প্রশ্নোত্তর কসমেটিক সার্জারি করার হুকুম কী?

Golam RabbyVerified member

Knowledge Sharer
ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
647
Comments
790
Reactions
6,877
কসমেটিক সার্জারি দুইভাগে বিভক্ত:

১। জরুরী কসমেটিক সার্জারি: সেটি এমন সার্জারি যা কোন ত্রুটি দূর করার জন্য করা হয়। যে ত্রুটি কোন রোগের কারণে কিংবা যানবাহন, আগুন ঘটিত বা অন্য কোন দুর্ঘটনার কারণে। কিংবা সৃষ্টিগত কোন ত্রুটি দূর করার জন্য করা হয়; যে ত্রুটি নিয়ে ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছে। যেমন অতিরিক্ত আঙ্গুলটি কেটে ফেলা কিংবা জোড়ালাগা দুটো আঙ্গুলকে জোড়ামুক্ত করা, ইত্যাদি।

এ ধরণের সার্জারি জায়েয। সুন্নাহতে এমন কিছু দলিল এসেছে যা এর সপক্ষে প্রমাণ বহন করে:

ক. আরফাজা বিন আসআদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, জাহেলী যামানায় কুলাবের দিন (জাহেলী যামানায় যেই দিন সেখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল) তার নাকটি কাটা পড়েছিল। তখন তিনি একটি রূপার নাক গ্রহণ করেছিলেন। এতে করে সেটিতে দুর্গন্ধ হলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে একটি স্বর্ণের নাক গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।[সুনানে তিরমিযি (১৭৭০), সুনানে আবু দাউদ (৪২৩২) ও সুনানে নাসাঈ (৫১৬১); শাইখ আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৮২৪) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

খ. আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনেছি যে, তিনি সৌন্দর্য্যের জন্য চোখের ভ্রু-সরুকারিনী ও দাঁতকে সরুকারিনী নারীদেরকে লানত করেছেন; তথা যারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

ইমাম নববী বলেন:

হাদিসে উদ্ধৃত: “সৌন্দর্য্যের জন্য দাঁতকে সরুকারিনী” এ কথার মর্ম হচ্ছে- সৌন্দর্য লাভে তারা এটি করে। এ কথার মধ্যে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, হারাম হলো: সৌন্দর্য্যের নিমিত্তে কৃত কর্মটি। আর যদি চিকিৎসার জন্য কিংবা দাঁতের কোন ত্রুটির কারণে এর প্রয়োজন হয় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।[সমাপ্ত]

২। শোভাবর্ধক কসমেটিক সার্জারি: এটি হলো সার্জারি কারীর চোখে নিজের অবয়বের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। যেমন নাককে ছোট করার মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন কিংবা স্তনদ্বয়কে ছোটকরণ কিংবা বড়করণের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন। অনুরূপভাবে ফেসলিফ্ট সার্জারি করা, ইত্যাদি।

এ ধরণের সার্জারির আবশ্যকীয় বা প্রয়োজনীয় কোন কারণ নেই। বরঞ্চ এতে সর্বোচ্চ যা রয়েছে তা হলো আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে বিকৃত করা এবং মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও খেয়ালখুশি মতো এতে অনর্থক পরিবর্তন করা। এ কারণে এটি হারাম; যা করা নাজায়েয। যেহেতু এটি আল্লাহ্‌র সৃষ্টিতে বিকৃতি। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তাঁর পরিবর্তে তারা দেবীরই পূজা করে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে; আল্লাহ যাকে লা’নত করেছেন এবং যে বলে: ‘আমি অবশ্যই আপনার বান্দাদের একটি নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব, আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, অবশ্যই তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব, আর অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব; ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে। আর অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১১৭-১১৯]

আরও জানতে পড়ুন: শাইখ মুহাম্মদ আল-মুখতার আশ-শানক্বিতির রচিত “আহকামুল জিরাহাত আত-তিব্বিয়া’।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কসমেটিক সার্জারি করা সম্পর্কে এবং এই জ্ঞান শিক্ষা করা সম্পর্কে? জবাবে তিনি বলেন: কসমেটিক সার্জারি দুই প্রকার:

প্রথম প্রকার: যে সার্জারি কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে ঘটিত ত্রুটি দূর করে। এতে কোন অসুবিধা নেই, গুনাহ নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে একটি স্বর্ণের নাক গ্রহণ করার অনুমিত দিয়েছিলেন; যার নাকটি যুদ্ধকালে কাটা পড়েছিল।

দ্বিতীয় প্রকার: যে সার্জারি অতিরিক্ত, যেটি কোন ত্রুটি দূর করার জন্য নয়; বরঞ্চ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। এটি হারাম, নাজায়েয। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ নারীদেরকে লানত করেছেন যে ভ্রু প্লাক করে, যার ভ্রু প্লাক করা হয়, যে পরচুলা লাগানোর কাজ করে, যাকে পরচুলা লাগানো হয়, যে উল্কি অঙ্কনের কাজ করে এবং যাকে উল্কি করানো হয়। যেহেতু এগুলো কোন ত্রুটি দূর করার জন্য করা হয় না; বিলাসী সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়।

পক্ষান্তরে যে ছাত্রের পাঠ্য সিলেবাসে কসমেটিক সার্জারি সাবজেক্ট রয়েছে; সেই সাবজেক্টটি পড়ায় তার গুনাহ হবে না। কিন্তু হারাম অবস্থাগুলোর ক্ষেত্রে সে এই জ্ঞানকে প্রয়োগ করবে না। বরং কেউ তাকে করতে বললে সে তাকে এটি বর্জন করার উপদেশ দিবে। যেহেতু এটি হারাম। হতে পারে উপদেশটি যদি কোন ডাক্তারের মুখ থেকে আসে তাহলে সেটি মানুষের মনে বেশি দাগ কাটবে।[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (৪/৪১২)]

উত্তরের সারাংশ:

যদি নাকের মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে কিংবা কোন বিকৃতি থাকে এবং এই সার্জারির মাধ্যমে সেই ত্রুটিটি দূর করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে এতে কোন আপত্তি নেই।

আর যদি নিছক সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য হয় তাহলে এই সার্জারি করা জায়েয হবে না।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম কিউএ. ইনফো, ফতোয়া নং ৪৭৬৯৪
 
Back
Top