Knowledge Sharer
ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
- Joined
- Jul 24, 2023
- Threads
- 520
- Comments
- 533
- Reactions
- 5,579
- Thread Author
- #1
ক্বিয়ামত হচ্ছে অনেক বড় একটি ঘটনা। এই মহা ঘটনা নিকটবর্তী হওয়া সম্পর্কে মানুষকে আগেভাগে সতর্ক করা প্রয়োজন বিধায় আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের জন্য বেশ কিছু আলামত সৃষ্টি করেছেন। ক্বিয়ামতের আলামত দুইভাগে বিভক্ত। একটি হল- ছোট আলামত অপরটি বড় আলামাত। তন্মধ্যেই ছোট আলামতের কিছু কিছু সংঘটিত হয়ে গেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পুনরায় সংঘটিত হবে। আর কিছু চলমান এবং পালাক্রমে সংঘটিত হতেই থাকবে। আর কিছু এখনো সংঘটিত হয়নি। তবে ক্বিয়ামতের পূর্বে অবশ্যই সংঘটিত হবে। আর বড় আলামতগুলো ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে সংঘটিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনই বলে গেছেন।[১]
ক্বিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় গোপন রাখার রহস্য
আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের সঠিক সময় কাউকে অবগত করেননি। উদ্দেশ্য হল মানুষ যাতে সবসময় সতর্ক থাকে, পরকালের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং সর্বদা সৎকাজে লিপ্ত থাকে। হাদীসে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,
‘এক ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ক্বিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি ক্বিয়ামতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোন কিছুই জোগাড় করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসি। তখন তিনি বললেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে যাদেরকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা দ্বারা আমরা এতই আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসি, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কেও। আশা করি তাঁদেরকে ভালবাসার কারণে আমি তাদের সঙ্গে থাকতে পারব; যদিও তাঁদের আমলের মত আমল আমি করতে পারিনি’।[২]
সুধী পাঠক! উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ক্বিয়ামত কখন হবে তা নিয়ে গবেষণা করা অনর্থক। বরং সকলকে ক্বিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং সর্বদা আনুগত্যের কাজে লিপ্ত থাকাই যরূরী কর্তব্য।
ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তের দৃশ্য
যখন আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নির্ধারিত সময় চলে আসবে, তখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। ক্বিয়ামত ধীরে ধীরে সংঘটিত হবে না। তা আসার সময় দূর থেকে কেউ দেখতে পাবে না এবং এর মাঝখানে কেউ নিজেকে সামলে নিয়ে কোন রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করারও সুযোগ পাবে না। যে কোন মুহূর্তে চোখের পলকে বা তার চেয়েও কম সময়ে তা এসে যাবে। কাজেই যার সংশোধন হওয়ার সে যেন অবিলম্বে সংশোধিত হয়ে যায় এবং চূড়ান্ত ফায়ছালার সময় দূরে মনে করে পাশ কাটিয়ে না যায়। একটি নিঃশ্বাস সম্পর্কেও কেউ নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারবে না যে, তার পরের শ্বাস গ্রহণের সুযোগ অবশ্যই হবে। হাদীসে এসেছে,
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আর ক্বিয়ামত এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, দুই ব্যক্তি একে অন্যের সামনে কাপড় খুলবে, কিন্তু সেই কাপড় ক্রয়-বিক্রয়ের কিংবা গুটিয়ে নেয়ারও অবসর পাবে না। আর ক্বিয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে এমতাবস্থায় যে, এক ব্যক্তি তার উষ্ট্রী দোহন করে দুগ্ধ নিয়ে আসবে, কিন্তু তা পান করারও সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামত অবশ্যই এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি তার চৌবাচ্চা মেরামত বা নির্মাণ করতে থাকবে, কিন্তু তাতে সে পানি পান করার সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও পরিবেশে অবশ্যই কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি খাদ্যের লোকমা বা গ্রাস তার মুখ পর্যন্ত উত্তোলন করবে কিন্তু সে তা খাওয়ার অবকাশ পাবে না।[৩]
শিঙ্গায় ফুঁক
আল্লাহ তা‘আলা দায়িত্বশীল ফিরিশতা ইসরাফীল (আলাইহিস সালাম)-কে শিংগায় ফুৎকার দিতে নির্দেশ দিবেন। সে একটি ফুৎকার দিবে। ফলে যমীন ও পর্বতমালা সরিয়ে নেয়া হবে। এক আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। গ্রহ-নক্ষত্র খসে খসে পড়বে। আলো চলে যাবে। সমুদ্রগুলো অগ্নিউত্তাল হয়ে যাবে। দুষ্ট মানুষগুলো তখন মরে যাবে। ক্বিয়ামত কায়েম হওয়ার প্রাক্কালে পৃথিবীতে শুধু খারাপ মানুষের বসবাস থাকবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় ক্বিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন’ (সূরা আল-হজ্জ : ১-২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
‘অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে একটি মাত্র ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। আর আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফিরিশতাগণ আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন আপনার রবের আরশকে আটজন ফিরিশতা তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না’ (সূরা আল-হা-ক্কাহ : ১৩-১৮)।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফীলের দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর মৃতকে জীবিত করার মাধ্যমে পুনরুত্থান সংঘটিত হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
‘সেদিন সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। তখন আসমান ও যমীনের সকল প্রাণী মরে পড়ে থাকবে। অবশ্য আল্লাহ যাদেরকে জীবন্ত রাখবেন তারা ছাড়া। অতঃপর শিংগায় আরেকবার ফুঁক দেয়া হবে। তখন সবাই উঠে দাঁড়াবে এবং তাকিয়ে থাকবে’ (সূরা আয-যুমার : ৬৮)। এরপর সব মানুষ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের উদ্দেশ্যে কবর থেকে উঠবে। তাদের অবস্থা হবে পাদুকা বিহীন নগ্ন এবং বস্ত্র বিহীন উলঙ্গ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যেভাবে সর্বপ্রথম আমরা সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম ঠিক সেভাবে আমরা তার পুনরাবৃত্তি করব। এটা একটা ওয়াদা যা পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের। এ কাজ অবশ্যই আমরা করব’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৪)।
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ক্বিয়ামতের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন পাহাড়সমূহ প্রচ-ভাবে কেঁপে উঠবে এবং মাটিতে পরিণত হয়ে তার সাথে মিশে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে করছ, কিন্তু (সেদিন) এগুলো হবে মেঘমালার মত চলমান’ (সূরা আন-নামল : ৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা’ (সূরা আল-ওয়াক্বিয়া : ৫-৬)। তিনি আরো বলেন, وَ تَکُوۡنُ الۡجِبَالُ کَالۡعِہۡنِ ‘এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গিন পশমের মত’ (সূরা আল-মা‘আরিজ : ৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তারা আপনাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করে। অতএব আপনি বলুন! আমার পালনকর্তা পাহাড় সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। অতঃপর পৃথিবীকে মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন। আপনি তাতে মোড় ও টিলা দেখবেন না’ (সূরা ত্বোহা : ১০৫-১০৭)।
সাগরগুলো উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরিত হবে এবং টগবগ করে জ্বলতে থাকবে। ধরাপৃষ্ঠের বহুলাংশ জুড়ে যে সমুদ্র রয়েছে, সেদিন তাতে আগ্নেয়গিরি মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টি করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যখন সমুদ্র বিস্ফোরিত হবে’ (সূরা আল-ইনফিত্বার : ৩)। তিনি আরো বলেন,
‘যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে’ (সূরা আত-তাকভীর : ৬)।
মানুষ যে মাটিতে আশ্রয় নিয়ে আছে তা বদলে যাবে। একই দশা হবে আসমানের। অতঃপর মানবজাতিকে পুনরায় উত্থিত করা হবে এমন ভূমিতে, তা যেন তারা কখনো দেখেনি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে উপস্থাপিত হবে’ (সূরা ইবরাহীম : ৪৮)।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষ একটি স্বচ্ছ চেপটা রুটির মত সাদা প্রান্তরে একত্রিত হবে। সেখানে কারো কোন প্রতীক বা চিহ্ন থাকবে না’।[৪] সুতরাং তা হয়ে যাবে প্রতীকহীন একটি শুভ্র প্রান্তর।
মানুষ এমন কিছু বিষয় প্রত্যক্ষ করবে, যা পূর্বে দেখেনি। তারা সেখানে চাঁদ ও সূর্যকে একত্রিত দেখতে পাবে। ফলে মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়ে যাবে। আল্লাহ তা‘অলা বলেন,
‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। সে দিন মানুষ বলবে, পলায়নের জায়গা কোথায়?’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ৭-১০)।
হাশরের মাঠে সকল মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। হাদীসে এসেছে,
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অবশ্যই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে নগ্ন পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন- ‘আমি প্রথমে যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি; আর আমি এটা (বাস্তবায়ন) করবই’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৪)। ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে তিনি হবেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)। আর (সেদিন) আমার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন লোককে পাকড়াও করে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, (এরা তো) আমার অনুসারী, আমার অনুসারী। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যখন আপনি তাদের থেকে বিদায় নেন, তখন এরা তাদের পূর্বের মতবাদে ফিরে যায়। তখন আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম)-এর মত বলব, হে আল্লাহ! আমি যতদিন পর্যন্ত তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলাম, ততদিন পর্যন্ত আমি তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষণকারী ছিলাম। যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন, তখন আপনিই ছিলেন তাদের অবস্থা সম্পর্কে একমাত্র প্রত্যক্ষকারী। আর আপনি তো সবকিছুর উপর প্রত্যক্ষদর্শী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন (তা দিতে পারেন) কেননা এরা আপনারই দাস। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, (তাও করতে পারেন) কারণ আপনি মহা ক্ষমতাবান এবং মহা প্রজ্ঞার অধিকারী’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ১১৭-১১৮)।[৫]
কাফিরদেরকে উপুড় করে হাযির করা হবে
কাফেরদের উপর ক্বিয়ামত যে কত কঠিন ও ভয়াবহ হবে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সেদিন কাফেরদেরকে উপুড় করে হাযির করা হবে। হাদীসে এসেছে,
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ক্বিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে কি চেহারার উপর ভর করে একত্রিত করা হবে? তিনি বললেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দু’পায়ের উপর হাঁটাতে পারলেন, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন তাকে চেহারার উপর ভর করাতে সক্ষম নন?’[৬]
মানুষ পলায়ন করার চেষ্টা করবে
ক্বিয়ামতের দিন মানুষ পলায়ন করার চেষ্টা করবে কিন্তু তা কখনই সম্ভব হবে না। এর থেকে নিস্তার ও রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর স্থান কোথায়? কখনো না, কোন আশ্রয়স্থল নেই। সেদিন তোমার প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১০-১৩)।
শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে
ক্বিয়ামতের কঠিন ভয়াবহতা, ভূকম্পন এবং দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার কারণে কিশোর বৃদ্ধে পরিণত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘অতএব কীভাবে তোমরা বাঁচতে পারবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন কিশোরকে বৃদ্ধ বানানো হবে’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল : ১৭)।
সকল বিষয়ে অবগত হওয়া
যখন ক্বিয়ামত হবে তখন মানুষ সকল কিছু অর্থাৎ জীবনে যা কিছু করেছে তা জানতে পারবে এবং তা তার সামনে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে’ (সূরা আত-তাকভীর : ১৪)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু সৎকর্ম করেছে তা মওজুদ পাবে এবং সে যা মন্দ কাজ করেছে তাও পাবে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৩০)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৩)।
কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না
ক্বিয়ামতের ময়দানে মানুষ তার আমল অনুযায়ী প্রতিদান প্রাপ্ত হবে ও পরিণাম ভোগ করবে। যদি কল্যাণকর কাজ করে, তবে ভাল প্রতিদান পাবে এবং যদি অকল্যাণকর করে, তবে পরিণাম খারাপ হবে। কেউ কারও পাপের বোঝা বহন করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না, কোন ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাউকেও এটা বহন করতে আহ্বান করে তবে তার কিছুই বহন করা হবে না, নিকটাত্মীয় হলেও’ (সূরা আল-ফাতির : ১৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
‘প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৬৪)।
ভিযরুন (وِزْرٌ) অর্থ বোঝা অর্থাৎ কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের উপর কেবল তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে এরও কোন সম্ভাবনা নেই।
এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, যারা মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয়স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলেছিল, তোমরা এই নতুন ধর্ম ত্যাগ কর এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হও। এজন্য কোন পাপ হলে আমরা তার বোঝা বহন করব। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। তাদের এসব কথা বলার কারণ হল- আখিরাত সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা না থাকা। কেননা যখন ক্বিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখবে যে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ভাই ভাই থেকে, পিতা পুত্র থেকে, স্বামী স্ত্রী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।
বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে
হাশরের মাঠ এমন এক জায়গা, যেখানে কেউ কারও না। মুত্তাক্বী ব্যতীত অন্যান্য বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত’ (সূরা আয-যুখরুফ : ৬৭)।
দুনিয়ার জীবনে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আক্বীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। কিন্তু মিথ্যা আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এ সামাজিক কাঠামো আখিরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি, ভালবাসা, আত্মীয়তা এবং সহযোগিতার এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকবে, যা দুনিয়ায় সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফর, শিরক এবং ভুল পথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রূপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, নেতা ও তাদের অনুসারীরা পর্যন্ত একে অন্যের উপর লা‘নত বর্ষণ করবে। প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই যালিম আমাকে ধ্বংস করেছে; কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক।
আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না
ক্বিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। হাদীসে এসেছে,
‘আদী ইবনু হাতিম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রত্যেকের সাথে এমন অবস্থায় বাক্যালাপ করবেন যে, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী উপস্থিত থাকবে না। অতঃপর সে বান্দা দৃষ্টিপাত করবে, কিন্তু সামনে কিছু দেখতে পাবে না। পুনরায় সম্মুখে তাকাবে। এবার জাহান্নাম তার সামনে হাযির হবে। কাজেই তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আগুন থেকে বাঁচতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও বাঁচার চেষ্টা করে।[৭]
শুধু তাই নয় ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা হবে আরও ভয়ংকর। এদ্ব্যতীত যে সকল বিষয় সংগঠিত হবে তা নি¤েœ উল্লেখ করা হল।
সারা বিশ্ব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে
ক্বিয়ামতের দিন আসমান-যমীন সহ সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং একটিমাত্র ফুৎকার। তখন পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া হবে। অতঃপর যা সংঘটিত হওয়ার তা সংঘটিত হয়ে যাবে অর্থাৎ ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৩-১৫)।
মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতার কারণে মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘হে মানবম-লী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; নিঃসন্দেহে ক্বিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী উদাসীন হয়ে যাবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশু হতে’ (সূরা আল-হাজ্জ : ১-২)।
গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে
গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত অনেক কষ্টের এবং যন্ত্রণার। কিন্তু ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা এমন যে, মা তার সন্তানকে গর্ভপাত করবে। অথচ সে তা অনুভব করবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
‘প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে’ (সূরা আল-হাজ্জ : ২)।
আল্লাহর শাস্তির ভয়ে মানুষ মাতাল সদৃশ হবে
আল্লাহর শাস্তির ভয়ে মানুষ মাতাল হয়ে যাবে। আসলে মানুষ সেদিন মদ খেয়ে মাতাল হবে না। বরং আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তাদের এই অবস্থা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বস্তুত আল্লাহর শাস্তি কঠিন’ (সূরা আল-হাজ্জ : ২)।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পর এটাই বলতে পারি যে, ঈমানের রুকন সমূহের একটি রুকন ‘ক্বিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা’। সুতরাং মুসলিম হিসাবে ক্বিয়ামতের প্রতি আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে এবং তার যে ভয়াবহতার কথা আলোচিত হয়েছে তা স্মরণ করে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে ক্বিয়ামতের কঠিন ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন-আমীন!!
[১] মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২য় খণ্ড, ফৎওয়া নং- ১৩৭।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৩৬৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৯৫।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/৭১২১; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৭।
[৪]. সহীহ বুখারী, হা/৬৫২১; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/৫৫৩২
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/৩৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৬০; নাসাঈ, হা/২০৮৭; মিশকাত, হা/৫৫৩৫।
[৬]. সহীহ বুখারী, হা/৪৭৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৬; মিশকাত, হা/৫৫৩৭।
[৭]. সহীহ বুখারী, হা/৬৫৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৬; তিরমিযী, হা/২৪১৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৭২।
ক্বিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় গোপন রাখার রহস্য
আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের সঠিক সময় কাউকে অবগত করেননি। উদ্দেশ্য হল মানুষ যাতে সবসময় সতর্ক থাকে, পরকালের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং সর্বদা সৎকাজে লিপ্ত থাকে। হাদীসে এসেছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,
أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ السَّاعَةِ فَقَالَ مَتَى السَّاعَةُ قَالَ وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا قَالَ لَا شَىْءَ إِلَّا أَنِّىْ أُحِبُّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ أَنَسٌ فَمَا فَرِحْنَا بِشَىْءٍ فَرَحَنَا بِقَوْلِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ قَالَ أَنَسٌ فَأَنَا أُحِبُّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَأَرْجُوْ أَنْ أَكُوْنَ مَعَهُمْ بِحُبِّى إِيَّاهُمْ وَإِنْ لَمْ أَعْمَلْ بِمِثْلِ أَعْمَالِهِمْ
‘এক ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ক্বিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি ক্বিয়ামতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোন কিছুই জোগাড় করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসি। তখন তিনি বললেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে যাদেরকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা দ্বারা আমরা এতই আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসি, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কেও। আশা করি তাঁদেরকে ভালবাসার কারণে আমি তাদের সঙ্গে থাকতে পারব; যদিও তাঁদের আমলের মত আমল আমি করতে পারিনি’।[২]
সুধী পাঠক! উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ক্বিয়ামত কখন হবে তা নিয়ে গবেষণা করা অনর্থক। বরং সকলকে ক্বিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং সর্বদা আনুগত্যের কাজে লিপ্ত থাকাই যরূরী কর্তব্য।
ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তের দৃশ্য
যখন আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নির্ধারিত সময় চলে আসবে, তখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। ক্বিয়ামত ধীরে ধীরে সংঘটিত হবে না। তা আসার সময় দূর থেকে কেউ দেখতে পাবে না এবং এর মাঝখানে কেউ নিজেকে সামলে নিয়ে কোন রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করারও সুযোগ পাবে না। যে কোন মুহূর্তে চোখের পলকে বা তার চেয়েও কম সময়ে তা এসে যাবে। কাজেই যার সংশোধন হওয়ার সে যেন অবিলম্বে সংশোধিত হয়ে যায় এবং চূড়ান্ত ফায়ছালার সময় দূরে মনে করে পাশ কাটিয়ে না যায়। একটি নিঃশ্বাস সম্পর্কেও কেউ নিশ্চয়তার সাথে এ কথা বলতে পারবে না যে, তার পরের শ্বাস গ্রহণের সুযোগ অবশ্যই হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ .. وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ نَشَرَ الرَّجُلاَنِ ثَوْبَهُمَا بَيْنَهُمَا فَلَا يَتَبَايَعَانِهِ وَلَا يَطْوِيَانِهِ وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَقَدِ انْصَرَفَ الرَّجُلُ بِلَبَنِ لِقْحَتِهِ فَلَا يَطْعَمُهُ وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَهْوَ يُلِيْطُ حَوْضَهُ فَلَا يَسْقِىْ فِيْهِ وَلَتَقُوْمَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ رَفَعَ أُكْلَتَهُ إِلَى فِيْهِ فَلَا يَطْعَمُهَا
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আর ক্বিয়ামত এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, দুই ব্যক্তি একে অন্যের সামনে কাপড় খুলবে, কিন্তু সেই কাপড় ক্রয়-বিক্রয়ের কিংবা গুটিয়ে নেয়ারও অবসর পাবে না। আর ক্বিয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে এমতাবস্থায় যে, এক ব্যক্তি তার উষ্ট্রী দোহন করে দুগ্ধ নিয়ে আসবে, কিন্তু তা পান করারও সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামত অবশ্যই এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি তার চৌবাচ্চা মেরামত বা নির্মাণ করতে থাকবে, কিন্তু তাতে সে পানি পান করার সময় পাবে না। আর ক্বিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও পরিবেশে অবশ্যই কায়েম হবে যে, এক ব্যক্তি খাদ্যের লোকমা বা গ্রাস তার মুখ পর্যন্ত উত্তোলন করবে কিন্তু সে তা খাওয়ার অবকাশ পাবে না।[৩]
শিঙ্গায় ফুঁক
আল্লাহ তা‘আলা দায়িত্বশীল ফিরিশতা ইসরাফীল (আলাইহিস সালাম)-কে শিংগায় ফুৎকার দিতে নির্দেশ দিবেন। সে একটি ফুৎকার দিবে। ফলে যমীন ও পর্বতমালা সরিয়ে নেয়া হবে। এক আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। গ্রহ-নক্ষত্র খসে খসে পড়বে। আলো চলে যাবে। সমুদ্রগুলো অগ্নিউত্তাল হয়ে যাবে। দুষ্ট মানুষগুলো তখন মরে যাবে। ক্বিয়ামত কায়েম হওয়ার প্রাক্কালে পৃথিবীতে শুধু খারাপ মানুষের বসবাস থাকবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ – یَوۡمَ تَرَوۡنَہَا تَذۡہَلُ کُلُّ مُرۡضِعَۃٍ عَمَّاۤ اَرۡضَعَتۡ وَ تَضَعُ کُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَہَا وَ تَرَی النَّاسَ سُکٰرٰی وَ مَا ہُمۡ بِسُکٰرٰی وَ لٰکِنَّ عَذَابَ اللّٰہِ شَدِیۡدٌ
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় ক্বিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন’ (সূরা আল-হজ্জ : ১-২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ نَفۡخَۃٌ وَّاحِدَۃٌ – وَّ حُمِلَتِ الۡاَرۡضُ وَ الۡجِبَالُ فَدُکَّتَا دَکَّۃً وَّاحِدَۃً – فَیَوۡمَئِذٍ وَّقَعَتِ الۡوَاقِعَۃُ – وَ انۡشَقَّتِ السَّمَآءُ فَہِیَ یَوۡمَئِذٍ وَّاہِیَۃٌ – وَّ الۡمَلَکُ عَلٰۤی اَرۡجَآئِہَا وَ یَحۡمِلُ عَرۡشَ رَبِّکَ فَوۡقَہُمۡ یَوۡمَئِذٍ ثَمٰنِیَۃٌ – یَوۡمَئِذٍ تُعۡرَضُوۡنَ لَا تَخۡفٰی مِنۡکُمۡ خَافِیَۃٌ
‘অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে একটি মাত্র ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। আর আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফিরিশতাগণ আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন আপনার রবের আরশকে আটজন ফিরিশতা তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না’ (সূরা আল-হা-ক্কাহ : ১৩-১৮)।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে ইসরাফীলের দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর মৃতকে জীবিত করার মাধ্যমে পুনরুত্থান সংঘটিত হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
وَ نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ فَصَعِقَ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا مَنۡ شَآءَ اللّٰہُ ثُمَّ نُفِخَ فِیۡہِ اُخۡرٰی فَاِذَا ہُمۡ قِیَامٌ یَّنۡظُرُوۡنَ
‘সেদিন সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। তখন আসমান ও যমীনের সকল প্রাণী মরে পড়ে থাকবে। অবশ্য আল্লাহ যাদেরকে জীবন্ত রাখবেন তারা ছাড়া। অতঃপর শিংগায় আরেকবার ফুঁক দেয়া হবে। তখন সবাই উঠে দাঁড়াবে এবং তাকিয়ে থাকবে’ (সূরা আয-যুমার : ৬৮)। এরপর সব মানুষ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের উদ্দেশ্যে কবর থেকে উঠবে। তাদের অবস্থা হবে পাদুকা বিহীন নগ্ন এবং বস্ত্র বিহীন উলঙ্গ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یَوۡمَ نَطۡوِی السَّمَآءَ کَطَیِّ السِّجِلِّ لِلۡکُتُبِ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُہٗ وَعۡدًا عَلَیۡنَا اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ
‘যেভাবে সর্বপ্রথম আমরা সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম ঠিক সেভাবে আমরা তার পুনরাবৃত্তি করব। এটা একটা ওয়াদা যা পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের। এ কাজ অবশ্যই আমরা করব’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৪)।
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ক্বিয়ামতের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন পাহাড়সমূহ প্রচ-ভাবে কেঁপে উঠবে এবং মাটিতে পরিণত হয়ে তার সাথে মিশে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ تَرَی الۡجِبَالَ تَحۡسَبُہَا جَامِدَۃً وَّ ہِیَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ
‘তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে করছ, কিন্তু (সেদিন) এগুলো হবে মেঘমালার মত চলমান’ (সূরা আন-নামল : ৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَّ بُسَّتِ الۡجِبَالُ بَسًّا- فَکَانَتۡ ہَبَآءً مُّنۡۢبَثًّا
‘এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা’ (সূরা আল-ওয়াক্বিয়া : ৫-৬)। তিনি আরো বলেন, وَ تَکُوۡنُ الۡجِبَالُ کَالۡعِہۡنِ ‘এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গিন পশমের মত’ (সূরা আল-মা‘আরিজ : ৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡجِبَالِ فَقُلۡ یَنۡسِفُہَا رَبِّیۡ نَسۡفًا- فَیَذَرُہَا قَاعًا صَفۡصَفًا-لَّا تَرٰی فِیۡہَا عِوَجًا وَّ لَاۤ اَمۡتًا
‘তারা আপনাকে পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করে। অতএব আপনি বলুন! আমার পালনকর্তা পাহাড় সমূহকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। অতঃপর পৃথিবীকে মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন। আপনি তাতে মোড় ও টিলা দেখবেন না’ (সূরা ত্বোহা : ১০৫-১০৭)।
সাগরগুলো উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরিত হবে এবং টগবগ করে জ্বলতে থাকবে। ধরাপৃষ্ঠের বহুলাংশ জুড়ে যে সমুদ্র রয়েছে, সেদিন তাতে আগ্নেয়গিরি মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টি করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اِذَا الۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ
‘যখন সমুদ্র বিস্ফোরিত হবে’ (সূরা আল-ইনফিত্বার : ৩)। তিনি আরো বলেন,
وَ اِذَا الۡبِحَارُ سُجِّرَتۡ
‘যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে’ (সূরা আত-তাকভীর : ৬)।
মানুষ যে মাটিতে আশ্রয় নিয়ে আছে তা বদলে যাবে। একই দশা হবে আসমানের। অতঃপর মানবজাতিকে পুনরায় উত্থিত করা হবে এমন ভূমিতে, তা যেন তারা কখনো দেখেনি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یَوۡمَ تُبَدَّلُ الۡاَرۡضُ غَیۡرَ الۡاَرۡضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوۡا لِلّٰہِ الۡوَاحِدِ الۡقَہَّارِ
‘যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে উপস্থাপিত হবে’ (সূরা ইবরাহীম : ৪৮)।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ النَّقِىِّ لَيْسَ فِيهَا عَلَمٌ لِأَحَدٍ
‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষ একটি স্বচ্ছ চেপটা রুটির মত সাদা প্রান্তরে একত্রিত হবে। সেখানে কারো কোন প্রতীক বা চিহ্ন থাকবে না’।[৪] সুতরাং তা হয়ে যাবে প্রতীকহীন একটি শুভ্র প্রান্তর।
মানুষ এমন কিছু বিষয় প্রত্যক্ষ করবে, যা পূর্বে দেখেনি। তারা সেখানে চাঁদ ও সূর্যকে একত্রিত দেখতে পাবে। ফলে মানুষের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়ে যাবে। আল্লাহ তা‘অলা বলেন,
فَاِذَا بَرِقَ الۡبَصَرُ- وَ خَسَفَ الۡقَمَرُ- وَ جُمِعَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ- یَقُوۡلُ الۡاِنۡسَانُ یَوۡمَئِذٍ اَیۡنَ الۡمَفَرُّ
‘যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। সে দিন মানুষ বলবে, পলায়নের জায়গা কোথায়?’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ৭-১০)।
হাশরের মাঠে সকল মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّكُمْ مَحْشُوْرُوْنَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا ثُمَّ قَرَأَ ﴿ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُہٗ وَعۡدًا عَلَیۡنَا اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ﴾ وَأَوَّلُ مَنْ يُّكْسٰى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيْمُ وَإِنَّ أُنَاسًا مِنْ أَصْحَابِيْ يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُوْلُ أَصْحَابِيْ أَصْحَابِيْ فَيَقُوْلُ إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوْا مُرْتَدِّيْنَ عَلٰى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ فَأَقُوْلُ كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ ﴿وَ کُنۡتُ عَلَیۡہِمۡ شَہِیۡدًا مَّا دُمۡتُ فِیۡہِمۡ فَلَمَّا تَوَفَّیۡتَنِیۡ کُنۡتَ اَنۡتَ الرَّقِیۡبَ عَلَیۡہِمۡ وَ اَنۡتَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ- اِنۡ تُعَذِّبۡہُمۡ فَاِنَّہُمۡ عِبَادُکَ وَ اِنۡ تَغۡفِرۡ لَہُمۡ فَاِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অবশ্যই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে নগ্ন পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন- ‘আমি প্রথমে যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি; আর আমি এটা (বাস্তবায়ন) করবই’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৪)। ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে তিনি হবেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)। আর (সেদিন) আমার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন লোককে পাকড়াও করে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, (এরা তো) আমার অনুসারী, আমার অনুসারী। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যখন আপনি তাদের থেকে বিদায় নেন, তখন এরা তাদের পূর্বের মতবাদে ফিরে যায়। তখন আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম)-এর মত বলব, হে আল্লাহ! আমি যতদিন পর্যন্ত তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলাম, ততদিন পর্যন্ত আমি তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষণকারী ছিলাম। যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন, তখন আপনিই ছিলেন তাদের অবস্থা সম্পর্কে একমাত্র প্রত্যক্ষকারী। আর আপনি তো সবকিছুর উপর প্রত্যক্ষদর্শী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন (তা দিতে পারেন) কেননা এরা আপনারই দাস। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, (তাও করতে পারেন) কারণ আপনি মহা ক্ষমতাবান এবং মহা প্রজ্ঞার অধিকারী’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ১১৭-১১৮)।[৫]
কাফিরদেরকে উপুড় করে হাযির করা হবে
কাফেরদের উপর ক্বিয়ামত যে কত কঠিন ও ভয়াবহ হবে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সেদিন কাফেরদেরকে উপুড় করে হাযির করা হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا نَبِيَّ اللهِ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلٰى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِيْ أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلٰى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلٰى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ক্বিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে কি চেহারার উপর ভর করে একত্রিত করা হবে? তিনি বললেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দু’পায়ের উপর হাঁটাতে পারলেন, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন তাকে চেহারার উপর ভর করাতে সক্ষম নন?’[৬]
মানুষ পলায়ন করার চেষ্টা করবে
ক্বিয়ামতের দিন মানুষ পলায়ন করার চেষ্টা করবে কিন্তু তা কখনই সম্ভব হবে না। এর থেকে নিস্তার ও রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یَقُوۡلُ الۡاِنۡسَانُ یَوۡمَئِذٍ اَیۡنَ الۡمَفَرُّ – کَلَّا لَا وَزَرَ – اِلٰی رَبِّکَ یَوۡمَئِذِۣ الۡمُسۡتَقَرُّ – یُنَبَّؤُا الۡاِنۡسَانُ یَوۡمَئِذٍۭ بِمَا قَدَّمَ وَ اَخَّرَ
‘সেদিন মানুষ বলবে, আজ পালানোর স্থান কোথায়? কখনো না, কোন আশ্রয়স্থল নেই। সেদিন তোমার প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১০-১৩)।
শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে
ক্বিয়ামতের কঠিন ভয়াবহতা, ভূকম্পন এবং দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার কারণে কিশোর বৃদ্ধে পরিণত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَکَیۡفَ تَتَّقُوۡنَ اِنۡ کَفَرۡتُمۡ یَوۡمًا یَّجۡعَلُ الۡوِلۡدَانَ شِیۡبَۨا
‘অতএব কীভাবে তোমরা বাঁচতে পারবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন কিশোরকে বৃদ্ধ বানানো হবে’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল : ১৭)।
সকল বিষয়ে অবগত হওয়া
যখন ক্বিয়ামত হবে তখন মানুষ সকল কিছু অর্থাৎ জীবনে যা কিছু করেছে তা জানতে পারবে এবং তা তার সামনে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
عَلِمَتۡ نَفۡسٌ مَّاۤ اَحۡضَرَتۡ
‘তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে যে, সে কী নিয়ে এসেছে’ (সূরা আত-তাকভীর : ১৪)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یَوۡمَ تَجِدُ کُلُّ نَفۡسٍ مَّا عَمِلَتۡ مِنۡ خَیۡرٍ مُّحۡضَرًا وَّ مَا عَمِلَتۡ مِنۡ سُوۡٓءٍ
‘সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু সৎকর্ম করেছে তা মওজুদ পাবে এবং সে যা মন্দ কাজ করেছে তাও পাবে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৩০)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یُنَبَّؤُا الۡاِنۡسَانُ یَوۡمَئِذٍۭ بِمَا قَدَّمَ وَ اَخَّرَ
‘সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও পশ্চাতে রেখে গেছে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৩)।
কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না
ক্বিয়ামতের ময়দানে মানুষ তার আমল অনুযায়ী প্রতিদান প্রাপ্ত হবে ও পরিণাম ভোগ করবে। যদি কল্যাণকর কাজ করে, তবে ভাল প্রতিদান পাবে এবং যদি অকল্যাণকর করে, তবে পরিণাম খারাপ হবে। কেউ কারও পাপের বোঝা বহন করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ لَا تَزِرُ وَازِرَۃٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰی وَ اِنۡ تَدۡعُ مُثۡقَلَۃٌ اِلٰی حِمۡلِہَا لَا یُحۡمَلۡ مِنۡہُ شَیۡءٌ وَّ لَوۡ کَانَ ذَا قُرۡبٰی
‘কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না, কোন ভারাক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাউকেও এটা বহন করতে আহ্বান করে তবে তার কিছুই বহন করা হবে না, নিকটাত্মীয় হলেও’ (সূরা আল-ফাতির : ১৮)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
وَ لَا تَکۡسِبُ کُلُّ نَفۡسٍ اِلَّا عَلَیۡہَا وَ لَا تَزِرُ وَازِرَۃٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰی
‘প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারো ভার গ্রহণ করবে না’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৬৪)।
ভিযরুন (وِزْرٌ) অর্থ বোঝা অর্থাৎ কৃতকর্মের দায়-দায়িত্বের বোঝা। আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের উপর কেবল তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচানোর জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে এরও কোন সম্ভাবনা নেই।
এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, যারা মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে তাদের মুশরিক আত্মীয়স্বজন ও গোত্রের লোকেরা বলেছিল, তোমরা এই নতুন ধর্ম ত্যাগ কর এবং নিজেদের বাপ-দাদার ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হও। এজন্য কোন পাপ হলে আমরা তার বোঝা বহন করব। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। তাদের এসব কথা বলার কারণ হল- আখিরাত সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা না থাকা। কেননা যখন ক্বিয়ামত আসবে এবং লোকেরা দেখবে যে, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোন্ ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, তখন প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানোর চিন্তা করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ভাই ভাই থেকে, পিতা পুত্র থেকে, স্বামী স্ত্রী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। কেউ কারো সামান্যতম বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নিতে প্রস্তুত হবে না।
বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে
হাশরের মাঠ এমন এক জায়গা, যেখানে কেউ কারও না। মুত্তাক্বী ব্যতীত অন্যান্য বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلۡاَخِلَّآءُ یَوۡمَئِذٍۭ بَعۡضُہُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الۡمُتَّقِیۡنَ
‘সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, তবে মুত্তাক্বীরা ব্যতীত’ (সূরা আয-যুখরুফ : ৬৭)।
দুনিয়ার জীবনে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আক্বীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। কিন্তু মিথ্যা আক্বীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এ সামাজিক কাঠামো আখিরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি, ভালবাসা, আত্মীয়তা এবং সহযোগিতার এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকবে, যা দুনিয়ায় সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফর, শিরক এবং ভুল পথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রূপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, নেতা ও তাদের অনুসারীরা পর্যন্ত একে অন্যের উপর লা‘নত বর্ষণ করবে। প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই যালিম আমাকে ধ্বংস করেছে; কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক।
আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না
ক্বিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَسَيُكَلِّمُهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ بَيْنَ اللهِ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ ثُمَّ يَنْظُرُ فَلَا يَرَى شَيْئًا قُدَّامَهُ ثُمَّ يَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَتَسْتَقْبِلُهُ النَّارُ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَّقِىَ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ
‘আদী ইবনু হাতিম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রত্যেকের সাথে এমন অবস্থায় বাক্যালাপ করবেন যে, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী উপস্থিত থাকবে না। অতঃপর সে বান্দা দৃষ্টিপাত করবে, কিন্তু সামনে কিছু দেখতে পাবে না। পুনরায় সম্মুখে তাকাবে। এবার জাহান্নাম তার সামনে হাযির হবে। কাজেই তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আগুন থেকে বাঁচতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও বাঁচার চেষ্টা করে।[৭]
শুধু তাই নয় ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা হবে আরও ভয়ংকর। এদ্ব্যতীত যে সকল বিষয় সংগঠিত হবে তা নি¤েœ উল্লেখ করা হল।
সারা বিশ্ব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে
ক্বিয়ামতের দিন আসমান-যমীন সহ সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ نَفۡخَۃٌ وَّاحِدَۃٌ – وَّ حُمِلَتِ الۡاَرۡضُ وَ الۡجِبَالُ فَدُکَّتَا دَکَّۃً وَّاحِدَۃً – فَیَوۡمَئِذٍ وَّقَعَتِ الۡوَاقِعَۃُ
‘যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং একটিমাত্র ফুৎকার। তখন পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া হবে। অতঃপর যা সংঘটিত হওয়ার তা সংঘটিত হয়ে যাবে অর্থাৎ ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৩-১৫)।
মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে
ক্বিয়ামতের ভয়াবহতার কারণে মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ – یَوۡمَ تَرَوۡنَہَا تَذۡہَلُ کُلُّ مُرۡضِعَۃٍ عَمَّاۤ اَرۡضَعَتۡ
‘হে মানবম-লী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; নিঃসন্দেহে ক্বিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী উদাসীন হয়ে যাবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশু হতে’ (সূরা আল-হাজ্জ : ১-২)।
গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে
গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত অনেক কষ্টের এবং যন্ত্রণার। কিন্তু ক্বিয়ামতের ভয়াবহতা এমন যে, মা তার সন্তানকে গর্ভপাত করবে। অথচ সে তা অনুভব করবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ تَضَعُ کُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَہَا
‘প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে’ (সূরা আল-হাজ্জ : ২)।
আল্লাহর শাস্তির ভয়ে মানুষ মাতাল সদৃশ হবে
আল্লাহর শাস্তির ভয়ে মানুষ মাতাল হয়ে যাবে। আসলে মানুষ সেদিন মদ খেয়ে মাতাল হবে না। বরং আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তাদের এই অবস্থা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ تَرَی النَّاسَ سُکٰرٰی وَ مَا ہُمۡ بِسُکٰرٰی وَ لٰکِنَّ عَذَابَ اللّٰہِ شَدِیۡدٌ
‘মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বস্তুত আল্লাহর শাস্তি কঠিন’ (সূরা আল-হাজ্জ : ২)।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পর এটাই বলতে পারি যে, ঈমানের রুকন সমূহের একটি রুকন ‘ক্বিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা’। সুতরাং মুসলিম হিসাবে ক্বিয়ামতের প্রতি আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে এবং তার যে ভয়াবহতার কথা আলোচিত হয়েছে তা স্মরণ করে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে ক্বিয়ামতের কঠিন ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন-আমীন!!
[১] মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২য় খণ্ড, ফৎওয়া নং- ১৩৭।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৩৬৮৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৯৫।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/৭১২১; সহীহ মুসলিম, হা/১৫৭।
[৪]. সহীহ বুখারী, হা/৬৫২১; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/৫৫৩২
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/৩৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হা/২৮৬০; নাসাঈ, হা/২০৮৭; মিশকাত, হা/৫৫৩৫।
[৬]. সহীহ বুখারী, হা/৪৭৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৬; মিশকাত, হা/৫৫৩৭।
[৭]. সহীহ বুখারী, হা/৬৫৩৯; সহীহ মুসলিম, হা/১০১৬; তিরমিযী, হা/২৪১৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২৭২।
সূত্র: আল-ইখলাছ।
Last edited: