সালাফী আকিদা ও মানহাজে

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

SignUp Now!

আকিদা ঈমান বিধ্বংসী দশটি কারণ - পর্ব: ৩

  • Thread Author

৫. যদি কোন মুসলমান আল্লাহর নবী (সাঃ)-এর আনিত বিধানের কোন অংশকে অপছন্দ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যদিও সে ঐ বিষয়ে আমল করে

এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ، ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَا أَنْزَلَ اللهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ ‘আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’ (মুহাম্মাদ ৮-৯)। এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপছন্দ করা। উক্ত বিষয় আমল করলেও অপছন্দ করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدِ ابْتَغَوُا الْفِتْنَةَ مِنْ قَبْلُ وَقَلَّبُوْا لَكَ الْأُمُوْرَ حَتَّى جَاءَ الْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَارِهُوْنَ ‘তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্য সমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সত্য প্রতিশ্রুতি এসে গেল এবং জয়ী হ’ল আল্লাহর হুকুম, যে অবস্থায় তারা অপছন্দ করল’ (তওবা ৪৮)।

৬. যদি কোন মুসলিম মুহাম্মাদ (সাঃ) আনিত ধর্মের কোন বিষয়ে অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তবে সেও কাফির হয়ে যাবে

মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ، لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ ‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)। যারা ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তাদের আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের কোন আশা নেই। আল্লাহ বলেন, فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ ‘সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)। এ ধরনের লোকদের সাথে উঠাবসা, চলাফেরা ত্যাগ করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা উক্ত আচরণ পরিত্যাগ না করে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا-​

‘আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)। এরূপ ব্যক্তিদের আল্লাহ নির্বোধ বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতেও নিষেধ করেন। তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِيْنَ أُوتُوْا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوْا اللهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ اتَّخَذُوْهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَ يَعْقِلُوْنَ-​

‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ’ (মায়েদাহ ৫৭-৫৮)। উপহাস করা মুনাফিকদের আলামত হিসাবে আল্লাহ রাববুল আলামীন উল্লেখ করেন, وَإِذَا لَقُوا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قَالُوْا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُوْا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ ‘আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি, আমরাতো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্র’ (বাক্বারাহ ১৪)। উল্লিখিত আয়াত সমূহে ধর্মে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসকারীকে জাহান্নামী, নির্বোধ ও মুনাফিকদের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং এদের সাথে চলাফেরা, উঠাবসাও সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে।

৭. যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায়
যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে এবং যে ব্যক্তি এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে উভয়ই কুফরী করল।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।[16]
আল্লাহ রাববুল আলামীন যাদুকে কুফরী ও শয়তানী শিক্ষা হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ ‘কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করেছিল তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত’ (বাক্বারাহ ১০২)। অত্র আয়াতের শেষের দিকে মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ ‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’ (বাক্বারাহ ১০২)।

যাদুর শ্রেণীভুক্ত কিছু বিষয় :
(ক) আউফ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াফা’ হচ্ছে পাখি উড়িয়ে ভাগ্য গণনা করা। ‘তারক’ হচ্ছে মাটিতে রেখা টেনে ভাগ্য গণনা করা। হাসান বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে শয়তানের মন্ত্র।[17] ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে যাদু’।[18]

(খ) ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন,مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ... ‘যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা থেকে কিছু অংশ শিখল সে মূলতঃ যাদুবিদ্যারই কিছু অংশ শিখল। এ (জ্যোতির্বিদ্যা) যত বাড়বে যাদুবিদ্যাও তত বাড়বে’।[19]

(গ) ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيْمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ ‘আমি কি তোমাদেরকে যাদু কি এ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী বা কুৎসা রটনা করা অর্থাৎ মানুষের মধ্যে কথা লাগানো বা বদনাম ছড়ানো’।[20]

দু’টি কারণে যাদু শিরকের অন্তর্ভুক্ত :
১। যাদু বিদ্যায় শয়তানকে ব্যবহার করা হয় এবং তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
২। যাদু বিদ্যায় ইলমে গায়েবের দাবী করা হয় এবং যাদুকরের জ্ঞান ও যাদুবিদ্যা অর্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশীদারিত্বের দাবী করা হয়। এটা নিঃসন্দেহে শিরক এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।[21]

যাদুকরের শাস্তি : যাদুকররা কাফির ও হত্যাযোগ্য অপরাধী।[22]
বাজালা (রহঃ) বলেন, আমি আহনাফ ইবনে কায়সের চাচা মাযই ইবনে মু‘আবিয়ার কাতেব (সচিব) ছিলাম। ওমর (রাঃ)-এর মৃত্যুর একবছর পূর্বে তাঁর লেখা একখানা পত্র আমাদের হস্তগত হ’ল। তাতে লেখা ছিল, اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ ‘প্রত্যেক যাদুকরকে হত্যা কর’।[23]

সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, ওমর (রাঃ) মুসলিম গভর্ণরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর’। বাজালা বিন আবাদাহ বলেন, ‘এ নির্দেশের পর আমরা তিনজন যাদুকরকে হত্যা করেছি’।[24] তবে ইমাম আহমাদ ও ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মতে, যদি তারা তওবা করে তবে তাদের তওবা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ মুশরিকও তওবা করলে কবুল হয়, যেমন তওবা করেছিল ফিরআঊনের যাদুকররা।[25]



[16]. বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।
[17]. আহমাদের সনদে ফাতহুল মাজীদ ২৪৯ পৃঃ।
[18]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৩ পৃঃ।
[19]. আবূদাঊদ হা/৩৯০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান।
[20]. মুসলিম এর সনদে ফাহুল মাজীদ ২৫২ পৃঃ।
[21]. তাওহীদ মর্মকথা ১১৭ পৃঃ।
[22]. তাওহীদের মর্মকথা ১১৬ পৃঃ।
[23]. আবুদাউদ হা/৩০৪৩, সনদ সহীহ।
[24]. বুখারী, আহমাদ ১/১৯০ পৃঃ।
[25]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৭ পৃঃ।

 
Similar threads Most view View more
Back
Top