আসমানসমূহ ও যমিনের সৃষ্টি এবং দিন ও রাত্রির বিবর্তনের মাঝে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন।একজন মুমিনের উচিত হবে যে, সে এই সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা আর তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করা।
মহান আল্লাহ তা'আলা এই পৃথিবীতে যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন কোনো কিছুই নিরর্থক নয়।তবে প্রত্যেক জিনিসেরই সাধারণত ভালো ও মন্দ দুটোই দিক থাকে।সে সময় আমাদেরকে ভালো টা গ্রহণ করে নিতে হবে এবং খারাপ থেকে আশ্রয় চাইতে হবে।
আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্টির মধ্যে গ্রীষ্মকালও একটা আল্লাহ্র সৃষ্টি এতেও ভালো ও মন্দ দুটোই দিক আমরা দেখতে পাই।যখন এই গ্রীষ্মকালে তীব্র গরম পড়ে তখন আমরা হয়তো মনে করি আল্লাহ্ তা'আলা গ্রীষ্মকাল কেন যে সৃষ্টি করেছেন?? কিন্তু আমরা যদি এই সময় থেকে কিছু শিক্ষা নিতে চাই তাহলে অবশ্যই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবো আর প্রকৃত মুমিনের এটাই বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, যেটা মহান আল্লাহ্ কুরআন মাজীদে ব্যক্ত করেছেন।একজন প্রকৃত মুমিনের এটাও বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত যে, এই গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে নবী (ﷺ) কি করতেন? তিনার কী নির্দেশনা ছিল? সাহাবা (রযিয়াল্লাহু আনহুম) রা কি করতেন? এই ব্যাপারে জানার আগ্রহী হবে।
গ্রীষ্মকালে করণীয় কতিপয় নবী (ﷺ)এর নির্দেশনা।
১গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমে জাহান্নামকে স্বরণ করে তা থেকে আশ্রয় চাইতে হবে এবং তা থেকে নিজেকে বাঁচানোর ।কারণ সেই জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে অনেক বেশি হবে।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল।’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো ঊনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সম পরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।’ (সহীহ বুখারী ৩২৬৫)
অনুরূপভাবে এই তীব্র গরমের সময় কিয়ামতের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি কে স্বরণ করে নিজের ইমানের নবায়ন করা উচিত।সেই কঠিন দিনের ব্যপারে নবী (ﷺ) বলেনঃ
কিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের সন্নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। অবশেষে তা মানুষের এক মাইলের দূরত্বের মাঝে চলে আসবে। বর্ণনাকারী সুলায়ম ইবনু আমির (রহঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ আমি জানি না, ميل শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, জমিনের দূরত্ব, না ঐ শলাকা যা চোখে সুরমা দেয়া কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘর্মের মাঝে ডুবে থাকবে। তাদের কারো ঘাম পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হবে, কেউ হাঁটু পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ কোমর পর্যন্ত আর কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।(সহীহ মুসলিম ৭০৯৮)
সেই কঠিন ভয়াবহ সময়ে আল্লাহ্র আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না।আর তাতে সাত প্রকারের মানুষই শুধু জায়গা পাবে।
২রোদ থেকে বাঁচতে হবে।
কায়স বিন হাযিম নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আমাকে নবী (ﷺ) দেখেন সে সময় আমি রৌদ্রে বসে ছিলাম।অতঃপর তিনি বললেনঃ ছায়ার দিকে এসো। (সিলসিলা সহীহাহ্)
৩যেখান থেকে মানুষ ছায়া গ্রহণ করে বা রোদ থেকে বাঁচার জন্য আরাম করে সেগুলো জায়গা ভালো রাখা উচিত।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
তোমরা লা'নাতকারীর দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, লানতের (অভিশাপ) সে কাজ দুটি কি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, মানুষের (যাতায়াতের) চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব পায়খানা করা।(সহীহ মুসলিম ৫০৬)
৪বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
গরমের প্রচন্ড তাপ থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে চাইলে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হলো বৃক্ষরোপণ। পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ কাটা হচ্ছে যত্রতত্র এবং এ কারণে পৃথিবীব্যাপী দেখা দিচ্ছে অসহ্য গরম। এর জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে বৃক্ষরোপণ অভিযানও চালানো হয় অথচ এই শিক্ষা অনেক আগেই আমাদের রাসুল ﷺ দিয়েছেন এবং গাছ রোপণের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন নানাভাবে।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
যদি কেয়ামত হয়েই যায় আর এমতাবস্থায় তোমাদের কারও হাতে একটি চারা থাকে, তবে সে যদি দণ্ডায়মান হওয়ার আগেই চারাটি রোপণ করতে পারে, তা হলে সে যেন তা রোপণ করে’ (সহিহুল জামে : ১৪২৪)
৫পানির হেফাজত করতে হবে অপচয় বন্ধ করতে হবে আর বিশেষ ভাবে পানি ও পানি সংক্রান্ত জিনিসের সাদাকাহ্ এর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
এমনিতেই সারা বছরই পানির হেফাজত করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই সময়ে যেহেতু পানির ব্যবহার তুলনামূলক বেশি হয় বলে তার হেফাজতের প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
পানি একটা আল্লাহ্ তা'আলার বড় নিয়ামত অতএব এই নিয়ামতের কদর করতে হবে নাহলে আল্লাহ্ তা'আলা এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করতে পারেন।তবে বঞ্চিত করার ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে সরাসরি বঞ্চিত না করলেও।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
আমরা ইচ্ছে করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? (সূরা ওয়াকিয়াহ ৭০)
অন্যত্রে বলেনঃ
বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্ৰবাহমান পানি? (সূরা মুলক্ ৩০)
এই সময়ে আমরা মৃত পিতামাতা বা আত্মীয়-স্বজনদের নামে বিভিন্ন ধরনের পানির ব্যবস্থা করে গুরুত্বপূর্ণ সাদাকার নেকি অর্জন করতে পারি।
নবী (ﷺ) কে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেন
হে আল্লাহ্র রসূল!ﷺ আমার মাতা ইনতিকাল করেছেন, আমি কি তার পক্ষ হতে সাদাকা করব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ কোন্ সাদাকা উত্তম? তিনি বললেনঃ পানি পান করানো (-র ব্যবস্থা করা)। (নাসায়ী ৩৬৬৫ সূত্র হাসান)
তবে হাদীসের আলোকে পানিকে উত্তম সাদাকাহ্ বলা হলেও পরিস্থিতি হিসেবে সাদাকার ধরন পরিবর্তন হতে পারে গরীব মানুষের প্রয়োজন কে সামনে রেখে।
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ
কতক তাবেয়ী বলেছেন যে, যার গুনাহ বেশি হয়ে যাবে সে যেন পানি পান করার ব্যবস্থা করে, আল্লাহ্ তা'আলা একটা পিপাসিত কুকুরকে পানি পান করার কারণে তার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন তো একজন মুমিন বান্দাকে পান করালে কেন ক্ষমা করবেন না!!
অতএব এই সময়ে পানির সাদাকার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং যথাসম্ভব পশু পাখির প্রতিও খেয়াল রাখা উচিত এর মাধ্যমেও আমরা নেকী অর্জন করতে পারি।
৬বৃষ্টি চেয়ে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তিগফার ও স্বলাতুল ইস্তেসকা (বৃষ্টি প্রার্থনার নামায) পড়া উচিত।
নিম্নোক্ত দুআ গুলো পড়া উচিত।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন বৃষ্টির পানি দান করুন যা সাহায্যকারী, সুপেয়, উর্বরকারী; কল্যাণকর, ক্ষতিকর নয়; শীঘ্রই, বিলম্বে নয়।
[আবূ দাউদ, ১/৩০৩, নং ১১৭১। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদে একে সহীহ বলেছেন, ১/২১৬]
হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন।
তা ছাড়া বেশি বেশি ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করতে হবে কারণ বৃষ্টি চাওয়ার একটা বড় মাধ্যম হলো ইস্তেগফার তথা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল।
তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। (সূরা নূহ ১০-১১)
অনুরূপভাবে এই সময়ে স্বলাতুল ইস্তেসকাও (বৃষ্টি প্রার্থনার নামায) পড়া উচিত।
আববাদ ইবনু তামীম (রহ.) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন বৃষ্টির দু‘আর উদ্দেশে বের হয়েছিলেন, আমি তা দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি লোকদের দিকে তাঁর পিঠ ফিরালেন এবং কিবলামুখী হয়ে দু‘আ করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর চাদর উল্টে দিলেন। আমাদের নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তিনি উভয় রাক‘আতে সশব্দে কিরাআত পাঠ করেন। (সহীহ বুখারী ১০২৫)
পরিশেষে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের গরমের তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা করেন এবং এই মৌসুম থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন।
মহান আল্লাহ তা'আলা এই পৃথিবীতে যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন কোনো কিছুই নিরর্থক নয়।তবে প্রত্যেক জিনিসেরই সাধারণত ভালো ও মন্দ দুটোই দিক থাকে।সে সময় আমাদেরকে ভালো টা গ্রহণ করে নিতে হবে এবং খারাপ থেকে আশ্রয় চাইতে হবে।
আল্লাহ্ তা'আলার সৃষ্টির মধ্যে গ্রীষ্মকালও একটা আল্লাহ্র সৃষ্টি এতেও ভালো ও মন্দ দুটোই দিক আমরা দেখতে পাই।যখন এই গ্রীষ্মকালে তীব্র গরম পড়ে তখন আমরা হয়তো মনে করি আল্লাহ্ তা'আলা গ্রীষ্মকাল কেন যে সৃষ্টি করেছেন?? কিন্তু আমরা যদি এই সময় থেকে কিছু শিক্ষা নিতে চাই তাহলে অবশ্যই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবো আর প্রকৃত মুমিনের এটাই বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত, যেটা মহান আল্লাহ্ কুরআন মাজীদে ব্যক্ত করেছেন।একজন প্রকৃত মুমিনের এটাও বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত যে, এই গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমে নবী (ﷺ) কি করতেন? তিনার কী নির্দেশনা ছিল? সাহাবা (রযিয়াল্লাহু আনহুম) রা কি করতেন? এই ব্যাপারে জানার আগ্রহী হবে।
গ্রীষ্মকালে করণীয় কতিপয় নবী (ﷺ)এর নির্দেশনা।
১গ্রীষ্মকালের তীব্র গরমে জাহান্নামকে স্বরণ করে তা থেকে আশ্রয় চাইতে হবে এবং তা থেকে নিজেকে বাঁচানোর ।কারণ সেই জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে অনেক বেশি হবে।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
نَارُكُمْ جُزْءٌ مِن سَبْعِينَ جُزْءًا مِن نَارِ جَهَنَّمَ، قيلَ: يا رَسولَ اللَّهِ، إنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً، قالَ: فُضِّلَتْ عليهنَّ بتِسْعَةٍ وسِتِّينَ جُزْءًا، كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا.
তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল।’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো ঊনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সম পরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।’ (সহীহ বুখারী ৩২৬৫)
অনুরূপভাবে এই তীব্র গরমের সময় কিয়ামতের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি কে স্বরণ করে নিজের ইমানের নবায়ন করা উচিত।সেই কঠিন দিনের ব্যপারে নবী (ﷺ) বলেনঃ
تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ " . قَالَ سُلَيْمُ بْنُ عَامِرٍ فَوَاللَّهِ مَا أَدْرِي مَا يَعْنِي بِالْمِيلِ أَمَسَافَةَ الأَرْضِ أَمِ الْمِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ بِهِ الْعَيْنُ . قَالَ " فَيَكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى حَقْوَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ الْعَرَقُ إِلْجَامًا " . قَالَ وَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِهِ إِلَى فِيهِ .
কিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের সন্নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। অবশেষে তা মানুষের এক মাইলের দূরত্বের মাঝে চলে আসবে। বর্ণনাকারী সুলায়ম ইবনু আমির (রহঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ আমি জানি না, ميل শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, জমিনের দূরত্ব, না ঐ শলাকা যা চোখে সুরমা দেয়া কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘর্মের মাঝে ডুবে থাকবে। তাদের কারো ঘাম পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হবে, কেউ হাঁটু পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ কোমর পর্যন্ত আর কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।(সহীহ মুসলিম ৭০৯৮)
সেই কঠিন ভয়াবহ সময়ে আল্লাহ্র আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না।আর তাতে সাত প্রকারের মানুষই শুধু জায়গা পাবে।
২রোদ থেকে বাঁচতে হবে।
عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِيْهِ رضی اللہ عنہ قَالَ: رَآنِي النَّبِيُّ صلی اللہ علیہ وسلم وَأَنَا قَاعِدٌ فِي الشَّمْسِ، فَقَالَ: تَحَوَّلْ إِلَى الظِّلِّ.
কায়স বিন হাযিম নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আমাকে নবী (ﷺ) দেখেন সে সময় আমি রৌদ্রে বসে ছিলাম।অতঃপর তিনি বললেনঃ ছায়ার দিকে এসো। (সিলসিলা সহীহাহ্)
৩যেখান থেকে মানুষ ছায়া গ্রহণ করে বা রোদ থেকে বাঁচার জন্য আরাম করে সেগুলো জায়গা ভালো রাখা উচিত।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
اتَّقُوا اللَّعَّانَيْنِ» قَالُوا: وَمَا اللَّعَّانَانِ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «الَّذِي يَتَخَلَّى فِي طَرِيقِ النَّاسِ، أَوْ فِي ظِلِّهِمْ.
তোমরা লা'নাতকারীর দুটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, লানতের (অভিশাপ) সে কাজ দুটি কি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, মানুষের (যাতায়াতের) চলাফেরার রাস্তায় অথবা তাদের (বিশ্রাম নেয়ার) ছায়ায় প্রস্রাব পায়খানা করা।(সহীহ মুসলিম ৫০৬)
৪বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
গরমের প্রচন্ড তাপ থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে চাইলে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হলো বৃক্ষরোপণ। পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ কাটা হচ্ছে যত্রতত্র এবং এ কারণে পৃথিবীব্যাপী দেখা দিচ্ছে অসহ্য গরম। এর জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে বৃক্ষরোপণ অভিযানও চালানো হয় অথচ এই শিক্ষা অনেক আগেই আমাদের রাসুল ﷺ দিয়েছেন এবং গাছ রোপণের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন নানাভাবে।
নবী (ﷺ) বলেনঃ
إن قامتِ الساعةُ و في يدِ أحدِكم فسيلةً ، فإن استطاعَ أن لا تقومَ حتى يغرِسَها فليغرِسْها.
যদি কেয়ামত হয়েই যায় আর এমতাবস্থায় তোমাদের কারও হাতে একটি চারা থাকে, তবে সে যদি দণ্ডায়মান হওয়ার আগেই চারাটি রোপণ করতে পারে, তা হলে সে যেন তা রোপণ করে’ (সহিহুল জামে : ১৪২৪)
৫পানির হেফাজত করতে হবে অপচয় বন্ধ করতে হবে আর বিশেষ ভাবে পানি ও পানি সংক্রান্ত জিনিসের সাদাকাহ্ এর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
এমনিতেই সারা বছরই পানির হেফাজত করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই সময়ে যেহেতু পানির ব্যবহার তুলনামূলক বেশি হয় বলে তার হেফাজতের প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
পানি একটা আল্লাহ্ তা'আলার বড় নিয়ামত অতএব এই নিয়ামতের কদর করতে হবে নাহলে আল্লাহ্ তা'আলা এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করতে পারেন।তবে বঞ্চিত করার ধরন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে সরাসরি বঞ্চিত না করলেও।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
لَوْ نَشَاءُ جَعَلْنَاهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ.
আমরা ইচ্ছে করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? (সূরা ওয়াকিয়াহ ৭০)
অন্যত্রে বলেনঃ
قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ اَصۡبَحَ مَآؤُکُمۡ غَوۡرًا فَمَنۡ یَّاۡتِیۡکُمۡ بِمَآءٍ مَّعِیۡنٍ
বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্ৰবাহমান পানি? (সূরা মুলক্ ৩০)
এই সময়ে আমরা মৃত পিতামাতা বা আত্মীয়-স্বজনদের নামে বিভিন্ন ধরনের পানির ব্যবস্থা করে গুরুত্বপূর্ণ সাদাকার নেকি অর্জন করতে পারি।
নবী (ﷺ) কে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করেন
يا رسولَ اللهِ ! إنَّ أمي ماتت ، أفأتصدقُ عنها ؟ قال : نعم . قلتُ : فأيُّ الصدقةِ أفضلُ ؟ قال : سقْيُ الماءِ.
হে আল্লাহ্র রসূল!ﷺ আমার মাতা ইনতিকাল করেছেন, আমি কি তার পক্ষ হতে সাদাকা করব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি বললামঃ কোন্ সাদাকা উত্তম? তিনি বললেনঃ পানি পান করানো (-র ব্যবস্থা করা)। (নাসায়ী ৩৬৬৫ সূত্র হাসান)
তবে হাদীসের আলোকে পানিকে উত্তম সাদাকাহ্ বলা হলেও পরিস্থিতি হিসেবে সাদাকার ধরন পরিবর্তন হতে পারে গরীব মানুষের প্রয়োজন কে সামনে রেখে।
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ
وقد قال بعض التابعين : من كثرت ذنوبه فعليه بسقي الماء. وقد غفر الله ذنوب الذي سقى الكلب ، فكيف بمن سقى رجلا مؤمنا موحدا وأحياه
تفسیر القرطبی : 215/7
تفسیر القرطبی : 215/7
কতক তাবেয়ী বলেছেন যে, যার গুনাহ বেশি হয়ে যাবে সে যেন পানি পান করার ব্যবস্থা করে, আল্লাহ্ তা'আলা একটা পিপাসিত কুকুরকে পানি পান করার কারণে তার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন তো একজন মুমিন বান্দাকে পান করালে কেন ক্ষমা করবেন না!!
অতএব এই সময়ে পানির সাদাকার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং যথাসম্ভব পশু পাখির প্রতিও খেয়াল রাখা উচিত এর মাধ্যমেও আমরা নেকী অর্জন করতে পারি।
৬বৃষ্টি চেয়ে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তিগফার ও স্বলাতুল ইস্তেসকা (বৃষ্টি প্রার্থনার নামায) পড়া উচিত।
নিম্নোক্ত দুআ গুলো পড়া উচিত।
اَللّٰھُمَّ اسْقِنَا غَیْثًا مُّغِیْثًا مَّرِیْئًا مَّرِیْعًا نَافِعًا غَیْرَ ضَارٍّ عَاجِلًا غَیْرَ آجِلٍ.
হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন বৃষ্টির পানি দান করুন যা সাহায্যকারী, সুপেয়, উর্বরকারী; কল্যাণকর, ক্ষতিকর নয়; শীঘ্রই, বিলম্বে নয়।
[আবূ দাউদ, ১/৩০৩, নং ১১৭১। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদে একে সহীহ বলেছেন, ১/২১৬]
اللهم اسقنا، اللهم اسقنا، اللهم اسقنا.
হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দান করুন।
তা ছাড়া বেশি বেশি ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করতে হবে কারণ বৃষ্টি চাওয়ার একটা বড় মাধ্যম হলো ইস্তেগফার তথা আল্লাহ্ তা'আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا.
অতঃপর বলেছি, তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল।
یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا.
তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। (সূরা নূহ ১০-১১)
অনুরূপভাবে এই সময়ে স্বলাতুল ইস্তেসকাও (বৃষ্টি প্রার্থনার নামায) পড়া উচিত।
عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ خَرَجَ يَسْتَسْقِي قَالَ فَحَوَّلَ إِلَى النَّاسِ ظَهْرَهُ، وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ يَدْعُو، ثُمَّ حَوَّلَ رِدَاءَهُ، ثُمَّ صَلَّى لَنَا رَكْعَتَيْنِ جَهَرَ فِيهِمَا بِالْقِرَاءَةِ.
আববাদ ইবনু তামীম (রহ.) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন বৃষ্টির দু‘আর উদ্দেশে বের হয়েছিলেন, আমি তা দেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি লোকদের দিকে তাঁর পিঠ ফিরালেন এবং কিবলামুখী হয়ে দু‘আ করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর চাদর উল্টে দিলেন। আমাদের নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তিনি উভয় রাক‘আতে সশব্দে কিরাআত পাঠ করেন। (সহীহ বুখারী ১০২৫)
পরিশেষে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের গরমের তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা করেন এবং এই মৌসুম থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন।
সংকলনে: তাওহীদুর রহমান সালাফী।
ফারেগ জামিয়া সালাফিয়া বেনারস ভারত
ফারেগ জামিয়া সালাফিয়া বেনারস ভারত