ইসলামী তাবলীগ বনাম ইলিয়াসী তাবলীগ - ১
-ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
তাবলীগ’ অর্থ পৌঁছানো বা পৌঁছে দেয়া। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া ‘অহী’ তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দাওয়াতকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার নামই ‘তাবলীগ’। তাবলীগ উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরয বিধান। এর মধ্যে মানবরচিত কোন থিওরি অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেবল আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের আলোকেই তাবলীগ করতে হবে। এটাই ইসলামী তাবলীগ। এই নীতির বাইরে গেলেই তা ভ্রষ্ট পথের দিকে নির্দেশ করবে। উম্মতের একটি শ্রেণী উক্ত গুরু দায়িত্ব পালন করবেন, যারা হবেন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে পারদর্শী অর্থাৎ শারঈ জ্ঞানে অভিজ্ঞ। বাকী সকল শ্রেণীর মানুষ তাদেরকে সর্বদিক থেকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু দুঃখজনক হল, বর্তমান সমাজে ইসলামী তাবলীগ ও দাওয়াতের স্বরূপ প্রায় অনুপস্থিত। কারণ ধর্মের নামে যে তাবলীগ প্রচলিত আছে তা শিরক, বিদ‘আত ও মিথ্যা কেচ্ছা-কাহিনীতে ভরপুর। বিশেষ করে ইলিয়াসী তাবলীগ। তাই নিম্নে এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হল।
(১) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা
সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ- ইসলামী দাওয়াতের একটি অন্যতম মূলনীতি। সমাজে যেন সর্বদা শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকে সে জন্যই এই নির্দেশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ
‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি শ্রেণী থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম’। তোমরা তাদের মত হয়ো না, যাদের নিকট প্রকাশ্য দলীল আসার পরও বিভক্ত হয়েছে ও মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪-১০৫)। অন্যত্র বলেন,
کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ
‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের উত্থান ঘটান হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)।
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা থেকে আগত ছাহাবীদের কাছে যে কয়টি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের বিষয়টি ছিল অন্যতম। যা নিম্নের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ جَابِرٍ قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ عَلاَمَا نُبَايِعُكَ قَالَ تُبَايِعُوْنِىْ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِى النَّشَاطِ وَالْكَسَلِ والنَّفَقَةِ فِى الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَعَلَى الأَمْرِ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهْىِ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأَنْ تَقُوْلُوْا فِى اللهِ لاَ تَخَافُوْنَ فِى اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ وَعَلَى أَنْ تَنْصُرُوْنِىْ فَتَمْنَعُوْنِىْ إِذَا قَدِمْتُ عَلَيْكُمْ مِمَّا تَمْنَعُوْنَ مِنْهُ أَنْفُسَكُمْ وَأَزْوَاجَكُمْ وَأَبْنَاءَكُمْ وَلَكُمُ الْجَنَّةُ
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, আমরা একদা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আপনার নিকট কিসের উপর বায়‘আত করব? তিনি বললেন, (১) তোমরা আমার নিকট বায়‘আত করো সন্তুষ্টি ও অলসতায় কথা শ্রবণ করবে ও আনুগত্য করবে, (২) সচ্ছল ও অসচ্ছল সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র পথে ব্যয় করবে (৩) সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজে বাধা দিবে, (৪) আল্লাহর পক্ষে কথা বলবে তাতে তোমরা নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া করবে না (৫) আমি যখন (মদীনায়) আগমন করব, তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে। অতঃপর তোমরা আমাকে অনুরূপ নিরাপত্তা দিবে যেমন নিরাপত্তা দাও তোমাদেরকে, তোমাদের স্ত্রীদেরকে এবং তোমাদের সন্তানদেরকে। তাহলে তোমাদের জন্য জান্নাত রয়েছে।[১] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِنْ عِنْدِهِ ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ وَلَا يُسْتَجَاب لكم
হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঐ আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমরা অবশ্যই অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবে, তাছাড়া অচিরেই আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন। তখন তোমরা তাঁর নিকট দু‘আ করবে, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন না’।[২]
(২) সর্বাগ্রে তাওহীদের দাওয়াত দেয়া
আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। কারণ তাওহীদ না বুঝে ইবাদত করলে কোন ইবাদতই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। বর্তমানে চলছে জাল হাদীছ মিশ্রিত বিদ‘আতী ছালাতের দাওয়াত, মিথ্যা ফযীলতের দাওয়াত ও অশ্লীল-অসভ্য যিকিরের দাওয়াত ইত্যাদি। কোথাও তাওহীদের দাওয়াত নেই। অথচ আল্লাহ তা‘আলা সকল-নবী রাসূলকে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার জন্যই নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ
‘আর আমরা প্রত্যেক উম্মতের মাঝে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তারা যেন নির্দেশ দেন- তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূতকে বর্জন কর’ (সূরা আন-নাহল : ৩৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ ‘আমরা আপনার পূর্বে রাসূল হিসাবে যাকেই প্রেরণ করেছি, তাঁর কাছেই অহি করেছি যে, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আম্বিয়া : ২৫)।
আসলে মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করার মৌলিক উদ্দেশ্যই হল, তারা যেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এই জন্য যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)।
উল্লেখ্য, উক্ত আয়াত সমূহে বর্ণিত ‘ইবাদত’ অর্থ হল ‘তাওহীদ প্রতিষ্ঠা’ করা।[৩] এছাড়া আমরা যখন সূরা ফাতিহা পাঠ করি, তখন আল্লাহর প্রশংসা ও বড়ত্ব প্রকাশের পর বলি- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‘একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (সূরা আল-ফাতিহা : ৫)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, يَعْنِىْ إِيَّاكَ نُوَحِّدُ وَنَخَافُ وَنَرْجُوْ يَا رَبَّنَا لاَ غَيْرُكَ ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একমাত্র আপনারই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করি, আপনাকেই ভয় করি এবং আপনার কাছেই (দয়া ও রহমত) প্রত্যাশা করি। আপনি ছাড়া অন্য কারো কাছে চাই না’।[৪] অর্থাৎ মানুষ তার জীবনের সকল কর্মে আল্লাহকে একক প্রমাণ করবে।
অতএব সর্বাগ্রে আল্লাহর তাওহীদকে খালেছ অন্তরে স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত অন্য কোন আমল গ্রহণযোগ্য হবে না। নিম্নের হাদীছটি গভীরভাবে উপলব্ধির দাবী রাখে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا بَعَثَ النَّبِىُّ ﷺ مُعَاذًا نَحْوَ الْيَمَنِ قَالَ لَهُ إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوْا ذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِىْ يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا صَلُّوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً فِىْ أَمْوَالِهِمْ تُؤْخَذُ مِنْ غَنِيِّهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فَقِيْرِهِمْ فَإِذَا أَقَرُّوْا بِذَلِكَ فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়ামানে পাঠালেন, তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং তাদেরকে প্রথম আহ্বান করবে, তারা যেন আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদকে মেনে নেয়। যদি তারা তা স্বীকার করে, তবে তাদেরকে বলবে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতকে ফরয করেছেন। তারা যদি ছালাত আদায় করে, তবে তাদেরকে জানাবে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা ধনীদের নিকট থেকে আদায় করা হবে এবং গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। তারা যদি এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করবে। তবে মানুষের সম্পদের মূল্যের ব্যাপারে সাবধান থাকবে।[৫]
মুসলিম ব্যক্তি তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্ঠা করে তাঁর একত্ব প্রমাণ করবে। শুধু ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত, ছাদাক্বার ক্ষেত্রে নয়; বরং সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান নিঃসঙ্কোচে মেনে নিবে এবং পূর্ণভাবে অনুসরণ করবে।
(৩) দাওয়াত দিতে হবে অহির বিধান তথা দলীলের মাধ্যমে
অধিকাংশ ইমাম, খত্বীব, বক্তা, লেখক দলীল ভিত্তিক দাওয়াতকে তোয়াক্কা করেন না। তারা জাল-যঈফ হাদীছ ও ভিত্তিহীন উদ্ভট মিথ্যা কাহিনী দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে ধোঁকা দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের তাবলীগী নিছাব ও ফাযায়েলে আমল, মক্বছুদুল মুমিনীন, নেয়ামুল কুরআন, বেহেশতী যেওর ইত্যাদি বই সমাজে বেশী বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অথচ দলীল নেই এমন কথা বা আমলের দিকে দাওয়াত দেয়া হারাম ও নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা দাওয়াতের শর্ত হিসাবে স্বয়ং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الرَّسُوۡلُ بَلِّغۡ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ وَ اِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلۡ فَمَا بَلَّغۡتَ رِسَالَتَہٗ وَ اللّٰہُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ
‘হে রাসূল! আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তা-ই পৌঁছে দিন। আর যদি তা না করেন তবে আপনি আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিলেন না বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ আপনাকে জনগণ হতে হেফাযত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৬৭)। অন্য আয়াতে বলেন,
قُلۡ ہٰذِہٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ
‘আপনি বলুন! এটাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ মহা পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)।
উক্ত আয়াতে শর্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে, কেবল তারই তাবলীগ করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর দলীল ছাড়া অন্য কোন বিষয় মানুষের কাছে পৌঁছান যাবে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও অনুরূপ শর্ত করেছেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَلِّغُوْا عَنِّىْ وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوْا عَنْ بَنِىْ إِسْرَائِيْلَ وَلاَحَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, ‘একটি আয়াত (কথা) হলেও তোমরা আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও। আর বাণী ইসরাঈলদের সম্পর্কেও বর্ণনা কর, তাতে সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করে, তাহলে সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নেয়’।[৬]
দাঈ যে বিষয়ে মানুষকে দাওয়াত দিবেন, সে বিষয়ে দলীলভিত্তিক জ্ঞান থাকা তার জন্য ওয়াজিব। অন্যথা নিজেও পথভ্রষ্ট হবেন, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবেন। আল্লাহ বলেন, فَاعۡلَمۡ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰہُ ‘জেনে রাখুন যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) বলেন, اَلْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ ‘কথা বলা ও আমল করার পূর্বেই জ্ঞানার্জন করা’।[৭] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই, অনুমান করে সে বিষয়ে পরিচালিত হবেন না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় সবই জিজ্ঞাসিত হবে’ (সূরা বাণী ইসরাঈল : ৩৬)। অন্য আয়াতে এসেছে,
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ اِلَّا رِجَالًا نُّوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِمۡ فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ ؕ وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الذِّکۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ
‘আপনার পূর্বে আমি অনেক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেছিলাম। আমি তাদের নিকট অহি প্রেরণ করেছি যে, তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর। (তাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম) স্পষ্ট দলীল ও প্রমাণসহ। আপনার প্রতি যিকির নাযিল করেছি, মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা করে’ (সূরা আন-নাহল ৪৩-৪৪)।
উক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তাবলীগ করা যাবে না। কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ আলোচনাই বানোয়াট ও উদ্ভট। এছাড়া জাল-যঈফ ও মিথ্যা কাহিনীতে ভরপুর। এগুলোর মাধ্যমেই তারা দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছে। তারা যদি এগুলো বর্জন করে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা দাওয়াত দিত তবে নিজেরা উপকৃত হত, সাধারণ মানুষ উপকৃত হত এবং দ্বীন বিজয়ী হত। কিন্তু বর্তমানে সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই যাচাই ও তদন্ত না করে কোন কথা সমাজে বলা যাবে না।
(৪) ছিরাতে মুস্তাক্বীমের দিকে আহ্বান করা
জান্নাতের পথ একটিই, যা ছিরাতে মুস্তাক্বীম। এই পথই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেখানো পথ। এই পথ ছাড়া জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সর্বাগ্রে এই পথেরই অনুসন্ধান করতে হবে। অতঃপর তার দিকে দাওয়াত দিতে হবে। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই পথের দিকেই বিশ্ব মানবতাকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ বলেন,
وَ اِنَّکَ لَتَدۡعُوۡہُمۡ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ
‘আপনি অবশ্যই তাদেরকে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের দিকে ডাকছেন’ (সূরা আল-মু’মিনূন : ৭৩)। আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,
وَ اللّٰہُ یَدۡعُوۡۤا اِلٰی دَارِ السَّلٰمِ وَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ
‘আর আল্লাহ ডাকেন শান্তির আবাসের (জান্নাতের) দিকে এবং যাকে ইচ্ছা ছিরাতে মুস্তাক্বীমের দিকে পরিচালিত করেন’ (সূরা ইউনুস : ২৫)।
আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত দলীলের অনুসরণ না করলে কেউই ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথিক হতে পারবে না। বরং অসংখ্য ভ্রষ্ট পথের মধ্যে ঢুকে পড়বে, যেগুলো জাহান্নামের পথ। এগুলো থেকে সতর্ক করার জন্য রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীদেরকে বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ خَطَّ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيْلُ اللهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوْطاً عَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ هَذِهِ سُبُلٌ قَالَ يَزِيْدُ مُتَفَرِّقَةٌ عَلَى كُلِّ سَبِيْلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُوْ إِلَيْهِ ثُمَّ قَرَأَ وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِىْ مُسْتَقِيْماً فَاتَّبِعُوْهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهِ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা একটি সরল রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। বিভক্ত এই প্রত্যেক পথেই শয়তান রয়েছে। সে তার পথের দিকে ডাকছে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন, ‘নিশ্চয় এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করবে এবং অন্যান্য পথের অনুসরণ করবে না। অন্যথা তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৬৩)।[৮]
(৫) হিকমতের সাথে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা :
দাওয়াতী কাজ সফলভাবে সম্পাদনের জন্য প্রতিভা ও দূরদর্শিতা খুবই জরুরী। বর্তমান নব্য জাহেলিয়াতের যুগে ইসলামী জাগরণের পথকে সুদৃঢ় করার জন্য প্রয়োজন বিচক্ষণতা ও সূক্ষ্ম কর্মকৌশল। তাই আল্লাহ বলেন,
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ
‘আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন সর্বোত্তম পন্থায়। কোন ব্যক্তি আল্লাহ্র পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় সে সম্পর্কে আপনার প্রতিপালক অধিক অবহিত এবং কে হেদায়েতের পথে আছে, সে সম্পর্কেও তিনি সম্যকভাবে অবহিত’ (সূরা আন-নাহল : ১২৫)।
(৬) ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
দাওয়াতের সাথী হল ধৈর্য ও ধারাবাহিকতা। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা সূরা আছরের মধ্যে দাওয়াতের সাথে ধৈর্যকে উল্লেখ করেছেন (সূরা আল-আছর : ৩)। তাই এই মহৎ কাজের আঞ্জাম দেয়ার পথে দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-মুছীবত যা-ই আসুক, তাতে অসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে। সেই সাথে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। প্রত্যেক নবী-রাসূল উক্ত কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
وَ لَقَدۡ کُذِّبَتۡ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِکَ فَصَبَرُوۡا عَلٰی مَا کُذِّبُوۡا وَ اُوۡذُوۡا حَتّٰۤی اَتٰہُمۡ نَصۡرُنَا
‘আপনার পূর্বেও অনেক রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে। তাদের উপর মিথ্যাচার করা ও কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তাঁরা ধৈর্যধারণ করেছেন। অবশেষে আমার সাহায্য তাঁদের কাছে পৌঁছেছে’ (সূরা আল-আন‘আম : ৩৪)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, فَاصۡبِرۡ کَمَا صَبَرَ اُولُوا الۡعَزۡمِ مِنَ الرُّسُلِ وَ لَا تَسۡتَعۡجِلۡ لَّہُمۡ ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ। আর আপনি তাদের জন্য তাড়াহুড়া করবেন না’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ৩৫)। লুক্বমান (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ছেলেকে অছিয়ত করে বলেন, ‘হে বৎস! ছালাত কায়েম করবে, সৎকর্মের নির্দেশ দিবে আর অসৎকর্মে নিষেধ করবে এবং বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করবে। এটা দৃঢ়সংকল্পের কাজ’ (সূরা লুক্বমান : ১৭)।
(৭) নরম কথা, ভদ্র আচরণ ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত পেশ করা
দাওয়াতের জন্য উক্ত গুণগুলো থাকা একান্ত যরুরী। তাই দাঈ হবেন বিবেক সম্পন্ন ও বুদ্ধিদীপ্ত। আবেগী ও ঝোঁকপ্রবণ হবেন না। বিবেকশূন্য আবেগী ব্যক্তি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না, মাঝ পথে ছিটকে পড়েন। যেমন নড়বড়ে একটি গাড়ি পথ চলে, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না, মাঝ পথে বিকল হয়ে যায়। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
‘ইয়ায ইবনু হিমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষ জান্নাতী : (এক) ইনছাফকারী ও দানশীল শাসক, যাকে সৎ কাজের যোগ্যতা দেয়া হয়েছে (দুই) এমন ব্যক্তি যিনি দয়ালু এবং নিকটস্থ ও অন্যান্য মুসলিমদের প্রতি কোমল হৃদয় (তিন) যিনি সৎচরিত্রের অধিকারী এবং পারিবারিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকেন। পাঁচ প্রকার মানুষ জাহান্নামী : (এক) দুর্বল বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি, যে নিজের স্থূল বুদ্ধির কারণে নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে না। এই সমস্ত লোক তাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা তোমাদের অধীনস্ত চাকর-বাকর। তারা স্ত্রী-পরিবার চায় না এবং সম্পদেরও ভ্রুক্ষেপ করে না (দুই) এমন আত্মসাৎকারী, যার লোভ থেকে গোপনীয় জিনিসও রক্ষা পায় না। অতি তুচ্ছ জিনিসও আত্মসাৎ করে (তিন) এমন ব্যক্তি যে তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদের ব্যাপারে প্রতারণায় ফেলার জন্য সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত থাকে (চার) কৃপণতা ও মিথ্যাবাদিতা (পাঁচ) দুশ্চরিত্র ও অশ্লীলভাষী’। [৯]
অপরিচিত মানুষের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে কথা, সাক্ষাৎ, লেখনি কিংবা চিঠির ভাষার মাধ্যমে। তাই কথা শুনলে, সাথে চললে, লেখনি পড়লে এবং চিঠির ভাষা উচ্চারণ করলে তার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। একজন দাঈর জন্য ভাষা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে জন্যই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন,
فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰہِ لِنۡتَ لَہُمۡ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ فَاعۡفُ عَنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ وَشَاوِرۡہُمۡ فِی الۡاَمۡرِ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ
‘অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত। আপনি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় বিশিষ্ট হতেন, তাহলে তারা আপনার সংসর্গ হতে দূরে সরে যেত। তাই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজের ব্যাপারে তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, তখন আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করুন। নিশ্চয় আল্লাহ নির্ভরশীলদেরকে ভালবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
[১]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭০১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬৯৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৭।
[২]. তিরমিযী, হা/২১৬৯, ‘ফিতনা’ অধ্যায়।
[৩]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫; তাফসীরে কুরতুবী, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ৫৫।
[৪]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৯৬, (ইফাবা হা/৬৮৬৮, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৫৩৩), ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৯১, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়; মিশকাত, হা/১৯৮, পৃ. ৩২, ‘ইলম’ অধ্যায়।
[৭]. ছহীহ বুখারী, পৃ. ২০, ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৪১৪২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩২৪১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬; সুনানুদ দারোমী, হা/২০২; মিশকাত, হা/১৬৬, সনদ হাসান।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৮৫৮, হা/২৮৬৫; মিশকাতুল মাছাবীহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৮৬, হা/৪৯৬০।
[২]. তিরমিযী, হা/২১৬৯, ‘ফিতনা’ অধ্যায়।
[৩]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫; তাফসীরে কুরতুবী, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ৫৫।
[৪]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২, ২য় খণ্ড, পৃ. ১০৯৬, (ইফাবা হা/৬৮৬৮, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৫৩৩), ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬১, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৯১, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়; মিশকাত, হা/১৯৮, পৃ. ৩২, ‘ইলম’ অধ্যায়।
[৭]. ছহীহ বুখারী, পৃ. ২০, ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৪১৪২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩২৪১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬; সুনানুদ দারোমী, হা/২০২; মিশকাত, হা/১৬৬, সনদ হাসান।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, পৃ. ৮৫৮, হা/২৮৬৫; মিশকাতুল মাছাবীহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৮৬, হা/৪৯৬০।