Abu Umar
If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
- Joined
- Nov 25, 2022
- Threads
- 664
- Comments
- 1,232
- Solutions
- 17
- Reactions
- 7,375
- Thread Author
- #1
সৃষ্টির অসীলা (মাধ্যম) ধরে আল্লাহকে পাওয়ার চেষ্টা করা।
তাওয়াস্সুল (التّوسّل ): কোন বস্তুর নিকটবর্তী হওয়া এবং তার নিকটে পৌঁছা।
অসীলা (الوسيلة ) অর্থ: নৈকট্য অর্জন করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
তোমরা তার (আল্লাহর) নিকটে অসীলা সন্ধান কর। সূরা আল্ মায়িদা ৫:৩৫।
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও সন্তুষ্টিমূলক কাজের মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জন করা।
তাওয়াস্সুল (التّوسّل ) দু’প্রকার:
প্রথম প্রকার: শরী‘আত সম্মত তাওয়াস্সুল।
এটাও কয়েকভাগে বিভক্ত, যথা:
১। আল্লাহ তা‘আলার নাম ও গুণাবলীর দ্বারা তার অসীলা বা নৈকট্য অর্জন করা।
যেমন: আল্লাহ তা‘আলা তার বাণীতে নির্দেশ দিয়ে বলেন: আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তার নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে। সূরা আল্ আ’রাফ ৭:১৮০।
২। ঈমান ও সৎ আমলের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ করা।
যেমন, ঈমানদারদের অসীলা অর্জনের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন। অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতএব আমাদের সকল গুনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দুর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে। সূরা আলে ইমরান ৩:১৯৩।
এক্ষেত্রে আরো প্রমাণ হলো হাদীছে বর্ণিত ঐ তিন ব্যক্তির ঘটনা যারা গুহায় আটকা পড়েছিলেন। উপর থেকে পাথর পড়ার কারণে তারা যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তার মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ফলে তারা বের হতে পারছিলেন না। তখন তারা নিজেদের সৎ কর্মসমূহের দ্বারা আল্লাহর নিকটে অসীলা করলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিপদ দূর করলেন। আর তারা বের হয়ে নিজ নিজ কাজে গমন করেন।(১)
৩। আল্লাহর তাওহীদ বা একত্বের মাধ্যমে তার অসীলা বা নৈকট্য অর্জন করা।
যেমন: ইউনুস আ. তাওহীদকে অসীলা করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা ইউনুস আ. এর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অতঃপর তিনি (ইউনুস আ.) অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র। সূরা আল্ আম্বিয়া ২১:৮৭-৮৮।
৪। স্বীয় দুর্বলতা, প্রয়োজন ও দারিদ্রতা প্রকাশের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে অসীলা করা।
যেমন: আইয়ূব আ. বলেছিলেন, আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি, আর আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। সূরা আল্ আম্বিয়া ২১:৮৩।
৫। জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে অসীলা করা।
যেমন: সাহাবাগণের যুগে যখন অনাবৃষ্টি হতো তখন তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিজেদের জন্য আল্লাহর নিকটে দু‘আ করতে বলতেন। তিনি মৃত্যুবরণ করলে সাহাবাগণ তার চাচা আব্বাস রা. কে নিজেদের জন্য আল্লাহর নিকটে দু‘আ করতে বললে তিনি তাদের জন্য দু‘আ করতেন।(২)
৬। নিজের গুনাহ ও পাপের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে অসীলা করা।
যেমন: মূসা আলাইহিস সালাম এর ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর যুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। সূরা আল্ ক্বাসাস ২৮:১৬।
দ্বিতীয় প্রকার অসীলা: শরী‘আত বহির্ভূত তাওয়াস্সুল।
তা হলো উল্লিখিত শরী‘আতসম্মত অসীলা ব্যতীত বাকী সকল অসীলা। যেমন: মৃত ব্যক্তিদের নিকটে প্রার্থনা ও শাফা‘আত তলবের মাধ্যমে অসীলা করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মান ও মর্যাদার দ্বারা অসীলা করা। সৃষ্টির যাত অথবা অধিকারের দ্বারা অসীলা করা। নিম্নে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করা হলো:
১। মৃত ব্যক্তিদের নিকটে দু‘আ চাওয়া অবৈধ: কারণ মৃত ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় যেমন দু‘আ করতে সক্ষম, মৃত্যুর পর তিনি সে রকম দু‘আ করতে সক্ষম নন।
একইভাবে মৃত ব্যক্তিদের নিকটে শাফা‘আত (সুপারিশ) চাওয়া অবৈধ। কারণ উমার ইবনে খাত্তাব, মুয়াবিয়াহ্ ইবনে আবূ সুফিয়ান ও তাদের সময়ে উপস্থিত সাহাবাগণ এবং তাদের সঠিকভাবে অনুসরণকারী তাবিয়ীগণ যখন অনাবৃষ্টির শিকার হতেন তখন তারা জীবিত ব্যক্তি, যেমন-আব্বাস রা. এবং ইয়াযীদ ইবনে আসওয়াদ রা. এর মাধ্যমেই আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন, অসীলা ধরতেন এবং সুপারিশ তলব করতেন।
কখনই তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের নিকটে বা অন্য স্থানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করেননি। বরং এর পরিবর্তে তারা আব্বাস ও ইয়াযীদ ইবনে আসওয়াদ থেকে মাধ্যম গ্রহণ করতেন।
উমার রা. এ বলে দু‘আ করেছিলেন: হে আল্লাহ, আপনার নাবীর জীবদ্দশায় আমরা আপনার নাবীর মাধ্যমে আপনার নিকটে অসীলাহ গ্রহণ করলে আপনি আমাদিগকে বৃষ্টি দিতেন। এখন তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন তাই আমরা আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচার মাধ্যমে আপনার নিকটে অসীলাহ করছি। অতএব, আপনি আমাদিগকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন: তখন তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে বৃষ্টি লাভ করতেন।(৩)
সাহাবাগণ যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে শরী‘আত সম্মত উপায়ে অসীলা গ্রহণে অসুবিধার সম্মুখীন হলেন তখন তার পরিবর্তে তারা আব্বাস রা. বা অন্য ছাহাবীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করতেন। অথচ মৃত ব্যক্তির মাধ্যমে অসীলা করা যদি জায়িয হতো তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের নিকটে এসে অসীলা করা তাদের জন্য খুবই সহজ ছিল।(৪)
সুতরাং তাদের সেটা পরিত্যাগ করা দ্বারা প্রমাণ হয় যে, দু‘আ প্রার্থনা এবং সুপারিশ চাওয়াসহ সকল ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিদেরকে অসীলা করা জায়িয নয়। মৃত ব্যক্তিদের জীবদ্দশা ও মৃত্যুর পর উভয় অবস্থায় যদি তাদের দ্বারা দু‘আ ও সুপারিশ চাওয়া সমান হতো তবে সাহাবাগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাদ দিয়ে তার চেয়ে কম মর্যাদা সম্পনড়ব ব্যক্তির নিকটে যেতেন না।
২। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা অন্য কারো সম্মানের অসীলা করা নাজায়িয।
অনেকে নিম্নোক্ত হাদীছটি বলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মান বা মর্যাদার দ্বারা অসীলা করা জায়িয বলে সাব্যস্ত করেন:
তোমরা যখন আল্লাহর নিকটে কোন কিছু চাইবে তখন আমার সম্মান ও মর্যাদার অসীলা করে চাও। কারণ আল্লাহর নিকটে আমার মর্যাদা মহান।(৫)
অথচ উপরোক্ত হাদীছটি মিথ্যা ও জাল। মুসলমানদের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে তা নেই। কোন হাদীছ বিশারদ ও বিশেষজ্ঞ তা উল্লেখ করেননি।(৬)
যেহেতু দলীল হিসাবে উপরোক্ত হাদীছটি সঠিক নয়, (আর অন্য কোন সাহীহ দলীলও নেই)। তাই রসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মান ও মর্যাদার অসীলা করা জায়িয নয়। কারণ ইবাদতের কোন বিষয় স্পষ্ট দলীল ব্যতীত সাব্যস্ত হয় না।
৩। সৃষ্টির দোহাই দিয়ে অসীলা করা অবৈধ।
কারণ আরবী “বা” অব্যয়টি শপথের জন্য ব্যবহৃত হলে এ দ্বারা আল্লাহর উপর শপথ করা বুঝায়। এক সৃষ্টির দ্বারা অপর সৃষ্টির উপর শপথ করা অবৈধ। কারণ হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী তা শিরক। তাহলে সৃষ্টির দ্বারা কিভাবে আল্লাহর উপর শপথ করা জায়েয হতে পারে?
আর যদি আরবী “বা” অব্যয়টি সাবাবিয়াহ্ বা কারণ হিসাবে ব্যবহার হয়, তবে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির দ্বারা চাওয়াকে দু‘আ কবুলের কারণ করেননি এবং তার বান্দাদের জন্য এটা শরী‘আত সম্মতও করেননি।
৪। সৃষ্টির কোন অধিকারের দোহাই দিয়ে অসীলা করা দু’টি কারণে নাজায়েয।
ক। আল্লাহর উপর কারো কোন অধিকার ওয়াজিব নয়। বরং আল্লাহ তা‘আলাই নিজের উপর বান্দার জন্য কিছু অধিকার নির্ধারণ করে তার উপর অনুগ্রহ ও দয়া করেছেন।
যেমন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। সূরা আর রূম ৩০:৪৭।
আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দা তার নিকটে ভাল প্রতিদান লাভের অধিকার রাখে। তবে তার এ অধিকার দয়া ও অনুগ্রহ লাভের অধিকার। এটা ঐরূপ অধিকার নয় যেমন কোন জিনিসের বিনিময়ে এক সৃষ্টির উপর অন্য সৃষ্টির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। বরং আল্লাহ তার আনুগত্যশীল ও মুমিন বান্দাদেরকে যে পুরষ্কার দিবেন সেটা তার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ ও দয়া স্বরূপ।
খ। এই অধিকারের মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপর অনুগ্রহ ও দয়া করেন। এটা কেবল তার সাথেই খাস বা সংশ্লিষ্ট। এর সাথে অন্য কারো কোন সম্পর্ক নেই। যখন কোন অধিকারহীন ব্যক্তি এর দ্বারা অসীলা করবে তখন সে এমন অপরিচিত বিষয়ের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণকারী বলে গণ্য হবে যার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। ফলে এ অসীলা দ্বারা সে কোন কিছুই পাবে না।
আমি যাঞ্ছাকারীদের অধিকারের মাধ্যমে চাইতেছি বলে যে হাদীছটি বর্ণনা করা হয় তা সাহীহ নয়। কারণ, এ হাদীছের সনদে “আত্বীয়্যাহ্ আল্ আওফী” রয়েছেন। তিনি দুর্বল। অনেক মুহাদ্দিস তার দুর্বলতার ক্ষেত্রে সকলের ঐক্যমতের কথা উল্লেখ করেছেন। অতএব, যার অবস্থা এই তার বর্ণিত হাদীছ দ্বারা আক্বীদার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলীল পেশ করা গ্রহণীয় হবে না।
তাছাড়া এতে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে অসীলা করা হয়নি। বরং সকল প্রার্থনাকারীদের অধিকারের দ্বারা অসীলা করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াদানুযায়ী প্রার্থনাকারীদের অধিকার হলো তাদের প্রার্থনা কবুল করা। এটা এমন এক অধিকার যা প্রার্থনাকারীদের জন্য আল্লাহ্ নিজেই নিজের উপর ওয়াজিব করেছেন। অন্য কেউ তার উপর এটা ওয়াজিব করেনি। আর এটা আল্লাহর সত্য ওয়াদা বা অঙ্গিকারের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ। সৃষ্টিজগতের অধিকারের মাধ্যমে অসীলা গ্রহণ নয়।
শাইখ ড. সালিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান।
অনুবাদ: শাইখ মুখলিসুর রহমান মানসুর।
অনুবাদ: শাইখ মুখলিসুর রহমান মানসুর।
১. সহীহ বুখারী হা/২২১৫, ২২৭২, ২৩৩৩, ২৪৬৫, ৫৯৭৪, ও সহীহ মুসলিম হা/২৭৪৩।
২. সাহীহ বুখারী হা/১০১৪, সাহীহ মুসলিম হা/৮৯৭।
৩. সাহীহ বুখারী ১০১০।
৪. মাজমূ’ ফতোওয়া ১/৩১৮-৩১৯।
৫. তাওয়াস্ সুল লিশ্ শাইখ আলবানী (রহি.) ১১৭ পৃষ্ঠা।
৬. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩১৯।