প্রশ্নোত্তর আমাদের জীবন ব্যবস্থায় বিষন্ন হওয়া অবাঞ্ছিত

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Joined
Nov 1, 2022
Threads
4,842
Comments
4,360
Solutions
1
Reactions
66,149

আমাদের জীবন ব্যবস্থায় বিষন্ন হওয়া অবাঞ্ছিত​

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ​

যদি তোমরা ঈমানদার (মু’মিন) হয়ে থাক তবে তোমরা (তোমাদের শক্ৰদের বিরুদ্ধে) দুর্বল হয়ো না এবং দুশ্চিন্তাও করো না।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৩৯)

وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ​

“এবং তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না ও তারা যে ষড়যন্ত্র করে তার কারণে মনঃক্ষুন্ন হয়ে না।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত ১২৭) “বিষণ্ণ হয়ো না, অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা আমাদের সাথে আছেন।” (৯-সূরা তাওবাহ: আয়াত-৪০) সত্যিকারের ঈমানদারদের প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে,

فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ​

“তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না।” (২-সূরা বাকারা: আয়াত-৩৮) বিষণ্ণতা মনের কাজ করার ইচ্ছা শক্তিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে অকেজো বানিয়ে দেয়। বিষগ্নতা মানুষকে কাজ করতে বাধ্য না করে বরং কাজ না করতে বাধ্য করে। দুঃখবোধ করে আত্মার কোন লাভ হয় না। শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো ইবাদতগুজার ব্যক্তিকে বিষগ্ন করে দেয়া, যাতে সে ক্রমাগত ইবাদত না করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, “মু’মিনদেরকে বিষগ্ন করার জন্য শয়তানের পক্ষ থেকে গোপন পরামর্শ বা চক্রান্ত করা হয়ে থাকে।” (৫৮-সূরা আল মুজাদালা: আয়াত-১০) নিম্নোক্ত হাদীসখানিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তিনজন সঙ্গীর মাঝ থেকে একজনকে বাদ দিয়ে অপর দু’জনের গোপন পরামর্শ করা নিষিদ্ধ। কেননা, এ কাজ তৃতীয় ব্যক্তির দুঃখের কারণ হবে।" কিছু কিছু কঠোরমনা মানুষ যা বিশ্বাস করে তার বিপরীতে ঈমানদারদের দুঃখিত হওয়া উচিত নয়। কারণ দুঃখবোধ এমন এক অবস্থা যা মন-মানসিকতার ক্ষতি করে। মুসলমানদেরকে অবশ্যই দুঃখ-বিষন্নতা দূর করতে হবে এবং আমাদের জীবন ব্যবস্থায় বৈধ সকল পন্থায় এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। দুঃখ করাতে প্রকৃত কোন লাভই নেই। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিচের দু'আতে এর থেকে পানাহ চেয়েছেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ​

“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট (ভবিষ্যতের) দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এবং (অতীতের) দুঃখ-বেদনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।” এ হাদীসে উদ্বিগ্নতার সাথে দুঃখ-বেদনাকে যোগ করা হয়েছে। এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য হলো-যদি ভবিষ্যতে কী ঘটবে এ দুর্ভাবনা হয় তবে আপনি উদ্বিগ্নতা বোধ করছেন। আর যদি অতীতের ঘটনা নিয়ে মন খারাপ হয় তবে আপনি দুঃখবোধ করছেন। উভয়টাই মনকে দুর্বল করে, অক্ষমতা সৃষ্টি করে ও ইচ্ছা শক্তিকে দমন করে। উপরে যা বলা হলো তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে দুঃখবোধ অলঙ্ঘনীয় ও প্রয়োজনীয় হতে পারে। বেহেশতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করে বলবেঃ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنَّا الْحَزَنَ​

“সব প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহরই প্রাপ্য, যিনি আমাদের থেকে সব দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছেন।” (৩৫-সূরা ফাতির: আয়াত-৩৪) এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, তারা ইহজীবনে তেমনি দুঃখগ্ৰস্ত ছিল, যেমন না-কি তারা অন্যান্য সমস্যা কবলিত হয়েছিল। উভয়টিই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল । সুতরাং, যখন কেউ দুঃখপীড়িত হয় এবং এটাকে এড়ানোর কোন পথ থাকে না তখন সে পুরস্কৃত হয়। কেননা দুঃখ এক ধরনের কষ্ট এবং মু'মিন ব্যক্তি কষ্ট ভোগ করার কারণে পুরস্কৃত হবে। তবুও মু'মিন ব্যক্তিকে অবশ্যই দু'আর মাধ্যমে ও অন্যান্য কার্যকর উপায়ে দুঃখবোধ দূর করতে হবে। যেমনটি মহান আল্লাহ্‌র বাণীতে বুঝতে পারা যায়- “তাদের কোন অপরাধ নেই, যারা আপনার নিকট বাহনের জন্য এসেছিল এবং আপনি তাদের বলেছিলেন ‘আমি তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না’। তারা অর্থব্যয়ে অসামর্থ্যতার কারণে অশ্রু বিগলিত নয়নে ফিরে গেল।” (৯-সূরা তাওবা: আয়াত-৯২) এখানে তাদের দুঃখের কারণে তাদের প্রশংসা করা হয়নি বরং দুঃখ সত্ত্বেও তাদের দৃঢ় ঈমানের প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু এর সাথে একথার ইঙ্গিতও করা হলো যে, তারা দুঃখিত হতে বাধ্য হয়েছিল। এ ঘটনা ঘটেছিল তখন, যখন তারা অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় রসদ যোগাড় করতে না পারায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক যুদ্ধাভিযানে যোগ দিতে পারেনি। এ আয়াতটি মুনাফিকদের স্বরূপও উদঘাটিত করেছিল। কারণ, তারা যুদ্ধে যোগ না দেয়ার কারণে দুঃখিত হয়নি। (আরও একথা বুঝা গেল যে, সৎকাজ না করতে পারলে মু'মিনগণ দুঃখিত হতে বাধ্য হন এবং এর প্রয়োজনও রয়েছে। যেমনটি লেখক একটু আগেই বলেছেন। -অনুবাদক) সুতরাং, শুভ দুঃখ হলো তা, যা সৎ কাজ করতে পারার কারণে বা পাপ করার কারণে উদ্ভূত হয়। যখন কেউ আল্লাহর হক আদায় করার ব্যাপারে অবহেলা করার কারণে দুঃখবোধ করে তখন সে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত লোকদের বৈশিষ্ট্যই প্রদর্শন করে। যেমনটি নিম্নের হাদীসে ইঙ্গিত করা হয়েছে। “মু’মিনদের ওপর উদ্বিগ্নতা, সংকট, অভাব-অনটন বা দুঃখকষ্ট নামে যা কিছুই আপতিত হোক না কেন, আল্লাহ তায়ালা এটাকে তার পাপের প্রায়শ্চিত্তের কারণ বানাবেন।” একথা থেকে বুঝা যায় যে, মু’মিনগণ দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার দ্বারা জর্জরিত হয় এবং এর বিনিময়ে তাদের কিছু পাপ মাফ হয়। যা হোক, এতে একথা বুঝায় না যে, দুঃখবোধ কাঙ্খিত কোন কিছু দুঃখবোধকে ইবাদত মনে করে দুঃখ করা মু’মিনদের উচিত নয়। দুঃখবোধ করা যদি প্রকৃত কথা হতো তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম দুঃখিত হতেন। কিন্তু তিনি কখনও অভাব বোধ করতেন না, বরং তার চেহারা মুবারক সদাহাস্য থাকত, তার আত্মা থাকত পরিতৃপ্ত এবং তিনি সর্বদা হাঁসি-খুশি থাকতেন। হিন্দের বর্ণিত হাদীস “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা বিষন্ন থাকতেন” এ প্রসঙ্গে বলতে হয়-এটি মুহাদ্দিসগণ দ্বারা (হাদীসরূপে বা বিশুদ্ধ হাদীস হিসেবে) অপ্রমাণিত। কেননা, এর বর্ণনাকারীগণের মধ্যে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি আছেন। এটা শুধু এর রাবীদের সনদের (বর্ণনাকারীদের ধারাক্রমের) দুর্বলতার কারণেই দুর্বল নয় বরং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃতপক্ষে যেমন ছিলেন তার বিপরীত হওয়ার কারণেও দুর্বল। আমাদেরকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এটি একটি ইসরাঈলী বর্ণনা, যা তাওরাতে আছে বলে দাবি করা হয়। তবুও এতে অবশ্যই সঠিক ভাবার্থ আছে। কেননা, মু’মিনগণ সত্যিই তাদের গুনাহের কারণে দুঃখবোধ করেন এবং পাপীরা সদা খেল-তামাসায় ব্যস্ত, চপল, হালকা ও আনন্দিত। অতএব, যদি ঈমানদারদের অন্তরে ব্যথা লাগে তবে তা নেক কাজ করার সুযোগ হারানো বা পাপ কাজ করার কারণেই। এটা পাপীদের বিষন্নতার বিপরীত যাদের দুঃখের কারণ দৈহিক আনন্দ বা পার্থিব সুবিধা হারানো। তাদের আকুল আকাঙ্ক্ষা, উদ্বিগ্নতা ও বিষন্নতা সবসময় এ উদ্দেশ্যেই এবং অন্য কোন কিছুর জন্যই নয়। এ আয়াতে মহান আল্লাহ তার নবী ইসরাঈল (আঃ) [ইসরাঈল (আঃ) ইয়াকুব (আঃ)-এর আরেক নাম] সম্বন্ধে বলেন-

وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيمٌ​

“দুঃখে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল ও তিনি ছিলেন মর্মাহত।” (১২-সূরা ইউসুফ : আয়াত-৮৪) তার প্রিয় পুত্রকে হারানোর কারণে তার দুঃখের কথা এখানে আমাদেরকে জানানো হলো। শুধু ঘটনা জানানোর কারণেই কোন কিছু অনুমোদিত বা অননুমোদিত হয়ে যায় না। আসল কথা হলো- আমাদেরকে দুঃখবোধ করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে আদেশ করা হয়েছে। যেহেতু এটা (দুঃখবোধ) তার শিকারের মাথার উপর বিশাল মেঘখণ্ডের মতো ভেসে বেড়ায় ও (এটা এমন এক প্রাচীর যা) তাকে মহৎ লক্ষ্যে পৌছতে বাধা প্রদান করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বিষন্নতা একটা ফিতনা ও কষ্ট এবং কিছু রোগ-সদৃশ। যা হোক, বিষন্নতা এমন কিছু নয়, যেটাকে ধার্মিকদেরকে কায়মনোবাক্যে কামনা করতে হবে বা চেষ্টা করে বর্জন করতে হবে। আপনাকে নির্দেশ করা হয়েছে সুখ-শান্তির উপায় অন্বেষণ করতে। আপনার জন্য একটি শুভজীবন মঞ্জুর করার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে, এমন শুভ জীবন যা আপনাকে একটি স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন বিবেক ও একটি প্রশান্ত মন উপহার দিবে। এ সুখ অর্জন করা একটি প্রাথমিক পুরস্কার ও এমন একটি বিষয় যা কিছু কিছু লোকের কথায় নিম্নলিখিতভাবে (গুরুত্বপূর্ণ) করা হয়েছে। আর তা হলো: “এ পৃথিবীতে একটি স্বৰ্গ আছে, আর যে এ স্বর্গে প্রবেশ করবে না সে পরকালের স্বর্গেও প্রবেশ করতে পারবে না।” (হাদীস শরীফে আছে দুনিয়া মু’মিনদের জেলখানা। সুতরাং এ দুটি কথা পরস্পর বিরোধী মনে হচ্ছে। আসল কথা হলো, দুনিয়া কষ্টের জায়গা হওয়া সত্ত্বেও দুঃখবোধ না করে বরং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট থেকে দুনিয়া নামক এই নরককে স্বর্গে পরিণত করা যায় ও তাই করা উচিত। এ প্রসঙ্গে আরো দেখুন এ পুস্তকের “কষ্টের পরেই আরাম আছে” অধ্যায়। -অনুবাদক) আর আমরা আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের আত্মাকে সরল-সোজা পথে পরিচালিত করেন এবং আমাদেরকে দুর্দশাগ্রস্ত, শোচনীয় ও হতভাগা জীবন থেকে রক্ষা করেন।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top