Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
আবু ত্বহা আদনান এক বক্তব্যে বলেছেন, “পুরো আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে পারবে না। আপনারা পারমাণবিক বিস্ফোরণের এই মাশরুম ক্লাউডগুলো দেখেননি? সারা ওয়ার্ল্ডকে ঢেকে দিবে। তিনি বলছেন, এই মালহামায় এইরকম একটা অবস্থা হবে। যেটা আমাদের সামনে। আর অফকোর্স আমাদের যারা স্কলারস অফ ইসলাম, তারা বেশিরভাগই হালুয়া-রুটি-বিরানি খাচ্ছেন এবং ঘুমাচ্ছেন। এগুলো নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নাই। তাঁদের বিন্দুমাত্রও মাথাব্যথা নাই এগুলো নিয়ে।” [দেখুন: https://youtu.be/TAnt5NNHXMk (১:১৮ মিনিট থেকে ১:৪৪ মিনিট)]
আবু ত্বহা আদনান আরেক বক্তব্যে বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার করে বলেছেন, “ওরা জেরুজালেম দখল করেছে ১৯১৪ সালে। আটচল্লিশ সালে গিয়ে তারা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১৭ সালে তারা রাজধানী ঘোষণা করেছে জেরুজালেমকে। এখনও আপনি হাত গুটিয়ে বসে আছেন। সব হয়ে গেছে প্ল্যাটফর্ম, ওখান থেকেই দাজ্জাল বের হবে।” [দেখুন: https://youtu.be/cILy9Valw6o (৫:৫০ মিনিট থেকে ৬:২৪ মিনিট)]
আদনান সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী ইহুদিদের ক্রমোন্নতির এ সময়ে কেয়ামতের আলামত নিয়ে গবেষণা না করে এবং করণীয় নির্ধারণ না করে ইসলামের উলামাগণ হালুয়া-রুটি-বিরানি খাচ্ছেন। তিনি এই ক্রান্তিলগ্নে যেসব করণীয় বাতলে দিয়েছেন, সেসব হলো সত্যিকারের কাজ। যা বাতলে না দেওয়ায় উলামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁরা হালুয়া-রুটি-বিরানি খাচ্ছেন, আর ঘুমাচ্ছেন। এরকম তিরস্কারপূর্ণ কথাবার্তা তিনি আরও অনেক জায়গায় বলেছেন; কোথাও উলামাদের কথা মেনশন করে, আবার কোথাও মেনশন না করে বলেছেন।
এসব ভুয়া কথাবার্তার জবাবে প্রথমেই যা বলব আমরা, সেটা হলো, ইহুদিদের এই ক্রমোন্নতি ঠেকাতে আপনি-আমি কী করতে পারি, বলুন? একজন মুসলিমের স্বাভাবিক কাজের বাইরে এমন একটি কাজের কথা বলুন, যা করলে আমরা আসন্ন মালহামায় রক্ষা পেতে পারি? যদি আপনি স্বতন্ত্র কোনো কাজের কথা কুরআন-সুন্নাহ থেকে বলতে না পারেন, তাহলে কীসের ভিত্তিতে উলামাদের বিরুদ্ধে হালুয়া-রুটি খেয়ে ঘুমানোর জঘন্য অভিযোগ করছেন আপনি?! অন্যায়ভাবে উলামাদের সমালোচনা করার তো অধিকার আপনার নেই। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফদের আদর্শ অনুযায়ী প্রামাণ্য কথা বলতে হবে আপনাকে।
ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩২১ হি.) উলামাদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর অবস্থান বর্ণনা করে বলেছেন, وعلماء السلف من السابقين ومن بعدهم من التابعين أهل الخير والأثر وأهل الفقه والنظر - لا يُذْكرون إلا بالجميل ، ومن ذكرهم بسوء فهو على غير سبيل “পূর্ববর্তী সালাফগণের মধ্যকার উলামা এবং পরবর্তীতে তাঁদের অনুসারী কল্যাণকামী সু্ন্নাহপন্থি বিশেষজ্ঞ ফকিহবর্গের বিষয়ে সুন্দর ছাড়া ভিন্ন বিশেষণে আলোচনা করা যাবে না। যে তাঁদের (অন্যায়) সমালোচনা করে, সে সু্ন্নাহপন্থি মতাদর্শের বাইরে রয়েছে।” [ইবনু আবিল ইয বিরচিত শারহুত তাহাবিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৫০৩; তাহকিক: আহমাদ শাকির; সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৮ হিজরি]
·
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেখা দরকার, আবু ত্বহা আদনান সাহেব কী এমন সমাধান দিলেন, যা উলামাগণ দিতে পারেননি, বরং সমাধান না বলে হালুয়া-রুটি-বিরানি খেয়েছেন, আর ঘুমিয়েছেন? আবু ত্বহা আদনান সাহেব তার বিখ্যাত ‘গৌরবান্বিত খেলাফত হারানোর শতবর্ষ’ – শীর্ষক লেকচারে বেশকিছু করণীয় বলেছেন। আমরা সংক্ষেপে সেগুলো উল্লেখ করছি। বক্তা আদনানের বলা করণীয়গুলো নিম্নরূপ:
১. ইলম-অর্জন করা। শরিয়তের জ্ঞানের পাশাপাশি বৈষয়িক জ্ঞানও অর্জন করা।
২. ইলম অনুযায়ী আমল করা।
৩. হালাল অর্থনীতির বন্দোবস্ত করা। এর আওতাভুক্ত হবে কাগুজে মুদ্রায় সম্পত্তি সংরক্ষণ না করা।
৪. দাওয়াতি কাজ করা।
৫. দাওয়াতি কাজের এক পর্যায়ে শরিয়ত মানতে বাধাবিপত্তি আসলে হিজরত করা। এই পয়েন্টে শহর ত্যাগ করতে হবে মর্মে ইঙ্গিতও দিয়েছেন বক্তা আদনান। [বক্তা আদনানের বিস্তারিত আলোচনা দেখুন: https://youtu.be/9cVKRA1PL3E (৫০ মিনিট থেকে শেষ পর্যন্ত)]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের উলামাগণ মোটাদাগে উক্ত পাঁচটি করণীয় বহু জায়গায় বহুবার বলেছেন। আমি স্রেফ একটা নমুনা দেখাব, তাহলে বুঝবেন, উলামাগণ উম্মতের জন্য কী করেছেন। দ্বাদশ হিজরি শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদি রাহিমাহুল্লাহ একটি ছোটো পুস্তিকা লিখেছিলেন। পুস্তিকাটির নাম— সালাসাতুল উসুলি ওয়া আদিল্লাতুহা (তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি)। এই পুস্তিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেই নাজাত পেতে মানুষের করণীয় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। সেখানে ইলম-অর্জন করা, ইলম অনুযায়ী আমল করা এবং দাওয়াতি কাজ করার কথা প্রধান করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে। হালাল অর্থনীতির বন্দোবস্ত ইলম অনুযায়ী আমল করার আওতাভুক্ত। আর হিজরতের ব্যাপারে বইটির ভেতরে আলোচনা করা হয়েছে।
পুস্তিকাটির গুরুত্ব উলামাদের কাছে কতবেশি ছিল সেটা খুলে বলি। লেখার পর থেকে পুস্তিকাটির পঠনপাঠন তাওহিদপন্থি ইলমি মহলে জারি ছিল। পুস্তিকাটি রচনার কিছুকাল পরেই দেখা গেছে, প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ প্রতিদিন ‘তিনটি মূলনীতি’ পুস্তিকার ওপর দারস দিয়ে পুস্তিকা শেষ করতেন এবং সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যেই উক্ত পুস্তিকার দারস পেশ করতেন। [দেখুন: ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলু সামাহাতিশ শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১২; মাকতাবাতুল হুকুমা (মক্কা) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৩৯৯ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
পরবর্তী গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ যখন রিয়াদের দিলাম শহরের বিচারপতি ছিলেন, তখন সেখানে তিনি ত্রিশবার ‘তিনটি মূলনীতি’ পুস্তিকা পড়িয়েছেন। শাইখ সালিহ আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ তাঁর এক দারসে এ তথ্য জানিয়েছেন। এমনকি সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য আল্লামা সালিহ আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ স্রেফ মসজিদে নববিতে দশবারের বেশি ‘তিনটি মূলনীতি’ পড়িয়েছেন এবং সৌদির ভেতরে ও বাইরের অন্যান্য মসজিদেও বহুবার পুস্তিকাটির দারস দিয়েছেন।
এতদ্ব্যতীত এক বা একাধিকবার উক্ত পুস্তিকার দারস দিয়েছেন ও ব্যাখ্যা করেছেন অসংখ্য উলামা। আমি তাঁদের কতিপয়ের নাম বলছি, যাঁদের লিখিত ও মৌখিক ব্যাখ্যা ইন্টারনেটে অ্যাভেইলেবল— ইমাম ইবনু উসাইমিন, আল্লামা আব্দুর রহমান ইবনু কাসিম, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ইমাম আমান আল-জামি, ইমাম আহমাদ আন-নাজমি, আল্লামা যাইদ আল-মাদখালি, আল্লামা আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক, আল্লামা আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি, আল্লামা সালিহ আলুশ শাইখ, আল্লামা উবাইদ আল-জাবিরি, আল্লামা সালিহ আস-সুহাইমি, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন হাদি আল-মাদখালি, আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি, আল্লামা আব্দুর রাযযাক আল-বদর, শাইখ সালিহ আস-সিন্ধি, শাইখ আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান, শাইখ হাইসাম বিন জামিল সারহান, শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-কাসিম প্রমুখ।
দেখুন, আমি স্রেফ একটি নমুনা দিয়েছি। এর বাইরে আমাদের উলামাগণ কতভাবে আর কত জায়গাতেই না এসব করণীয় বারবার বলেছেন! কিন্তু সেসবের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার সময় কোথায় আদনান সাহেবের মতো মানুষদের? এরকম বক্তব্য দিয়ে বেড়ানো উলামাদের প্রতি জনমানুষের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করা নয় কি? এসব করে তিনি কী অর্জন করতে চান, তা বুঝে নেওয়ার ভার সম্মাননীয় পাঠকের ওপরই দিলাম। তবে হ্যাঁ, কাগুজে মুদ্রায় সম্পত্তি জমা না করা, কিংবা কাগুজে মুদ্রা বিলকুল ব্যবহার না করার নির্দেশনা আমাদের জানামতে কোনো একজন গ্রহণযোগ্য আলিম জনমানুষকে দেননি। আবার শহর ছেড়ে যাওয়ার মতো উদ্ভট কথাও কোনো একজন গ্রহণযোগ্য আলিমও বলেননি। এছাড়া মোটাদাগে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত নির্দেশনা আমাদের উলামাগণ আদনান সাহেবের জন্মের আগে থেকে আজঅবধি বলে আসছেন এবং আগামীতেও বলতে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আলোচ্য পরিচ্ছেদের আলোচনায় আমাদের যুব-সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে শিক্ষা ও উপদেশ। উপদেশ গ্রহণ করার মতো কেউ আছে কি?
আবু ত্বহা আদনান আরেক বক্তব্যে বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার করে বলেছেন, “ওরা জেরুজালেম দখল করেছে ১৯১৪ সালে। আটচল্লিশ সালে গিয়ে তারা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১৭ সালে তারা রাজধানী ঘোষণা করেছে জেরুজালেমকে। এখনও আপনি হাত গুটিয়ে বসে আছেন। সব হয়ে গেছে প্ল্যাটফর্ম, ওখান থেকেই দাজ্জাল বের হবে।” [দেখুন: https://youtu.be/cILy9Valw6o (৫:৫০ মিনিট থেকে ৬:২৪ মিনিট)]
আদনান সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী ইহুদিদের ক্রমোন্নতির এ সময়ে কেয়ামতের আলামত নিয়ে গবেষণা না করে এবং করণীয় নির্ধারণ না করে ইসলামের উলামাগণ হালুয়া-রুটি-বিরানি খাচ্ছেন। তিনি এই ক্রান্তিলগ্নে যেসব করণীয় বাতলে দিয়েছেন, সেসব হলো সত্যিকারের কাজ। যা বাতলে না দেওয়ায় উলামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁরা হালুয়া-রুটি-বিরানি খাচ্ছেন, আর ঘুমাচ্ছেন। এরকম তিরস্কারপূর্ণ কথাবার্তা তিনি আরও অনেক জায়গায় বলেছেন; কোথাও উলামাদের কথা মেনশন করে, আবার কোথাও মেনশন না করে বলেছেন।
এসব ভুয়া কথাবার্তার জবাবে প্রথমেই যা বলব আমরা, সেটা হলো, ইহুদিদের এই ক্রমোন্নতি ঠেকাতে আপনি-আমি কী করতে পারি, বলুন? একজন মুসলিমের স্বাভাবিক কাজের বাইরে এমন একটি কাজের কথা বলুন, যা করলে আমরা আসন্ন মালহামায় রক্ষা পেতে পারি? যদি আপনি স্বতন্ত্র কোনো কাজের কথা কুরআন-সুন্নাহ থেকে বলতে না পারেন, তাহলে কীসের ভিত্তিতে উলামাদের বিরুদ্ধে হালুয়া-রুটি খেয়ে ঘুমানোর জঘন্য অভিযোগ করছেন আপনি?! অন্যায়ভাবে উলামাদের সমালোচনা করার তো অধিকার আপনার নেই। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফদের আদর্শ অনুযায়ী প্রামাণ্য কথা বলতে হবে আপনাকে।
ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩২১ হি.) উলামাদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর অবস্থান বর্ণনা করে বলেছেন, وعلماء السلف من السابقين ومن بعدهم من التابعين أهل الخير والأثر وأهل الفقه والنظر - لا يُذْكرون إلا بالجميل ، ومن ذكرهم بسوء فهو على غير سبيل “পূর্ববর্তী সালাফগণের মধ্যকার উলামা এবং পরবর্তীতে তাঁদের অনুসারী কল্যাণকামী সু্ন্নাহপন্থি বিশেষজ্ঞ ফকিহবর্গের বিষয়ে সুন্দর ছাড়া ভিন্ন বিশেষণে আলোচনা করা যাবে না। যে তাঁদের (অন্যায়) সমালোচনা করে, সে সু্ন্নাহপন্থি মতাদর্শের বাইরে রয়েছে।” [ইবনু আবিল ইয বিরচিত শারহুত তাহাবিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৫০৩; তাহকিক: আহমাদ শাকির; সৌদি আরবের ধর্মমন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৮ হিজরি]
·
দ্বিতীয়ত, আমাদের দেখা দরকার, আবু ত্বহা আদনান সাহেব কী এমন সমাধান দিলেন, যা উলামাগণ দিতে পারেননি, বরং সমাধান না বলে হালুয়া-রুটি-বিরানি খেয়েছেন, আর ঘুমিয়েছেন? আবু ত্বহা আদনান সাহেব তার বিখ্যাত ‘গৌরবান্বিত খেলাফত হারানোর শতবর্ষ’ – শীর্ষক লেকচারে বেশকিছু করণীয় বলেছেন। আমরা সংক্ষেপে সেগুলো উল্লেখ করছি। বক্তা আদনানের বলা করণীয়গুলো নিম্নরূপ:
১. ইলম-অর্জন করা। শরিয়তের জ্ঞানের পাশাপাশি বৈষয়িক জ্ঞানও অর্জন করা।
২. ইলম অনুযায়ী আমল করা।
৩. হালাল অর্থনীতির বন্দোবস্ত করা। এর আওতাভুক্ত হবে কাগুজে মুদ্রায় সম্পত্তি সংরক্ষণ না করা।
৪. দাওয়াতি কাজ করা।
৫. দাওয়াতি কাজের এক পর্যায়ে শরিয়ত মানতে বাধাবিপত্তি আসলে হিজরত করা। এই পয়েন্টে শহর ত্যাগ করতে হবে মর্মে ইঙ্গিতও দিয়েছেন বক্তা আদনান। [বক্তা আদনানের বিস্তারিত আলোচনা দেখুন: https://youtu.be/9cVKRA1PL3E (৫০ মিনিট থেকে শেষ পর্যন্ত)]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের উলামাগণ মোটাদাগে উক্ত পাঁচটি করণীয় বহু জায়গায় বহুবার বলেছেন। আমি স্রেফ একটা নমুনা দেখাব, তাহলে বুঝবেন, উলামাগণ উম্মতের জন্য কী করেছেন। দ্বাদশ হিজরি শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদি রাহিমাহুল্লাহ একটি ছোটো পুস্তিকা লিখেছিলেন। পুস্তিকাটির নাম— সালাসাতুল উসুলি ওয়া আদিল্লাতুহা (তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি)। এই পুস্তিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেই নাজাত পেতে মানুষের করণীয় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। সেখানে ইলম-অর্জন করা, ইলম অনুযায়ী আমল করা এবং দাওয়াতি কাজ করার কথা প্রধান করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে। হালাল অর্থনীতির বন্দোবস্ত ইলম অনুযায়ী আমল করার আওতাভুক্ত। আর হিজরতের ব্যাপারে বইটির ভেতরে আলোচনা করা হয়েছে।
পুস্তিকাটির গুরুত্ব উলামাদের কাছে কতবেশি ছিল সেটা খুলে বলি। লেখার পর থেকে পুস্তিকাটির পঠনপাঠন তাওহিদপন্থি ইলমি মহলে জারি ছিল। পুস্তিকাটি রচনার কিছুকাল পরেই দেখা গেছে, প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ প্রতিদিন ‘তিনটি মূলনীতি’ পুস্তিকার ওপর দারস দিয়ে পুস্তিকা শেষ করতেন এবং সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যেই উক্ত পুস্তিকার দারস পেশ করতেন। [দেখুন: ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলু সামাহাতিশ শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১২; মাকতাবাতুল হুকুমা (মক্কা) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৩৯৯ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
পরবর্তী গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ যখন রিয়াদের দিলাম শহরের বিচারপতি ছিলেন, তখন সেখানে তিনি ত্রিশবার ‘তিনটি মূলনীতি’ পুস্তিকা পড়িয়েছেন। শাইখ সালিহ আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ তাঁর এক দারসে এ তথ্য জানিয়েছেন। এমনকি সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য আল্লামা সালিহ আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ স্রেফ মসজিদে নববিতে দশবারের বেশি ‘তিনটি মূলনীতি’ পড়িয়েছেন এবং সৌদির ভেতরে ও বাইরের অন্যান্য মসজিদেও বহুবার পুস্তিকাটির দারস দিয়েছেন।
এতদ্ব্যতীত এক বা একাধিকবার উক্ত পুস্তিকার দারস দিয়েছেন ও ব্যাখ্যা করেছেন অসংখ্য উলামা। আমি তাঁদের কতিপয়ের নাম বলছি, যাঁদের লিখিত ও মৌখিক ব্যাখ্যা ইন্টারনেটে অ্যাভেইলেবল— ইমাম ইবনু উসাইমিন, আল্লামা আব্দুর রহমান ইবনু কাসিম, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ইমাম আমান আল-জামি, ইমাম আহমাদ আন-নাজমি, আল্লামা যাইদ আল-মাদখালি, আল্লামা আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক, আল্লামা আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি, আল্লামা সালিহ আলুশ শাইখ, আল্লামা উবাইদ আল-জাবিরি, আল্লামা সালিহ আস-সুহাইমি, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন হাদি আল-মাদখালি, আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি, আল্লামা আব্দুর রাযযাক আল-বদর, শাইখ সালিহ আস-সিন্ধি, শাইখ আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান, শাইখ হাইসাম বিন জামিল সারহান, শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-কাসিম প্রমুখ।
দেখুন, আমি স্রেফ একটি নমুনা দিয়েছি। এর বাইরে আমাদের উলামাগণ কতভাবে আর কত জায়গাতেই না এসব করণীয় বারবার বলেছেন! কিন্তু সেসবের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার সময় কোথায় আদনান সাহেবের মতো মানুষদের? এরকম বক্তব্য দিয়ে বেড়ানো উলামাদের প্রতি জনমানুষের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করা নয় কি? এসব করে তিনি কী অর্জন করতে চান, তা বুঝে নেওয়ার ভার সম্মাননীয় পাঠকের ওপরই দিলাম। তবে হ্যাঁ, কাগুজে মুদ্রায় সম্পত্তি জমা না করা, কিংবা কাগুজে মুদ্রা বিলকুল ব্যবহার না করার নির্দেশনা আমাদের জানামতে কোনো একজন গ্রহণযোগ্য আলিম জনমানুষকে দেননি। আবার শহর ছেড়ে যাওয়ার মতো উদ্ভট কথাও কোনো একজন গ্রহণযোগ্য আলিমও বলেননি। এছাড়া মোটাদাগে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত নির্দেশনা আমাদের উলামাগণ আদনান সাহেবের জন্মের আগে থেকে আজঅবধি বলে আসছেন এবং আগামীতেও বলতে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আলোচ্য পরিচ্ছেদের আলোচনায় আমাদের যুব-সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে শিক্ষা ও উপদেশ। উপদেশ গ্রহণ করার মতো কেউ আছে কি?
লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।