রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে মুসলিম সমাজে ‘ইলমুল কালাম’ দর্শনশাস্ত্র বা ‘ইলমুল মানতিক' তর্কশাস্ত্রের কোনো পরিচিতি ছিল না।
দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে বিশেষত ১৩২ হিজরী (৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ) সালে আব্বাসী খিলাফতের প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম উম্মাহর মধ্যে গ্রীক, ভারতীয় ও পারসিক দর্শন প্রচার লাভ করে। তখন মূলধারার তাবে'য়ীগণ ও তাদের অনুসারীগণ আকীদাহ-বিশ্বাস বা গাইবী বিষয়ে ‘ইলমুল কালাম' তথা দার্শনিক বিতর্ক কঠিনভাবে অপছন্দ করতেন।
কারণ, তারা বিশ্বাস করতেন যে আকীদাহ-বিশ্বাস বা গাইবী বিষয়ে ওহী তথা আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের ওপর নির্ভর করা এবং ওহীর নিদের্শনাকে চূড়ান্ত বলে মেনে নেয়াই মুমিনের মুক্তির পথ। তারা আল-কুরআন, সহীহ হাদীস ও সাহাবীগণের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে আকীদাহ চর্চা করেছেন।
এর বিপরীতে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা নির্ভর আকীদাহ চর্চা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এমনকি তারা সঠিক আকীদাহ প্রমাণের জন্যও দর্শননির্ভর বিতর্ক নিষেধ করেছেন। কারণ, সালাফে সালেহীনের আকীদাহ চর্চা ও ইলমুল কালামের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য ওহী এবং আক্কল-এর।
সালাফে সালেহীনের আকীদাহ চর্চা ওহী নির্ভর, বিশেষত কুরআন, হাদীস ও ‘আছার' বা সাহাবীগণের বক্তব্য নির্ভর। পক্ষান্তরে ইলমুল কালামের আকীদাহ চৰ্চা ‘আক্কল' বোধশক্তি বা বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি ও দর্শননির্ভর
সালাফে সালেহীনের বক্তব্য সর্বদা নিম্নরূপ: “তোমার বিশ্বাস এরূপ হতে হবে; কারণ কুরআনে, হাদীসে বা সাহাবীগণের বক্তব্যে এরূপ বলা হয়েছে।”
পক্ষান্তরে ইলমুল কালামের বক্তব্য নিম্নরূপ: “তোমাকে এরূপ বিশ্বাস করতে হবে; কারণ জ্ঞান, বিবেক ও যুক্তি এটিই প্রমাণ করে।”
- আল-ফাতওয়া আল-হামাউইয়্যাহ আল-কুবরা