প্রবন্ধ আল-বাসীর নামের অর্থ ও ব্যাখ্যা

Joined
Jan 12, 2023
Threads
827
Comments
1,075
Solutions
19
Reactions
11,882
আল-বাসীর (সর্বদ্রষ্টা)[1]:

ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেছেন, আল-বাসীর (সর্বদ্রষ্টা) হলেন যিনি আসমান ও জমিনের সবকিছুতে তাঁর দৃষ্টিশক্তিতে বেষ্টন করে রেখেছেন; এমনকি অন্ধকার রাতে নির্জন মরুভূমিতে একটি কালো পিপীলিকার সন্তর্পণে চলার আওয়াজও তিনি শুনতে পান, তাঁর কাছে সে আওয়াজটি পর্যন্ত গোপনীয় নয়।

তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব ধরণের সব কিছুই দেখতে পান, বস্তুর সূক্ষ্ম থেকে অতি সূক্ষ্মতম চলার আওয়াজ, বৃক্ষের অভ্যন্তরে চলামান পানির আওয়াজ, এর শিকর, ছোট-বড় যাবতীয় উদ্ভিত সব কিছুই তিনি শুনতে পান ও দেখতে পান। তিনি পিপীলিকা, মৌমাছি, মশা-মাছি ও এর চেয়েও ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গের অভ্যন্তরের শিরা উপশিরা সব কিছুই দেখতে পান।

সেই মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি যার বড়ত্ব, মহাত্ব, সুবিস্তৃত গুণাবলী, পরিপূর্ণ আযমত (বড়ত্ব), সূক্ষ্মতা, অদৃশ্যের সংবাদ ও জ্ঞান, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সংবাদ ইত্যাদি বর্ণনা করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। তিনি মানুষের চোখের পলক, চক্ষুসমূহের খেয়ানত, অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে ও জিহ্বার নড়াচাড়াসহ সব সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর জিনিস অবগত আছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ٱلَّذِي يَرَىٰكَ حِينَ تَقُومُ٢١٨ وَتَقَلُّبَكَ فِي ٱلسَّٰجِدِينَ٢١٩ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ٢٢٠﴾ [الشعراء : ٢١٨، ٢٢٠]​

“যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি দণ্ডায়মান হন এবং সিজদাকারীদের মধ্যে আপনার উঠাবসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” [সূরা আশ-শুআ’রা, আয়াত: ২১৮-২২০]

﴿يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ١٩ ﴾ [غافر: ١٩]​

“চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন।” [সূরা গাফের, আয়াত: ১৯]

﴿وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ٩﴾ [البروج: ٩]​

“আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।” [সূরা আল-বুরূজ, আয়াত: ৯]

অর্থাৎ তিনি অবগত, তাঁর ইলম ও দৃষ্টির দ্বারা সব কিছু বেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি সৃষ্টিজগতের সব কিছু শুনতে পান। [2]

সপ্ত জমিনের নিচে যা কিছু আছে তা যেমন তিনি দেখতে পান তেমনি সপ্ত আসমানের উপরে যা কিছু আছে তাও তিনি দেখতে পান। এছাড়াও তিনি তাঁর হিকমত অনুসারে তাদের প্রাপ্ত কর্মফল সম্পর্কে সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। শেষ বাক্যের অর্থ: তারা তাঁর হিকমত অনুযায়ী তারা কর্মফল প্রাপ্ত হবে।

আল-কুরআনে অধিকাংশ জায়গাতেই আল্লাহ সামী‘ (সর্বশ্রোতা) ও বাসীর (সর্বদ্রষ্টা) নামদ্বয় একত্রে উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿وَكَانَ ٱللَّهُ سَمِيعَۢا بَصِيرٗا١٣٤﴾ [النساء : ١٣٤]​

“আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৪] অত:এব, শ্রবণ ও দেখার মাধ্যমে তিনি সৃষ্টিজগতের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় কিছু বেষ্টন করে রেখেছেন। শ্রবণ করার যাবতীয় কিছু আস-সামী‘ তথা সর্বশ্রোতা বেষ্টন করে আছেন।

ঊর্ধ্ব ও নিম্ন জগতের যত প্রকার শ্রবণ যোগ্য শব্দ আছে তিনি সে সব শব্দের গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই শুনতে পান, যেন তাঁর কাছে সব কিছুই একই ধরণের আওয়াজ। তাঁর কাছে সেসব শ্রবণ যোগ্য আওয়াজ বুঝতে ভিন্নতর মনে হয় না এবং কোন কিছুই উদ্দেশ্য বুঝতে গোপন থাকে না। নিকটবর্তী ও দূরবর্তী, গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তাঁর কাছে সমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿قَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّتِي تُجَٰدِلُكَ فِي زَوۡجِهَا وَتَشۡتَكِيٓ إِلَى ٱللَّهِ وَٱللَّهُ يَسۡمَعُ تَحَاوُرَكُمَآۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعُۢ بَصِيرٌ١﴾ [المجادلة: ١]​

“আল্লাহ অবশ্যই সে রমনীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছিল আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিল। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শোনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ১]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَسِعَ سَمْعُهُ الْأَصْوَاتَ، لَقَدْ جَاءَتِ الْمُجَادِلَةُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنَا فِي نَاحِيَةِ الْبَيْتِ، تَشْكُو زَوْجَهَا، وَمَا أَسْمَعُ مَا تَقُولُ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ: ﴿قَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّتِي تُجَٰدِلُكَ فِي زَوۡجِهَا١﴾ [المجادلة: ١]​

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সব রকমের ডাক শুনেন। এক মহিলা তার অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসেন। তখন আমি ঘরের এক কোণে অবস্থানরত ছিলাম। সে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন; কিন্তু আমি তার বক্তব্য শুনতে পাইনি। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন, “আল্লাহ অবশ্যই সে রমনীর কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছিল।” [সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ১][3]



[1] এ নামের দলিল হলো আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী,

﴿هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ١﴾ [الاسراء: ١]​

“তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১]
[2] [2] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৩৫-৩৬।
[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৮৮; আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top