আকিদা গুনাহের কারণে কোনো মুসলিমকে কাফির বলা যাবে না, যদি না সে উক্ত গুনাহকে বৈধ মনে করে

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
1,102
Comments
1,293
Solutions
1
Reactions
12,173
ব্যাখ্যা: শাইখ ইবনু মানি (রাহিমাহুল্লাহ)

এখানে লেখকের 'আহলুল কিবলা' দ্বারা উদ্দেশ্য, আল্লাহর ইবাদাতে আল্লাহর একত্বের ঘোষণাদাতাগণ, নিজেদের লেনদেনে আল্লাহর জন্য মুখলিসগণ, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে তাওহীদের কালিমা অনুযায়ী আমলকারীগণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা সংবাদ দিয়েছেন সবকিছু সত্যায়নকারীগণ এবং আল্লাহর আদেশ পালনকারীগণ। তারা এমন কিছু করেন না, যা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' সাক্ষ্যদানকে নষ্ট করে। এ অর্থ ও উদ্দেশ্যের দিকে লেখক পূর্বে ইশারা করেছেন। আমরা আমাদের কিবলাবাসীদের ততক্ষণ মুসলিম-মুমিন বিশ্বাস করি, যতক্ষণ তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন তা স্বীকার করে, যা বলেছেন ও সংবাদ দিয়েছেন তা সত্যায়ন করে। কেননা আমরা বিশ্বাস করি, পরিপূর্ণ ঈমান দ্বারা উদ্দেশ্য এমন ঈমান যা বিশ্বাস, স্বীকারোক্তি ও আমলকে অন্তর্ভুক্ত করে। এ আলোচনা দ্বারা লেখকের উদ্দেশ্য খারিজীদের খন্ডন করা, যারা যে-কোনো পাপের কারণে কাফির আখ্যা দেয়।

ব্যাখ্যা: শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)

পাপের কারণে কোনো মুসলিমকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফির বলবো না, যতক্ষণ না উক্ত পাপকে সে অন্তরে হালাল বিশ্বাস করে। অন্তরে বিশ্বাস করা শর্ত কারণ, প্রত্যেক পাপী কর্মের মাধ্যমে তার পাপকে হালাল করে নেয়। অর্থাৎ সেই পাপকাজে জড়িত হওয়া মানেই, কর্মের মাধ্যমে তা হালাল করে নেওয়া। এ কারণে কর্মের মাধ্যমে হালাল করা আর অন্তরে বিশ্বাসের মাধ্যমে হালাল। করার মাঝে বিভাজন ও পার্থক্য করতে হবে। সবাই একমত যে, পাপকাজকে অন্তরে হালাল তথা বৈধ বিশ্বাস করলে কাফির হয়ে যাবে। কিন্তু অন্তরে হালাল বিশ্বাস না করে, যদি কর্মের মাধ্যমে হালাল করে নেয়, তাহলে সে পাপী হবে এবং উক্ত পাপের উপযুক্ত শাস্তি পাবে। তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলে ভিন্ন কথা। উক্ত পাপের কারণে শাস্তি পেলেও ঈমানের মাধ্যমে আবার সে শাস্তি থেকে নাজাত পেয়ে যাবে। এর বিপরীতে খারিজী ও মুতাযিলারা বলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। তবে দুনিয়াতে এমন ব্যক্তি কাফির না-কি মুনাফিক বলতে হবে, তা নিয়ে উভয় দলের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে।

বর্তমানে খারিজী ও মুতাযিলাদের অনুসারী একটি দলের উত্থান ঘটেছে। তারা খারিজী ও মুতাযিলাদের মতোই শাসক ও প্রজা অধিকাংশ মুসলিমকে কাফির বলে থাকে। সিরিয়া, মক্কা-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের কিছু দলের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।

খারিজীদের মতোই তারা কিছু সংশয়-সন্দেহের জালে বেষ্টিত। তাদের সংশয়-সন্দেহের উৎস সেসব দলীল, যেসব দলীলে বলা হয়েছে, ‘যে-ব্যক্তি এমন কাজ করবে, সে কুফরী করবে।’ ইবনু আবিল ইয এমন কিছু হাদীস উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকীদা হচ্ছে, ‘ঈমান কথা ও কাজের নাম এবং তা বাড়ে ও কমে। যে-কোনো পাপ হোক না কেন, তা কর্মগত কুফরী, বিশ্বাসগত কুফরী নয়। আহলুস সুন্নাহর মতে, ঈমানের মতোই কুফর স্তরের কয়েকটি। তন্মধ্যে একটি স্তর হচ্ছে ছোটো কুফর, যার কারণে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায় না।’

এরপর তিনি এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। উল্লিখিত উত্থিত দলটি সে-দৃষ্টান্তটি বোঝার ব্যাপারে বেখবর ও বেখেয়াল। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একটি বিষয় কোনো বিচক্ষণতার সাথে বোঝা ওয়াজিব। তা হলো, মানব রচিত বিধানে ফয়সালা করা কখনো এমন কুফরী হতে পারে, যা ব্যক্তিকে দ্বীন থেকে বের করে দেবে। আবার কখনো ছোটো বা বড়ো পাপ হতে পারে এবং রূপক কুফর হতে পারে বা ছোটো কুফর হতে পারে।

এমনটা হবে বিচারকের অবস্থাভেদে। যদি বিচারক বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর আইনে বিচার করা ওয়াজিব নয় বা যে-কোনো আইনে বিচার করার ইখতিয়ার আছে বা জেনেশুনে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করেন, তাহলে তা বড়ো কুফরী হবে এবং তিনি দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবেন।

কিন্তু বিচারক যদি বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর আইনে বিচার করা ওয়াজিব এবং তার বাস্তবতাও জানেন; কিন্তু এরপরও এ বিশ্বাসে আল্লাহর আইনে বিচার না করেন যে, এ কারণে সে আল্লাহর শাস্তির যোগ্য, তাহলে তিনি নাফরমান বান্দা হিসেবে গণ্য হবেন। এটা হবে রূপক কুফর বা ছোটো কুফর। এ কারণে তিনি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।

আর বিচারক যদি প্রাণান্তকর চেষ্টা ও সাধ্য ব্যয় করার পরও আল্লাহর আইন জানতে না পারেন এবং বিচার করতে গিয়ে ভুল করে বসেন, তাহলে এমন 'ভুলকারী বিচারক' চেষ্টা করার কারণে নেকি পাবেন এবং তার ভুল ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

ব্যাখ্যা: শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)

লেখকের এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ জেনা, মদপান, সুদ, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া বা এ জাতীয় কোনো পাপের কারণে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাওহীদপন্থি কোনো মুসলিমকে কাফির বলে না, যতক্ষণ না সে উক্ত পাপকে হালাল বিশ্বাস করে। যদি সে হালাল বিশ্বাস করে, তাহলে সে কুফরী করবে। কেননা তখন সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী হয়ে যায় এবং দ্বীন থেকে বের হয়ে যায়। আর যদি হালাল বিশ্বাস না করে, তাহলে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর মতে, সে কুফরী করবে না; বরং তার ঈমান দুর্বল হয়ে যায় এবং সে যে অবাধ্যতায় জড়িয়েছে পবিত্র শরীআতের ফয়সালা অনুযায়ী তাকে ফাসিক বলা হবে, দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর মত। এ মত খারিজী, মুতাযিলা ও তাদের বাতিল পথের অনুসারীদের মতের বিপরীত। কারণ, খারিজীরা পাপের কারণে কাফির বলে আর মুতাযিলারা দুনিয়া ও আখিরাতে পাপে জড়িত ব্যক্তিকে ইসলাম ও কুফরের মাঝামাঝিতে রাখে। তবে পরকালের ব্যাপারে মুতাযিলারা খারিজীদের সাথে একমত যে,বপাপে জড়িত ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী। খারিজী ও মুতাযিলা উভয় দলের মত কিতাব, সুন্নাহ ও উম্মাহর সালাফদের ইজমা অনুযায়ী বাতিল। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে কিছু মানুষের কাছে উভয় দলের বিশ্বাসটি সংশয়পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তবে আলহামদুলিল্লাহ হকপন্থিদের কাছে তাদের বিষয়টি স্পষ্ট, যেমনটি আমরা আলোচনা করলাম।

আল্লাহ তাওফীকদাতা।

– শারহুল আকীদাহ আত তহাবিয়্যাহ, পৃ. ৭৮-৮১ (প্রথম মূদ্রণ); বিলিভার্স ভিশন পাবলিকেশন্স
 
Back
Top