সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর ইসলামের দৃষ্টিতে ডিপ্রেশনে পড়ে হাত, পা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা এবং বিভিন্নভাবে নিজেকে কষ্ট দেয়া

shipa

Inquisitive

Q&A Master
Salafi User
Threads
347
Comments
400
Reactions
1,829
Credits
2,220
প্রশ্ন: অনেকে ডিপ্রেশনে পড়লে নিজের হাত বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটে। এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে?

উত্তর: আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, পার্থিব জীবনে বিষণ্ণতা (depression) দু:খ-কষ্ট, বিপদ, বিপর্যয়, ব্যর্থতা, রোগ-ব্যাধি, ক্ষয়-ক্ষতি, স্বপ্নভঙ্গ, না পাওয়ার বেদনা ইত্যাদি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এগুলো মানুষকে সর্বদাই ঘিরে থাকে। এটাই দুনিয়ার প্রকৃত স্বরূপ।

এ সব কিছু থেকে মুক্তির একটি মাত্র স্থান রয়েছে। তা হল, জান্নাত। জান্নাত ছাড়া মানুষের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা আর কোথাও পূর্ণ হবে না আর কোথাও তারা সকল দু:খ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে না।

যাহোক, একজন ইমানদারের জীবনে ভাল-মন্দ যা কিছুই ঘটুক না কেন তার কর্তব্য, সর্বাবস্থায় আল্লাহর তকদিরের উপর সন্তুষ্ট থাকা, তার রহমত থেকে হতাশ না হওয়া , ধৈর্য ধারণ করা এবং কথাবার্তা ও আচার-আচরণে হাহুতাশ ও অস্থিরতা প্রকাশ না করা। কারণ বিপদ-মসিবত দিয়ে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে পরীক্ষা করেন, তার গুনাহ মোচন করে এবং আখিরাতে মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।

জং ধরা লোহাকে যেভাবে ভাপরের আগুনে পুড়িয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খাঁটি ও পরিশুদ্ধ করা হয় তেমনি মানুষকে নানা পরীক্ষা ও বিপদাপদে ফেলে আল্লাহ তার গুনাহ মোচন করে খাঁটি, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ মানুষে পরিণত করেন।

সতুরাং মুমিনের কর্তব্য, সুখ, সমৃদ্ধি ও ভালো অবস্থায় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা আর দু:খ, দুর্দশা ও কষ্টে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া। উভয় অবস্থায় তার জন্য অবারিত কল্যাণ রয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।

কবি যথার্থই বলেছেন,

সকল ব্যথার বোঝা বইতে পারে,
সব জ্বালা যাতনাও সইতে পারে,
বিপদ-আপদ এলে আল্লাহকে ডাকে।
তাঁর দয়া করুণায় ভরসা রাখে।
হারায় না হুঁশ।
সেই তো মানুষ...সেই তো মানুষ!
(একটি ইসলামি সঙ্গীতের রিলিক্স)​

বিপদাপদে মুমিনের কর্তব্য:

আল্লাহ ভীরুদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেদনাদায়ক নিয়তির উপর ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَٱلصَّٰبِرِينَ فِى ٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلْبَأْسِ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُتَّقُونَ
”আর অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই তাকওয়া বান (আল্লাহ ভীরু)।” (সূরা বাকারা: ১৭৭)

দুনিয়ার জীবনটাই মূলত: দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পরিপূর্ণ। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন,
وَبَشِّرِالصَّابِرِينَ - الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ ولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
"আর ধৈর্য ধারণকারীদেরকে সু সংবাদ দাও। যারা বিপদ এলে বলে: “ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্নালিল্লাইহি রাজিঊন" (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর অধীনস্থ এবং তার কাছেই প্রত্যাবর্তনকারী)। এদের উপরই আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা বর্ষিত হয় এবং এরাই সুপথে প্রতিষ্ঠিত।” (সূরা বাকারা: ১৫৫)

সহিহ বুখারিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ما مِن عبدٍ تُصيبُه مُصيبةٌ، فيقولُ: إنَّا لله وإنَّا إليه راجعونَ، اللهُمَّ أْجُرْني في مُصِيبتِي، وأَخْلِفْ لي خيرًا منها، إلَّا أَجَرَه اللهُ في مُصِيبته، وأَخْلَفَ له خيرًا منها
"যে আল্লাহর বান্দা বিপদে আপতিত হলে বলে: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইল্লাইহি রাজিঊন, "আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লাহু খাইরান মিনহা" অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য নিবেদিত এবং তার কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর থেকে উত্তম বিকল্প দান কর।”
তাকে আল্লাহ তাকে তার বিপদে উত্তম প্রতিদান দিবেন এবং তারচেয়ে ভালো বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا ، وَلَكِنْ قُلْ : قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ “
“যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, “যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার এই এই হত।” বরং বল, “আল্লাহ এটাই তকদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।” কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।

শরীরে আঘাত করা, মাথার চুল মুণ্ডন করা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা বা রক্তাক্ত করা হারাম ও গুনাহের কাজ:

বিপদাপদ, হতাশা, অস্থিরতা, কারো মৃত্যু শোক ইত্যাদি কারণে মাথার চুল মুণ্ডন করা, মাথার চুল ছেঁড়া, কাপড় ছেঁড়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা বা রক্তাক্ত করা, শরীরে আঘাত করা বা অন্য কোনভাবে নিজেকে কষ্ট দেয়া হারাম ও গুনাহের কাজ। এটি আল্লাহর তকদিরের প্রতি আক্ষেপ ও ধৈর্য হীনতার প্রকাশ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
“আর তোমরা নিজেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না।” (সূরা বাকারা: ১৯৫)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَيْسَ مِنّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعا بِدَعْوى الْجاهِلِيَّةِ
"যে ব্যক্তি গালে চপেটাঘাত করে, পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত আহবান করে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম। মজমু ফাতাওয়া শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ২৫/৩০২, ৩০৭)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
أَنا بَرِيءٌ مِمَّنْ بَرئَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ وَالْحالِقَةِ وَالشَّاقَّةِ
"যে মহিলা (বিপদ-মুসিবতে) চিৎকার করে, মাথা মুণ্ডন করে, কাপড় ছিঁড়ে তার থেকে আমি সম্পর্ক মুক্ত।” (সহীহ মুসলিম)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও উবাদাহ ইবনুস সামিত থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ
‘‘তোমরা নিজের বা অন্যের ক্ষতি করতে পারবে না এবং তোমরা একে অপরেরও ক্ষতি করতে পারবে না।’’। (ইবনে মাজাহ ২৩৬৯, ২৩৭০)

অর্থাৎ যে সকল কথা, কাজ ও আচরণ দ্বারা নিজের অথবা অন্যের শারীরিক, মানসিক, অর্থ-সম্পদ, মর্যাদা-সম্ভ্রম ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইসলামে তা করা বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।

আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন, আমাদেরকে সর্ববস্থায় তার লিখিত তাকদিরের উপর সন্তুষ্ট থাকার এবং ধৈর্য ধরার তাওফিক দান করেন। আমিন।

উত্তর প্রদানে: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
 
Last edited by a moderator:
Top