সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

উসূলুল ফিকহ উসূলে ফিকহের সংজ্ঞা ও উপকারিতা

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic
Uploader
Salafi User
Top Active User
LV
12
 
Awards
19
Credit
4,173
সংজ্ঞা ও উপকারিতা

সংজ্ঞা: أصول الفقه কথাটি দুদিক থেকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। প্রথমত: শব্দ দুটি এককভাবে। অর্থাৎ أصول এবং الفقه এর শাব্দিক পরিচিতি।
الأصول শব্দটি أصل এর বহুবচন। আর أصل বলা হয়, যার উপর অন্য কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই দেওয়ালের মূল ভিত্তিকে أصل الجدار বলা হয়। আরো বলা হয়, أصل الشجرة বা বৃক্ষমূল, যা থেকে ডাল-পালা বিস্তার লাভ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أصلهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ​

অর্থ: তুমি কি লক্ষ্য কর না আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন ? উত্তম বাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষ যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত (সূরা ইবরাহীম ১৪:২৪)।

الفقه এর আভিধানিক অর্থ: বুঝা, অনুধাবন করা। এ অর্থেই আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَأحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِّسَانِيْ يَفْقَهُوْا قَوْلِي​

আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে (সূরা ত্বা-হা ২০:২৭)।

পারিভাষিক অর্থ:

مَعْرِفَةُ الْأَحْكَامِ الشَّرْعِيَّةِ الْعَمَلِيَّةِ بِأَدِلَتِهَا التَّفْصِيْلِيَّةِ​

ফিক্বহ হলো বিস্তারিত দলীল-প্রমাণাদীর মাধ্যমে শরীয়াতের কর্মগত বিধি-বিধানগুলো জানা।

সুতরাং আমাদের কথা: معرفة (জানা) এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিশ্চিত জানা, প্রবল ধারণার ভিত্তিতে জানা। কেননা, ফিক্বহী বিধি-বিধানগুলো জানা কোন সময় নিশ্চিতভাবে হয়, আবার কোন সময় প্রবল ধারণামূলক হয়। যেমনটা ফিক্বহের অনেক মাসআলার ক্ষেত্রে দেখা যায়।

আমাদের কথা: الأحكام الشرعية (শারঈ আহকাম) এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শরীয়াত থেকে প্রাপ্ত বিধি-বিধান। যেমন: ওয়াজিব, হারাম ইত্যাদি।
সুতরাং এর দ্বারা জ্ঞান ভিত্তিক বিধি-বিধান বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন: এটা জানা যে, পূর্ণ আংশিক অপেক্ষা বৃহত্তর। এবং অভ্যাসগত বা প্রাকৃতিক বিধি-বিধানও বের হয়ে গিয়েছে। যেমন: শীতের রাতে যখন আবহাওয়া পরিস্কার থাকে, তখন শিশির পড়ার বিষয়টি জানা।

العَمَلية (কর্মগত) এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো যা আক্বীদার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন বিষয়। যেমন: ছ্বলাত, যাকাত ইত্যাদি।

সুতরাং এর দ্বারা আক্বিদার সাথে সংশ্লিষ্ট বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন: আল্লাহর একত্ববাদ, তার নামসমূহ, গুণাবলী প্রভৃতি সম্পর্কে জানা। সুতরাং এগুলিকে পারিভাষিক ক্ষেত্রে ফিক্বহ হিসাবে অভিহিত করা হবে না।[1]

بأدلتها التفصيلية (শারঈ বিস্তারিত দলীল) এ অংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফিক্বহের বিস্তারিত মাসআলাসমূহের সাথে যুক্ত ফিক্বহের দলীলসমূহ।
সুতরাং এর দ্বারা أصول الفقه বের হয়ে গিয়েছে। কেননা, أصول الفقه এর ক্ষেত্রে ফিক্বহের সংক্ষিপ্ত দলীলসমূহ আলোচিত হয়।
দ্বিতীয়ত: একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের নাম হওয়ার দিক দিয়ে উসূলে ফিক্বহের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়। সুতরাং এর সংজ্ঞা হলো:

عِلْمٌ يَبْحَثُ عَنْ أَدِلَّةِ الْفِقْهِ الْإِجْمَالِيَّةِ وَكَيْفِيَّةِ الْإِسْتِفَادِ مِنْهَا وَحَالِ الْمُسْتَفِيْدِ​

উসূলে ফিক্বহ এমন জ্ঞান বা বিদ্যা, যা ফিক্বহের সংক্ষিপ্ত দলীল, তা থেকে উপকৃত হওয়ার পদ্ধতি ও উপকার লাভকারী তথা মুজতাহিদ ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করে।

আমাদের কথা: الإجمالية (সংক্ষিপ্ত দলীল) এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো القواعد العامة বা সাধারণ/ব্যাপক নিয়ম-নীতি। যেমন: উসূলবিদদের কথা নির্দেশ ওয়াজিব হওয়ার ফায়দা দেয়। নিষেধ হারাম হওয়ার ফায়দা দেয়। শুদ্ধতা বাস্তবায়নের দাবি করে।[2]

এর দ্বারা বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ বের হয়ে গিয়েছে। অতএব, বিস্তারিত দলীল-প্রমাণের আলোচনা উসূলে ফিক্বহে উল্লেখিত হবে না। তবে শুধুমাত্র নিয়ম-নীতির উদাহরণ হিসাবে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

আমাদের কথা: وكيفية الإستفاد منها (তা থেকে উপকৃত হওয়ার পদ্ধতি) এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শব্দের মর্মার্থ ও তার বিধি-বিধান তথা عموم(ব্যাপক অর্থ প্রদান করা) خصوص (নির্দিষ্ট হওয়া) إطلاق (শর্তহীন হওয়া)تقييد (শর্তযুক্ত হওয়া) ناسخ (রহিতকারী) منسوخ (রহিত) ইত্যাদি অধ্যয়নের মাধ্যমে দলীলসমূহ থেকে শারঈ বিধি-বিধান কিভাবে পাওয়া যায়, তা অবগত হওয়া। নিশ্চয় এটি জানার মাধ্যমেই ফিক্বহের দলীলসমূহ থেকে তার বিধি-বিধান পাওয়া যাবে।

আমাদের কথা: وحال المستفيد (উপকার লাভকারীর অবস্থা) এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উপকার লাভকারী ব্যক্তির অবস্থা জানা। আর উপকার লাভকারী ব্যক্তি হলেন মুজতাহিদ। তাকে مستفيد নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি ইজতেহাদের স্তরে পৌঁছার কারণে নিজেই দলীলসমূহ থেকে বিধি-বিধানগুলো লাভ করেন। সুতরাং মুজতাহিদের পরিচয়, ইজতেহাদের শর্ত, হুকুম ইত্যাদি বিষয় উসূলে ফিক্বহে আলোচনা করা হয়।

উসূলে ফিক্বহের উপকারিতা:

উসূলে ফিক্বহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন একটি এলেম যা প্রচুর উপকারী। এর উপকারিতা হলো এমন সক্ষমতা ও যোগ্যতা অর্জন করা, যার দ্বারা দলীলসমূহ থেকে শারঈ বিধি-বিধান নিরাপদে বের করা যায়।

সর্বপ্রথম এ ইলম একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে গ্রন্থবদ্ধ করেন ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদরীস আশ শাফেঈ ((রহঃ))।[3]অতঃপর অনেক আলিম এ ব্যাপারে তার অনুসরণ করেন এবং গদ্য-পদ্য, সংক্ষিপ্ত-বিস্তারিত বিভিন্ন ধরণের কিতাব রচনা করেন। আর এভাবেই উসূলে ফিক্বহ অনন্য বৈশিষ্ট্য ও অবকাঠামোর অধিকারী একটি স্বতন্ত্র বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

নোটঃ [1]. অনেক ঊসূলবিদ ফিক্বহ এর সংজ্ঞায় الْعَمَلِيَّةِ (কর্মগত) শব্দের স্থলে الفرعية (শাখাগত) শব্দ বলেছেন। সুতরাং তাদের নিকট ফিক্বহ এর সংজ্ঞা হলো,

مَعْرِفَةُ الْأَحْكَامِ الشَّرْعِيَّةِ الفرعية بِأَدِلَتِهَا التَّفْصِيْلِيَّةِ​

‘‘ফিক্বহ হলো বিস্তারিত দলীল-প্রমাণাদীর মাধ্যমে শরীয়াতের শাখাগত বিধি-বিধানগুলো জানা।’’

সম্মানিত লেখক এখানে ফিক্বহের সংজ্ঞায় শাখাগত বিধান না বলে কর্মগত বিধান বলেছেন। কারণ শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) শরীয়াতের বিধি-বিধানকে মৌলিক ও শাখাগত এভাবে ভাগ করাকে নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, এভাবে ভাগ করা বিদআ’ত। আল্লাহ ও তার রসূলের কথায় এর কোন ভিত্তি নেই। কারণ এতে ছ্বলাতকে শাখাগত বিষয় হিসাবে অভিহিত করা হয়। অথচ এটি দীনের চুড়ান্ত পর্যায়ের মৌলিক বিষয়! সুতরাং এ বিভাজন কে নিয়ে আসলো ?! বস্ত্তত এ বিভাজন নিয়ে এসেছে মু’তাজিলা, জাহমিয়া ও অন্যন্য বিদআ’তী দলের লোকেরা। (মাজমূঊল ফাতাওয়া ১৯/২০৭-২১০)

[2]. এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাল্লাহ।

[3]. উসূলে ফিক্বহ বিষয়ে প্রথম কে কিতাব রচনা করেছেন, এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ফখরুদ্দিন রাযী, ইবনে খালদুন, বদরুদ্দিন যুরকাশী, জুআইনী, আল্লামা সুবকী, ইবনু খাল্লিকান সহ অধিকাংশ বিদ্বানের মতানুসারে এ বিষয়ে প্রথম কিতাব রচনা করেছেন ইমাম শাফেয়ী (রহ.)। তাঁর কিতাবের নাম ‘আর রিসালাহ’। (আল ইবহাজ ফী শরহিল মিনহাজ, আত তামহীদ ফী তাখরীজিল উসূল আলাল ফুরু‘ প্রভৃতি।) কিছু হানাফী আলেম দাবী করেন যে, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) প্রথম এ বিষয়ে কিতাব লিখেছেন। আবার কেউ বলেন, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ প্রথম কিতাব লিখেছেন। কিছু শীআ দাবী করে যে, তাদের ইমাম মুহাম্মদ বাকের আলী বিন যাইনুল আবেদীন প্রথম কিতাব লিখেছেন। কিন্তু এ সব দাবীর পক্ষে তেমন কোন দলীল প্রমাণ নেই। এবং এদের কোন কিতাবের সন্ধানও পাওয়া যায় না। এ জন্য কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, যদি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরাও দাবী করে যে, তারাই এ বিষয়ে প্রথম কিতাব লিখেছে, তবুও তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

গ্রন্থঃ উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি)
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
অধ্যায়ঃ উসূলে ফিক্বহ (أصول الفقه)​

ওয়েব লিঙ্কঃ সংজ্ঞা ও উপকারিতা
অ্যান্ড্রয়েড এপ ডাউনলোড লিঙ্কঃ Bangla Hadith V8 (Beta) - Apps on Google Play
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Latest posts

Total Threads
8,094Threads
Total Messages
9,690Comments
Total Members
1,361Members
Latest Messages
Amir104Latest member
Top