বিদআত কুলখানি বা চল্লিশা পালন করা বিদয়াত

Joined
Jan 12, 2023
Threads
827
Comments
1,075
Solutions
19
Reactions
11,842
মৃতকে দাফন দেয়ার পর দাফন দিতে আসা লোকদের নাম লিখে রেখে তিন,সাত বা চল্লিশ দিনের দিন তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে কুলখানি করা,চল্লিশা করা, বিনা খতম করা, মিলাদ মাহফিল করা এবং এ উপলক্ষে লোকজন জমায়েত করে খাবার-দাবার করা, সিন্নী বিতরণ করা বেদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়।

অনুরূপভাবে মানুষ মারা যাওয়ার চল্লিশদিন পর্যন্ত প্রত্যেক বৃহস্পতিবার শোক পালন করা,মৃত্যুর পর প্রথম ঈদকে বিশেষভাবে শোকদিবস হিসেবে পালন করা,সে দিন হাফেজ বা কারী সাহেবদের ডেকে কুরআন পড়ানো এবং শোক পালনের জন্য লোকজন একত্রিত করাও বিদয়াত এবং হারাম। কারণ,এ সকল কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের আমল ছিল না। এ জাতীয় কাজ পরবর্তী যুগের মানুষদের সৃষ্টি। সুতরাং এ সকল কাজ থেকে বিরত থাকা মুসলিমদের জন্য অপরিহার্য।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ইমাম ইবনে মাজাহ রহ. সহীহ সনদে আব্দুল্লাহ আল বাজালী রা. থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন “আমরা মৃত্যুবরণকারী সাহাবীগণের কাফন-দাফন সম্পন্ন করে মৃতের বাড়ীতে একত্রিত হওয়া এবং তাদের পক্ষ থেকে খাবারের আয়জন করাকে ‘`নাওহা’ এর মতই মনে করতাম।” ইমাম আহমদ বলেন,“এটি একটি জাহেলী কাজ।” নাওহা অর্থ কারও মৃত্যেুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা,শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া,জামা-কাপড় ছেড়া …ইত্যাদি। এসব কাজ করা ইসলামে হারাম।

উক্ত বিদয়াতের পেছনে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয় তা যদি শরীয়ত সম্মত পন্থায় গরীব অসহায়-মানুষের সাহায্যে দান করা হত বা কোন জনকল্যাণ মূলক কাজে ব্যয় করা হত তাহলে একদিকে অসহায় মানুষের উপকার হত অন্য দিকে মৃত ব্যক্তিও কবরে সওয়াব লাভ করত।

মৃতের বাড়িতে খাবার প্রসঙ্গে একটি সংশয়ের জবাব:

কিছু মানুষ ‘‘মিশকাতুল মাসবীহ’ এর মুজিযা শীর্ষক অধ্যায় থেকে একটি হাদীসের মাধ্যমে দাফনের পর মৃতের বাড়িতে খাবার অনুষ্ঠান করার বৈধতার প্রমাণ উপস্থাপন করে থাকেন। হাদীসটি হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক সাহাবীর দাফন শেষ করে ফিরে আসছিলেন। তখন উক্ত ‘‘মৃতের স্ত্রী’ তাঁকে খাবার দাওয়াত দিলেন। তিনি দাওয়াত গ্রহণ করলে এবং তার বাড়িতে গেলেন। অত:পর খাদ্য উপস্থিত করা হলে তিনি এবং অন্য লোকজন খাবার গ্রহণ করলেন। [1]”

জবাব: উক্ত হাদীসে দাওয়াত প্রদানকারী ‘‘মৃতের স্ত্রী’ ছিল একথাটি ঠিক নয়। বরং সে ছিল এক সাধারণ কুরাইশ মহিলা। এখানে হাদীসের মূল ভাষ্যে (ه) সর্বনামটি অতিরিক্ত থাকায় এ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

মূল হাদীসে এসেছে- دَاعِي امْرَأَةٍ “ জনৈক মহিলার পক্ষ থেকে এক আহবানকারী”। কিন্তু এর পরিবর্তে মিশকাত গ্রন্থকার ভুলবশতঃ دَاعِي امْرَأَته “মৃতের স্ত্রীর পক্ষ থেকে এক আহবানকারী”” লিখেছেন। কারণ, আবু দাঊদ ও বায়হাকী সহ যত হাদীসের কিতাবে এ বর্ণনাটি এসেছে সব জায়গায় دَاعِي امْرَأَةٍ “জনৈক মহিলার পক্ষ থেকে এক আহবানকারী” কথাটি উল্লেখ রয়েছে। دَاعِي امْرَأَته “মৃতের স্ত্রীর পক্ষ থেকে এক আহবানকারী” কোথাও পাওয়া যায় না। সুতরাং এতে প্রমাণিত হয় যে, এটি একটি ভুল যা মিশকাতুল মাসাবীহ গ্রন্থের লেখকের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

তাছাড়া কোন সাহাবীর নিকট এ আশা করা যায় না যে,তিনি বিদয়াত করবেন। কেননা,মৃতের গৃহে সম্মিলিত হয়ে ভোজ অনুষ্ঠান করা একটি বিদ’আতী কাজ এবং জাহেলী প্রথা। সুনান ইবনে মাজার সহীহ হদীছে এ জাতীয় কাজকে ’নাওহা’ বলা হয়েছে যা হারাম এবং অভিশাপযোগ্য কাজ।

সুতরাং উপরোক্ত হাদীছ মৃতের বাড়িতে খাবার-দাবারের আয়োজন করার বৈধতার পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা মোটেও ঠিক নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আব্দুর রহমান মোবারকপুরী রহ. লিখিত ’কিতাবুল জানায়িয’ গ্রন্থের ৮৭ হতে ৯১ পৃষ্ঠা অধ্যায়ন করা যেতে পারে।

- শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী​

[1] আবু দাউদ ও বাইহাকী, সহীহ, আলবানী, আহকামুল জানায়েজ
 
Similar threads Most view View more
Back
Top