প্রবন্ধ আরাফার দিনের ফযীলত ও কর্তব্য

Abu Umar

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
665
Comments
1,233
Solutions
17
Reactions
7,631
যুলহজ্জের ফযীলতপূর্ণ দশ দিনের মধ্যে আরাফার দিন অন্যতম। এই দিন পাপক্ষয়ের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন। গৃহে অবস্থানকারী মুসলমানদের জন্য রোযা মুস্তাহাব হওয়ার দিন। যে দিনে দ্বীনে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হয়েছে এবং আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ মুসলমানদের উপর সম্পন্ন হয়েছে।

হযরত উমার বিন খাত্তাব (রা:) হতে বর্ণিত, তাঁকে ইয়াহুদীদের এক ব্যক্তি বলল, 'হে আমিরুল মুমেনীন! আপনাদের কিতাবের এক আয়াত যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, ঐ আয়াত যদি ইয়াহুদী সম্প্রদায় আমাদের উপর অবতীর্ণ হত, তাহলে (যে দিনে অবতীর্ণ হয়েছে) ঐ দিনটাকে আমরা ঈদ বলে গণ্য করতাম।'

তিনি বললেন, 'কোন আয়াত?’ বলল, “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীনরূপে মনোনীত করলাম” (এই আয়াত)।

হযরত উমার বললেন, 'ঐ দিনটিকে আমরা জেনেছি এবং সেই স্থানটিকেও চিনেছি; যে স্থানে ঐ আয়াত নবী (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়, যখন তিনি জুমআর দিন আরাফার ময়দানে দন্ডায়মান ছিলেন। (বুখারী ৪৫, মুসলিম ৩০ ১৭নং)

প্রশ্নকারী ছিল কা'ব আল আহবার। যেমন তফসীরে তাবারী (৯/৫২৬) তে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ঐ আয়াত জুমআর দিন এবং আরাফার দিন অবতীর্ণ হয়েছে এবং ঐ দু'টি দিনই আমাদের জন্য ঈদ, আলহামদু লিল্লাহ।1

আরাফার দিনের গুরুত্ব সম্বন্ধে নবী (ﷺ) বলেন, “আরাফার দিন ছাড়া এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ অধিকরূপে বান্দাকে নরকাগ্নি থেকে মুক্ত করেন ও বলেন, 'কি চায় ওরা?” (মুসলিম ১৩৪৮নং)

ইবনে আব্দুল বার্র বলেন, 'হাদীসটি নির্দেশ করে যে, আরাফায় অবস্থানকারীগণ মার্জিত ও ক্ষমাপ্রাপ্ত। কারণ, আল্লাহ পাক তওবা ও ক্ষমার পর ছাড়া পাপীদেরকে নিয়ে গর্ব করেন না। অল্লাহু আ'লাম।' (তামহীদ ১/১২০)

প্রিয় নবী (ﷺ) আরো বলেন, “আরাফার দিন ছাড়া অন্য কোন দিনে শয়তানকে অধিক অপদস্থ, লাঞ্ছিত, হীনতাগ্রস্ত ও ক্রুদ্ধ হতে দেখা যায়নি। যেহেতু সে সেদিন আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হতে এবং মানুষের বড় বড় পাপ মার্জনা হতে দেখে তাই। যেমন বদরের যুদ্ধের দিনও সে অপদস্থ হয়েছিল। যখন জিবরীল কে (যুদ্ধের জন্য) ফিরিশ্তাদলের ব্যুহবিন্যাস করতে দেখেছিল।” (মুআত্তা মালেক ১/ ৪২২, হাদীসটি মুরসাল যয়ীফ, মিশকাত ২/৭৯৮)

ইবনে আব্দুল বার্র বলেন, "ঐ পবিত্র ময়দানে উপস্থিতির ফযীলতের পক্ষে এই হাদীসটি উত্তম। যাতে মুসলিমদেরকে হজ্জ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এই হাদীসের অর্থ একাধিকভাবে সংরক্ষিত এবং এই হাদীস এই কথার উপর দলীল যে, যে ব্যক্তি এই মহা প্রান্তরে উপস্থিত হবে তাকে আল্লাহ পাক মার্জনা করবেন। ইনশাআল্লাহ।"

নবী (ﷺ) আরো বলেন, “আল্লাহ তাআলা আরাফাত-ওয়ালাদের নিয়ে আসমানবাসী ফিরিশ্তাদের নিকট গর্ব করেন। তিনি তাদেরকে বলেন, 'আমার বান্দাদেরকে দেখ, আমার নিকট ধূলিমলিন ও আলুথালু রুক্ষ কেশে উপস্থিত হয়েছে!” (মুসনাদ আহমাদ ২/৩০৫, ইবনে খুযাইমা ৪/২৬৩)

সুতরাং উক্ত হাদীসসমূহ আরাফার দিনের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বিশেষভাবে বর্ণনা করে। এটি এমন দিন যাতে দুআ কবুল করা হয়, আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর করা হয় এবং পাপ মার্জনা করা হয়। তাইতো মুসলিমের উচিত, বিশেষ করে এই মহান দিনে নেক আমল করতে যত্নবান ও প্রয়াসী হওয়া; দুআ, যিক্ব, তকবীর, তেলাঅত, নামায, সদকাহ প্রভৃতির মাধ্যমে এই দিনের যথার্থ হক আদায় করা। সম্ভবতঃ কোন বাহানায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাঁর দোযখের ভীষণ শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি দেবেন। ইবনে রজব (রাহি.) বলেন, 'এই পুরস্কার সাধারণ সকল মুসলমানদের জন্য।' (লাত্বায়িফুল মাআরিফ ৩১৫পৃঃ)

যদি কেউ যুলহজ্জের প্রথম তারীখ থেকে রোযা রাখতে সক্ষম না হয় তাহলে অন্ততঃপক্ষে তাকে এ মাসের ৯ম তারীখে রোযা রাখতে অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু রসূল তার গুরুত্ব ও ফযীলতের উপর উম্মতকে বিশেষভাবে অবহিত করে রোযা রাখতে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আরাফার দিন রোযা অতীত এক বছর ও আগামী এক বছরের পাপের প্রায়শ্চিত করে।” (মুসলিম ১৬৬২নং)

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এই রোযা আরাফাতে অবস্থানরত হাজীগণ রাখবেন না। কারণ ঐ দিন খেয়ে-পান করে শক্তি ও দৃঢ়তার সাথে বেশী-বেশী দুআ-যিক্র করার দিন এবং হাজীদের জন্য ঐ মহা-সমাবেশের দিন এক ঈদের দিন। তাই নবী (ﷺ) ঐ দিনে আরাফাতে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন এবং নিজেও আরাফাতে রোযা রাখেন নি। (বুখারী ১৫৭৫, মুসলিম ১১২৩নং, বায়হাকী ৫/১১৭, মুসনাদ আহমাদ ২/৩০৪, হাকেম ১/৪৩৪, আবূ দাউদ ২৪১৯নং)

পূর্বে আরো ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, অহাজীদেরকে পাঁচ ওয়াক্তের জামাআতী নামাযের পর বিশেষভাবে তকবীর পাঠ করতে হয় এবং তা ৯ই যুলহজ্জের ফজর থেকে শুরু হয়ে ১৩ই যুলহজ্জের আসরে সমাপ্ত হয়। ইবনে হাজার (রঃ) বলেন, 'এ সম্বন্ধে নবী (ﷺ) কর্তৃক কোন হাদীস প্রমাণিত নেই। শুদ্ধভাবে যা প্রমাণিত তা হচ্ছে আলী, ইবনে মাসউদ (রা:) প্রভৃতি সাহাবাগণের উক্তি।' (ফাতহুল বারী ২/৪৬২)

ইবনে কুদামাহ বলেন, 'ইমাম আহমদ (রঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, 'কোন্ হাদীসের ভিত্তিতে মনে করেন যে, আরাফার দিন ফজরের নামাযের পর থেকে তাশরীকের শেষ দিন (১৩ই যুলহজ্জ) পর্যন্ত তকবীর পাঠ করতে হয়?' তিনি বললেন, ‘হযরত উমর, আলী, ইবনে আব্বাস ও ইবনে মাসউদ (সাহাবাগণের) সর্বসম্মতিক্রমে।' (মুগনী ৩/২৮৯, ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫)

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) এই তকবীর পাঠকে সঠিক বলে সমর্থন করেন এবং বলেন, 'অধিকাংশ সলফ, ফুকাহায়ে সাহাবা এবং ইমামগণেরও উক্তি এটাই।' (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ 24/220,222)

ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন, 'এটাই প্রসিদ্ধ উক্তি এবং এর উপরেই (সকলের) আমল।' (তফসীর ইবনে কাসীর ১/৩৫৮) নামাযের পর যদি কেউ ঐ তকবীর একবার মাত্র পাঠ করে তাহলেই যথেষ্ট। অবশ্য তিনবার পড়াই উত্তম।

সুতরাং মুসলিমগণ ঈদের দিন ও তাশরীকের দিনগুলিতে তকবীর পাঠের উপর সানুরাগ মনোযোগ দেবে। মহিলারা বাড়িতে নামাযের পর অথবা মসজিদে জামাআতে উপস্থিত হলে জামাআতের পর চুপে চুপে তকবীর পাঠ করবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন, ‘মায়মূনাহ (রাঃ) কুরবানীর ঈদের দিন তকবীর পড়তেন এবং মহিলারা আবান বিন উসমান ও উমার বিন আব্দুল আযীযের পশ্চাতে তাশরীকের রাত্রিসমূহে পুরুষদের সহিত মসজিদে তকবীর পাঠ করত।

দলীলের সহজার্থে এই কথাই প্রকাশ পায় যে, গৃহবাসী ও পথচারী, জামাআতে ও একাকী, আদায় ও কাযা, ফরয ও নফল নামাযের পরে পাঠ করতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে উলামাগণের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। তবে হাফেয ইবনে হাজার (রঃ) বলেন, 'ইমাম বুখারীর বাহ্যিক এখতিয়ারে বুঝা যায় যে, (তকবীর উপরোক্ত) সকল মানুষ ও নামাযেই শামিল হবে এবং তিনি যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করেছেন তা ঐ কথার সমর্থন করে।' (ফাতহুল বারী ২/৪৫৭)

অনুরূপভাবে মসবুক (যে ইমামের পিছে কিছু রাকআত পায়নি সে)ও বাকী নামায আদায় করে তকবীর পাঠ করবে। যেহেতু তকবীর সালাম ফেরার পর এক বিধেয় যিকর। আল্লাহু আ'লাম।


1. অনেকের ধারণা মতে জুমআর দিন আরাফার (হজ্জের) দিন হলে সেই হজ্জ আকবরী হজ্জ হয় -এ কথাটি ভিত্তিহীন।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top