If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
- Joined
- Nov 25, 2022
- Threads
- 665
- Comments
- 1,233
- Solutions
- 17
- Reactions
- 7,533
- Thread Author
- #1
খবরে ওয়াহেদ কি?
খবরে ওয়াহেদ তার সবলতা ও দুর্বলতার দিক থেকে দুই প্রকার: মাকবূল। (গ্রহণীয়) ও মারদুদ (বর্জনীয়)
খবরে ওয়াহেদের প্রথম প্রকার: মাকবূল
মাকবূলহল সেই হাদীস, যার বর্ণনাকারীর সত্যতা প্রাধান্য পেয়েছে।
খবরে ওয়াহেদের মান: এ হাদীসকে দলীল মানা ও তার উপর আমল করা ওয়াজেব।
এই মাকবূল হাদীস আবার দুইভাগে বিভক্ত: তার স্তর বা মান নির্ধারণের দিক থেকে বিভক্তি এবং তার উপর আমল করা বা না করার দিক থেকে
প্রথমবিভক্তি
সহীহ: লিযাতিহ ও লিগায়রিহ
হাসান: লিযাতিহ ও লিগায়রিহ ।
লিযাতিহ মানে স্বনির্ভর বা নিজে-নিজেই এবং লিগায়রিহ মানে পরনির্ভর, অর্থাৎপরের সাহায্য নিয়ে সহীহ বা হাসান হাদীস।
সহীহ লিযাতিহ কাকে বলে?
যে হাদীসের সনদ আদ্ল ও য়াবেত্ রাবী তার অনুরূপ রাবী থেকে বর্ণনায় আদ্যপ্রান্ত অবিচ্ছিন্ন থাকে এবং তা শুযুয ও ইল্লতমুক্ত থাকে।
বলাবাহুল্য, সহীহ লিযাতিহ হাদীস তাকে বলে, যার মধ্যে ৫টি শর্ত বর্তমান থাকে -
১৷ সনদ বা সূত্র মুত্তস্বিল বা অবিচ্ছিন্ন থাকা। তার আগাগোড়ায় প্রত্যেক। বর্ণনাকারী যেন উর্ধুতন বর্ণনাকারী থেকে সরাসরি হাদীস গ্রহণ করে থাকে।
২। বর্ণনাকারীরা যেন 'আদ্ল” : সং, ন্যায়নিষ্ঠ, সন্তোষজনক, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হয়। মুসলিম, সাবালক ও জ্ঞানসম্পন্ন হয় এবং পাপাচারী (ফাসেক) ও আত্যমর্যাদাহীন না হয়। তার নির্ভরযোগ্যতা যেন অব্যক্ত অথবা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
৩। তারা যেন য্বাবেত্ব হয়। অর্থাৎ, মুখস্থ রাখা বা লিখে রাখার ব্যাপারে তাদের স্মৃতিশক্তি তথা নির্ভুল বর্ণনা-ক্ষমতা যেন পরিপূর্ণ বিদ্যমান থাকে।
৪। হাদীসটি যেন শুযুযমুক্ত হয়। অর্থাৎ, তুলনামূলক অধিকতর সহীহ হাদীসের বিরোধী প্রমাণিত না হয়।
৫। হাদীসটি যেন ইল্লতমুক্ত হয়। অর্থাৎ, যে কোনও সুক্ষা দোষ-ত্রুটি থেকে যেন মুক্ত হয়। হাদীসের সহীহ হওয়ার ব্যাপারে ক্ষুর্লরকারী কোনও গুপ্ত কারণ না থাকে। অথচ বাহ্যতঃ তা থেকে মুক্ত মনে হয়।
সহীহ লিযাতিহ এর উদাহরণ:
জুবাইর বিন মুত্বইম ৯ কর্তৃক বর্ণিত বুখারীর হাদীস। যাতে তিনি বলছেন, আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ ষষ্ট মাগরিবে সূরা তুর পাঠ করেছেন। (বুখারী ৭৬৫নং)
সহীহ লিযাতিহ এর মান:
আহলুল হাদীসদের ঐক্যমতে এ হাদীসকে দলীল মানা ও সেই অনুযায়ী আমল করা ওয়াজেব।
হাদীসটি সহীহ বা সহীহ নয় বলতে উদ্দেশ্য:
জ্ঞাতব্য যে, 'সহীহ হাদীস” বলতে উদ্দেশ্য হল, সে হাদীসের মধ্যে সহীহ হওয়ার ৫টি শর্ত পাওয়া গেছে। তবে সেটা (মুতাওয়াতিরের মতো) সুনিশ্চিত নয়। যেমন সহীহ হওয়ার পরেও আমল ওয়াজেব না হতেও পারে। যেহেতু তা মানসুখ বা খাস হতে পারে। যেমন পরবর্তীতে তার বিবরণ আসবে ইনশাআল্লাহ।
অনুরূপ "হাদীসটি সহীহ নয়” বলতে উদ্দেশ্য হল, তার মধ্যে সহীহ হওয়ার পুরো ৫টি শর্ত বা তার কিছু পাওয়া যায়নি। সুতরাং তার মানে এই নয় যে, হাদীসটি মিথ্যা বা জাল হাদীস।
আসাহহুল আসানীদ বা সবচেয়ে সহীহ সনদ:
যদিও কোন কোন ইমাম কর্তৃক সহীহতম সনদের বিদ্যমানতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে তা বিরল। যেহেতু সহীহ হওয়ার যাবতীয় শর্তে সর্বোচ্চ মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রায় অসম্ভব।
কেবল সহীহ হাদীস নিয়ে রচিত প্রথম গ্রন্থ:
সহীহ বুখারী, অতঃপর সহীহ মুসলিম। এই গ্রন্থদ্বয় কুরআন কারীমের পর সবচেয়ে সহীহ গ্রন্থ। এ দুটিকে গ্রহণের ব্যাপারে উম্মাহ সর্বসম্মত।
ইমাম শাফেয়ীর একটি উক্তিতে বোঝা যায়, কুরআন কারীমের পর সবচেয়ে সহীহ গ্রন্থ হল ইমাম মালেকের মুওয়াত্তা। কিন্তু তা হল বুখারী- মুসলিম রচনার পূর্বে।
দুটির মধ্যে সহীহ বুখারী শ্রেষ্ঠ কেন?
যেহেতু সহীহ বুখারীর হাদীসসমূহের সনদ অধিক অবিচ্ছিন্ন এবং বর্ণনাকারিগণ অধিক নির্ভরযোগ্য। তাছাড়া সহীহ বুখারীতে যে ফিকহী মাসায়েল আছে, তা সহীহ মুসলিমে নেই।
জ্ঞাতব্য যে, সহীহ গ্রন্থদ্রয়ের মধ্যে সকল সহীহ হাদীস সংকলিত নয়। তারা সেই শর্তে গ্রন্থ রচনাও করেননি। বলা বাহুল্য, বহু সহীহ হাদীস তাদের গ্রন্থদ্বয়ে নেই, যা অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থসমূহে বর্তমান আছে। যেমন সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ইবনে হিন্মান, সুনানে আরবাআহ প্রভূতি।
'সহীহায়ন” বলতে বুখারী ও মুসলিমকে বুঝানো হয়। আর 'মুত্তাফাকুনআলাইহি” বলতে যে হাদীসকে উভয়েই নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। যে হাদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে তারা উভয়ে একমত। সকল মুহাদ্দিস
একমত, তা নয়।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, 'সিহাহ সিত্তাহ' কথাটা ভুল। যেহেতু উক্ত ছয়টি কিতাবই 'সহীহ” নয়। বরং বুখারী-মুসলিম ছাড়া বাকি সুনানে আরবাআহ (চারটি সুনান) গ্রন্থে যয়ীফ ও জাল হাদীসও আছে।
যেমন সহীহায়নে যে 'যয়ীফ'” হাদীস আছে বলা হয়, তা মূল হাদীসন্তারে নয়। বরং কাটা সনদে বর্ণিত কিছু হাদীস 'সহীহ” নয়।
বুখারী-মুসলিমের হাদীস সংখ্যা
সহীহ বুখারীর হাদীস সংখ্যা ৪০০০টি, পুনরাবৃত্ত সহকারে ৭২৭৫টি
সহীহ মুসলিমের হাদীস সংখ্যা ৪০০০টি, পুনরাবৃত্ত সহকারে ১২০০০টি
বিভিন্ন মুহাক্কিক্কের ও বিভিন্ন ধরনের গণনার কারণে বিভিন্ন কিতাবের প্রদত্ত সংখ্যায় বিভিন্নতা দেখা যায়।
জ্ঞাতব্য যে, হাদীসে নববীর মোট সংখ্যাও অজানা। অনেকের মতে ৭ লক্ষের কম-বেশি।
সহীহ সংক্রান্ত কতিপয় গ্রন্থ
১। মুস্তাদরাকুল হাকেম
এই কিতাবে ইমাম হাকেম সেই সহীহ হাদীসমূহ উল্লেখ করেছেন, যে সকল হাদীস বুখারী-মুসলিম কিতাবে উল্লেখ হয়নি এবং যে সকলকে তিনি নিজ ধারণামতে বুখারী-মুসলিম অথবা উভয়ের একজনের শর্তসাপেক্ষে 'সহীহ” বলে গণ্য করেছেন যদিও তা প্রকৃতপক্ষে নয়। যেমন তাদের শর্তসাপেক্ষে নয় এমন বহু সহীহ হাদীসও তাতে উল্লেখ করেছেন। তবে মনে রাখা ভালো যে, তিনি হাদীসকে 'সহীহ” বলার ব্যাপারে শিথিল। সুতরাং মুস্তাদরাকের হাদীস বিচার ও তাহকীকুসাপেক্ষ।
২। সহীহ ইবনে হিব্বান
এই কিতাবের নামে সহীহ থাকলেও তার সকল হাদীস সহীহ নয়। এই গ্রন্থকারও হাদীসকে “সহীহ” বলার ক্ষেত্রে শিথিল। তবে হাকেম অপেক্ষা কম।
৩। সহীহ ইবনে খুযাইমাহ
এ গ্রন্থটির নামেও 'সহীহ' সংযুক্ত থাকলেও এর সকল হাদীস সহীহ নয়। তরে তা সহীহ ইবনে হিন্বান অপেক্ষা উচ্চ মানের।
মুস্তাখরাজ কি?
মুস্তাখরাজ হল সেই গ্রন্থ, যে গ্রন্থের গ্রন্থকার কোন এক হাদীসগ্রন্থের হাদীসসমূহকে তার সনদ ব্যতিরেকে নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেন। আর তাতে তিনি উক্ত হাদীসগ্রন্থের গ্রন্থকারের সাথে তার শায়খ বা তার উর্ধুতন রাবীতে গিয়ে মিলিত হন।
সহীহায়নের উপর মুস্তাখরাজ গ্রন্থাবলী
১। আল-মুস্তাখরাজ আলা সহীহিল বুখারী, আবু বাক্র ইসমাঈলী
২। আল-মুস্তাখরাজ আলা সহীহি মুসলিম, আবূ আওয়ানাহ ইসফিরাঈনী
৩। আল-মুস্তাখরাজ আলাস সহীহায়ন, আবু নুআঈম আস্ববাহানী
উক্ত কিতাবসমূহে লেখকগণ যে হাদীসসমূহ ইন্তিখরাজ করেছেন, তার শব্দাবলী এক নয়। বরং তাঁদের কাছে তাঁদের শায়খদের মাধ্যমে যে শব্দে যে হাদীস পৌছেছে, সেই শব্দে তাই উল্লেখ করেছেন। এই কারণে শব্দাবলীতে কিছুটা হলেও পার্থক্য দেখা গেছে।
জ্ঞাতব্য যে, বুখারী-মুসলিমের উপর ইন্তিখরাজ করা হাদীসকে বুখারী-মুসলিম বর্ণনা করেছেন বলে উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে যদি সে ক্ষেত্রে বুখারী- মুসলিমের শব্দাবলী-সহ পাশাপাশি হাদীস উল্লেখ করা হয় অথবা মুস্তাখরাজ গ্রন্থের গ্রন্থকার বলে থাকেন, 'হাদীসটিকে শব্দাবলী-সহ উল্লেখ করেছেন' তাহলে বৈধ।
মুস্তাখরাজ গ্রন্থের উপকারিতা
১। সনদ উচ্চ পর্যায়ের হয়।
২। সহীহর মান বর্ধিত হয়।
৩। সূত্রাধিক্যের ফলে হাদীসের শক্তিশালিতা বৃদ্ধি পায়।
বুখারী-মুসলিমের তা'লীকাতের মান
বুখারী-মুসলিমের সমুদয় হাদীস সহীহ নয় এবং তাতে যয়ীফ হাদীস আছে শোনা যায়, তার প্রকৃতত্ব হল মুআল্লাক্ব হাদীস।
আর তা'লীকাত বা মুআল্লাক্ব হল, কাটা বা ছিন্ন সনদে বর্ণিত হাদীস, যার সনদ 'মুত্তস্বিল” (অবিচ্ছিন্ন) নয়। যার শুরু থেকে এক বা একাধিক রাবী বাদ দেওয়া হয়েছে।
সহীহ বুখারীতে এই হাদীস অনেক আছে (১৬০টি), সহীহ মুসলিমে তায়াম্মুম অধ্যায়ে একটি আছে।
এর মান:
যে হাদীসকে নিশ্চিত ও বলিষ্ঠ (কর্তৃবাচ্যমূলক ক্রিয়ার) শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে, তা সহীহ অথবা হাসান। যেমন 'অমুক বলেছেন, আদেশ করেছেন, উল্লেখ করেছেন” ইত্যাদি।
আর যে হাদীসকে রোগা বা দুর্বল (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়ার) শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে, তা সহীহ বলে নিশ্চিত নয়। যেমন বর্ণনা করা হয়, উল্লেখ করা হয়, বয়ান করা হয়” ইত্যাদি।
সহীহ হাদীসের মানের স্তরক্রম
প্রথমতঃ হাদীসের সনদের রিজাল (বর্ণনাকারী)র দিক থেকে ৩টি স্তর আছে।
১। মানের দিক থেকে সর্বোচ্চ স্তরের হাদীস হল, যা সবচেয়ে শুদ্ধ সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: মালেক নাফে' হতে, তিনি ইবনে উমার (রা:) হতে।
২। পূর্বের থেকে নি্নতর স্তরের হাদীস। যা সবচেয়ে শুদ্ধ সনদ থেকে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: হাম্মাদ বিন সালামাহ যষাবেত হতে, তিনি আনাস (রা:) হতে।
৩। যে হাদীস এমন সকল রিজাল দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যাদের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতার সামান্যতমও গুণাবলী সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন: সুহাইল বিন আবী স্বালেহ তার পিতা হতে, তিনি (আবু স্বালেহ) আবু হুরাইরা (রা:) হতে।
দ্বিতীয়ত: হাদীসের গ্রন্থাবলীর দিক থেকে ৭টি স্তর রয়েছে।
১। সর্বোচ্চ স্তরের হাদীস হল, 'মুত্তাফাক্ব আলাইহি” বা বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হাদীস।
২। কেবল বুখারীতে বর্ণিত হাদীস।
৩। কেবল মুসলিমে বর্ণিত হাদীস।
৪। বুখারী-মুসলিমের শর্তসাপেক্ষে বর্ণিত হাদীস, যা তারা বর্ণনা করেননি।
৫। কেবল বুখারীর শর্তসাপেক্ষে বর্ণিত হাদীস, যা তিনি বর্ণনা করেননি।
৬। কেবল মুসলিমের শর্তসাপেক্ষে বর্ণিত হাদীস, যা তিনি বর্ণনা করেননি।
৭। বুখারী-মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ইমামগণের বর্ণিত (সহীহ) হাদীস, যা বুখারী-মুসলিমের অথবা তাদের একজনের শর্তানুযায়ী সহীহ নয়।
জ্ঞাতব্য যে, হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য 'আযীয” হওয়া শর্ত নয়। বরং সহীহায়নে এমন অনেক সহীহ হাদীস আছে, যা 'গারীব'।
এর মান: দলীল হওয়া ও আমল করার ব্যাপারে সহীহর মতোই; যদিও বলিষ্ঠতায় তার মতো নয়।
এর উদাহরণ: আবু মুসা আশআরী (রা:)-এর হাদীস, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে জান্নাতের দ্বারসমূহ তরবারির ছায়াতলে রয়েছে।” (তিরমিযী ১৬৫৯)
এর মানগত স্তরক্রম ২টি
১। সর্বোচ্চ মানের হাসান হাদীস হল, যার সহীহ বা হাসান হওয়ার ব্যাপারে বিতর্ক ও মতভেদ আছে।
যেমন আমর বিন শুআইব, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণিত হাদীস।
২। অতঃপর সেই হাদীস, যার হাসান বা যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে বিতর্ক ও মতভেদ আছে।
যেমন হারিষ বিন আব্দুল্লাহ ও আস্বিম বিন য়ামরাহ প্রমুখের হাদীস।
সহীহ হাদীস ও সহীহ সনদ
কখনো বলা হয়, 'হাদীসটি সহীহ।” আবার কখনো বলা হয়, 'হাদীসটির সনদ সহীহ।” হাসানের ক্ষেত্রেও এমনটি বলা হয়। তাহলে দুটি কথার মাঝে পার্থক্য কী?
আসলে কোনও হাদীস সহীহ বা হাসান হয় সনদ ও মতন উভয়ই বিচার ক'রে।
সুতরাং যখন হাদীসের সনদ সহীহ বা হাসান হয়, কিন্তু মতন শুযুয বা ইল্লতের কারণে তা হয় না। ফলে বলা হয়, 'হাদীসটির সনদ সহীহ” বা হাদীসটির সনদ হাসান।”
তাই যখন বলা হয়, 'সহীহ হাদীস” অথবা 'হাদীসটি সহীহ, তখন তাতে নিশ্চয়তা থাকে যে, সেই হাদীসের সহীহ হওয়ার পাচটি শর্তই পূরণ হয়েছে।
অর্থাৎ, সেটা সনদ-মতন উভয়ের দিক থেকে সহীহ।
আর যখন বলা হয়, 'হাদীসটির সনদ সহীহ”, তখন তাতে নিশ্চয়তা থাকে যে, সেই হাদীসের সহীহ হওয়ার তিনটি শর্ত পূরণ হয়েছে এবং মতনের ব্যাপারে শুযুয ও ইল্নত থেকে মুক্ত না হওয়ার কথা বোঝা যাচ্ছে
ইমাম তিরমিযীর “হাসান-সহীহ” হাদীস ' হাদীস কি একই সময়ে সহীহ ও হাসান হতে পারে? তা না হলে ইমাম তিরমিযীর কথায় 'হাদীসটি হাসান-সহীহ' বলার মানে কী?
ইবনে হাজার আঙ্কালানী বলেছেন,
(ক) উক্ত হাদীসের দুই বা ততোধিক সনদ থাকে। তখন তার মানে হয়, হাদীসটি কিছু সনদের দিক থেকে সহীহ এবং অন্য কিছু সনদের দিক থেকে হাসান।
(খ) যদি হাদীসের মাত্র একটি সনদ থাকে, তাহলে তার মানে হয়, হাদীসটি মুহাদ্দিসগণের একটি সম্প্রদায়ের কাছে হাসান এবং অন্য একটি সম্প্রদায়ের কাছে সহীহ। সম্ভবতঃ তিনি (তিরমিযী) হাদীসটির মান সম্বন্ধে মুহাদ্দিসগণের বিতর্কের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, নতুবা তার নিকট হাদীসটি হাসান না সহীহ, তাস্পষ্ট নয়।
ইমাম বাগাবীর সহীহ ও হাসান হাদীস ।
ইমাম বাগাবী তার 'মাস্ববীহুস সুন্নাহ” গ্রন্থে এ বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের পরিভাষার অন্যথাচরণ করেছেন। সুতরাং তার নিকট 'সহীহ' হল সেই হাদীস, ' যা বুখারী-মুসলিম অথবা উভয়ের মধ্যে একটি গ্রন্থে আছে। আর 'হাসান' হল সেই হাদীস, যা সুনানে আরবাআহ অথবা তার মধ্যে কিছু বা কোন একটি গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
খবরে ওয়াহেদ তার সবলতা ও দুর্বলতার দিক থেকে দুই প্রকার: মাকবূল। (গ্রহণীয়) ও মারদুদ (বর্জনীয়)
খবরে ওয়াহেদের প্রথম প্রকার: মাকবূল
মাকবূলহল সেই হাদীস, যার বর্ণনাকারীর সত্যতা প্রাধান্য পেয়েছে।
খবরে ওয়াহেদের মান: এ হাদীসকে দলীল মানা ও তার উপর আমল করা ওয়াজেব।
এই মাকবূল হাদীস আবার দুইভাগে বিভক্ত: তার স্তর বা মান নির্ধারণের দিক থেকে বিভক্তি এবং তার উপর আমল করা বা না করার দিক থেকে
প্রথমবিভক্তি
সহীহ: লিযাতিহ ও লিগায়রিহ
হাসান: লিযাতিহ ও লিগায়রিহ ।
লিযাতিহ মানে স্বনির্ভর বা নিজে-নিজেই এবং লিগায়রিহ মানে পরনির্ভর, অর্থাৎপরের সাহায্য নিয়ে সহীহ বা হাসান হাদীস।
সহীহ লিযাতিহ কাকে বলে?
যে হাদীসের সনদ আদ্ল ও য়াবেত্ রাবী তার অনুরূপ রাবী থেকে বর্ণনায় আদ্যপ্রান্ত অবিচ্ছিন্ন থাকে এবং তা শুযুয ও ইল্লতমুক্ত থাকে।
বলাবাহুল্য, সহীহ লিযাতিহ হাদীস তাকে বলে, যার মধ্যে ৫টি শর্ত বর্তমান থাকে -
১৷ সনদ বা সূত্র মুত্তস্বিল বা অবিচ্ছিন্ন থাকা। তার আগাগোড়ায় প্রত্যেক। বর্ণনাকারী যেন উর্ধুতন বর্ণনাকারী থেকে সরাসরি হাদীস গ্রহণ করে থাকে।
২। বর্ণনাকারীরা যেন 'আদ্ল” : সং, ন্যায়নিষ্ঠ, সন্তোষজনক, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হয়। মুসলিম, সাবালক ও জ্ঞানসম্পন্ন হয় এবং পাপাচারী (ফাসেক) ও আত্যমর্যাদাহীন না হয়। তার নির্ভরযোগ্যতা যেন অব্যক্ত অথবা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।
৩। তারা যেন য্বাবেত্ব হয়। অর্থাৎ, মুখস্থ রাখা বা লিখে রাখার ব্যাপারে তাদের স্মৃতিশক্তি তথা নির্ভুল বর্ণনা-ক্ষমতা যেন পরিপূর্ণ বিদ্যমান থাকে।
৪। হাদীসটি যেন শুযুযমুক্ত হয়। অর্থাৎ, তুলনামূলক অধিকতর সহীহ হাদীসের বিরোধী প্রমাণিত না হয়।
৫। হাদীসটি যেন ইল্লতমুক্ত হয়। অর্থাৎ, যে কোনও সুক্ষা দোষ-ত্রুটি থেকে যেন মুক্ত হয়। হাদীসের সহীহ হওয়ার ব্যাপারে ক্ষুর্লরকারী কোনও গুপ্ত কারণ না থাকে। অথচ বাহ্যতঃ তা থেকে মুক্ত মনে হয়।
সহীহ লিযাতিহ এর উদাহরণ:
জুবাইর বিন মুত্বইম ৯ কর্তৃক বর্ণিত বুখারীর হাদীস। যাতে তিনি বলছেন, আমি শুনেছি, রাসূলুল্লাহ ষষ্ট মাগরিবে সূরা তুর পাঠ করেছেন। (বুখারী ৭৬৫নং)
সহীহ লিযাতিহ এর মান:
আহলুল হাদীসদের ঐক্যমতে এ হাদীসকে দলীল মানা ও সেই অনুযায়ী আমল করা ওয়াজেব।
হাদীসটি সহীহ বা সহীহ নয় বলতে উদ্দেশ্য:
জ্ঞাতব্য যে, 'সহীহ হাদীস” বলতে উদ্দেশ্য হল, সে হাদীসের মধ্যে সহীহ হওয়ার ৫টি শর্ত পাওয়া গেছে। তবে সেটা (মুতাওয়াতিরের মতো) সুনিশ্চিত নয়। যেমন সহীহ হওয়ার পরেও আমল ওয়াজেব না হতেও পারে। যেহেতু তা মানসুখ বা খাস হতে পারে। যেমন পরবর্তীতে তার বিবরণ আসবে ইনশাআল্লাহ।
অনুরূপ "হাদীসটি সহীহ নয়” বলতে উদ্দেশ্য হল, তার মধ্যে সহীহ হওয়ার পুরো ৫টি শর্ত বা তার কিছু পাওয়া যায়নি। সুতরাং তার মানে এই নয় যে, হাদীসটি মিথ্যা বা জাল হাদীস।
আসাহহুল আসানীদ বা সবচেয়ে সহীহ সনদ:
যদিও কোন কোন ইমাম কর্তৃক সহীহতম সনদের বিদ্যমানতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে তা বিরল। যেহেতু সহীহ হওয়ার যাবতীয় শর্তে সর্বোচ্চ মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া প্রায় অসম্ভব।
কেবল সহীহ হাদীস নিয়ে রচিত প্রথম গ্রন্থ:
সহীহ বুখারী, অতঃপর সহীহ মুসলিম। এই গ্রন্থদ্বয় কুরআন কারীমের পর সবচেয়ে সহীহ গ্রন্থ। এ দুটিকে গ্রহণের ব্যাপারে উম্মাহ সর্বসম্মত।
ইমাম শাফেয়ীর একটি উক্তিতে বোঝা যায়, কুরআন কারীমের পর সবচেয়ে সহীহ গ্রন্থ হল ইমাম মালেকের মুওয়াত্তা। কিন্তু তা হল বুখারী- মুসলিম রচনার পূর্বে।
দুটির মধ্যে সহীহ বুখারী শ্রেষ্ঠ কেন?
যেহেতু সহীহ বুখারীর হাদীসসমূহের সনদ অধিক অবিচ্ছিন্ন এবং বর্ণনাকারিগণ অধিক নির্ভরযোগ্য। তাছাড়া সহীহ বুখারীতে যে ফিকহী মাসায়েল আছে, তা সহীহ মুসলিমে নেই।
জ্ঞাতব্য যে, সহীহ গ্রন্থদ্রয়ের মধ্যে সকল সহীহ হাদীস সংকলিত নয়। তারা সেই শর্তে গ্রন্থ রচনাও করেননি। বলা বাহুল্য, বহু সহীহ হাদীস তাদের গ্রন্থদ্বয়ে নেই, যা অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থসমূহে বর্তমান আছে। যেমন সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ইবনে হিন্মান, সুনানে আরবাআহ প্রভূতি।
'সহীহায়ন” বলতে বুখারী ও মুসলিমকে বুঝানো হয়। আর 'মুত্তাফাকুনআলাইহি” বলতে যে হাদীসকে উভয়েই নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। যে হাদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে তারা উভয়ে একমত। সকল মুহাদ্দিস
একমত, তা নয়।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, 'সিহাহ সিত্তাহ' কথাটা ভুল। যেহেতু উক্ত ছয়টি কিতাবই 'সহীহ” নয়। বরং বুখারী-মুসলিম ছাড়া বাকি সুনানে আরবাআহ (চারটি সুনান) গ্রন্থে যয়ীফ ও জাল হাদীসও আছে।
যেমন সহীহায়নে যে 'যয়ীফ'” হাদীস আছে বলা হয়, তা মূল হাদীসন্তারে নয়। বরং কাটা সনদে বর্ণিত কিছু হাদীস 'সহীহ” নয়।
বুখারী-মুসলিমের হাদীস সংখ্যা
সহীহ বুখারীর হাদীস সংখ্যা ৪০০০টি, পুনরাবৃত্ত সহকারে ৭২৭৫টি
সহীহ মুসলিমের হাদীস সংখ্যা ৪০০০টি, পুনরাবৃত্ত সহকারে ১২০০০টি
বিভিন্ন মুহাক্কিক্কের ও বিভিন্ন ধরনের গণনার কারণে বিভিন্ন কিতাবের প্রদত্ত সংখ্যায় বিভিন্নতা দেখা যায়।
জ্ঞাতব্য যে, হাদীসে নববীর মোট সংখ্যাও অজানা। অনেকের মতে ৭ লক্ষের কম-বেশি।
সহীহ সংক্রান্ত কতিপয় গ্রন্থ
১। মুস্তাদরাকুল হাকেম
এই কিতাবে ইমাম হাকেম সেই সহীহ হাদীসমূহ উল্লেখ করেছেন, যে সকল হাদীস বুখারী-মুসলিম কিতাবে উল্লেখ হয়নি এবং যে সকলকে তিনি নিজ ধারণামতে বুখারী-মুসলিম অথবা উভয়ের একজনের শর্তসাপেক্ষে 'সহীহ” বলে গণ্য করেছেন যদিও তা প্রকৃতপক্ষে নয়। যেমন তাদের শর্তসাপেক্ষে নয় এমন বহু সহীহ হাদীসও তাতে উল্লেখ করেছেন। তবে মনে রাখা ভালো যে, তিনি হাদীসকে 'সহীহ” বলার ব্যাপারে শিথিল। সুতরাং মুস্তাদরাকের হাদীস বিচার ও তাহকীকুসাপেক্ষ।
২। সহীহ ইবনে হিব্বান
এই কিতাবের নামে সহীহ থাকলেও তার সকল হাদীস সহীহ নয়। এই গ্রন্থকারও হাদীসকে “সহীহ” বলার ক্ষেত্রে শিথিল। তবে হাকেম অপেক্ষা কম।
৩। সহীহ ইবনে খুযাইমাহ
এ গ্রন্থটির নামেও 'সহীহ' সংযুক্ত থাকলেও এর সকল হাদীস সহীহ নয়। তরে তা সহীহ ইবনে হিন্বান অপেক্ষা উচ্চ মানের।
মুস্তাখরাজ কি?
মুস্তাখরাজ হল সেই গ্রন্থ, যে গ্রন্থের গ্রন্থকার কোন এক হাদীসগ্রন্থের হাদীসসমূহকে তার সনদ ব্যতিরেকে নিজস্ব সনদে বর্ণনা করেন। আর তাতে তিনি উক্ত হাদীসগ্রন্থের গ্রন্থকারের সাথে তার শায়খ বা তার উর্ধুতন রাবীতে গিয়ে মিলিত হন।
সহীহায়নের উপর মুস্তাখরাজ গ্রন্থাবলী
১। আল-মুস্তাখরাজ আলা সহীহিল বুখারী, আবু বাক্র ইসমাঈলী
২। আল-মুস্তাখরাজ আলা সহীহি মুসলিম, আবূ আওয়ানাহ ইসফিরাঈনী
৩। আল-মুস্তাখরাজ আলাস সহীহায়ন, আবু নুআঈম আস্ববাহানী
উক্ত কিতাবসমূহে লেখকগণ যে হাদীসসমূহ ইন্তিখরাজ করেছেন, তার শব্দাবলী এক নয়। বরং তাঁদের কাছে তাঁদের শায়খদের মাধ্যমে যে শব্দে যে হাদীস পৌছেছে, সেই শব্দে তাই উল্লেখ করেছেন। এই কারণে শব্দাবলীতে কিছুটা হলেও পার্থক্য দেখা গেছে।
জ্ঞাতব্য যে, বুখারী-মুসলিমের উপর ইন্তিখরাজ করা হাদীসকে বুখারী-মুসলিম বর্ণনা করেছেন বলে উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে যদি সে ক্ষেত্রে বুখারী- মুসলিমের শব্দাবলী-সহ পাশাপাশি হাদীস উল্লেখ করা হয় অথবা মুস্তাখরাজ গ্রন্থের গ্রন্থকার বলে থাকেন, 'হাদীসটিকে শব্দাবলী-সহ উল্লেখ করেছেন' তাহলে বৈধ।
মুস্তাখরাজ গ্রন্থের উপকারিতা
১। সনদ উচ্চ পর্যায়ের হয়।
২। সহীহর মান বর্ধিত হয়।
৩। সূত্রাধিক্যের ফলে হাদীসের শক্তিশালিতা বৃদ্ধি পায়।
বুখারী-মুসলিমের তা'লীকাতের মান
বুখারী-মুসলিমের সমুদয় হাদীস সহীহ নয় এবং তাতে যয়ীফ হাদীস আছে শোনা যায়, তার প্রকৃতত্ব হল মুআল্লাক্ব হাদীস।
আর তা'লীকাত বা মুআল্লাক্ব হল, কাটা বা ছিন্ন সনদে বর্ণিত হাদীস, যার সনদ 'মুত্তস্বিল” (অবিচ্ছিন্ন) নয়। যার শুরু থেকে এক বা একাধিক রাবী বাদ দেওয়া হয়েছে।
সহীহ বুখারীতে এই হাদীস অনেক আছে (১৬০টি), সহীহ মুসলিমে তায়াম্মুম অধ্যায়ে একটি আছে।
এর মান:
যে হাদীসকে নিশ্চিত ও বলিষ্ঠ (কর্তৃবাচ্যমূলক ক্রিয়ার) শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে, তা সহীহ অথবা হাসান। যেমন 'অমুক বলেছেন, আদেশ করেছেন, উল্লেখ করেছেন” ইত্যাদি।
আর যে হাদীসকে রোগা বা দুর্বল (কর্মবাচ্যমূলক ক্রিয়ার) শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে, তা সহীহ বলে নিশ্চিত নয়। যেমন বর্ণনা করা হয়, উল্লেখ করা হয়, বয়ান করা হয়” ইত্যাদি।
সহীহ হাদীসের মানের স্তরক্রম
প্রথমতঃ হাদীসের সনদের রিজাল (বর্ণনাকারী)র দিক থেকে ৩টি স্তর আছে।
১। মানের দিক থেকে সর্বোচ্চ স্তরের হাদীস হল, যা সবচেয়ে শুদ্ধ সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: মালেক নাফে' হতে, তিনি ইবনে উমার (রা:) হতে।
২। পূর্বের থেকে নি্নতর স্তরের হাদীস। যা সবচেয়ে শুদ্ধ সনদ থেকে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: হাম্মাদ বিন সালামাহ যষাবেত হতে, তিনি আনাস (রা:) হতে।
৩। যে হাদীস এমন সকল রিজাল দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যাদের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতার সামান্যতমও গুণাবলী সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন: সুহাইল বিন আবী স্বালেহ তার পিতা হতে, তিনি (আবু স্বালেহ) আবু হুরাইরা (রা:) হতে।
দ্বিতীয়ত: হাদীসের গ্রন্থাবলীর দিক থেকে ৭টি স্তর রয়েছে।
১। সর্বোচ্চ স্তরের হাদীস হল, 'মুত্তাফাক্ব আলাইহি” বা বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হাদীস।
২। কেবল বুখারীতে বর্ণিত হাদীস।
৩। কেবল মুসলিমে বর্ণিত হাদীস।
৪। বুখারী-মুসলিমের শর্তসাপেক্ষে বর্ণিত হাদীস, যা তারা বর্ণনা করেননি।
৫। কেবল বুখারীর শর্তসাপেক্ষে বর্ণিত হাদীস, যা তিনি বর্ণনা করেননি।
৬। কেবল মুসলিমের শর্তসাপেক্ষে বর্ণিত হাদীস, যা তিনি বর্ণনা করেননি।
৭। বুখারী-মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ইমামগণের বর্ণিত (সহীহ) হাদীস, যা বুখারী-মুসলিমের অথবা তাদের একজনের শর্তানুযায়ী সহীহ নয়।
প্রশ্ন: বুখারী-মুসলিম অথবা তাদের একজনের শর্তানুযায়ী সহীহ হাদীস কাকে বলা হয়?
যে হাদীস উভয় অথবা একটি কিতাবের রিজাল দ্বারা সেই পদ্ধতি অনুসারে বর্ণিত, যা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম তাদের নিকট হতে বর্ণনায় অবলম্বন করেছেন।জ্ঞাতব্য যে, হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য 'আযীয” হওয়া শর্ত নয়। বরং সহীহায়নে এমন অনেক সহীহ হাদীস আছে, যা 'গারীব'।
হাসান লিযাতিহ
যে হাদীসের সনদ অল্প যুব্তের অধিকারী আদ্ল রাবী তার অনুরূপ রাবী থেকে বর্ণনায় আদাযপ্রান্ত অবিচ্ছিন্ন থাকে এবং তা শুয্য ও ইল্লতমুক্ত থাকে।এর মান: দলীল হওয়া ও আমল করার ব্যাপারে সহীহর মতোই; যদিও বলিষ্ঠতায় তার মতো নয়।
এর উদাহরণ: আবু মুসা আশআরী (রা:)-এর হাদীস, আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে জান্নাতের দ্বারসমূহ তরবারির ছায়াতলে রয়েছে।” (তিরমিযী ১৬৫৯)
এর মানগত স্তরক্রম ২টি
১। সর্বোচ্চ মানের হাসান হাদীস হল, যার সহীহ বা হাসান হওয়ার ব্যাপারে বিতর্ক ও মতভেদ আছে।
যেমন আমর বিন শুআইব, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণিত হাদীস।
২। অতঃপর সেই হাদীস, যার হাসান বা যয়ীফ হওয়ার ব্যাপারে বিতর্ক ও মতভেদ আছে।
যেমন হারিষ বিন আব্দুল্লাহ ও আস্বিম বিন য়ামরাহ প্রমুখের হাদীস।
সহীহ হাদীস ও সহীহ সনদ
কখনো বলা হয়, 'হাদীসটি সহীহ।” আবার কখনো বলা হয়, 'হাদীসটির সনদ সহীহ।” হাসানের ক্ষেত্রেও এমনটি বলা হয়। তাহলে দুটি কথার মাঝে পার্থক্য কী?
আসলে কোনও হাদীস সহীহ বা হাসান হয় সনদ ও মতন উভয়ই বিচার ক'রে।
সুতরাং যখন হাদীসের সনদ সহীহ বা হাসান হয়, কিন্তু মতন শুযুয বা ইল্লতের কারণে তা হয় না। ফলে বলা হয়, 'হাদীসটির সনদ সহীহ” বা হাদীসটির সনদ হাসান।”
তাই যখন বলা হয়, 'সহীহ হাদীস” অথবা 'হাদীসটি সহীহ, তখন তাতে নিশ্চয়তা থাকে যে, সেই হাদীসের সহীহ হওয়ার পাচটি শর্তই পূরণ হয়েছে।
অর্থাৎ, সেটা সনদ-মতন উভয়ের দিক থেকে সহীহ।
আর যখন বলা হয়, 'হাদীসটির সনদ সহীহ”, তখন তাতে নিশ্চয়তা থাকে যে, সেই হাদীসের সহীহ হওয়ার তিনটি শর্ত পূরণ হয়েছে এবং মতনের ব্যাপারে শুযুয ও ইল্নত থেকে মুক্ত না হওয়ার কথা বোঝা যাচ্ছে
ইমাম তিরমিযীর “হাসান-সহীহ” হাদীস ' হাদীস কি একই সময়ে সহীহ ও হাসান হতে পারে? তা না হলে ইমাম তিরমিযীর কথায় 'হাদীসটি হাসান-সহীহ' বলার মানে কী?
ইবনে হাজার আঙ্কালানী বলেছেন,
(ক) উক্ত হাদীসের দুই বা ততোধিক সনদ থাকে। তখন তার মানে হয়, হাদীসটি কিছু সনদের দিক থেকে সহীহ এবং অন্য কিছু সনদের দিক থেকে হাসান।
(খ) যদি হাদীসের মাত্র একটি সনদ থাকে, তাহলে তার মানে হয়, হাদীসটি মুহাদ্দিসগণের একটি সম্প্রদায়ের কাছে হাসান এবং অন্য একটি সম্প্রদায়ের কাছে সহীহ। সম্ভবতঃ তিনি (তিরমিযী) হাদীসটির মান সম্বন্ধে মুহাদ্দিসগণের বিতর্কের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, নতুবা তার নিকট হাদীসটি হাসান না সহীহ, তাস্পষ্ট নয়।
ইমাম বাগাবীর সহীহ ও হাসান হাদীস ।
ইমাম বাগাবী তার 'মাস্ববীহুস সুন্নাহ” গ্রন্থে এ বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের পরিভাষার অন্যথাচরণ করেছেন। সুতরাং তার নিকট 'সহীহ' হল সেই হাদীস, ' যা বুখারী-মুসলিম অথবা উভয়ের মধ্যে একটি গ্রন্থে আছে। আর 'হাসান' হল সেই হাদীস, যা সুনানে আরবাআহ অথবা তার মধ্যে কিছু বা কোন একটি গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
- শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল মাদানী।