " {أنه لم يقرأ بحرف منها إلا أعطيه} ". وإذا ثبت بالكتاب المفسر بالسنة أن الله قد غفر لهذه الأمة الخطأ والنسيان فهذا عام عموما محفوظا وليس في الدلالة الشرعية ما يوجب أن الله يعذب من هذه الأمة مخطئا على خطئه وإن عذب المخطئ. من غير هذه الأمة. و " أيضا " قد ثبت في الصحيح من حديث أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: {إن رجلا لم يعمل خيرا قط فقال لأهله: إذا مات فأحرقوه ثم اذروا نصفه في البر ونصفه في البحر فوالله لئن قدر الله عليه ليعذبنه عذابا لا يعذبه أحدا من العالمين فلما مات الرجل فعلوا به كما أمرهم فأمر الله البر فجمع ما فيه وأمر البحر فجمع ما فيه فإذا هو قائم بين يديه. ثم قال: لم فعلت هذا؟ قال من خشيتك يا رب وأنت أعلم؛ فغفر الله له} ". فهذا الرجل كان قد وقع له الشك والجهل في قدرة الله تعالى على إعادة ابن آدم؛ بعد ما أحرق وذري وعلى أنه يعيد الميت ويحشره إذا فعل به ذلك وهذان أصلان عظيمان: " أحدهما " متعلق بالله تعالى وهو الإيمان بأنه على كل شيء قدير. و " الثاني " متعلق باليوم الآخر. وهو الإيمان بأن الله يعيد هذا الميت ويجزيه على أعماله ومع هذا فلما كان مؤمنا بالله في الجملة ومؤمنا باليوم الآخر في الجملة وهو أن الله يثيب ويعاقب بعد الموت وقد عمل عملا صالحا - وهو خوفه من الله أن يعاقبه على ذنوبه - غفر الله له بما كان منه من الإيمان بالله واليوم الآخر والعمل الصالح. وأيضا: فقد ثبت في الصحيح عن النبي صلى الله عليه وسلم {إن الله يخرج من النار من كان في قلبه مثقال دينار من إيمان} وفي رواية: {مثقال دينار من خير ثم يخرج من النار من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان} " وفي رواية " من خير " " {ويخرج من النار من كان في قلبه مثقال ذرة من إيمان أو خير} " وهذا وأمثاله من النصوص المستفيضة عن النبي صلى الله عليه وسلم يدل أنه لا يخلد في النار من معه شيء من الإيمان والخير وإن كان قليلا وأن الإيمان مما يتبعض ويتجزأ.
ومعلوم قطعا أن كثيرا من هؤلاء المخطئين معهم مقدار ما من الإيمان بالله ورسوله إذ الكلام فيمن يكون كذلك. وأيضا فإن السلف أخطأ كثير منهم في كثير من هذه المسائل واتفقوا على عدم التكفير بذلك مثل ما أنكر بعض الصحابة أن يكون الميت يسمع نداء الحي وأنكر بعضهم أن يكون المعراج يقظة وأنكر بعضهم رؤية محمد ربه ولبعضهم في الخلافة والتفضيل كلام معروف وكذلك لبعضهم في قتال بعض ولعن بعض وإطلاق تكفير بعض أقوال معروفة. وكان القاضي شريح ينكر قراءة من قرأ: {بل عجبت} ويقول: إن الله لا يعجب؛ فبلغ ذلك إبراهيم النخعي فقال: إنما شريح شاعر يعجبه علمه. كان عبد الله أفقه منه فكان يقول: {بل عجبت} فهذا قد أنكر قراءة ثابتة وأنكر صفة دل عليها الكتاب والسنة واتفقت الأمة على أنه إمام من الأئمة وكذلك بعض السلف أنكر بعضهم حروف القرآن مثل إنكار بعضهم قوله: {أفلم ييأس الذين آمنوا} وقال: إنما هي: أو لم يتبين الذين آمنوا وإنكار الآخر قراءة قوله: {وقضى ربك ألا تعبدوا إلا إياه} وقال: إنما هي: ووصى ربك. وبعضهم كان حذف المعوذتين وآخر يكتب سورة القنوت. وهذا خطأ معلوم بالإجماع والنقل المتواتر ومع هذا فلما لم يكن قد تواتر النقل عندهم بذلك لم يكفروا وإن كان يكفر بذلك من قامت عليه الحجة بالنقل المتواتر. وأيضا فإن الكتاب والسنة قد دل على أن الله لا يعذب أحدا إلا بعد إبلاغ الرسالة فمن لم تبلغه جملة لم يعذبه رأسا ومن بلغته جملة دون بعض التفصيل لم يعذبه إلا على إنكار ما قامت عليه الحجة الرسالية. وذلك مثل قوله تعالى {لئلا يكون للناس على الله حجة بعد الرسل} وقوله: {يا معشر الجن والإنس ألم يأتكم رسل منكم يقصون عليكم آياتي} الآية. وقوله: {أولم نعمركم ما يتذكر فيه من تذكر وجاءكم النذير} وقوله: {وقال لهم خزنتها ألم يأتكم رسل منكم يتلون عليكم آيات ربكم} الآية. وقوله: {وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا} وقوله: {وما كان ربك مهلك القرى حتى يبعث في أمها رسولا يتلو عليهم آياتنا} وقوله: {كلما ألقي فيها فوج سألهم خزنتها ألم يأتكم نذير} {قالوا بلى قد جاءنا نذير فكذبنا وقلنا ما نزل الله من شيء} وقوله: {ولو أنا أهلكناهم بعذاب من قبله لقالوا ربنا لولا أرسلت إلينا رسولا فنتبع آياتك من قبل أن نذل ونخزى} وقوله " {ولولا أن تصيبهم مصيبة بما قدمت أيديهم فيقولوا ربنا لولا أرسلت إلينا رسولا فنتبع آياتك ونكون من المؤمنين} ونحو هذا في القرآن في مواضع متعددة. فمن كان قد آمن بالله ورسوله ولم يعلم بعض ما جاء به الرسول فلم يؤمن به تفصيلا؛ إما أنه لم يسمعه. أو سمعه من طريق لا يجب التصديق بها أو اعتقد معنى آخر لنوع من التأويل الذي يعذر به.
فهذا قد جعل فيه من الإيمان بالله وبرسوله ما يوجب أن يثيبه الله عليه وما لم يؤمن به فلم تقم عليه به الحجة التي يكفر مخالفها. وأيضا فقد ثبت بالكتاب والسنة والإجماع أن من الخطأ في الدين ما لا يكفر مخالفه؛ بل ولا يفسق؛ بل ولا يأثم؛ مثل الخطأ في الفروع العملية؛ وإن كان بعض المتكلمة والمتفقهة يعتقد أن المخطئ فيها آثم وبعض المتكلمة والمتفقهة يعتقد أن كل مجتهد فيها مصيب فهذان القولان شاذان ومع ذلك فلم يقل أحد بتكفير المجتهدين المتنازعين فيها ومع ذلك فبعض هذه المسائل قد ثبت خطأ المنازع فيها بالنصوص والإجماع القديم مثل استحلال بعض السلف والخلف لبعض أنواع الربا واستحلال آخرين لبعض أنواع الخمر واستحلال آخرين للقتال في الفتنة. وأهل السنة والجماعة متفقون على أن المعروفين بالخير كالصحابة المعروفين وغيرهم من أهل الجمل وصفين من الجانبين لا يفسق أحد منهم فضلا عن أن يكفر حتى عدى ذلك من عداه من الفقهاء إلى سائر أهل البغي فإنهم مع إيجابهم لقتالهم منعوا أن يحكم بفسقهم لأجل التأويل كما يقول هؤلاء الأئمة: إن شارب النبيذ المتنازع فيه متأولا لا يجلد ولا يفسق. وقد قال تعالى: {وداود وسليمان إذ يحكمان في الحرث إذ نفشت فيه غنم القوم وكنا لحكمهم شاهدين} {ففهمناها سليمان وكلا آتينا حكما وعلما} وقال تعالى: {ما قطعتم من لينة أو تركتموها قائمة على أصولها فبإذن الله} . وثبت في الصحاح من حديث عمرو بن العاص وأبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال: {إذا اجتهد الحاكم فأصاب فله أجران وإذا اجتهد فأخطأ فله أجر} ". وثبت في الصحيح {عن بريدة بن الحصيب أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا حاصرت أهل حصن فسألوك أن تنزلهم على حكم الله فلا تنزلهم على حكم الله ولكن أنزلهم على حكمك وحكم أصحابك فإنك لا تدري ما حكم الله فيهم} "
وأدلة هذا الأصل كثيرة لها موضع آخر. وقد ثبت بالكتاب والسنة والإجماع أن من بلغته رسالة النبي صلى الله عليه وسلم فلم يؤمن به فهو كافر لا يقبل منه الاعتذار بالاجتهاد لظهور أدلة الرسالة وأعلام النبوة؛ ولأن العذر بالخطأ حكم شرعي فكما أن الذنوب تنقسم إلى كبائر وصغائر والواجبات تنقسم إلى أركان وواجبات ليست أركانا: فكذلك الخطأ ينقسم إلى مغفور وغير مغفور والنصوص إنما أوجبت رفع المؤاخذة بالخطأ لهذه الأمة وإذا كان كذلك فالمخطئ في بعض هذه المسائل: إما أن يلحق بالكفار من المشركين وأهل الكتاب مع مباينته لهم في عامة أصول الإيمان. وإما أن يلحق بالمخطئين في مسائل الإيجاب والتحريم مع أنها أيضا من أصول الإيمان. فإن الإيمان بوجوب الواجبات الظاهرة المتواترة وتحريم المحرمات الظاهرة المتواترة؛: هو من أعظم أصول الإيمان وقواعد الدين والجاحد لها كافر بالاتفاق مع أن المجتهد في بعضها ليس بكافر بالاتفاق مع خطئه. وإذا كان لا بد من إلحاقه بأحد الصنفين: فمعلوم أن المخطئين من المؤمنين بالله ورسوله أشد شبها منه بالمشركين وأهل الكتاب فوجب أن يلحق بهم وعلى هذا مضى عمل الأمة قديما وحديثا في أن عامة المخطئين من هؤلاء تجري عليهم أحكام الإسلام التي تجري على غيرهم هذا مع العلم بأن كثيرا من المبتدعة منافقون النفاق الأكبر وأولئك كفار في الدرك الأسفل من النار فما أكثر ما يوجد في الرافضة والجهمية ونحوهم زنادقة منافقون بل أصل هذه البدع هو من المنافقين الزنادقة ممن يكون أصل زندقته عن الصابئين والمشركين فهؤلاء كفار في الباطن ومن علم حاله فهو كافر في الظاهر أيضا. وأصل ضلال هؤلاء الأعراض عما جاء به الرسول من الكتاب والحكمة وابتغاء الهدى في خلاف ذلك فمن كان هذا أصله فهو بعد بلاغ الرسالة كافر لا ريب فيه مثل من يرى أن الرسالة للعامة دون الخاصة كما يقوله قوم من المتفلسفة وغالية المتكلمة والمتصوفة أو يرى أنه رسول إلى بعض الناس دون بعض كما يقوله كثير من اليهود والنصارى. فهذا الكلام يمهد أصلين عظيمين: " أحدهما " أن العلم والإيمان والهدى فيما جاء به الرسول وأن خلاف ذلك كفر على الإطلاق فنفي الصفات كفر والتكذيب بأن الله يرى في الآخرة أو أنه على العرش أو أن القرآن كلامه أو أنه كلم موسى أو أنه اتخذ إبراهيم خليلا كفر وكذلك ما كان في معنى ذلك وهذا معنى كلام أئمة السنة وأهل الحديث. و " الأصل الثاني " أن التكفير العام - كالوعيد العام - يجب القول بإطلاقه وعمومه. وأما الحكم على المعين بأنه كافر أو مشهود له بالنار: فهذا يقف على الدليل المعين فإن الحكم يقف على ثبوت شروطه وانتفاء موانعه. ومما ينبغي أن يعلم في هذا الموضع أن الشريعة قد تأمرنا بإقامة الحد على شخص في الدنيا؛ إما بقتل أو جلد أو غير ذلك ويكون في الآخرة غير معذب مثل قتال البغاة والمتأولين مع بقائهم على العدالة ومثل إقامة الحد على من تاب بعد القدرة عليه توبة صحيحة فإنا نقيم الحد عليه مع ذلك كما أقامه النبي صلى الله عليه وسلم على ماعز بن مالك وعلى الغامدية مع قوله: {لقد تابت توبة لو تابها صاحب مكس لغفر له} " ومثل إقامة الحد على من شرب النبيذ المتنازع فيه متأولا مع العلم بأنه باق على العدالة. بخلاف من لا تأويل له فإنه لما شرب الخمر بعض الصحابة واعتقدوا أنها تحل للخاصة تأول قوله: {ليس على الذين آمنوا وعملوا الصالحات جناح فيما طعموا إذا ما اتقوا وآمنوا وعملوا الصالحات ثم اتقوا وآمنوا ثم اتقوا وأحسنوا} اتفق الصحابة مثل عمر بن الخطاب وعلي بن أبي طالب وغيرهما على أنهم إن أقروا بالتحريم جلدوا وإن أصروا على الاستحلال قتلوا. وكذلك نعلم أن خلقا لا يعاقبون في الدنيا مع أنهم كفار في الآخرة مثل أهل الذمة المقرين بالجزية على كفرهم.
ومثل المنافقين المظهرين الإسلام فإنهم تجري عليهم أحكام الإسلام وهم في الآخرة كافرون كما دل عليه القرآن في آيات متعددة كقوله: {إن المنافقين في الدرك الأسفل من النار ولن تجد لهم نصيرا} الآية. وقوله: {يوم يقول المنافقون والمنافقات للذين آمنوا انظرونا نقتبس من نوركم قيل ارجعوا وراءكم فالتمسوا نورا فضرب بينهم بسور له باب باطنه فيه الرحمة وظاهره من قبله العذاب} {ينادونهم ألم نكن معكم قالوا بلى ولكنكم فتنتم أنفسكم وتربصتم وارتبتم وغرتكم الأماني حتى جاء أمر الله وغركم بالله الغرور} {فاليوم لا يؤخذ منكم فدية ولا من الذين كفروا} الآية. وهذا لأن الجزاء في الحقيقة إنما هو في الدار الآخرة التي هي دار الثواب والعقاب. وأما الدنيا فإنما يشرع فيها من العقاب ما يدفع به الظلم والعدوان كما قال تعالى: {وقاتلوهم حتى لا تكون فتنة ويكون الدين لله فإن انتهوا فلا عدوان إلا على الظالمين} وقال تعالى: {إنما السبيل على الذين يظلمون الناس ويبغون في الأرض بغير الحق} وهذا لأن المقصود بإرسال الرسل وإنزال الكتب هو إقامة القسط كما قال تعالى: {لقد أرسلنا رسلنا بالبينات وأنزلنا معهم الكتاب والميزان ليقوم الناس بالقسط وأنزلنا الحديد فيه بأس شديد ومنافع للناس وليعلم الله من ينصره ورسله بالغيب إن الله قوي عزيز} . وإذا كان الأمر كذلك فعقوبة الدنيا غير مستلزمة لعقوبة الآخرة ولا بالعكس. ولهذا أكثر السلف يأمرون بقتل الداعي إلى البدعة الذي يضل الناس لأجل إفساده في الدين سواء قالوا: هو كافر أو ليس بكافر. وإذا عرف هذا فتكفير " المعين " من هؤلاء الجهال وأمثالهم - بحيث يحكم عليه بأنه من الكفار - لا يجوز الإقدام عليه إلا بعد أن تقوم على أحدهم الحجة الرسالية التي يتبين بها أنهم مخالفون للرسل وإن كانت هذه المقالة لا ريب أنها كفر. وهكذا الكلام في تكفير جميع " المعينين " مع أن بعض هذه البدعة أشد من بعض وبعض المبتدعة يكون فيه من الإيمان ما ليس في بعض فليس لأحد أن يكفر أحدا من المسلمين وإن أخطأ وغلط حتى تقام عليه الحجة وتبين له المحجة. ومن ثبت إيمانه بيقين لم يزل ذلك عنه بالشك؛ بل لا يزول إلا بعد إقامة الحجة وإزالة الشبهة. وهذا الجواب لا يحتمل أكثر من هذا. والله المسئول أن يوفقنا وسائر إخواننا لما يحبه ويرضاه والله سبحانه أعلم.
'মাজমু' আল ফাতাওয়া লি ইবন তাইমিয়্যাহ', ১২/৪৮৯-৫০১
অনুবাদ: সাফিন চৌধুরী
Join Telegram: ideology of salaf