সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

ভ্রান্তি নিরসন আবু হুরায়রা (রা) সম্পর্কে আরোপিত অভিযোগ সমূহের বিস্তারিত জবাব। - ১ম পর্ব

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
689
Comments
1,223
Solutions
17
Reactions
6,730
Credits
5,452
সম্মানীত পাঠকগণ অবশ্যই এসব আলোচনা সব স্থানে ছড়িয়ে দিবেন।আমি হাদিস অস্বীকারকারীদের নিয়ে বিস্তারিত পড়াশুনা করতে গিয়ে দেখলাম হাদিস অস্বীকারকারীরা সাহাবীদের মধ্যে সবার প্রথম আবু হুরায়রা (রা) কে আক্রমণ করেছে।পরে দেখলাম হাদীস অস্বীকারকারীরা কেবল এই কাজে নয় বরং তারা এসব কিছু লালন করেছে প্রাচ্যবীদদের থেকে এবং কি দেখলাম একই কাজ করেছে শিয়ারা।তাই হাদীসের উপর আক্রমণের এই পথ বন্ধের উদ্দেশ্য তাদের অভিযোগ গুলোর খন্ডন এর প্রচারণা বেশি জরুরি,যেন তালেবুল ইলম ও আম জনতা এদের ফাঁদে পা না দেয়।

মূলত সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী হলেন তিনি তাই তার উপর অভিযোগ বাস্তবায়ন করা গেলে বাকি হাদিস বর্ণনাকারীদের প্রতি বিদ্বেষ বা অনাস্থা সহজে আনা যাবে।মূলত সে লক্ষ্যেই তাদের এমন চক্রান্ত।

হাদীসের রক্ষক আবু হুরায়রা (রাঃ), হাদীস নামটি আসার সাথে সাথে রাসূল (ﷺ)-এর পরেই আসে যার নাম, রাসূল(ﷺ)-এর হাদীস মুখস্থ করার জন্য যিনি রাতের ঘুম করেছিলেন হারাম, ক্ষুধার্ত অবস্থায় মসজিদে কাটিয়ে দিয়েছেন রাত-দিন, বিসর্জন দিয়েছেন আরাম, সত্যিকার হাদীসের ছাত্রের যিনি নমুনা ও আদর্শ, সারা দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী যার নামের পরে ‘রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু’ পড়া হয়, রাসূল (ﷺ)-এর নামের সাথে সবচেয়ে বেশী যার নাম উচ্চারণ করা হয়, তিনি আর কেউ নন ইলমে হাদীসের রক্ষক আবু হুরায়রা (রাঃ)। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, হাদীস শাস্ত্র দুইজন ব্যক্তির উপর দণ্ডায়মান।একজন আল্লাহর রাসূল, আরেকজন আবূ হুরায়রা।

তাইতো হাদীস বিদ্বেষীদের চক্ষুশুল তিনি। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নামে কত রকমের জঘন্য অপবাদ তারা দিয়েছে, তা পড়তেও গা শিউরে উঠে। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা বলতেন, তার কোন বংশ পরিচয় নেই, তিনি হাদীসের জন্য নয়,

বরং খাবারের জন্য রাসূল (ﷺ)-এর পিছে পিছে থাকতেন, তিনি ওমর (রাঃ)- এর যুগে অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন, তাই তাকে পদচ্যুত করা হয়েছিল ইত্যাদি কত যে মিথ্যা অভিযোগে তারা আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে অক্রমণ করেছে, তার ইয়ত্তা নেই। নীচে তাদের উদ্ভট অভিযোগসমূহের দাঁতভাঙ্গা উত্তর প্রদান করা হল-

আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বংশ মর্যাদা ও তার ফীযলত :

আবু হুরায়রা (রাঃ) দাওস গোত্রের সরদার বংশের সন্তান ছিলেন। তার চাচা সা'দ ইবনে আবু যিবাব দাওস গোত্রের আমীর ছিলেন। রাসূল (ﷺ), আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) সকলেই সাদ ইবনে আবু যিবাবকে দাওস গোত্রের আমীর পদে বহাল রাখেন। (দিফা ‘আন আবি হুরায়রা, আব্দুল মুন'ঈম ছালেহ ১৮ পৃঃ।)

দাওস আরবের বিখ্যাত আযদ গোত্রের শাখা। মদীনার আওস ও খাযরাজগণও আযদ গোত্রের শাখা। হুদ (আঃ)-এর সন্তান কাহতানের বংশধর হচ্ছে আযদ।

অতএব, আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পূর্ণ বংশ দাঁড়ায় আবু হুরায়রা আদ-দাওসী আল-আযদী আল-কাহতানী। খলীফা খাইয়াত্ব প্রদত্ত বংশনামা অনুযায়ী আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বংশনামা নূহ (আঃ) পর্যন্ত সুরক্ষিত। বর্তমান সঊদী আরবের যাহরান গোত্র দাওস গোত্রের শাখা। আজও যাহরানীরা আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে নিয়ে গর্ব করে। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের সিলেবাসের অর্ন্তভুক্ত বিখ্যাত বই ‘তাদবীনুস-সুন্নাহ’ ও ‘ইলমুর রিজাল’-এর লেখক এই যাহরান বংশের সন্তান।

আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পূর্ণ বংশনামা নিম্নরুপ

আবু হুরায়রা ইবনে আমির ইবনে আবদি যিশ-শারা ইবনে ত্বারিফ ইবনে আত্তাব ইবনে আবি ছা'ব ইবনে মুনাব্বিহ ইবনে সা'দ ইবনে ছা'লাবা ইবনে সুলাইম ইবনে ফাহম ইবনে গানম ইবনে দাওছিল গাওছ ইবনে মালিক ইবনে যায় 'ইবনে কাহলান ইবনে সাবা ইবনে ইয়াশজুব ইবনে ইয়ারুব ইবনে কাহতান ইবনে হুদ (আঃ)'।(তারীখ ত্বাবারী ১/৬১৩; সিয়ারু আ'লামিন নুবালা ২/৫৭৮।)

ছাহাবী তুফায়েলের হাতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল (ﷺ) যখন খায়বারের যুদ্ধে, তখন নিজ মাতৃভূমি থেকে হিজরত করে চলে আসেন। হিজরতের সময় তিনি তরুণ। বয়স ত্রিশের কম হবে। কেননা তিনি ৫৯ হিজরীতে মারা গেছেন, তখন তাঁর বয়স ৭৮ আর খায়বারের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৭ম হিজরীর সফর মাসে আর রাসূল (ﷺ) মারা যান ১১ হিজরীর রবী—উল আওয়াল মাসে। অর্থাৎ তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে ছাহাবী হিসেবে থাকেন প্রায় সাড়ে ৪ বছর। তাঁর ফযীলত সীমাহীন, তিনি দাওস গোত্রের জন্য করা রাসূল (ﷺ)-এর দু'আ, ইয়ামানীদের জন্য করা রাসূল (ﷺ)-এর দু'আ,হিজরতের ফযীলত, রাসূল (ﷺ)-এর সাথে জিহাদ করার ফযীলত সবগুলোই তিনি পেয়েছেন। কেননা তিনি মক্কা বিজয়ের পূর্বেই হিজরত করেছেন। হিজরতের পর মক্কা বিজয়, হুনাইন, তাবুক ও মূতাসহ সকল যুদ্ধে রাসূল (ﷺ)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পর মুরতাদদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে অগ্র সেনানীর ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে চাইতেন যেমনটা গাযওয়ায়ে হিন্দের হাদীসে ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত পরহেযগার ও ইবাদতগুযার ছিলেন। রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করা তাঁর অভ্যাস ছিল। তাঁর মেহমানদারিতার গল্প তাবেঈদের মাঝে প্রসিদ্ধ ছিল। তিনি মদীনার মুফতীদের অন্যতম ছিলেন।তাঁর পরে তাঁর ছাত্ররা মদীনার বিখ্যাত মুফতী হন। বিখ্যাত বদরী ছাহাবী উতবা (রাঃ)-এর বোন বুসরাকে তিনি বিবাহ করেন।( বিস্তারিত-দিফা আন আবি হুরায়রা ৪০-৫০ ও ১৫৯।)

তিনি অত্যন্ত নিরহংকার ও মাটির মানুষ ছিলেন। যার নিদর্শন হচ্ছে মসজিদে নববীতে মিসকীন ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটিয়ে দেওয়া। তিনি চাইলে ব্যবসা করতে পারতেন। তিনি যে ব্যবসায় সিদ্ধ হস্ত তা আমরা দেখতে পাব।

আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর জন্য রাসূল (ﷺ) বিশেষভাবে দু'টি দুআ করেছেন,

(ক) তাঁর স্মৃতি শক্তি ও ইলমের জন্য।
(খ) মু'মিনগণ যেন তাঁকে ভালবাসেন। ঘটনা হচ্ছে, আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মা কাফির ছিলেন। তিনি একদিন কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর রাসূলকে তার মায়ের হেদায়েতের জন্য দু'আ করতে বললেন। আল্লাহর রাসূল দু'আ করলেন। তাঁর মা ইসলাম কবুল করলেন। তিনি খুশীতে আল্লাহর রাসূলকে আরো একটি দু'আ করার জন্য আবেদন করেন। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন,
اللهم حبب عبيدك هذا وأمه إلى عبادك المؤمنين وحببهم إليهما.
হে আল্লাহ! তুমি তোমার এই ছোট বান্দাকে এবং তার মাকে তোমার মুমিন বান্দাদের প্রিয় করে দাও এবং তাদেরকে এদের নিকট প্রিয় করে দাও।( মুসনাদে আহমাদ হা/৮২৪২।)

আলহামদুলিল্লাহ আজ পর্যন্ত সকল মুমিন-মুসলিম আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে ভালবাসে একমাত্র অভিশপ্তরা ছাড়া। ওই অভিশপ্তদের জন্য আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর এই দু'আই যথেষ্ট।

কিভাবে তিনি এত হাদীস বর্ণনা করলেন?

হাদীসের ভাণ্ডারে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা প্রায় ৫০০০। যেখানে অন্য ছাহাবীগণের বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা তার অর্ধেক বা আরো কম। আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর অত্যাধিক হাদীস বর্ণনার বাস্তব কিছু কারণ নিম্নে পেশ করা হল।

(ক) মুহাদ্দিছগণের নিকট একটি টেক্সটের আলাদা সনদকে আলাদা হাদীস হিসেবে গণ্য করা হয়। যেমনটা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। যিয়া আল আজমী (হাফিঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা নিয়ে তার মাস্টার্সের গবেষণা সন্দর্ভ তৈরি করেন। তার গবেষণায় ফুটে উঠেছে সনদ হিসেবে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীসের সংখ্যা ৫ হাযার বা ততোধিক হলেও মূল টেক্সট হিসেবে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীস দেড়-দুই হাজারের বেশী নয়। তন্মধ্যে আবার কিছু জাল-যঈফ বর্ণনা আছে।

এছাড়া তার বর্ণিত প্রায়প্রতিটি রেওয়ায়েত অন্য ছাহাবীগণের নিকট থেকেও পাওয়া যায়। অন্যদিকে এমন রেওয়ায়েত যা তিনি একাই বর্ণনা করেছেন কিন্তু অন্য ছাহাবীগণের নিকট পাওয়া যায়না ৫০ এর বেশী নয়। তার এ গবেষণায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর উপর যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয় তা ডাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিস্তারিত দেখুন তার মাস্টার্স গবেষণাপত্র 'আবু হুরায়রা ফি যুয়ে মারবিয়্যাতিহি বি শাওয়াহিদিহা ওয়া হালি ইনফিরাদিহা’ উল্লেখ্য যে, শায়খ যিয়া হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম হয়ে হাদীস নিয়ে পড়াশোনা করে বর্তমান পৃথিবীর একজন অন্যতম মুহাদ্দিছে পরিণত হয়েছেন। হাফিযাহুল্লাহ।

(খ) অন্য ছাহাবীগণের তুলনায় আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীসের সনদ বেশী হওয়ার পিছনেও কারণ রয়েছে। অন্যান্য ছাহাবীগণ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও আবু হুরায়রা (রাঃ) স্থায়ীভাবে মদীনায় দারস-তাদরীসের কাজে নিয়োজিত থাকেন। স্বাভাবিকভাবে ছাত্ররা তার কাছে পড়তে তো আসতই পাশাপাশি সারা দুনিয়া থেকে যারা হজ্জ-ওমরা করতে আসত তারাও মদীনা আসার সুবাদে আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর দারসে বসত। বস্তুত অটোমেটিক তাঁর ছাত্র সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশী হয়ে যায়। এই জন্য তাঁর হাদীসের সনদও বেশী হয়ে যায়। সনদ বেশী হওয়ায় মুহাদ্দিছগণের হিসেবে হাদীসের সংখ্যাও বেশী হয়ে যায়।

(গ) তিনি সব সময় রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকতেন। অন্যরা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তিনি পরিবার-পরিজনহীন ব্যবসা-বাণিজ্যের ঝামেলা ছাড়াই অবিবাহিত এক যুবক। রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস শ্রবণ করাই তাঁর কাজ ছিল।
যেমন তিনি নিজেই বলেন, ‘আমার আনসার ভাইদেরকে জমি-জায়গার কাজ তাদের মাঠে ব্যস্ত রাখত আর আমার মুহাজির ভাইদেরকে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাজারে ব্যস্ত রাখত। আর আমি আহলুস-সুফফার গরীব মানুষ ছিলাম এবং সবসময় আল্লাহর রাসূলকে ধরে থাকতাম’।(সহীহ বুখারী হা/২০৪৭।)

(ঘ) রাসূল (ﷺ)-এর হাদীসের প্রতি তার সীমাহীন আগ্রহ ছিল। তিনি নিয়ম মাফিক হাদীস মুখস্থ করতেন। যার জন্য তিনি রাসূল (ﷺ)-এর কাছে দু'আও চেয়েছেন। রাসূল (ﷺ) স্বয়ং তার আগ্রহের স্বীকৃতি দিয়েছেন আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘আমি একদা রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার শাফাআত পাওয়া সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কে হবে? রাসূল (ﷺ) জবাবে বলেন, তোমার মধ্যে হাদীসের প্রতি যে আগ্রহ দেখেছি তা থেকে আমি ভেবেছিলাম এই হাদীস সম্পর্কে তোমার চেয়ে যোগ্য কেউ জিজ্ঞেস করবে না’।"সহীহ বুখারী হা/২০৪৭।

(ঙ) সর্বোপরি আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, রাসূল (ﷺ) তার ইলমের জন্য দু'আ করেছেন। মুহাম্মাদ কায়েস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘একদা একজন ব্যক্তি বিখ্যাত ফক্বীহ ও অহী লেখক ছাহাবী যায়দ ইবনে ছাবেতকে জিজ্ঞেস করল। তিনি বলেন, তুমি আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস কর! কেননা একদিন আমি, আবু হুরায়রা ও আরেকজন মসজিদে নববীতে বসে আল্লাহর যিকর ও দু'আ করেছিলাম ইতিমধ্যেই রাসূল (ﷺ) আমাদের মাঝে আসলেন।

তিনি আমাদের দু'আ করতে বললেন, আমি এবং আমার সাথী দু'আ করলাম। রাসূল (ﷺ) আমীন বললেন। তারপর আবু হুরায়রা দু'আ করলেন। তিনি বলল, আমার দুইজন সাথী যা চেয়েছে আমিও তা চাই এবং এমন ইলম চাই যা ভুলবনা। রাসূল (ﷺ) আমীন বললেন। তখন আমরা বলে উঠলাম, আমরাও এমন ইলম চাই যা ভুলবনা। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, দাওসী গোলাম তোমাদের অগ্রগামী হয়ে গেছে।(নাসায়ী হা/৫৮৪৯।)

তাহক্বীক্ব : হাদীসের সনদকে হাফেয ইবনু হাযার আসক্বালানী উত্তম বলেছেন।”ইসাবা ৭/৩৫৭ পৃঃ।

উল্লেখ্য যে তার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর দু'আর এ ঘটনাটি যায়দ ইবনে ছাবিত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এই জন্য উল্লেখ করলাম অন্যথায় স্বয়ং আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে তার মুখস্থ শক্তির জন্য রাসূল (ﷺ)-এর দু'আর একাধিক সহীহ হাদীস রয়েছে।সহীহ বুখারী হা/১১৯।

তিনি কি খাদ্যলোভী ছিলেন?

আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতার দরুণ বা বিকৃতির উদ্দেশ্যে প্রাচ্যবিদরা(মুনকারে হাদিস একই সুরে সুর মিলায়) আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর ফযিলতের হাদীসকে তার উপর অভিযোগ বানিয়ে দিয়েছে আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “তোমরা মনে কর আমি প্রচুর হাদীস বর্ণনা করি। আল্লাহর কসম আমি মিসকীন মানুষ ছিলাম। সবসময় রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকতাম। কোন মতে পেট চলাটা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। আর মুহাজিরগণকে বাজার ব্যস্ত করে রেখেছিল। আর আনসারগণকে তাদের ধন-সম্পদ ব্যস্ত করে রেখেছিল’মুসনাদে আহমাদ হা/৭২৭৩।

প্রাচ্যবিদগণ এই হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, তিনি খাদ্যের লোভী ছিলেন। তাদের জবাবে বলতে চাই, মনে করলেন! কোন স্ত্রী তার স্বামীকে বলছে, আমি যত কষ্টই হোক তোমার সাথেই থাকতে চাই। আমার অত কিছুর দরকার নেই। কোনমতে একটু খেতে পেলেই হল। আপনি কি এই কথার জন্য স্ত্রীকে খাবারের লোভী বলবেন? না তাকে আপনার সাথে থাকার আগ্রহী বলবেন? ঠিক অনুরুপ আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বিষয়টি।

আরবী ভাষার একটি বর্ণ ‘লাম’ যা সাধারণত উদ্দেশ্য ও কারণ বুঝানোর জন্য আসে। আবু হুরায়রা (রাঃ) এ হাদীসে বলেননি যে, ‘লি মিলই বাতনি’ তথা পেট ভরার জন্য। তিনি কারণ বুঝানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ‘লাম’ বর্ণটি ব্যবহার করেননি বরং ‘আলা’ বর্ণটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন ‘আলা মিলই বাতনি’। যার অর্থ হচ্ছে আমার পেটের চিন্তা নেই কোনমতে একটু খেতে পেলেই হল। এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি আর কিছু চাইনা। আমার ধন-দৌলতের
দরকার নেই। আমার ভাল-খাবারের দরকার নেই। কোনমতে রাসূল (ﷺ)-এর সাথে থাকতে পারাটাই আমার চাওয়া ও পাওয়া।

এই জন্যই তিনি উঁচু পরিবারের সন্তান হওয়ার পরেও, ব্যবসা বাণিজ্যে বিরাট পারদর্শিতা থাকার পরেও সারাদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় মসজিদে থাকতেন শুধু রাসূল(ﷺ)-এর হাদীস সংগ্রহ করার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর সান্নিধ্যে থাকার মহান আশায়। মহান আল্লাহ তার এই চেষ্টাকে কবুল করেছেন। আজ তিনিই রাসূল(ﷺ)-এর হাদীসের মুখপাত্র বলা যায়। ফালিল্লাহিল হামদ।

চলবে.....
(পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করব, আবু হুরায়রা (রা) কি অর্থ আত্মসাৎকারী ছিলেন?এবং অনন্যা সাহাবীদের দৃষ্টিতে আবু হুরায়রা (রা) কেমন ছিলেন। এছাড়াও তার সাথে শত্রুতার নির্মম পরিণতি সম্পর্কে। )


সূত্র: আমরা হাদীস মানতে বাধ্য
লেখক: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক(হাফি.)
কৃতজ্ঞতায়: মিজানুর রহমান।​
 
Top