- Joined
- Feb 23, 2023
- Threads
- 347
- Comments
- 399
- Reactions
- 1,882
- Thread Author
- #1
(১) কালিমা তাইয়্যিবা কাকে বলে?
তাইয়্যিবা অর্থ পবিত্র। ‘কালিমা তাইয়্যিবা’ হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এবং ঈমানের সবচেয়ে বড় দাবী।
“আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের ইলাহ (উপাস্য) নেই।”
যদিও আমাদের দেশের মানুষ কালিমা তাইয়্যিবা বলতে জানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। কিন্তু ক্বুরআন বা হাদীসে একে কালিমা তাইয়্যিবা বলা হয়নি।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে যেঃ এখানে ‘কালিমা তাইয়িবা’ বলতে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তাওহীদের এই বাক্যটিকে বুঝানো হয়েছে। তাফসীর ইবনু কাসীরঃ ২/৫৩১।
তাফসীর আহসানুল বায়ানে লিখা হয়েছেঃ
এর অর্থ এই যে, মুমিনদের উদাহরণ ঐ (বারমেসে ফলদার) গাছের ন্যায়, যে গাছ শীত-গ্রীষ্ম সব সময় ফল দান করে। অনুরূপ মুমিনদের সৎ কার্যাবলী দিবা-নিশির ক্ষণে ক্ষণে আকাশের দিকে (আল্লাহর কাছে) নিয়ে যাওয়া হয়। كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ (পবিত্রবাক্য) দ্বারা উদ্দেশ্যঃ ইসলাম অথবা কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এবং شَجَرَة طَيِّبَة (উৎকৃষ্ট বৃক্ষ) বলতে খেজুর বৃক্ষকে বুঝানো হয়েছে, যেমন সহীহ হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত। সহীহ বুখারীঃ কিতাবুল ইলম, মুসলিম, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ।
(২) ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অর্থ কি?
আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের জন্য ইবাদতের যোগ্যতাকে অস্বীকার করা এবং যাবতীয় ইবাদতকে এককভাবে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। তাফসীরুল উশরিল আখীর মিনাল ক্বুরআনিল কারীমঃ পৃষ্ঠা-৬৯।
(৩) ঈমানের সবচেয়ে বড় শাখা হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে এই কথা বলা যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আর ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের বিশেষ একটি শাখা।” সহীহুল বুখারীঃ ৮, সহীহ মুসলিমঃ ১৬২।
হাদীসের কোন বর্ণনায় রয়েছে, ‘সবচেয়ে উঁচু শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।”
আবার কোন বর্ণনায় রয়েছে, “সবচেয়ে বড় শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।”
(৪) সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবাঃ
প্রিয়নবী মুহা’ম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।” তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ।
(৫) মৃত্যুর পূর্বে “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “যার জীবনের শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” আবু দাউদঃ ৩১১৬, হাকিমঃ ১২৯৯, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযীঃ ৩/১৫২।
এজন্য যে ব্যক্তি মনে করবে যে তার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে, তাহলে সে একটু পরপর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে থাকবে। মুমূর্ষ ব্যক্তিকে তার কাছের আত্মীয়-স্বজনেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার জন্য স্বরণ করিয়ে দিবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোন কথা বলে ফেললে কথা শেষ করে পুনরায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে হবে। যাতে করে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত সর্বশেষ কথাটা হয় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর কিছুক্ষণ চুপ করে বা অজ্ঞান থাকার পরেও যদি মৃত্যু হয়, তবুও তার সর্বশেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ধরে নেওয়া হবে এবং, সেই ব্যক্তি এই হাদীসে বর্ণিত যে ফযীলত, অর্থাৎ জান্নাত পাবে বলে আশা করে যায়।
(৬) ইখলাসের সাথে কালিমা তাইয়্যিবার সাক্ষ্য দিলে তার জন্য জাহান্নাম হারামঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “আল্লাহ তাআ’লা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন “যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” হাদীস সহীহ, ইবনু হিব্বানঃ ২০১, সিলসিলা আস-সহীহাহঃ ২৩৫৫- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(৭) কালিমা তাইয়্যিবার সাক্ষ্য দিলে তার জান-মাল মুসলমানদের হাত থেকে নিরাপদঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং আল্লাহ ব্যতীত যা কিছুর ইবাদত করা হয় তাকেই অস্বীকার করবে, তার জান ও মাল হারাম (অর্থাৎ মুসলমানদের কাছে সেই ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিরাপদ)। তবে তার গোপন তৎপরতা ও অন্তরের কূটিলতা বা মুনাফিকির জন্য তার শাস্তি আল্লাহর উপরই ন্যস্ত।”
(৮) ঈমান নবায়ন করার সহজ একটা আমল হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবার যিকির করাঃ
একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন “তোমরা তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর।” সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিভাবে আমরা আমাদের ঈমান নবায়ন করতে পারি?” রাসুলুল্লাহ বললেন, “তোমরা বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার মাধ্যমে (তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর)।” মুসনাদে আহমাদঃ ৮৫০৮, শায়খ আহমাদ শাকির রহি’মাহুল্লাহর মতে হাদীসটি হাসান।
(৯) সমস্ত আসমান এবং জমীনের তুলনায় কালিমা তাইয়্যিবার মূল্য বেশিঃ
নূহ আ’লাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি তাঁর দুই ছেলেকে বলেছিলেন, “সমস্ত আসমান ও যমীন এবং এর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” রাখা হয়, তাহলে কালেমার পাল্লাই ঝুলে যাবে (ভারী হবে)। আর যদি সমস্ত আসমান-যমীন (সাত আকাশ ও সাত যমীন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে, একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এই কালেমাকে রাখা হয়, তাহলে ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে।” মুসনাদে আহমাদঃ ৬৫৮৩, মুস্তাদরাক হাকিমঃ ১৫৪, হাদীসটি সহীহ।
(১০) আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন বান্দা ইখলাসের সাথে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বললে তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ খোলা হয়। ফলে উক্ত কালিমাহ আরশে আজীম পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ সে কবীরাহ গুনাহ ত্যাগ করে।” সুনানে আত-তিরমিযীঃ ৩৫৯০। হাদীসটি হাসান, মিশকাতের তাহকীক সানীঃ ২৩১৪, তা’লীকুর রাগীবঃ ২/২৩৮।
(১১) সবচেয়ে বড় নেক আমল হচ্ছে কালিমা তাইয়িবাঃ
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে একটি আমল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতের কাছে ও জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন, “যখন মন্দ কিছু কর, তার বিপরীতে ভালো কিছুও কর। কারণ প্রত্যেক ভালো তার দশগুণ।” আমি (আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কি হাসানাহ বা নেকীর অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাসানাহ।” আল-মুসনাদঃ ৫/১৬৯, আদ-দুয়া লিত-ত্ববরানীঃ ১৪৯৮।
(১২) সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে কালিমা তাইয়িবা সম্পর্কে জানাঃ
তাওহীদের কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মেন নেওয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতই স্বীয় বান্দাদের ওপর পূর্ণরূপে দান করেছেন আল্লাহ, যেমন তিনি বলেছেনঃ
তাবেয়ী বিদ্বান মুজাহিদ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “এখানে নেয়ামত দ্বারা উদ্দেশ্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। তাফসীরে ইবন কাসীরঃ ১১/৭৮।
সুফিয়ান ইবন উইয়াইনাহ রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে এমন নিয়ামত দেননি, যা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ-জ্ঞানের চেয়ে বড়।” কালিমাতুল ইখলাসঃ পৃ-৫৩, ইমাম ইবন রজব রহি’মাহুল্লাহ।
তাইয়্যিবা অর্থ পবিত্র। ‘কালিমা তাইয়্যিবা’ হচ্ছে ইসলামের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এবং ঈমানের সবচেয়ে বড় দাবী।
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ»
উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ।“আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের ইলাহ (উপাস্য) নেই।”
যদিও আমাদের দেশের মানুষ কালিমা তাইয়্যিবা বলতে জানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। কিন্তু ক্বুরআন বা হাদীসে একে কালিমা তাইয়্যিবা বলা হয়নি।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
أَلَمۡ تَرَ كَيۡفَ ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلٗا كَلِمَةٗ طَيِّبَةٗ كَشَجَرَةٖ طَيِّبَةٍ أَصۡلُهَا ثَابِتٞ وَفَرۡعُهَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٢٤
“(হে নবী!) তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন? ‘কালিমা তাইয়িবা’ (পবিত্র বাক্যের) উপমা হচ্ছে ‘উৎকৃষ্ট বৃক্ষ’; যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। যা তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অহরহ ফল দান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা বর্ণনা করে থাকেন যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।” সুরা ইব্রাহীমঃ ২৪-২৫।এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে যেঃ এখানে ‘কালিমা তাইয়িবা’ বলতে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তাওহীদের এই বাক্যটিকে বুঝানো হয়েছে। তাফসীর ইবনু কাসীরঃ ২/৫৩১।
তাফসীর আহসানুল বায়ানে লিখা হয়েছেঃ
এর অর্থ এই যে, মুমিনদের উদাহরণ ঐ (বারমেসে ফলদার) গাছের ন্যায়, যে গাছ শীত-গ্রীষ্ম সব সময় ফল দান করে। অনুরূপ মুমিনদের সৎ কার্যাবলী দিবা-নিশির ক্ষণে ক্ষণে আকাশের দিকে (আল্লাহর কাছে) নিয়ে যাওয়া হয়। كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ (পবিত্রবাক্য) দ্বারা উদ্দেশ্যঃ ইসলাম অথবা কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এবং شَجَرَة طَيِّبَة (উৎকৃষ্ট বৃক্ষ) বলতে খেজুর বৃক্ষকে বুঝানো হয়েছে, যেমন সহীহ হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত। সহীহ বুখারীঃ কিতাবুল ইলম, মুসলিম, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ।
(২) ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ অর্থ কি?
আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের জন্য ইবাদতের যোগ্যতাকে অস্বীকার করা এবং যাবতীয় ইবাদতকে এককভাবে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। তাফসীরুল উশরিল আখীর মিনাল ক্বুরআনিল কারীমঃ পৃষ্ঠা-৬৯।
(৩) ঈমানের সবচেয়ে বড় শাখা হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে এই কথা বলা যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আর ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের বিশেষ একটি শাখা।” সহীহুল বুখারীঃ ৮, সহীহ মুসলিমঃ ১৬২।
হাদীসের কোন বর্ণনায় রয়েছে, ‘সবচেয়ে উঁচু শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।”
আবার কোন বর্ণনায় রয়েছে, “সবচেয়ে বড় শাখা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।”
(৪) সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবাঃ
প্রিয়নবী মুহা’ম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।” তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ।
(৫) মৃত্যুর পূর্বে “লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “যার জীবনের শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” আবু দাউদঃ ৩১১৬, হাকিমঃ ১২৯৯, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযীঃ ৩/১৫২।
এজন্য যে ব্যক্তি মনে করবে যে তার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে, তাহলে সে একটু পরপর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে থাকবে। মুমূর্ষ ব্যক্তিকে তার কাছের আত্মীয়-স্বজনেরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার জন্য স্বরণ করিয়ে দিবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোন কথা বলে ফেললে কথা শেষ করে পুনরায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে হবে। যাতে করে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত সর্বশেষ কথাটা হয় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর কিছুক্ষণ চুপ করে বা অজ্ঞান থাকার পরেও যদি মৃত্যু হয়, তবুও তার সর্বশেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে ধরে নেওয়া হবে এবং, সেই ব্যক্তি এই হাদীসে বর্ণিত যে ফযীলত, অর্থাৎ জান্নাত পাবে বলে আশা করে যায়।
(৬) ইখলাসের সাথে কালিমা তাইয়্যিবার সাক্ষ্য দিলে তার জন্য জাহান্নাম হারামঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “আল্লাহ তাআ’লা এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন “যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” হাদীস সহীহ, ইবনু হিব্বানঃ ২০১, সিলসিলা আস-সহীহাহঃ ২৩৫৫- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(৭) কালিমা তাইয়্যিবার সাক্ষ্য দিলে তার জান-মাল মুসলমানদের হাত থেকে নিরাপদঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং আল্লাহ ব্যতীত যা কিছুর ইবাদত করা হয় তাকেই অস্বীকার করবে, তার জান ও মাল হারাম (অর্থাৎ মুসলমানদের কাছে সেই ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিরাপদ)। তবে তার গোপন তৎপরতা ও অন্তরের কূটিলতা বা মুনাফিকির জন্য তার শাস্তি আল্লাহর উপরই ন্যস্ত।”
(৮) ঈমান নবায়ন করার সহজ একটা আমল হচ্ছে কালিমা তাইয়্যিবার যিকির করাঃ
একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন “তোমরা তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর।” সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিভাবে আমরা আমাদের ঈমান নবায়ন করতে পারি?” রাসুলুল্লাহ বললেন, “তোমরা বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার মাধ্যমে (তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর)।” মুসনাদে আহমাদঃ ৮৫০৮, শায়খ আহমাদ শাকির রহি’মাহুল্লাহর মতে হাদীসটি হাসান।
(৯) সমস্ত আসমান এবং জমীনের তুলনায় কালিমা তাইয়্যিবার মূল্য বেশিঃ
নূহ আ’লাইহিস সালামের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে তিনি তাঁর দুই ছেলেকে বলেছিলেন, “সমস্ত আসমান ও যমীন এবং এর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” রাখা হয়, তাহলে কালেমার পাল্লাই ঝুলে যাবে (ভারী হবে)। আর যদি সমস্ত আসমান-যমীন (সাত আকাশ ও সাত যমীন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে, একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এই কালেমাকে রাখা হয়, তাহলে ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে।” মুসনাদে আহমাদঃ ৬৫৮৩, মুস্তাদরাক হাকিমঃ ১৫৪, হাদীসটি সহীহ।
(১০) আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন বান্দা ইখলাসের সাথে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বললে তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ খোলা হয়। ফলে উক্ত কালিমাহ আরশে আজীম পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ সে কবীরাহ গুনাহ ত্যাগ করে।” সুনানে আত-তিরমিযীঃ ৩৫৯০। হাদীসটি হাসান, মিশকাতের তাহকীক সানীঃ ২৩১৪, তা’লীকুর রাগীবঃ ২/২৩৮।
(১১) সবচেয়ে বড় নেক আমল হচ্ছে কালিমা তাইয়িবাঃ
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে একটি আমল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতের কাছে ও জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন, “যখন মন্দ কিছু কর, তার বিপরীতে ভালো কিছুও কর। কারণ প্রত্যেক ভালো তার দশগুণ।” আমি (আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কি হাসানাহ বা নেকীর অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাসানাহ।” আল-মুসনাদঃ ৫/১৬৯, আদ-দুয়া লিত-ত্ববরানীঃ ১৪৯৮।
(১২) সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে কালিমা তাইয়িবা সম্পর্কে জানাঃ
তাওহীদের কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মেন নেওয়া সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতই স্বীয় বান্দাদের ওপর পূর্ণরূপে দান করেছেন আল্লাহ, যেমন তিনি বলেছেনঃ
وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗۗ
“আর তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামত পূর্ণরূপে দিয়েছেন।” সুরা লুক্বমানঃ ২০।তাবেয়ী বিদ্বান মুজাহিদ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “এখানে নেয়ামত দ্বারা উদ্দেশ্য ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। তাফসীরে ইবন কাসীরঃ ১১/৭৮।
সুফিয়ান ইবন উইয়াইনাহ রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে এমন নিয়ামত দেননি, যা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র অর্থ-জ্ঞানের চেয়ে বড়।” কালিমাতুল ইখলাসঃ পৃ-৫৩, ইমাম ইবন রজব রহি’মাহুল্লাহ।
সোর্স: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও