প্রশ্নোত্তর কিছু মতবিরোধের কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে কি?

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
786
Comments
941
Reactions
8,268
উত্তরঃ যাবে না।
নিঃসন্দেহে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবিরা গুনাহ। কুরআন-হাদিসের অসংখ্য দলিলে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নির্দেশ উদ্ধৃত হয়েছে। যে সব দলিল আমাদের মহান শরিয়তে এ বিষয়টির মহা মর্যাদার প্রমাণ বহন করে। কারণ ইসলামী শরিয়ার মহান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ও মেল-বন্ধন টিকিয়ে রাখা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "এবং যারা আল্লাহ্‌ যা সংযুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা সংযুক্ত রাখে (আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে), নিজেদের প্রভুকে ভয় করে ও কঠিন হিসাবের আশংকায় থাকে।"[সূরা আর-রাদ, আয়াত: ২১]

হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে যে কঠিন হুশিয়ারী এসেছে তার মধ্যে রয়েছে—

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আল্লাহ যাবতীয় সৃষ্টিকে পয়দা করলেন। যখন তিনি সৃষ্টি কাজ সমাধা করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে উঠলো: সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয়প্রার্থীদের এটাই যথাযোগ্য স্থান? তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ হ্যাঁ; তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবো। আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। সে বলল: হ্যাঁ; আমি সন্তুষ্ট হে আমার রব! আল্লাহ বললেন: তোমার জন্য সেটাই হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইচ্ছে করলে তোমরা (এ আয়াতটি) পড়:

তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তবে তোমাদের কাছ থেকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া আর কী আশা করা যায়? ওরা তো তারাই আল্লাহ্‌ যাদেরকে লানত করেছেন, বধির করে দিয়েছেন ও তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা কী কুরআন অনুধাবন করবে না?বরং তাদের অন্তরগুলোর উপর তালা দেয়া (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ২২)। " [সহিহ বুখারী (৫৯৮৭) ও সহিহ মুসলিম (২৫৫৪)]

যদি মানুষ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণ কী তা ভেবে দেখে তাহলে দেখতে পাবে যে, এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার তুচ্ছ স্বার্থই এর কারণ; কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌র কাছে যার কোন মূল্য নেই। কিংবা এর কারণ হচ্ছে—তাদের মাঝে শয়তানের প্ররোচনা। শয়তান হীন সব কারণে তাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ তৈরী করে; যে সব কারণ ভ্রুক্ষেপ করার মত কিছু নয়।

এমন কি সম্পর্ক ছিন্ন করার যথাযথ কারণও যদি থাকে তারপরেও ইসলামী শরিয়া সম্পর্ক রক্ষা করে চলার নির্দেশ দেয় এবং ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়া, মাফ করে দেয়া, ক্ষমা করে দেওয়া ও সহনশীল হওয়ার প্রতি মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করে; ভুলের পিছে লেগে থাকা ও হিংসা-বিদ্বেষ জিইয়ে রাখার প্রতি নয়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "এক ব্যক্তি বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমার কিছু আত্মীয় আছে আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলি; কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি; তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে সহিষ্ণু আচরণ করি; তারা আমার সাথে মূর্খের মত আচরণ করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি যেমনটি উল্লেখ করেছ যদি তুমি তেমন হও তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই ছুড়ে দিচ্ছ। তুমি যতক্ষণ এর উপর অটল থাকবে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে তোমার সাথে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে।"[সহিহ মুসলিম (২৫৫৮)]

ইমাম নববী 'শারহু মুসলিম' (সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা) গ্রন্থে (১৬/১১৫) বলেন:

হাদিসে المل শব্দের অর্থ: গরম ছাই। يجهلون (মূর্খের মত আচরণ করে) এর মানে তারা খারাপ ব্যবহার করে। (এ অংশের) মর্মার্থ: তুমি যেন তাদেরকে গরম ছাই খাইয়ে দিচ্ছ। এটি একটি উপমা—গরম ছাই খেতে যে কষ্ট হয় তাদের যেন তেমন কষ্ট হচ্ছে। এ ইহসানকারীর কোন ক্ষতি নেই। বরং সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে ও তাকে কষ্ট দেওয়ার কারণে তাদের মহাপাপ হবে। কারো কারো মতে, হাদিসের মর্মার্থ হচ্ছে—তুমি তাদের প্রতি ইহসান করে তাদেরকে লজ্জিত করছ। তাদের কাছে তাদের নিজেদেরকে ছোট করে দিচ্ছ— তাদের প্রতি তোমার অধিক দয়া ও তোমার সাথে তাদের অধিক দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।[সমাপ্ত]

নবী সাল্লাল্লাহু্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "সম্পর্ক রক্ষাকারী সে ব্যক্তি নয় যে ব্যক্তি অন্যে সম্পর্ক রক্ষা করলে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং ঐ ব্যক্তি হল সম্পর্ক রক্ষাকারী যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে সম্পর্ক রক্ষা করে।" [সহিহ বুখারী (৫৯৯১)]

সূত্রঃ ইসলাম কিউএ. ইনফো, ফতোয়া নং ৯৩৫০৬
 
Similar threads Most view View more
Back
Top