If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
কুরসী শব্দের অর্থ: কুরসী শব্দটি আরবী ভাষায় ‘কারস' থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। অভিধানে কারস অর্থ একত্রিত করা। সেটা অনুযায়ী চেয়ারকে কুরসী বলার কারণ হচ্ছে এর কাঠগুলো এক বিশেষ ধরনে একত্রিত করা হয়। সুতরাং যা কোনো কিছুকে একসাথে করে তাই কুরসী বলে অভিধানে গণ্য । কাগজ একত্রিত করলে সেটাকে আরবীতে বলা হয় 'কুররাসাহ’। আলেমগণকেও ‘কারাসী' বলা হয়; কারণ তারা ইলম একত্রিত করেন।
পরিভাষায়: কুরসী হচ্ছে, “বৃহৎ এক দেহ বিশিষ্ট সৃষ্ট বস্তু, যা ‘আরশের সামনে পড়ে আছে, ‘আরশ তার থেকে অনেক বড়, আর কুরসী হচ্ছে মহান আল্লাহ তা'আলার পা রাখার স্থান।”(১)
ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কুরসী কুরআন, হাদীস ও জমহূর সালাফের ইজমা— দ্বারা সাব্যস্ত।(২)
সুদ্দী বলেন, আসমান ও যমীন সবই কুরসীর অভ্যন্তরে। আর কুরসী রাব্বুল আলামীনের ‘আরশের সামনে ৷
তবে এ আয়াতকে কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। হাদীসে এসেছে, উবাই ইবন কা'ব রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
তাছাড়া আয়াতুল কুরসী এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাকে ঈমানদারের জন্য দুনিয়াতে শয়তান থেকে(৪) আর মৃত্যুর পরে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।(৫)
২। কুরসী ‘আরশের ছেয়ে ছোট: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
অপর হাদীসে ইবন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
৩। কুরসী পা রাখার স্থান: অথচ ‘আরশের পরিমান আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।
ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “কুরসী হচ্ছে মহান রাব্বুল ইয্যতের পা রাখার স্থান, আর ‘আরশ, তার পরিমাণ তো আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।”(৮)
ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমার অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে, আবু মূসা আল- আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে, ইবন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে, আর প্রখ্যাত তাবে'য়ী মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে।
আবু মূসা আল-আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “কুরসী হচ্ছে, দু পায়ের স্থান, আর তার রয়েছে ভারজনিত শব্দ, যেমনিভাবে বাহনের উপর হাওদাজে ভারের কারণে শব্দ হয়ে থাকে ।(৯) ইমাম কুরতুবী ও বাইহাক্বী বলেন, হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী, কুরস হচ্ছে ‘আরশের সামনে একটি সৃষ্টি; আর ‘আরশ তার থেকে অনেক বড়।
ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী শারহুত ত্বাহাওয়িয়্যাহ গ্রন্থে বলেন, আর কুরসী, তা যেমনটি একাধিক সালাফ বলেছেন, তা হচ্ছে, ‘আরশের সামনে, ‘আরশে উঠার সিঁড়ির মতো।(১০)
২. তাছাড়া কুরআন, হাদীস ও আসারে এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বর্ণিত হয়েছে।
এ জাতীয় আয়াত ও হাদীসসমূহ সম্পর্কে মনে করে থাকে যে, এগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য বড় বড় ধারণায় নিপতিত করা উদ্দেশ্য। বাস্তবে সে রকম নয়। এরা সাধারণত দীনের সঠিক জ্ঞানে দীন না বুঝে আবেগ দিয়ে চলতে চায়। মু'তাযিলারা এটা সাধারণত বলে থাকে, তাদের সাথে কিছু আশায়েরা মতবাদের লোকও রয়েছে। বর্তমান কালের তাফসীরকারকদের মধ্য হতে সাইয়্যেদ কুতুব তার যিলালুল কুরআনে সূরা আয-যুমারের ৬৭ নং আয়াতে এ মতকে পছন্দ করেছেন এবং একটি মৌলিক নীতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বস্তুত এ জাতীয় কথা বলা বড় ধরনের পথভ্রষ্টতা। কারণ:
তিন. কুরসী বলে ইলম বা জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। এটি ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এ মতটিও শুদ্ধ নয়। কারণ,
কিন্তু আল্লাহর ইলম তো আরও ব্যাপক, আল্লাহ বলছেন,
তিনি আরও বলেছেন,
সেটার পরিধিতে আসমান ও যমীনের বাইরে জান্নাত, জাহান্নামও রয়েছে।
কোনো কোনো মুহাদ্দিস ও মুফাসসির থেকে কুরসী অর্থ ইলম বর্ণিত হলেও মনে রাখতে হবে যে, তারা এটা বাড়তি একটি অর্থ হিসেবে বলে থাকবেন। অর্থাৎ যেহেতু আসমান ও যমীন এ দু'টি কুরসীতে অতীব ক্ষুদ্র, তাই তিনি সেগুলোর মধ্যকার সবকিছুর জ্ঞানই রাখেন। সম্ভবত এটা বলা উদ্দেশ্য। আল্লাহ ভালো জানেন।
চার. কারও কারও মতে, কুরসী বলে রাজত্ব বুঝানো হয়েছে, তারা ‘আরশকেও রাজত্ব হিসেবে বুঝেছে। বস্তুত তাদের বক্তব্যও শুদ্ধ নয়। ইতোপূর্বে তাদের বক্তব্য খণ্ডন করা হয়েছে।(১১)
পরিভাষায়: কুরসী হচ্ছে, “বৃহৎ এক দেহ বিশিষ্ট সৃষ্ট বস্তু, যা ‘আরশের সামনে পড়ে আছে, ‘আরশ তার থেকে অনেক বড়, আর কুরসী হচ্ছে মহান আল্লাহ তা'আলার পা রাখার স্থান।”(১)
ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কুরসী কুরআন, হাদীস ও জমহূর সালাফের ইজমা— দ্বারা সাব্যস্ত।(২)
সুদ্দী বলেন, আসমান ও যমীন সবই কুরসীর অভ্যন্তরে। আর কুরসী রাব্বুল আলামীনের ‘আরশের সামনে ৷
কুরসীর কিছু বৈশিষ্ট্য:
১। কুরআনে কারীমের মাত্র একটি আয়াতে কুরসীর কথা এসেছে, তা হচ্ছে,اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
“আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী' আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দু'টোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।” [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২৫৫]তবে এ আয়াতকে কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। হাদীসে এসেছে, উবাই ইবন কা'ব রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
يَا أَبَا المُنْذِرِ، أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللهِ مَعَكَ أَعْظَمُ؟، قَالَ: قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «يَا أَبَا الْمُنْذِرِ أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللهِ مَعَكَ أَعْظَمُ؟» قَالَ: قُلْتُ: ( اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ) [البقرة: ٢٥٥]. قَالَ: فَضَرَبَ فِي صَدْرِي، وَقَالَ: «وَاللَّهُ لِيَهْنِكَ الْعِلْمُ أَبَا الْمُنْذِرِ»
“হে আবুল মুনযির তুমি কি জান, আল্লাহর কিতাবের মধ্যে যা তোমার কাছে আছে তাতে কোন আয়াতটি সবচেয়ে বড়? তিনি বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। তিনি বলেন, হে আবুল মুনযির, তুমি কি জান, আল্লাহর কিতাবের মধ্যে যা তোমার কাছে আছে তাতে কোন আয়াতটি সবচেয়ে বড়? আমি বললাম, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হইয়্যুল ক্বাইয়্যুম... [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২৫৫], তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে থাপ্পড় দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, হে আবুল মুনযির ইলম যেন তোমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ প্রদানকারী বস্তু হয়।”(৩)তাছাড়া আয়াতুল কুরসী এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটাকে ঈমানদারের জন্য দুনিয়াতে শয়তান থেকে(৪) আর মৃত্যুর পরে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।(৫)
২। কুরসী ‘আরশের ছেয়ে ছোট: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَا الْكُرْسِيُّ فِي الْعَرْشِ إِلَّا كَحَلْقَةٍ مِنْ حديد ألقيت بين ظهراني فَلَاةٍ مِنَ الْأَرْضِ
“আরশের তুলনায় কুরসী তো বিস্তীর্ণ যমীনের উপর লোহার একটি ফেলে রাখা রিং।”(৬)অপর হাদীসে ইবন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
بَيْنَ السَّمَاءِ السَّابِعَةِ وَبَيْنَ الْكُرْسِيُّ خَمْسِمِائَة عَامٍ، وَبَيْنَ الْكُرْسِيُّ إِلَى الْمَاءِ خَمْسِمِائَةِ عَامِ، وَالْعَرْشُ عَلَى الْمَاءِ، وَاللَّهُ فَوْقَ الْعَرْشِ وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنْتُم عَلَيْهِ».
“সপ্তম আসমান ও কুরসীর দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ' বছর, আর কুরসী থেকে পানির দূরত্ব পাঁচশ' বছরের, ‘আরশ পানির উপর, আর আল্লাহ ‘আরশের উপর, সেখানে থেকেও তিনি তোমাদের অবস্থা ভালো করে জানেন।”(৭)৩। কুরসী পা রাখার স্থান: অথচ ‘আরশের পরিমান আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।
ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “কুরসী হচ্ছে মহান রাব্বুল ইয্যতের পা রাখার স্থান, আর ‘আরশ, তার পরিমাণ তো আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।”(৮)
ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমার অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে, আবু মূসা আল- আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে, ইবন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে, আর প্রখ্যাত তাবে'য়ী মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে।
আবু মূসা আল-আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “কুরসী হচ্ছে, দু পায়ের স্থান, আর তার রয়েছে ভারজনিত শব্দ, যেমনিভাবে বাহনের উপর হাওদাজে ভারের কারণে শব্দ হয়ে থাকে ।(৯) ইমাম কুরতুবী ও বাইহাক্বী বলেন, হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী, কুরস হচ্ছে ‘আরশের সামনে একটি সৃষ্টি; আর ‘আরশ তার থেকে অনেক বড়।
ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী শারহুত ত্বাহাওয়িয়্যাহ গ্রন্থে বলেন, আর কুরসী, তা যেমনটি একাধিক সালাফ বলেছেন, তা হচ্ছে, ‘আরশের সামনে, ‘আরশে উঠার সিঁড়ির মতো।(১০)
কুরসীর ব্যাপারে বিভিন্ন ভুল মতামত :
কুরসী বলতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত কী বুঝেন তা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয়, এ কুরসী নিয়েও কিছু লোক সঠিক পথবিচ্যুত হয়েছে। তাদের মতগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:এক. কোনো কোনো আলেমের মতে, ‘আরশ ও কুরসী একই জিনিস। এটি হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। তবে কয়েকটি কারণে শুদ্ধ নয়।
১. ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে এ বর্ণনা শুদ্ধ নয়, যেমনটি ইমাম ইবন কাসীর বলেছেন।২. তাছাড়া কুরআন, হাদীস ও আসারে এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য বর্ণিত হয়েছে।
দুই. কুরসী বলে বাস্তবে কিছু নেই। কুরসী একটি ধারণা করা জিনিস মাত্র, যা দিয়ে উপমা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার বড়ত্বের উদাহরণ পেশ করা হয়েছে মাত্ৰ। যারা আল্লাহর সেসব গুণকে অস্বীকার করে যা আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশক, তারাই সাধারণত এ ধরনের কথা বলে। তারা আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশক আয়াতসমূহ যেমন,
وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ، يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَوَاتُ مَطْوِيَّتُ بِيَمِينِهِ [الزمر: ٦٧]
“সকল যমীন তাঁর মুষ্ঠির ভিতর থাকবে, আর আসমানসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৭]এ জাতীয় আয়াত ও হাদীসসমূহ সম্পর্কে মনে করে থাকে যে, এগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য বড় বড় ধারণায় নিপতিত করা উদ্দেশ্য। বাস্তবে সে রকম নয়। এরা সাধারণত দীনের সঠিক জ্ঞানে দীন না বুঝে আবেগ দিয়ে চলতে চায়। মু'তাযিলারা এটা সাধারণত বলে থাকে, তাদের সাথে কিছু আশায়েরা মতবাদের লোকও রয়েছে। বর্তমান কালের তাফসীরকারকদের মধ্য হতে সাইয়্যেদ কুতুব তার যিলালুল কুরআনে সূরা আয-যুমারের ৬৭ নং আয়াতে এ মতকে পছন্দ করেছেন এবং একটি মৌলিক নীতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বস্তুত এ জাতীয় কথা বলা বড় ধরনের পথভ্রষ্টতা। কারণ:
১. এ জাতীয় কথা বলার অর্থ হচ্ছে দীনকে খেয়াল খুশির অধীন করে দেয়া। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা বলেছেন সেগুলোকে যদি এভাবে দেখা হয়, তাহলে গায়েবী কোনো জিনিসেই আর ঈমান থাকবে না। নাউযুবিল্যাহ।
২. মু'তাযিলা মুফাসসিররা এ নীতির ওপর ভিত্তি করেই যা তাদের যুক্তিবিরুদ্ধ হয়ে যায় সেটাকেই এ পর্যায়ে নিয়ে রাখে। যেমনটি করেছেন যামাখশারী তার তাফসীরে।
৩. কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্ট বহু ভাষ্যকে এভাবে খেয়াল বা ধারণাপ্রসূত মনে করা সুস্পষ্ট কুফুরী। কুরআন ও হাদীসে যা এসেছে তার ওপর ঈমান না আসলে সে আল্লাহর বাণী ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বিশ্বাসী হতে পারেনি।
তিন. কুরসী বলে ইলম বা জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। এটি ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। এ মতটিও শুদ্ধ নয়। কারণ,
১. ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে যা বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে এটি তার বিপরীত।
২. আরবী ভাষায় তার যে অর্থ হয়, তাতে কুরসী বলে ইলম বা জ্ঞান অর্থ নেয়া যায় না।
৩. তাছাড়া শরী'আতের নসও তা বুঝাচ্ছে না। এগুলো কালামশাস্ত্রবিদদের বাড়তি কথার অন্তর্ভুক্ত।
৪. কুরসী সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন যে, তা আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে [সূরা বাক্বারাহ: ২৫৫]।
কিন্তু আল্লাহর ইলম তো আরও ব্যাপক, আল্লাহ বলছেন,
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُواْ سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ ﴾ [غافر: ٧]
“যারা ‘আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাঁর ওপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, “হে আমাদের রব! আপনি দয়া ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের শাস্তি থেকে আপনি তাদের রক্ষা করুন।” [সূরা গাফির, আয়াত: ০৭]তিনি আরও বলেছেন,
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّنَهُنَّ سَبْعَ سَمَوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ [البقرة: ٢٩]
“তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আসমানের প্রতি মনোনিবেশ করে সেটাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করেছেন; আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।” [সূরা আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ২৯]সেটার পরিধিতে আসমান ও যমীনের বাইরে জান্নাত, জাহান্নামও রয়েছে।
কোনো কোনো মুহাদ্দিস ও মুফাসসির থেকে কুরসী অর্থ ইলম বর্ণিত হলেও মনে রাখতে হবে যে, তারা এটা বাড়তি একটি অর্থ হিসেবে বলে থাকবেন। অর্থাৎ যেহেতু আসমান ও যমীন এ দু'টি কুরসীতে অতীব ক্ষুদ্র, তাই তিনি সেগুলোর মধ্যকার সবকিছুর জ্ঞানই রাখেন। সম্ভবত এটা বলা উদ্দেশ্য। আল্লাহ ভালো জানেন।
চার. কারও কারও মতে, কুরসী বলে রাজত্ব বুঝানো হয়েছে, তারা ‘আরশকেও রাজত্ব হিসেবে বুঝেছে। বস্তুত তাদের বক্তব্যও শুদ্ধ নয়। ইতোপূর্বে তাদের বক্তব্য খণ্ডন করা হয়েছে।(১১)
আরও জানতে পড়ুন: রহমান আরশের উপর উঠেছেন।
১. ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমূ'উল ফাতাওয়া (৫/৫৪); ইবন কাসীর আত-তাফসীর (১/৩০৯); বাইহাক্বী, আল- আসমা ওয়াস সিফাত, পৃ. ৫১০; ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী, শারহুত তাহাওয়িয়্যাহ পৃ. ২১৩।
২. মাজমূ'উল ফাতাওয়া (৬/৫৮৪)।
৩. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১০।
৪. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩১১।
৫. ত্বাবারানী, হাদীস নং ৭৫৩২।
৬. সহীহ। ইবন জারীর আত-ত্বাবারী, সহীহ সনদে, ইবন আবী শাইবাহ, আল-‘আরশ ৫৮।
৭. সহীহ। ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ, ১০৫; দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ ২৬; আবুশ শাইখ, আল-আযামাহ; লালেকাঈ, শারহু উসূলি ই'তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা'আহ (৩/৩৯৬); ইবনুল কাইয়্যেম, ইজতিমা‘উল জুয়ূশ ১০০।
৮. সহীহ। আদ-দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল মারিসী পৃ. ৭১; আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ, আস-সুন্নাহ, পৃ. ৫৮৬; ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ (১/২৪৮); ইবন আবী শাইবাহ, আল-আরশ, ৬১; আবুশ শাইখ, আল-আযামাহ (২/৫৮২); ত্বাবারী, আত-তাফসীর, (৩/১০); ইবন আবী হাতেম, আত-তাফসীর (১/১৯৪); ত্বাবারানী, আল-কাবীর (১২/৩৯); দারাক্কুতনী, আস-সিফাত ৩৬; বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২৫৪; খত্বীব আল-বাগদাদী, আত-তারীখ (৯/২৫১); আল-হারওয়ী, আল-আরবাঈন, ১৪; হাকিম, আল- মুস্তাদরাক (২/২৮৩), তিনি বলেছেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তে, তবে তারা আনেননি। যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ (৬/৩২৩), এ বলেন, এর লোকগুলো সহীহ লোক। আলবানী তার মুখতাসারুল উলুতে এর সনদকে সহীহ বলেছেন।
৯. আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ, আস-সুন্নাহ ৭৫; ইবন জারীর আত-ত্বাবারী, আত-তাফসীর (৩/৯); আবুশ শাইখ, আল-আযামাহ, ৪২; ইবনু মানদাহ, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ ৪৬; বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ৫০৯; যাহাবী, আল-উলু ৮৪।
১০. শারহুত ত্বাহাওয়িয়্যাহ, ৩১৩।
১১. শারহু সালেহ আলুশ শাইখ, শারহুত তাহাওয়িয়্যাহ।
২. মাজমূ'উল ফাতাওয়া (৬/৫৮৪)।
৩. সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১০।
৪. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩১১।
৫. ত্বাবারানী, হাদীস নং ৭৫৩২।
৬. সহীহ। ইবন জারীর আত-ত্বাবারী, সহীহ সনদে, ইবন আবী শাইবাহ, আল-‘আরশ ৫৮।
৭. সহীহ। ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ, ১০৫; দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ ২৬; আবুশ শাইখ, আল-আযামাহ; লালেকাঈ, শারহু উসূলি ই'তিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা'আহ (৩/৩৯৬); ইবনুল কাইয়্যেম, ইজতিমা‘উল জুয়ূশ ১০০।
৮. সহীহ। আদ-দারেমী, আর-রাদ্দু আলাল মারিসী পৃ. ৭১; আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ, আস-সুন্নাহ, পৃ. ৫৮৬; ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ (১/২৪৮); ইবন আবী শাইবাহ, আল-আরশ, ৬১; আবুশ শাইখ, আল-আযামাহ (২/৫৮২); ত্বাবারী, আত-তাফসীর, (৩/১০); ইবন আবী হাতেম, আত-তাফসীর (১/১৯৪); ত্বাবারানী, আল-কাবীর (১২/৩৯); দারাক্কুতনী, আস-সিফাত ৩৬; বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২৫৪; খত্বীব আল-বাগদাদী, আত-তারীখ (৯/২৫১); আল-হারওয়ী, আল-আরবাঈন, ১৪; হাকিম, আল- মুস্তাদরাক (২/২৮৩), তিনি বলেছেন, বুখারী ও মুসলিমের শর্তে, তবে তারা আনেননি। যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। হাইসামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ (৬/৩২৩), এ বলেন, এর লোকগুলো সহীহ লোক। আলবানী তার মুখতাসারুল উলুতে এর সনদকে সহীহ বলেছেন।
৯. আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ, আস-সুন্নাহ ৭৫; ইবন জারীর আত-ত্বাবারী, আত-তাফসীর (৩/৯); আবুশ শাইখ, আল-আযামাহ, ৪২; ইবনু মানদাহ, আর-রাদ্দু আলাল জাহমিয়্যাহ ৪৬; বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ৫০৯; যাহাবী, আল-উলু ৮৪।
১০. শারহুত ত্বাহাওয়িয়্যাহ, ৩১৩।
১১. শারহু সালেহ আলুশ শাইখ, শারহুত তাহাওয়িয়্যাহ।
Attachments